কিছু মূর্খ নাস্তিক ও ভিন্ন ধরমালম্বিদের সাম্প্রতিক কালের একটি অভিযোগ হল যে বেদ এ সোম নামক নেশাজাতীয় পদার্থের কথা বলা হয়েছে। একটি পূর্ববর্তী নিবন্ধে উল্লেখ সাম্প্রতিক সময়ে বেদ নিয়ে সনাতন ধর্ম্যালম্বীদের ক্রমবর্ধমান সচেতনতার ভয়ে ভীতি ই বোধহয় এই অভিযোগ জন্য অনুঘটক।
প্রথমেই পাঠকদের জানিয়ে রাখা ভাল যে নেশাজাতীয় পদার্থ সম্পর্কে বেদ কি বলেছে।
নকী রেবন্তঃ সখ্যায়া বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরস্বঃ।
য়দা কুয়োসি নদানু সমূহস্যাদিত পিতেব হূয়সে।।
ঋগবেদ ৮.২১.১৪
অনুবাদ-তোমার নেশাকারী সঙ্গী/বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয় তারপরও বজ্রপাততূল্য এবং অবশ্য পরিত্যজ্য।
অথর্ববেদ ৭.৬০.১ এ বলা হয়েছে,
“ হে মনুষ্য, ইন্দ্রিয় কে সংযত কর। একমাত্র চরিত্রহীন লোকেরাই নেশা, নারীর দিকে আকৃষ্ট হয়।“
সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে।
তস্মান ব্রাহ্মনরাজন্যো বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেত্।।
মনুসংহিতা ১১.৯৪
অনুবাদ-
সুরা হল অন্নের মলস্বরুপ,পাপরুপ তাই ব্রাহ্মন,ক্ষত্রিয় নির্বিশেষে সকলের জন্যই অবশ্য বর্জনীয়।
সোম এর প্রথম পরিচয় আমরা পাই ঋগ্বেদ এ। সেখানে একে আয়ুবর্ধক অমৃত বলা হয়েছে।
ঋগ্বেদ ৮.৪৮.৩
অ অপামা সোমম অমৃত অভূমগ্নাম জ্যোতির অবিদাম দেবাম।
চ কি নুনম অস্মান কমবদ আরাতিহ কীম উ ধুরতির অমৃত মর্তস্য।।
এই মন্ত্রের মহর্ষি দয়ানন্দ এর ভাষ্যটি দেয়া হল-
সোম(ভাল ফল/খাদ্য কোনো মাদক পানীয় নয় ), অপামা (আমরা তোমাকে পান করি),
অমৃত অভূম (তুমি জীবনীবর্ধক), জ্যোতির অগ্ণম (শারীরিক শক্তি/ ঈশ্বরের আলো দানকারী),
অবিদাম দেবাম (ইন্দ্রিয়ের সংযমকারী),
কি নুনম অস্মান কমবদ আরাতিহ (এই পরিস্থিতিতে,আমার অভ্যন্তরীণ শত্রু( ইন্দ্রিয়) আমার কী ই বা করতে পারে?)
কিম উ ধুরতির অমৃত মর্তস্য।। (হে ঈশ্বর, এমনকি হিংস্র মানুষ আমার কি করতে পারে?)
ঋগ্বেদ এর নবম মণ্ডল এর অপর নাম সোম পবমন মণ্ডল বা বিশুদ্ধ সোম মণ্ডল। এই মণ্ডল এ সোম এর বিভিন্ন অর্থ ও তার প্রয়োগ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। একইভাব সামবেদ এর পূর্বারচীক এ ও পবমন পর্বে সোম কে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-
১)আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধিকারী
২)অনুপ্রেরণাদায়ী
৩)বুদ্ধিবৃত্তি উন্নয়নকারী ইত্যাদি।
অথর্ববেদ ১৪.১.৩ এ বলা হয়েছে,
“সাধারন ভাবে সোমকে তোমরা রোগনাশক হিসেবে জান, কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী দ্বেষ নাশক অমৃতরুপ সোম এর সন্ধান করেন।“
এছাড়া আয়ুর্বেদ এ বিভিন্ন রোগনাশক ভেষজ ঔষধ কে সোম বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখনো সোম এর গণ ও প্রজাতি জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা পাই যে সোম শব্দটি একদিকে পরমাত্মার অন্যতম নাম হিসেবে ও অপর দিকে রোগ নিরাময়কারী ঔষধ হিসেবে ব্যবহ্রত হয়।
0 মন্তব্য(গুলি)