https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে সতীদাহ প্রথা দাবীর খণ্ডন

Saturday, July 23, 2016

সতিদাহ বা সহমরণ কোন বৈদিক প্রথা নয়। বেদে এ প্রথার কোন ভাবেই সমর্থন নেই। বরং রামমোহন রাযের মতো বিদ্বান পন্ডিত বেদের মাধ্যমেই এ প্রথাকে ভূল প্রমাণিত করেন। এবং বিদ্যাসাগরের মতো জ্ঞানী ব্যক্তি বেদের নির্দেশিত পথের অনুবর্তন করেই বিধবা বিবাহের প্রচলন করেন।
কিন্তু আজকাল অনলাইনে রামমোহন অথবা বিদ্যাসাগরের চেয়ে অধিক বড় পন্ডিতদের লক্ষ্য করা যায় । যাদের দাবী হলো বেদে সতিদাহ প্রথার  সমর্থন রয়েছে।
মূলত এদের উদেশ্য সতিদাহ প্রথার প্রবর্তন করা নয়। বরং বেদের মতো মহান গ্রন্থ কে এ কুপ্রথার  আরোপ লাগিয়ে কলুষিত করা।  আসুন তবে এসব পন্ডিতদের আরোপিত দাবীগুলো নিয়ে একটু বিশ্লেষন করা যাক-
.
=>> অপপ্রচারকারীর দাবীঃ ০১
গুণশালী পুরুষদের বিধবারা ঘি ইত্যাদি প্রলেপ ধারন করুক। স্বামী যে চিতাই শায়িত আছে সেখানে তারা উঠে যাক আভরন সজ্জিত হয়ে, কোন দুঃখ বা অশ্রুজল ছাড়াই।
(ঋগবেদ ১০।১৮।৭)
.
দাবীর সত্যতাঃ
উক্ত মন্ত্রে কোন বিধবা নারীর কথা মোটেই বলাই হয় নি।  বরং অবিধবা  অর্থাৎ পতিযুক্ত নারীর কথা বলা হয়েছে।  আর যে নারীর পতি বিদ্যমান তার চিতার উপরে যাবার প্রয়োজন কি?
পরন্তু উক্ত মন্ত্রে নারীকে নিজ গৃহে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে  যে, সে  নারী যেন,সুপত্নি,  দুঃখরহিত এবং রোগরহিত হয়ে প্রবেশ করে এবং সেই সাথে  উত্তম সন্তান উৎপাদনে সমর্থ হয়।
আর সতিদাহ প্রথার নিয়মানুয়ায়ী পতি বিয়োগের পর পতির সাথে পত্নিকেও দাহ করা হয়। তখন নারী সুপত্নি,  রোগরহিত অথবা উত্তম সন্তান উৎপাদনে সমর্থ কি না এসব দেখার প্রশ্নই আসে না।
অতএব ইহা স্পষ্ট যে, এই মন্ত্রে নারীর বৈবাহিক জীবনের প্রথম ধাপের বর্ণনা করা হয়েছে।
নিচে মন্ত্রের যথার্থ অর্থ দেখুন প্রতিটি পদের অর্থ সহকারে-
.
ইমা নারীরবিধবাঃ সুপত্নীরন্জনেন সর্পিষা সংবিশন্তু।
অনশ্রবোনমীবাঃ সুরত্না আরোহন্তু জনয়ো যোনিমগ্রে।।
(ঋগবেদঃ ১০।১৮।৭)
.
পদার্থঃ (ইমাঃ) এই (অবিধবাঃ) পতিযুক্ত (নারী) স্ত্রী (সুপত্নি) উত্তম পত্নি হয়ে (আঞ্জনেন) অঞ্জন আদি পদার্থ এবং (সর্পিষা) ঘৃত আদি সুগন্ধিত পদার্থ দ্বারা শোভিত হয়ে (সংবিশন্তু) নিজ গৃহ মধ্যে প্রবেশ করবে। তথা (অনশ্রবঃ) দুঃখরহিত (অনমীবাঃ) রোগরহিত (সুরত্নাঃ) উত্তম রত্ন আদি দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে (জনয়ঃ) উত্তম সন্তানকে উৎপন্ন করতে সমর্থ স্ত্রী (অগ্রে) প্রথমে (যোনিম্) গৃহ মধ্যে (আরোহন্তু) প্রবেশ করবে।
.
=>> অপপ্রচারকারীর দাবী ০২
আমরা মৃতের বধু হবার জন্য জীবিত নারীকে নীত হতে দেখেছি।
(অথর্ববেদ ১৮।৩।১, ৩)
.
দাবীর সত্যতাঃ
সর্বপ্রথম উক্ত  মন্ত্রের  যথার্থ অর্থ দেখে নেওয়া যাক-
.
অপশ্যং যুবতিং নীয়মানাং জীবাং মৃতেভ্যঃ পরিণীয়মানাম্।
অন্ধেন যত্তমসা প্রাবৃতাসীৎপ্রাক্তো অপাচীমনয়ং তদেনাম।।
(অথর্ববেদ ১৮।৩।৩)
.
পদার্থঃ (অপশ্যম) আমি দেখেছি (জীবাম) জীবিত  (যুবতীম) যুবতী নারীকে (পরিনীমানাম) বিবাহিত হতে এবং (মৃতেভ্যঃ) মৃতের নিকট হতে [মৃত পতির নিকট হতে]  (নীয়মানাম) নিয়ে যেতে (যত) কারন সে (অন্ধেন তমসা) গভীর অন্ধকারে (প্রাবৃতা)  আবৃত (আসীত) ছিলো (ততঃ) অতঃ (এনাম) তাহাকে (প্রাক্ত) সামনে থেকে [ মৃত পতির সামনে হতে] (অপচীম্ অনয়ম) দূরে আনয়ন করি।
.
উক্ত মন্ত্রে কোথাও সতী দাহের উল্লেখ নেই। বরং  পতি বিয়োগে শোকান্ধকারে আচ্ছন্ন পত্নিকে সহনাভূতি দেখানো হচ্ছে।   সে যেন অধিক শোকে আচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে এ জন্য তাকে পতির নিকট হতে দূরে রাখার কথা বলা হচ্ছে।
আর অথর্ববেদ ১৮।৩।১ এই মন্ত্রে স্বভাবতই সতিদাহ প্রথার খন্ডন হয়ে যায়-
.
ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্মৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।।
(অথর্ববেদ ১৮।৩।১)
.
পদার্থঃ (মর্ত্য) হে মনুষ্য! (ইয়ং নারী) এই স্ত্রী (পতিলোকম্) পতিলোককে অর্থাৎ বৈবাহিক অবস্থাকে (বৃণানা)  কামনা করিয়া (প্রেতম্) মৃত পতির (অনু) পরে (উপ ত্ব) তোমার নিকট আসিতেছে (পুরাণম্) সনাতন (ধর্মম) ধর্মকে (পালয়ন্তী) পালন করিয়া (তস্য) তাহার জন্য (ইহ) এই লোকে (প্রজাম) সন্তান কে (দ্রবিণং চ) এবং ধর্মকে (ধেহি) ধারন করাও।
.
এ মন্ত্রে বেদ স্পষ্ট বিধবা বিবাহের আজ্ঞা দিচ্ছে।  যেখানে পতি বিযোগের পর নারীর পূনরায় বিবাহের অনুমোদন রয়েছে।  সেখানে বেদে সতিদাহ প্রথার দাবী একেবারেই ভিত্তিহীন।