https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে বৈজ্ঞানিক ভূল নিয়ে অপপ্রচারের জবাব

Saturday, July 16, 2016
                    সম্পর্কিত চিত্র
বেদ শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থই নয়। ইহাতে বিজ্ঞানও ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে। প্রাতঃকালে অধিক জল পান যাকে ঊষাপান বলে, সূর্য প্রণাম, ধ্যান,যজ্ঞ,প্রাণায়াম ইত্যাদি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক। এমনি কি পৃথিবী যে ঘূর্ণয়মান তা আমরা বেদ থেকেই জানতে পারি। এবং বিশ্বে বহুল আলোচিত পৃথিবী সৃষ্টিতত্বের যে "বিগ ব্যাংগ" তত্ব রয়েছে তার স্পষ্ট বর্ণনা আমরা বেদে পাই। যা বিজ্ঞানীরা মাত্র কয়েক বৎসর হলো আবিষ্কার করেছে।
কিন্তু বেদে তাহা লিপিবদ্ধ হয়েছে হাজার হাজার বছর পূর্বে। তাহলে এত বৎসর পূর্বে এই জ্ঞানটা আসলো কিভাবে? এ থেকে স্পষ্ট জানতে পারা যায় যে, বেদ ঈশ্বরীয় বাণী। আর এ জন্যই বোধ হয় অপপ্রচারকারীদের নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটেছে।বেদের বাণী কে ভূল প্রমাণ করতে তাদের যেন চেষ্টার অন্ত নেই। এরকমই কিছু দাবী আজ আমরা পর্যালোচনা করবো-
.
=>> অপপ্রচারকারীর দাবী -
বেদের অনুসারে পৃথিবী স্থির এবং ইহা কোন স্থানের উপর রয়েছে। তারা নিম্নক্তো এই মন্ত্রটি উপস্থাপন করে-
" হে মনুষ্য! যে এই কম্পিত পৃথিবীকে স্থির করেছেন তিনি ইন্দ্র"
(ঋগবেদ ২।১২।২)

দাবীর সত্যতাঃ-
উক্তে মন্ত্রে "অদৃংহত" শব্দটি রয়েছে। যার অর্থ মজবুত করা। স্থির করা নয়। অর্থাৎ ইন্দ্রদেব পৃথিবীকে মজবুত করেন। স্থির করেন না।
নিচে মন্ত্রটির যথার্থ অর্থ -
             
" হে মনুষ্য! সেই ইন্দ্রদেব বিশাল আকাশ কে পরিমাপ করেন। দ্যুলোক কে ধারন করেন তথা ভুকম্প দ্বারা কম্পিত পৃথিবীকে মজবুত আধার প্রদান করে অগ্নি উদগিরনকারী পর্বতকে স্থির করেন" (ঋগবেদ ২।১২।২)
(অনুবাদঃ শ্রীরাম শর্মা)


                    
                           
=>> অপপ্রচারকারীর দাবী-
"এই ঈশ্বর যিনি এই পৃথিবীকে স্থায়িত্ব প্রদান করেছেন"
(যজুর্বেদ ৩২।৬)

দাবীর সত্যতাঃ-
অপপ্রচারকারী মনে হচ্ছে স্থায়িত্ব এবং স্থিরতা এ দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্যই বোঝে না। স্থায়িত্ব শব্দের অর্থ হচ্ছে - টেকশই, মজবুত, দৃঢ় ইত্যাদি। এর অর্থ গতিহীনতা নয়। এবং উক্ত মন্ত্রে "দৃঢ়" শব্দটি স্পষ্ট।
নিচে মন্ত্রের যথার্থ অর্থ -
"হে মনুষ্য! যেই জগদীশ্বর তীব্র তেজশালী প্রকাশযুক্ত সূর্যাদি পদার্থ এবং ভূমিকে দৃঢ় করেন যিনি সুখ কে ধারন করেন যিনি সব দুঃখ রহিত মোক্ষ কে ধারন করেন যিনি মধ্যবর্তী আকাশ মধ্যে বর্তমান লোকসমূহের বিবিধ সম্মান কারী, সেই সুখস্বরূপ স্বয়ং প্রকাশমান, সকলের সুখদাতা ঈশ্বরের জন্য আমরা সবাই প্রেম ভক্তি দ্বারা সেবাকারী হই।(যজুর্বেদ ৩২।৬)
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
                 
                    

=>> অপপ্রচারকারীর দাবী -
ইন্দ্র এই পৃথিবীকে রক্ষা করেন যা স্থির এবং অনেক রূপযুক্ত (অর্থববেদ ১২।১।১১)

