https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদ মন্ত্রে রাধা নাম ও তার বাস্তবিক অর্থ

Friday, July 8, 2016

সমগ্র মহাভারতে রাধার চরিত্র কেন রাধা নামের উল্লেখ পর্যন্ত নেই । ব্যাসদেব এ চরিত্রকে খুজেই পেলেন না। কিন্তু বর্তমানে কিছু পৌরানিক তথা বৈষ্ণব পন্ডিত এই কাল্পনিক চরিত্রকে বেদে খুজে পেয়েছেন। এর থেকে বড় মিথ্যাচার আর কিছুই হতে পারে না। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপ্যাধ্যায় তার কৃষ্ণচরিত্র বইয়ে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করেছেন যে , ইতিহাসে রাধা নামের কোন মহিলার অস্তিত্ব ছিলো না।
তিনি এও বলেছেন যে, এই রাধা নাম বৈষ্ণব দের অস্থি মজ্জার ভিতরে লুকায়িত।
কিন্তু এই নিয়ে লৌকিক পন্ডিতদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা বেদে রাধা নাম দেখলেই মন্ত্রটিকে একেবারে রাধা কৃষ্ণের রাসস্থল বানিয়ে ছাড়বে। বেদের মধ্যে অনেক স্থলে রাধা শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। তবে কোন বিশেষ নারীর নামে নয়। নিরুক্তাকার যাস্ক রাধা শব্দের অর্থ ধন করেছেন (রাধ ইতি ধননাম ; নিরুক্ত ৪।৪)  



 বৈদিক কোষেও রাধঃ শব্দ  ধন এবং আরাধনার্থে ব্যবহৃত হয়েছে -


রাধঃ - রাধ্ (সংসিদ্ধি, রাংধনা) + অসুন = রাধস্। অর্থ - ধন (ধন দ্বারাই সব কার্য সিদ্ধ হয়। বা ধনের সহায়তা দ্বারা আমরা ভোজন রান্না করি অতঃ রাধস্ অর্থ ধন)




অথবা,  রাধ্ (আরাধনা করা)  + অসুন= রাধস্।  ধনের আরাধনা করা হয়ে থাকে। অতঃ ইহাকে "রাধস্" বলা হয়।



এবার কিছু রাধা নামকৃত বেদ মন্ত্রের উপর সমীক্ষা করা যাক -


=>> ঋগবেদ - ১।২২।৭



এ মন্ত্রে "রাধস" শব্দের উল্লেখ হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে ধন বা সম্পদ। মন্ত্রটিতে উত্তম ধনের দাতা প্রভূর স্তুতি করা হয়েছে । যে, প্রভূ আমাদের ধনের বিভাগ কর্তা।

অর্থাৎ তিনি আমাদের কর্মানুযায়ী ধনকে ভাগ করে দেন। যদি মন্ত্রটিতে রাধা নাম্নি কে স্বীকার হয় তবে ঈশ্বর কি আমাদের সবাইকে উচিতভাবে রাধাকে ভাগ বা বন্টন করে দেন??
মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ -


বিভক্তারং হবামহে বসোশিচত্রস্য রাধস।

সবিতারম নৃচক্ষসম।।


পদার্থঃ (বিভক্তারম) ধনের উচিত বিভাগ কর্তা প্রভূ কে (হবামহে) আমরা আহ্বান করি, যে প্রভূ ( বসোঃ) নিবাসের জন্য আবশ্যক ধনের দাতা (চিত্রস্য) যে ধন আমাদের জ্ঞান দানকারী, তথা (রাধসঃ) যে ধন আমাদের কর্মের সিদ্ধি দানকারী (সবিতারম) সেই প্রভূ কে, তথা (নৃচক্ষ্যসম) সব লোকের পালনকারী প্রভূকে আমরা আহ্বান করি।

(অনুবাদঃ হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার) 

  

