
যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরামচন্দ্র আমাদের জীবনের উত্তম আদর্শ। তাদের জীবনচরিত এবং কার্যকলাপ আমাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। আমাদের বাস্তব জীবনে কিভাবে চলতে হবে তার শিক্ষা দেয়।
গীতাই বলা হয়েছে যে, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যেরূপ আচরন করেন সাধারনে তাহারই অনুসরন করিয়া থাকে। তিনি যাহা প্রমাণ করেন, লোকে তাহাই আদর্শ বলে গ্রহন করেন (গীতা ৩।২১)।
অর্থাৎ গীতাও আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে, আমরা যেন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষদের জীবনচরিত এবং নির্দেশিত পথ থেকে শিক্ষা গ্রহন করি। এবং তাদের নির্দেশিত পথ অনুসরন করি। তো আমাদের দেখা উচিৎ এসব মহাপুরুষরা তাদের জীবনে কার এবং কিভাবে উপাসনা করতো।
প্রথমে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কথাই আসি।
শ্রীমদ্ভাগবতের ১০ম স্কন্ধের উত্তরার্দ্ধ ৭০ অধ্যায় পাঠে জানা যায় যে,
ব্রহ্ম মুহুর্তে উথ্থায় বায়ুর্সস্পৃশ্য মাধবঃ
দধৌ প্রসন্ন করণ আত্মনং তমসঃ পরম।। ৪
শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মমুহুর্তে শয্যা ত্যাগ করতঃ প্রাতঃ কৃত্যাদি সম্পন্ন করে প্রসন্ন চিত্তে তমোগুন হতে দুরে থেকে ঈশ্বর উপাসনা করতেন।
শ্রীমদ্ভাগবত আবার বলেন-
এক স্বয়ং জ্যোতি রণস্তমব্যয়ম স্ব সংস্থয়ান্বিত্য নিত্যরিস্তকল্মষম।
ব্রহ্মাথ্য মাসোদ্য ভবনাশ হেতুভিঃ স্বর্শক্তিভিলক্ষিত ভাবনিবৃতিম।।৫
যিনি এক এবং জ্যোতি স্বরূপ, অনন্ত, অব্যয় অর্থাৎ একরুপ বা একরসে বিদ্যমান এব্য সর্বত্র নিজ অবস্থান হেতু নিয়ত অন্যায় কার্য দূর করেন এবং যাকে ব্রহ্ম বলা হয়, যিনি এই বিশ্ব চরাচর সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয় করার সামর্থ্য যুক্ত কৃষ্ণ তারই উপাসনা করতেন।
পুনরায়,
অথপুতো নির্মলস্য জলে যথাবিধি ক্রিয়া কলাপং পরিধায় ব্যাসসী।
চকার সন্ধ্যাপগমাদি উত্তমো হুতানলো ব্রহ্ম জজাপ বাগযতঃ।।৬
অতঃপর তিনি বিধি অনুসারে নির্মল ও পবিত্র জলে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র ও উত্তরীয় ধারন করে যথাবিদি নিত্যকর্ম সন্ধ্যা বন্দনা করেন। অতঃপর তিনি যজ্ঞ করতে বসেন ও মৌন হয়ে গায়ত্রী জপ করেন।
মহাভারত এর উদ্যোগ পর্বের হস্তিনাপুরগমন পর্বাধ্যায়ে দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ থামানোর উদ্দেশ্যে কৌরবদের সাথে দেখা করতে যাবার সময় সময় প্রভাতকালে স্নানাআহ্নিক করে সূর্য ও অগ্নির উপাসনা করেন -
তারপর মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৪ নং দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণ সহস্র বর্ষ পর্যন্ত পরমেশ্বর মহাদেবের ধ্যান করেন। এবং পুত্রলাভের আশায় সেই দেবাদিদেবের আরাধনায় নিযুক্ত হন।
এবার আসি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন শ্রীরাম চন্দ্রের জীবন কথাই।
তার বৈশিষ্ঠ সমন্ধ্যে রামায়নের বালকান্ডে বলা হয়েছে- তিনি ধর্মজ্ঞ, সত্যনিষ্ঠ, প্রজা কল্যাণব্রতী, যশস্বী, জ্ঞানী পবিত্র, জিতেন্দ্রীয় এবং যোগসমাধিমান পুরুষ।
রামায়নঃ লঙ্কাকান্ডে দেখা যায় যে, সীতা যখন হরন হয়েছিলো তখন রাম সীতার বিয়োগ ব্যাথাই ব্যাকুল হয়ে পড়েন। এবং বানর সেনার সহযোগীতাই তিনি সেতু বন্ধন করে লঙ্কায় যান। সেস্থলে শ্রীরামচন্দ্র সেই দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করেছিলেন। লঙ্কা থেকে ফেরার সময় শ্রীরামচন্দ্র মাতা সীতাকে তারই বর্ণনা করে বলে যে,
"অত্র পূর্ব মহাদেবঃ প্রসাদমকরোত্প্রভূঃ"
(বাল্মিকী রামায়নঃ যুদ্ধ কান্ড ১২৩।১৯)
এই স্থানে সেই পরমেশ্বর দেবাদিদেব আমার উপর তার আশির্বাদ প্রদান করেছিলো।
অতএব আমরা দেখতে পাচ্ছি শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীরামচন্দ্র তাদের জীবনে সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের উপাসনা করতেন। তো আমরা আর্য পুত্র হওয়ার দরুন তাদের সেই নির্দেশিত পথকে অনুসরন করছি কি? না কি তাদের জীবনাদর্শ ভূলে গিয়ে লৌকিক সব প্রথা মানছি যা কি না কালক্রমে উৎপন্ন হয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি)