https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

যম যমীর আসল স্বরূপ

Friday, July 8, 2016

কিছু পৌরাণিক মূর্খ কিছু কাল্পনীক রপকথার গল্প সমৃদ্ধ কিছু হাস্যকর গাথাকে শাস্ত্র হিসেবে মর্যাদা দিয়ে থাকে।যার প্রায় বেশীরভাগ অংশই পাগলের প্রলাপে ভরা যেমন হাতী,ঘোড়া,মশা,মাছি,এমন কি শহরের জন্মও মানুষের গর্ভে,পৃথিবীতে মধু,মদ,দুধের সমুদ্র,সূর্য অপেক্ষা চাঁদ পৃথিবী থেকে বেশী দূরে,সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে প্রভৃতি যা পড়লে পাগলেও অক্কা পাবে।
তার উপর বিভিন্ন নোংরা অশ্লীল বানোয়াট গল্পকে লীলা বলে চালনার পরেও যখন এরা যুক্তি তর্কে পেরে ওঠে না তখন এরা তাদের সমস্ত রাগ বেদের উপর বর্ষন করে।পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে উদাহরন স্বরুপ মুসলিমদের মধ্য যত মতভেদই থাকুক না কেন তারা তাদের ধর্ম গ্রন্থের উপর একটা আচও লাগতে দেয় না আর সেখানে কতিপয় হিন্দু নামধারী তারা কতগুলো কাল্পনিক গ্রন্থকে শাস্ত্রের মর্যাদা দিয়ে যুক্তি তর্কে পেরে না উঠে স্বয়ং হিন্দুদের আদি তথা মূল ধর্মগ্রন্থ বেদকে নিয়েই গালিগালাজ করে!!!হিন্দুদের মূল ধর্ম গ্রন্থই বেদ বৈদিক উপনিষদ,মনুসংহিতা সর্বত্রই বেদকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে।স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ,রামচন্দ্র প্রভৃতি মহতী পুরুষ আর তাদেরো পূর্বে সমস্ত বৈদিক ঋষি সবাই বেদকেই মান্য করেছেন আর বর্তমানে কতিপয় পাষন্ডী ভন্ড কতিপয় গ্রন্থকে শাস্ত্ররুপে মানার পর যখন যুক্তি তর্কের অাঘাতে অাহত হয় যখন নিজেদের বানানো শাস্ত্রের অশ্নীলতা অার ভুলের কোন জবাব দিতে পারেনা তখন এরা হিন্দু ধর্মের মূল বেদকে গালিগালাজ করে।
বেদ নিয়ে নিন্দা করে কিন্তু বেদের মূল বিষয়ই এদের জানা নেই!! বেদে কোন স্থান,কাল,পাত্র বা কোন ব্যাক্তি বিশেষ,ইতিহাস,অলৌকিকতার কোন স্থান নেই।আর এরা বেদের এই মূল বিষয়ই উপেক্ষা করে তাদের মনোনীত ব্যাক্তিদের বেদ মন্ত্রে খুজে নিজেদের যুগের সর্ব শ্রেষ্ঠ জোকারে পরিণত করছে।এছাড়াও তারা বেদে অশ্নীলতার অভিযোগ তোলে!!!! যেমণ -

 বেদে বর্ণিত যম-যমীর সুক্তকে তারা ভাই-বোনের অজাচার সম্পর্ক বলে দাবী করে!! নিজেদের ব্রেনের সমস্যা না থাকলে কেউ বেদ মাতার অসম্মান করেনা।তারা কি বলতে চায় সৃষ্টির আদিতে বৈদিক ঋষিরা ঈশ্বরের ধ্যানের মাধ্যমে অজাচার বাণী লাভ করেছে!!???

 বেদ মন্ত্র দ্রষ্টার ২৭ জন ঋষিই হচ্ছেন নারী যারা মানবজাতীর নিকট মাতৃসম পূজনীয়।ওইসব তথাকথিত পৌরাণিকরা কি দাবী করতে চায় যে এমন মহীয়ষী নারীরা অজাচার জ্ঞান তাদের পরবর্তী বংশধরদের শিখিয়ে গেছেন???? আর বর্তমানে তথাকথিত বৈষ্ণব গুলোর পরম আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণ নিজেওতো বেদকে সম্মান দিয়েছেন। গীতায় তিনি নিজেইতো বলেছেন সমস্ত বেদের মধ্যে আমিই জানার বিষয়, আমিই ঋক,সাম ও যজুর্বেদ।ওদের ব্যাখ্যা ধরে যদি এখন ওই সব পৌরাণিকদের কাছে প্রশ্ন শ্রীকৃষ্ণই যদি জানার বিষয় হয় আর তিনি নিজেই যদি ঋগবেদ হন তাহলে যম-যমীর অজাচার কি তিনিই করেছেন???? বেদের নিন্দা করলেতো গীতা অনুযায়ী তাদের আরাধ্যকেই নিন্দা করা হচ্ছে আর বেদের মধ্যে অশ্নীলতা খুজলেতো স্বয়ং তাদের উপাস্যকেই অশ্নীল বলা হচ্ছে আর ওই সকল অজ্ঞানী পৌরাণিকের দল বেদকেই নিন্দা করে!!! যাই হোক এবার মূল বিষয় বিষয়ে আসা যাক-

ঋগবেদ ১০.১০ সুক্তে যম এবং যমীর বর্ণনা আছে যেখানে যমী যমের সন্নিকটে এসে মিলিত হতে চায় যাদের পিতা হচ্ছে বিবস্বত তথা সূর্য।
এখন যে সমস্ত পৌরাণিক উক্ত সুক্তে যম এবং যমীকে ভাই বোনের অজাচার হিসেবে দাবী করে তাদের এ দাবীর মূল উৎস কোথায়??? বেদ অনুবাদ করতে গেলে প্রাচীণ গ্রন্থ সমূহ নিঘর্ন্টু,নিরুক্ত,পাণীনি শাস্ত্রের মতন বৈদিক ব্যকরন গ্রন্থের প্রয়োজন হয়।বেদের দুরুহ সংস্কৃত শব্দের প্রকৃত বূৎপত্তিগত শব্দের অর্থ সমূহ সেখানে বিস্তর ব্যাখ্যা সহ রয়েছে।আর বেদের অর্থ এই সমস্ত ব্যাকরণ গ্রন্থ ছাড়া করা কোনদিনো সম্ভব নয় সেই সাথে রেফারেন্স হিসেবে ব্রাহ্মন গ্রন্থেরও প্রয়োজন হয় শব্দের অর্থ করতে তাই কেউ তার নিজস্ব মনগড়া অনুবাদ বা ব্যাখ্যা করে বেদের নামে অপব্যাখ্যা করলেইতো হবে না প্রমাণস্বরুপ এর ব্যাখ্যা দিতে হবে উক্ত নোংরা শব্দের অর্থ কোন বৈদিক ব্যকরণে আছে।আর একমাত্র নিচু মনমানিষকতার ব্যক্তিই কোন প্রমাণছাড়া বেদকে অশ্নীল দাবী করে নিজেদের নোংরামীর পরিচয় দেয়।আর সেই সাথে নিজেদের আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণকেও।

প্রথমেই পৌরানিকদের পরম শ্রদ্ধেয় ভাষ্যকার সায়ণের কথা ধরা যাক। সায়ণ নিজেও এখানে যম-যমী কে ভাই বোনের অজাচার হিসেবে মান্য করেন নি ।তার ভাষ্যেও যম কে দিন এবং যমীকে রাত করেছেন। এমনকি ওয়েষ্টার্ণ আইডিওলজিষ্ট যেমন ম্যক্স মূলারও যম-যমী অর্থ রাত আর দিন করেছেন।তাহলে এখানে ওইসব মূর্খ কিসের ভিত্তিতে এমন জঘন্য অপবাদ দেয় বেদকে??
সংস্কৃত হাজারো শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে।সুক্তের বিষয়বস্তু অনুযায়ী উপযুক্ত অর্থ প্রয়োগ হয়। যদিও মহান অশিক্ষিত মূর্খ পৌরাণিকদের দাবী ওই সায়ণের ব্যাক্য দিয়েই শেষ করা যায় কারন ওদের বেদ নিয়েতো বিন্দুমাত্র ধারনা নেই কোন অনুবাদ দিলেই তারা সায়ণের উদ্ভট অনুবাদ খোজে যার অধিকাংশই ভুল গুটিকয়েক বৈদিক ব্যকরণের ধারে কাছ দিয়ে যায়।
চলুন দেখা যাক বৈদিক ব্যকরনে যম-যমীর কি কি অর্থ করা আছে…
পাণীনি (১.৪.৪৮) বিবাহিত দম্পতির নারী পার্টনারকে তথা সঙ্গিনীকে বলা হয় যমী ।  বৈদিক শব্দকোষ ঘেটেও যম শব্দের অর্থ পাণীনি অনুযায়ী বিবাহিত দম্পতির পুরুষ সঙ্গীই পাওয়া গিয়েছে।

এবার দেখা যাক ব্রহ্মণ গ্রন্থে কি অর্থ করা আছে যম-যমীর:-
শতপথ ব্রাহ্মন ৭.২.১.১০ এবং গোপথ ব্রাহ্মন ২.৪.৮এ যম-যমীর অর্থ যথাক্রমে আগুন এবং পৃথিবী করা আছে। তৈত্তরীয় সংহিতা ৩.৩.৮.৩ এও একই কথা বলা আছে।
পুনরায় বৈদিক ব্যকরণ গ্রন্থে আলোকপাত করে করে দেখি সংস্কৃত ভাষায় যম যমীর আর কি অর্থ আছে-
মহাঋষি যাস্ক তার অমর গ্রন্হ নিরুক্ত ৭.২৬ এ অধিদৈবিক অর্থ করে এর ব্যাখ্যা করেছেন। সেখানে বর্ণিত আছে বিবস্বত অর্থ সূর্য করা হয়েছে। নিরুক্ত ১২.১০-১১ অনুযায়ী যখনই যম এবং যমী যুগলদ্বয়কে বিবস্বাত তথা সূর্যের সহিত উল্লেখ করা হয় তখনই রুপকভাবে এটাই পরিস্কার হয়ে যায় সূর্য উদয়ের সাথে সাথেই রাত বা রাতের অন্ধকার অদৃশ্য হয়ে যায়।
উক্ত নিরুক্ততেই পরিষ্কার বর্ননা দেয়া আছে যে বিবস্বতের সাথে যম-যমীর উল্লেখ করা হলে ওখানে দিন এবং রাত অর্থই ধরা হবে। সুতরাং মন্ত্রের বিষয়বস্তু অনুযায়ী এখানে যম-যমীর রাত এবং দিনের অর্থটা উক্ত সুক্তে ধরা যেতে পারে।আর বৈবস্বাত অর্থ সূর্য এটারো প্রমান চাইলে নিরুক্তের উপরোক্ত শ্লোকেও বর্ণিত আছে সেই সাথে নিরুক্ত ১০.২০ এও এর অর্থ সূর্য করা।
নিরুক্ত ভাষ্যকর্তা স্কন্ধস্বামীজী যম যমীকে আদিত্য এবং রাত্রি মেনে (১০।১০।৮) মন্ত্রে ব্যাখ্যা করেছেন। স্বামী ব্রহ্মমুনিও যম যমীকে দিন রাত্রী মেনেছেন।
আবার উক্ত শব্দের আধ্যাতিক আরেকটা অর্থও রয়েছে।

যমো যচ্ছতীতি সত: 
 নিরুক্ত ১০.১৯ 
 অর্থাত যম সবকিছু শাষন এবং শৃঙ্খলা বিধান করেন সকল মানুষকে একত্রিত করে লোক থেকে লোকান্তরে নিয়ে যান। 

নিরুক্ত ১০.২০ পরেয়িবাংসং পর্যাগতবন্তম প্রবত উদ্ধত নিবত ইতি অবতির্গতি কর্মাণ।
অর্থাত যম অর্থই গতি।পতন অভ্যূদয়ের ভিতর দিয়ে মানুষকে নিয়ে চলেন বিচিত্র পথে।

 উক্ত শ্লোকে শ্লোকে এও আছে যে- ’অগ্নিরুপী যম উচ্যতে’ অগ্নিকেও(Fire) তাই যম বলা হয়।উল্লেখ্য উপরিউল্লেখিত ব্রাহ্মন গ্রন্হেও এর অর্থ অগ্নি করা হয়েছে তা বর্ণিত হয়েছে।
নিরুক্ত ১০.২১-যম ইব জাত:। যমো জনিষ্যমাণ:
অর্থাত যা জন্মেছে কিংবা যা জন্মাবে অর্থাত জীবনের সম্ভূতি এবং সম্ভাবনার বীজ হলেন যম।
উক্ত সুক্তের কোনখানেই কি যম-যমীকে ভাইবোন বানানো যায় কোনভাবে?? নোংরা মেন্টালিটি দিয়ে যদি বেদের মর্ম না বুঝেই বেদের মনগড়া অপব্যাখ্যা করা হয় তাহলে তাদের মস্তিষ্কেরই সমস্যা আছে। ঋগবেদের বিখ্যাত পুরুষ সুক্তের ১০.৯০.৯ তে বলা আছে যে ঈশ্বর হতেই চারিবেদের উতপত্তি আর এই সব অকর্মারা বলে বেদে অশ্লীলতা আছে!!! স্বয়ং ঈশ্বর হতে যে মহান জ্ঞানের উতপত্তি সমগ্র মানব জাতির কল্যানের জন্য ঈশ্বর কতৃক ঋষিদের কাছে প্রেরিত বেদ নাকি অশ্নীলতায় ভরা!!! ছি ছি এদের মতন কুলনাশকদের জন্যই হিন্দুদের আজ এই অবস্থা।

উক্ত সুক্তে অতি সুন্দর কাব্যিক ভাবে যম এবং যমীর কথোপকথনের বর্ননা দেয়া হয়েছে।এই কথোপকথনের বিষয়বস্তু হচ্ছে রাত্রী এসে দিনের সহিত মিলিত হতে চায় কিন্তু সেটা যতক্ষন পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে সেটা কখনো সম্ভব নয়।যম এবং যমী ঠিক তখনই মিলিত হতে পারবে যখন সমস্ত সৃষ্টি অস্তিত্বের ওপারে ফিরে যাবে অর্থাত প্রলয়কালে যখন এ নিয়মের কোন অস্তিস্ত থাকবেনা।মন্ত্রের ব্যাখ্যার্থে এখানে যম-যমীকে দুই ঘনিষ্ট বন্ধু ধরা যেতে পারে, যারা একে অপরের প্রতি ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েছে যমী যমের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব নয় শুধুমাত্র সেই সময়টাতেই সম্ভব যখন মিলিত এবং আলাদা হওয়া হবে এক ও অভিন্ন এবং দূরবর্তী ভবিষ্যতে একমাত্র প্রলয়কলেই এটা সম্ভব হবে কারন তখন আলাদা,বিভক্ত কিংবা বিচ্ছিন্ন হবার কোন অর্থই আর থাকবেনা।


পাঠকদের সুবিধার্তে এখানে পুরো সুক্তের বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো-

১) যমী: ভালোবাসা ও চাওয়া নিয়ে আমি নিজের ইচ্ছায় আমার বন্ধুর নিকট এসেছি৷ আমার বন্ধু, যে বিশাল জীবন সমুদ্রের অনেকটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছে৷ আমি তোমার পৃথিবীর উপর অন্বয়যুক্ত কর্তব্যের সাধন সম্পর্কে জেনে এবং চিন্তা করে আমি আন্তরিকভাবে চাই এবং প্রার্থনা করি তুমি (বিয়ের মাধ্যমে) আমাকে সন্তান দিয়ে সুখী কর এবং উৎপন্ন কর একজন উত্তরাধিকারী ও তোমার পিতৃপুরুষের বংশ রক্ষাকারী৷
২) যম: তোমার বন্ধু তোমার প্রেম, বন্ধুত্ব এবং সংযোগের আহবান গ্রহন করেনা যেহেতু তুমি তার সহিত বৈশিষ্ট্যগত ও গুনগত এবং পরিপূর্নতার দিক থেকে সমপ্রকৃতির নয়, প্রকৃতপক্ষে তুমি হচ্ছ বিপরীত গুনসম্পন্ন৷ হে প্রকৃতির জীবনীশক্তির মহান কর্তা (সূর্য) এর সাহসী সন্তানগন (দিন ও রাত), জ্ঞানালোকে দীপ্তিমান যিনি অন্তরীক্ষ ও পৃথিবীকে আলোকিত করেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি এই ধরনের সংযোগের প্রস্তাব বর্জন করেন ৷ বস্তুতঃ তারা নজরে রাখেন, বিস্মিত হন এবং এ ধরনের সংযোগের প্রস্তাব বাতিল করেন৷
৩) যমী: পৃথিবী এবং অন্তরীক্ষের শ্বাশত ধারনকারী আশা করেন যে প্রতিটা মরনশীল জীবের অন্ততঃ একজন উত্তরাধিকারী সন্তান রেখে যাওয়া উচিত৷ আমি আমাতে গ্রহন করেছি তোমার মন এবং আত্মাকে৷ তাই প্রার্থনা করি এস আমার সাথে শারিরীকভাবে মিলিত হও তোমার শিশুর জন্মদানকারী স্বামী হিসেবে৷
৪) যম: পবিত্র সৃষ্টির নিয়ম মেনে এবং বর্তমানেও তা পালন করে পূর্বে এমন কাজ আমরা কখনই করতে পারি নি, কিভাবে সত্য এবং নিয়ম ভঙ্গ করে এখন তা করব ? পৃথিবীকে ধারনকারী সূর্য এখন মধ্য গগনে তাই আমি হই উজ্জ্বল দিন, চাঁদও আছে সেখানে তাই তুমি হও মোহনীয় রাত্রি৷ কিন্তু পৃথিবীর সাধারন অক্ষ তোমার এবং আমার মাঝে অবস্থিত এবং তোমার ও আমার অবস্থান একদম বিপরীতমুখী৷ (অর্থাৎ আমরা মিলিত হতে পারব না যতক্ষন পৃথিবীটা ঘুরছে)
৫) যমীঃ আমাদের (দিনও রাতের) উৎপন্নকারী মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সবিতা, বিভিন্ন আকৃতির পদার্থের সৃষ্টিকর্তা, এবং সৃষ্ট পদার্থসমূহের ধারনকর্তা তিনিই আমাদেরকে যুগল হিসেবে তৈরী করেছেন প্রকৃতির গর্ভ থেকে এবং সেখান হতেই আমাদেরকে এই পার্থিব গৃহের প্রহরীস্বরূপ করেছেন ৷ ঈশ্বরের এ সুশৃঙ্খলিত নিয়ম এখন আর কেউ ভাঙতে পারবেনা ৷ তারা এটি করেনা ৷ মাতৃ পৃথিবী এবং পিতৃস্বরূপ নৈসর্গিক সূর্য আমাদের পরিপুরকতা সম্পর্কে জানেন ৷
৬) যম: এই ভারসাম্যপূর্ন অবস্থা সম্পর্কে কে জানে যাহা সৃষ্টির প্রথম প্রহরে সৃষ্ট হয়েছিল? একমাত্র তিনি জানেন৷ এই সময়ে কে এর সাক্ষি? কে এখন এটা স্বেচ্ছায় করতে পারে? পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্ব অনেক বেশি, পূর্বদিকে মিত্র (সূর্যোদয়) এবং দিনের অবস্থান পশ্চিমদিকে বরুন (সূর্যাস্ত) ও রাত্রির অবস্থান৷ হে কামপ্রিয়ে এখন লোকজনকে দেখে কে এ ব্যাপারে কোন কিছু বলতে পারে?
৭) যমী: আমি রাত্রি তোমার সাথে জীবন কাটানোর আকাঙ্খায় পীড়িত বোধ করছি, হে যম এক বাড়িতে একই শয্যায় আমার দেহ সমর্পন করতে ইচ্ছা করি যেভাবে একজন স্ত্রী তার স্বামীতে নিজেকে সমর্পন করে৷ এটি করতে চাই যাতে আমরা জীবন চালাতে পারি একটি রথের দুটি চাকার ন্যায় সুসামঞ্জস্যভাবে৷
৮) যম: এই দৃশ্যমান নৈস্বর্গিক আলো যেটি এখানে (পৃথিবীতে) একবার আসে একবার যায়, কিন্তু মহাশূন্যের চারিদিকে তারা বন্ধ হয় না এমনকি তারা পথচ্যুতও হয় না৷ তারা তাদের চোখ খোলা ও বদ্ধ করার ন্যায় আলোকিত ও অন্ধকার হয় না৷ হে প্রেম-বিধুর কুমারী শীঘ্র যাও আমা ভিন্ন অন্য কারও কাছে এবং তার সাথে রথের চাকার ন্যায় একত্রে সামঞ্জস্যপূর্ন জীবন কাটাও৷
৯) যদি এক মুহুর্তের জন্য পরমেশ্বর পৃথিবীর সাধারণ অক্ষে ও এর কেন্দ্রবিন্দুতে গতি হ্রাস করে দেন এবং সূর্যের আলো যদি দিন এবং রাত্রিতে থেমে যায়, তখন পৃথিবী এবং অন্তরীক্ষ একত্র হবে এদের মত তখন আমরাও (দিন ও রাত) একত্র হব, রাত্রি কোনো বাধা ছাড়া দিনের সাথে দাম্প্যত্য মিলন উপভোগ করবে৷
১০) যম: হে রাত্রি! কিন্তু ওই সময়গুলো অনেক অনেক বছর পরে আসবে, অতঃপর যখন গতিপথ বিপরীতমুখী হবে তখন একত্রে এবং সহঅবস্থানে থাকা হবে কোন অসঙ্গতি ব্যাতিত৷ তাই এ সময়ের জন্য হে প্রিয়ে ও ভদ্রে তোমার প্রেমের হাত আমি ছাড়া আর অন্য কারও প্রতি বাড়িয়ে দাও যে হবে প্রকৃত পুরুষোচিত স্বামী৷
১১) যমী: কি বললে ? তাহলে কি তুমি আমার নিকট ভাতৃস্বরূপ হবে? আর আমি তোমার বোন হয়ে তোমার ভালবাসা এবং তত্ত্বাবধান হতে বঞ্চিত হব? প্রিয়জন বঞ্চিত হয়ে অন্যত্র যাব আরেকজনের খোঁজে? আমি প্রেমে বিধুর হয়ে অস্ফুটবাক হচ্ছি, প্রার্থনা করি আমার সাথে শারিরীকভাবে যুক্ত হও৷ (তুমি কি শুধু একটি পরিপুরক অবলম্বন, আমি কি শুধু তোমার বিপরীতমুখী যাত্রী, এর চেয়ে বেশী কিছু নয় ?)
১২) যম: না আমি তোমার শরীরের সাথে আমার শরীর কখনও স্পর্শ করব না৷ বিজ্ঞজনেরা বলেন যে বোন সম্পর্কিত কারো নিকট যাওয়া এবং মিলিত হওয়া পাপ, কক্ষপথে অনুরূপ সহযাত্রীর সাথে মিলিত হওয়া প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ৷ হে প্রিয়ে এবং ভাগ্যবতী! যাও সুখি হও আমি ছাড়া অন্য কারও সাথে এবং যদি তুমি পার তবে তা সম্ভব কর৷ তোমার সহযাত্রী ভাই এ প্রস্তাব পছন্দ করেনা, না সে পছন্দ করতে পারে না৷
১৩) যমী: দুঃখিত যম, হে দিবালোক! এটা হল তোমার মহানুভবতা৷ আমি তোমার মনোভাব এবং হৃদয় প্রকৃতির এই পথ সম্পর্কে জানতাম না৷ হতে পারে আমি ভিন্ন অন্য কেউ তোমার সাথে যুক্ত হবে, যেভাবে কোমরবন্ধ তোমার কোমর জড়িয়ে আছে এবং তোমাকে আলিঙ্গন করবে যেভাবে একটি গাছের সহিত লতা সংলগ্ন থাকে৷
১৪) যম: তোমাকেও হয়ত কেউ আলিঙ্গন করবে এবং তুমিও তাকে আলিঙ্গন করবে যেভাবে একটি গাছের সাথে লতা সংলগ্ন থাকে৷ ভালবেসো তুমি অন্যলোককে এবং তার হৃদয়কে, সেও তোমাকে এবং তোমার হৃদয়কে ভালোবাসবে৷ এভাবে তুমি ভালোবাসা এবং সৌভাগ্যের দ্বারা সৃজন করবে এবং অর্জন করবে একটি সুখী মিলন৷
(তুলসীরাম শর্মার ইংরেজী বেদভাষ্য হতে অনুবাদকৃত)