পৌরাণিকদের জনপ্রিয় রমেশ্চন্দ্র মজুমদার এর ভাষ্যেও রাধা নামক কোন নারীর অস্তিত্ব নেই।  উক্ত মন্ত্রের রমেশ ভাষ্য নিম্নরূপ


"নিবাসহেতুভূত, বহুধনের বিভক্ত ও মনুষ্যদিগের প্রকাশকারী সবিতাকে আমরা আহ্বান করি। " 


                             

=>> ঋগবেদ ১।২২।৮


এ মন্ত্রে "রাধাংসি দাতা " শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। যার অর্থ হচ্ছে সর্ব ধনের দাতা। যা উপরিউক্ত মন্ত্রে স্পষ্ট হয়েছে। অনুরূপ ভাবে যদি মন্ত্রটিতে রাধিকা নামক কো নাম্নি কে মেনে নেওয়া হয় তবে কি ঈশ্বর আমাদের রাধা নামক কোন নারীকে দান করেন?

মন্ত্রটির মূল অর্থ হচ্ছে -


সখায় আ নিষীদত সবিতা স্তোম্যো নু নঃ।

দাতা রাধাংসি শুম্ভাতি।।


পদার্থঃ (সখায়) মিত্র! (আনিষীদত্) সবপ্রকারে এসে নম্রতার সহিত বসো (সবিতা) সব ব্রহ্মান্ডের উৎপাদক সর্বপ্রেরক  প্রভূ () অবশ্যই () আমাদের সবার (স্তোম্য) স্তুতি করার যোগ্য, সেই প্রভূ (রাধাংসি দাতা) সব ধনের দাতা, এবং তিনি (শুম্ভতি) আমাদের জীবনকে সুশোভিত করে।

(অনুবাদঃ হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার) 



 উক্ত মন্ত্রের রমেশভাষ্য নিম্নরূপ -


"হে সখাগণ! চারিদিকে উপবেশন কর, সবিতাকে আমাদের শীঘ্র স্তুতি করিততে হইবে, ধনদাতা সবিতা শোভা পাইতেছেন। "




 =>> ঋগবেদ ৮।৪৫।২৪


এ মন্ত্রে না কি রাধার সাথে গোপী শব্দের উল্লেখ আছে। মন্ত্রটিতে "রাধস"

শব্দ রয়েছে যারা অর্থ ধন যা আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু "গোপী" শব্দের উল্লেখ নেই। রয়েছে "গোপরীণসা = গো- পরিণসা। অর্থাৎ গো শব্দটি এখানে পাওয়া যায়। যার অনেক প্রকার অর্থ হয় যা পূর্বেই বলা হয়েছে। এখানে গো শব্দটি গাভী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ 


ইহ ত্বা গোপরীণসা মহে মন্দন্তু রাধসে। সরো গৌরো যথা পিব।।



পদার্থঃ হে ইন্দ্র পরমঐশ্বর্যযুক্ত! আপনি কৃপা দ্বারা (ইহ) এই সংসার মধ্যে (ত্বা) তোমার উপদেশ দ্বারা (মহে রাধস) বহুত ধন প্রাপ্তির উৎসবের জন্য (গোপরীণসা) গাভীর দুধ,দই আদি পদার্থ দ্বারা (মন্দন্ত) গৃহস্থ জন পরস্পর আনন্দিত হয় এবং করো। হে মহেন্দ্র! যেভাবে (গৌর) তৃষিত মৃগ (সর) সরোবরের জল পান করে। তদ্রুপ আপনি (পিব) আমাদের সমস্ত পদার্থ অবলোকন করুন।

(অনুবাদঃ আর্য মুনি) 

                               

 উক্ত মন্ত্রের রমেশ ভাষ্য নিম্নরূপ - 


"হে ইন্দ্র! এই যজ্ঞে মহাধনলাভার্থ মনুষ্যগণ গব্যমিশ্রিত সোম পানে মত্ত হউক, তুমি গৌরমৃগ যেরূপ সরোবর হতে পান করে, সেইরূপ পান করো। 


             


 =>সামবেদ- ১১৭২


এ মন্ত্রে যে শব্দটি রয়েছে তা হচ্ছে " রাধস্তন্নো" এখানে (রাধ) শব্দের অর্থ কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম নয়। পূর্বের মন্ত্রগুলোতে এর অর্থ বরাবরই বলা হয়েছে।  এ মন্ত্রে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, তিনি যেন দানরূপে প্রাপ্ত যোগ্য ধন আমাদের উভয় হস্তে দান করেন।

মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ 


য়দিন্দ্র চিত্রম ইহ নাস্তি ত্বাদাতমন্দ্রিবঃ।

রাধস্তন্নো বিদপূস উভয়া হস্ত্য আভব।।


পদার্থঃ হে (আদ্রিবঃ) সব অন্ধকারকে দুর কারী ইন্দ্র! (মে) আমার (ইহ) এই সংসারে (যদ্) যে (ত্বাদার্ত) তোমার দ্বারা দানরূপে প্রাপ্ত করার যোগ্য (নাস্তি) হয় নি (তদ্ রাধঃ) সেই ধন বা সিদ্ধি (চিত্র) পূজনীয়!  হে (বিদদুসো) বিদ্বানের একমাত্র প্রাণস্বরূপ! (ন) আমাদের (উভয় হস্ত্যা ভর) উভয় হস্তে প্রদান করুন।

(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)

                          


হরফ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত পরিতোষ ঠাকুর কর্তৃক সামবেদ ভাষ্যেও  উক্ত মন্ত্রে রাধ = ধন স্বীকার করেছেন -
" হে ইন্দ্র যে কাম্য পূজনীয় ধন আছে (অথবা যে কাম্যধন আমার গৃহে নেই)  সেই ধন আমাদের দেওয়া তোমার কর্তব্য। হে বজ্রধারী হে ধনাধিপতি, সেই ধন তোমার উভয় হস্তে আমাদের প্রদান করুন " 

                          


 =>সামবেদ- ১৬৫


এখানে যে শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় তা হলো " রাধানাং পতে" এখানে একটা মজার বিষয় হলো, তারা এই মন্ত্রে রাধার সাথে কৃষ্ণকেও খুজে পায়। তারা এই মন্ত্রের অর্থ করে রাধার পতি( স্বামী) অর্থাৎ কৃষ্ণ। এখানে রাধা শব্দের অর্থ প্রকৃতির  । বেদজ্ঞ পন্ডিতরা এই শব্দ দুটির অর্থ করেছেন সৃষ্টির জ্ঞান -ধন- প্রজা ঐশ্বর্য ইন্দ্রিয় আদির মালিক।

মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ - 


ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং পতে। পিবা ত্বাস্য গিবর্ণঃ।।

(ঋগবেদ ৩।৫১।১০)


পদার্থঃ হে (রাধানং পতে) সমস্ত ধন, জ্ঞান এবং সাধনের স্বামী! (ইদং) এই (ওজসা) বলপূর্বক (সুতং) নিষ্পাদিত (গিবর্ণঃ) হে বাণী দ্বারা কথন বা প্রশংসা করার তুমি যোগ্য (অস্য) এই জ্ঞান কে (তু) ও (আ পিব) পান করুন। 

(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা) 

                         


 উক্ত মন্ত্রের পরিতোষ ভাষ্য - 


" হে রাধাপতি (= সর্বসিদ্ধিকর ধনের অধিপতি), হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, বলসহায়ে প্রস্তুত এই সোমরস তোমার পানের জন্য"


                   
     

 =>সামবেদ- ৬৮৪


সবচেয়ে বিনোদন রয়েছে এই মন্ত্রে। তাদের বেদজ্ঞান দেখলে সত্যিই মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগন না হেসে থাকতে পারতেন না। এখানে যে শব্দটি রয়েছে তা হচ্ছে " সখীনাম" । তাদের দাবী হচ্ছে - রাধা কৃষ্ণের সবচেয়ে বড় সখী ছিলেন। তাই এই মন্ত্রে রাধার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সখীনাম শব্দের অর্থ রাধা নয়। এর অর্থ হচ্ছে পরম মিত্র। ঋগবেদে জীব এবং পরমাত্মাকে পরস্পর মিত্র বলা হয়েছে (দ্বা সূপর্ণা সয়ুজা সখায়া ; ঋ ১.১৬৪।২০)

মন্ত্রটির মূল অর্থ নিম্নরূপ 


অভীষুণঃ সখীনামবিতা জরিতৃণাম। শতং ভবাস্যুতয়ে।।

(ঋগবেদ ৪।৩১।৩)


পদার্থঃ হে রাজন! প্রভো! তুমি (ঊতিভিঃ) রক্ষা এবং জ্ঞান দ্বারা এবং তৃপ্তিকারক, সুখজনক ক্রিয়া দ্বারা (সখীনাম্) মিত্র এবং (জরি-তৃণাম্) স্তুতি কারী (নঃ) আমাদের লোক কে তুমি (শতং)  শত প্রকার এবং শত বর্ষ পর্যন্ত (অবিতা) রক্ষক (অভি ভাবসি) হও।

(অনু্বাদঃ জয়দেব শর্মা) 

                           



 উক্ত মন্ত্রের পরিতোষ ভাষ্য


"তুমি স্তুতিকারী সখাগণের রক্ষক,  তুমি তোমার শতপ্রকাে রক্ষাশক্তির সঙ্গে স্তোতার মঙ্গলের জন্য এসো।"


                 


=>সামবেদ-১১৮০


এই মন্ত্রে যে শব্দটির উল্লেখ রয়েছে সেটা হল "রাধসে "। এর অর্থ আরাধনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কোন ব্যক্তিবাচক নাম হিসেবে নয়।

মন্ত্রটির মূল অর্থ 


ইন্দ্রস্য সোমরাধসে পুনানো হার্দিচোদয়

দেবনং য়োণিমাসদম।।


পদার্থঃ হে (সোম) সাধক! (রাধসে) ইন্দ্রস্বরূপ পরমাত্মাকে আরাধনার জন্য (হার্দি) হৃদয়ে বিরাজমান  (দেবান) দেবগণ, ইন্দ্রীয় তথা পঞ্চভূতের (আসদং) প্রতিষ্ঠাস্থান এবং (যোর্নি) মূল  কারণ চিতি শক্তি কে (চোদয়) প্রেরিত করো। 

(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)

  

উক্ত মন্ত্রের পরিতোষ ভাষ্য


" হে ইন্দ্রের প্রিয় সোম তুমি পরিশুদ্ধ হয়ে আমাদের সর্বসিদ্ধিকর ধনের জন্য দেবগনের স্থানে গমনকারী জল কে প্রেরণ করো। 


  


অতএব বেদে রাধা নামক কোন নারীর উল্লেখ নেই। কারন কোন ব্যক্তির জন্মের পরেই তার জীবনী লেখা হয়ে থাকে। আর যে ব্যক্তির অস্তিত্বই নেই তার খোজ করা মূর্খামী ছাড়া কিছুই নয়যেহেতু বেদ সৃষ্টির প্রথমে এসেছে সেহেতু কেউ যদি বেদ মন্ত্র থেকে দুই একটা নাম তার সন্তানদের রাখে। তাহলে এর অর্থ এই নয় যে, বেদ সে সন্তানটির আগেই গুনগান করেছেবেদে রাধা অর্থ কখনো আরাধনা অথবা ধন, ঐশ্বর্য ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো কোন নারীর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় নি। যদি পৌরাণিকদের এই সূত্র ধরে বেদভাষ্য করা হয়, তবে আপনার অথবা আমার নামও বেদে খোজ করলে পাওয়া সম্ভব।