দাবীর সত্যতাঃ-
উক্ত মন্ত্রটি অথর্ববেদের প্রসিদ্ধ ভূমিসুক্তের। এই মন্ত্রে মাতৃভূমির প্রতি ভক্তি এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে অপপ্রচারকারী পৃথিবীকে স্থির খুজে পেয়েছেন। মন্ত্রটির যথার্থ অর্থ-
"হে ভূমিমাতা! তোমার এই ছোট ছোট পাহাড় হিমাচ্ছাদিত পর্বত এবং তোমার এই অরণ্য আমাদের জন্য সুখদায়ক হোক। আমি অতিশয় বিস্তারশীল প্রাণীর নিবাস্থানভূত পৃথিবীর উপর অপরাজিত হয়ে অক্ষত হিংসরূপে অধিষ্ঠিত হই। যেন আমরা সবার ভরনকারী হই।যা কৃষক দ্বারা কৃষ্ট হয়ে সব বনস্পতি কে উৎপন্ন কারী। নানা প্রকার প্রাণী সমন্বিত নিজ মর্যাদায় স্থিত, তথা প্রভূ দ্বারা অথবা প্রভূর প্রতিনিধিরূপ রাজা দ্বারা সুরক্ষিত হয়। (অথর্ববেদ ১২।১।১১)"
(অনুবাদঃ হরিশরন সিদ্ধান্তলংকার)
                 

=>> অপপ্রচারকারীর দাবী -
সূর্য প্রকাশমান এবং সমস্ত মনুষ্যকে জানেন। এইজন্য ঘোড়া তাকে সেই আকাশে নিয়ে যায়, যাতে করে এই বিশ্বকে দেখতে পারে।(ঋগবেদ ১।৫০।১)

দাবীর সত্যতাঃ-
উক্ত মন্ত্রে কোন ঘোড়ার কথা উল্লেখিত হয় নি। বরং সূর্য তার প্রকাশ দ্বারা আমাদের ধন এবং প্রজ্ঞাকে প্রাপ্ত করায় বস্তুত ইহাই মন্ত্রে উল্লেখিত হয়েছে।
মন্ত্রটির যথার্থ অনুবাদ নিম্নরূপ -
"প্রকাশক রশ্মিময় - প্রকাশের দ্বারা মার্গ প্রদর্শনকারী সূর্যকিরন সম্পূর্ণ পদার্থের দর্শনের জন্য নিশ্চয়ই সেই সূর্যকে আকাশের উপর ধারন করেন। যে সূর্য সমস্ত প্রজ্ঞা ও ধন কে প্রাপ্ত করায়িতা, তথা প্রকাশ দ্বারা দেদীপ্যমান।(ঋগবেদ ১।৫০।১)
(অনুবাদঃ হরিশরন সিদ্ধান্তলংকার)
                    

=>> অপপ্রচারকারীর দাবী -
হে প্রকাশিত সূর্য! সাত ঘোড়াবিশিষ্ট হরিত নামক এক রথে তোমাকে আকাশের মধ্যে নিয়ে যায়।
(ঋগবেদ ১।৫০।৮)

দাবীর সত্যতাঃ-
উক্ত মন্ত্রটিতে সাতটি ঘোড়া নয় বরং সূর্যের সাতটি কিরণের কথা বলা হয়েছে। এবং আমরা জানি যে, সূর্যের কিরণ বা রশ্নিতে সাতটি বর্ণ রয়েছে। যা বৈজ্ঞানিক ভাবে সিকৃত।
নিচে মন্ত্রটির বাস্তবিক অর্থ -
"হে সবার দ্রষ্টা সুখ প্রদাতা জ্ঞানস্বরুপ জগদীশ্বর! যেভাবে হরিতাদি সাত, যাহা রস কে হরন করে, সেই কিরণ পবিত্র দীপ্তশীল সূর্যলোককে রমনীয় সুন্দররূপ লোকে প্রাপ্ত করি। সেভাবে তোমাদের গায়ত্রী আদি বেদ তথা সাত ছন্দ প্রাপ্ত করাই।
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
                       
                  
                      
                    
=>> অপপ্রচারকারীর দাবী -
ষাড় এই আকাশ কে ধারন করে রেখেছেন। (যজুর্বেদ ৪।৩০)

দাবীর সত্যতাঃ-
উক্ত মন্ত্রে অপপ্রচারকারী "বৃষভ" শব্দ দেখেছেন। এবং এটাকে ষাড় বানানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরন্তু সংস্কৃত ভাষায় বৃষভ এর যৌগিক অর্থ হচ্ছে- শক্তিশালী,সামর্থবান এবং উত্তম। রুঢ়ি অর্থে ষাড় কে বৃষভ বলা যায় কারন কৃষিক্ষেত্রে ষাড় শক্তির প্রতিক।
নিচে মন্ত্রটির যথার্থ অর্থ -
"হে জগদীশ্বর! যেভাবে শ্রেষ্ঠগুনযুক্ত পৃথিবীর আচ্ছাদন কারীহয় পৃথিবী আদি সৃষ্টির মধ্যে স্থাপন করার যোগ্য ব্যবস্থাকে স্থাপন করতে বা সূর্য আদিকে ধারন করতে অত্যন্ত উত্তম অন্তরিক্ষকে রচনা করেন এবং উত্তম প্রকার প্রকাশ কে প্রাপ্ত হয়ে সবার অধিপতি আপনি অন্তরীক্ষের মধ্যে সমস্ত লোক কে স্থাপন করেন, এভাবে যে সমস্ত শ্রেষ্ঠরূপ আপনার সত্য স্বভাব এবং কর্ম হয়। এরকম আমরা সবাই জানি।
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
                    

অতএব বেদ ঈশ্বরীয় বাণী হওয়ার দরুন অপপ্রচারকারীর এসব দাবী নিতান্তই ভ্রান্ত এবং তুচ্ছ।কারন বৈদিক অভ্রান্ত সত্য।