https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদ মন্ত্রালোকে অবতার বাদ খণ্ডন

Friday, July 8, 2016
dashavatar এর চিত্র ফলাফল

বেদ সনাতন ধর্মের মূল আদি গ্রন্থ এবং ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত জ্ঞান।যদিওবেদের কোথাও কাল্পনিকতা অথবা অবতার বাদের কোন স্থান নেই। তবুও কিছু লৌকিক পন্ডিত বেদে অবতার বাদ অনুসন্ধানে ব্যস্ত। তারা বেদের যত্র তত্র হতে মন্ত্র সংগ্রহ করে অবতার বাদ প্রমাণ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেন।

এরকমই দুটি ভিত্তিহীন  দাবী আমরা  পর্যবেক্ষন করার চেষ্টা করবো-

=>পর্যবেক্ষন -০১
রূপং রূপং প্রতিরূপে বভূব তদস্য রূপম প্রতিচক্ষণায়।
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তাহস্য হরয়াঃ শতাদশ।।
(ঋকবেদ ৬/৪৭/১৮)

এই মন্ত্রে ডাঃ সেনগুপ্ত অবতার  বাদ প্রমাণ করার জন্য একটু কষ্ট কল্পনা করেছেন। তিনি মন্ত্রটির  এরূপ অর্থ করেছেন-
"ইন্দ্র মায়াশক্তির বলে বহূরূপ ধারন করেন এবং ইহার জীব দুঃখহর বহুশত অসংখ্য মুর্তি বিশেষত দশ মূর্তি (দশ অবতার) যুক্তিযুক্ত"

সমীক্ষাঃ
এই মন্ত্রে হরয়া বলতে শ্রী হরি বোঝায় নি এবং শতাদশ বলতেও দশ অবতার নয়। বরং (১০★১০০) একহাজার  রশ্নিকে বোঝানো হচ্ছে।  জীবাত্মার জন্মান্তরের  শরীর গ্রহনই এই মন্ত্রের মূল সারাংশ। কিন্তু ডাঃ সেনগুপ্ত শ্রীহরির অবতার গ্রহন ধরে নিয়ে বড়ই লীলাবিষ্ট হয়ে পড়েছেন।
অতএব আসুন মন্ত্রটির  যথার্থ ভাবার্থ দেখে নেই-

" বৈদুতিক শক্তি যে বস্তুতে যায় তারই রূপ গ্রহন করে। সেই রূপ জীবাত্মা কর্মের প্রবাহে জন্মজন্মান্তরে যেমন শরীর লাভ করুক না কেন, তখন তদাকার বৃত্তিলাভ করে। এবং যেমন যেমন বাহ্যবস্তুর সংস্পর্শে যায় তার থেকে তদাকার জ্ঞানলাভ হয়।  বিদ্যুৎশক্তি যেমন অসংখ্য তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তেমনি আমাদের শরীরস্থ অসংখ্য নাড়ীতে যে চিৎশক্তি প্রবাহিত হচ্ছে তার কেন্দ্রস্থল অন্তঃকরন। জীবাত্মা কেন্দ্রে বসেই শরীরস্থ নাড়ীর মধ্য দিয়ে যেমন চিৎশক্তির প্রবাহে জীবনীশক্তি ক্রিয়াশীল থাকে, তেমনি প্রবাহের যে অসংখ্য প্রবাহে ধারা বা রশ্নি আছে তারই সহায়তাই সমস্ত জ্ঞান লাভ করে। জীবাত্মা চিদবিন্দুর যে কেন্দ্রে থাকে সেইখান থেকেই উৎক্রমনের পথ।
জীবাত্মা যতক্ষন না ঐ উৎক্রমনের পথে গিয়ে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হয়, ততক্ষন কর্মের প্রবাহে যতবার যত জন্ম তাকে শরীর ধারন করতে হয়। সেই সেই শরীরের অন্তঃকরনে ঘটে বসেই জীবাত্মা দেশকাল পাত্রানুয়ায়ী তদাকার বৃত্তি, সংস্কার ও জ্ঞান লাভ করে সেই সেই শরীরের কার্য্যনির্বাহ করে থাকে।
(মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)


=>পর্যবেক্ষন -০২
ইদং বিষ্ণ বিচক্রমে ত্রেধা নি দধে পদম।
সমৃঢমস্য পাংসুয়ে।। ( ঋকবেদ ১/২২/১৭)
এই মন্ত্রে সায়নাচার্য্য পুরাণে বর্ণিত কিংবদন্তিতে প্রভাবিত হয়ে অর্থের অনর্থ ঘটিয়েছেন। এবং পাশ্চাত্য পন্ডিতগন ও সায়নাচার্যের ভাষ্যে প্রভাবিত হয়ে বড়ই অবিচার করেছেন।
তারা মন্ত্রের অর্থ এরূপ করেছেন-
ত্রেধা শব্দে তিনবার, বিচক্রম শব্দে ভ্রমণ করেছিলেন। পদং শব্দে পা, নিদধে পদে ধারন বা রক্ষা করেছিলেন। পাংসুয়ে শব্দে ধুলিকণা এবং সমুঢং পদে সমাবৃত হইয়াছিল।

এইরূপ অর্থ করার ফলে পরমাত্মা  বাচক   বেদক্ত ঐ বিষ্ণু শব্দকে Max muller প্রভূতি পাশ্চাত্য মনুষ্য বলে ধারনা করেছেন।
তার ফলে ঐ ঋক মন্ত্রের অর্থ দাড়িয়েছে-

"বিষ্ণু যখন মধ্য এশিয়া দলবল সহ এ দেশে আসিতেছিলেন,  তখন পথে তিন স্থানে বিশ্রাম করিয়াছিলেন এবং তাহার চরনধুলি জগৎ পরিব্যপ্ত হইয়াছিল।"

সমীক্ষাঃ
  বেদ হলো সমস্ত আধাত্ম শাস্ত্র। সমাধিবান মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিবান বেদমন্ত্র সাক্ষাৎ করে সমাধির ভাষায় তা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বেদের সেই মহত্তম আধ্যাত্মিক এবং যৌগিক অর্থ না করে পাশ্চাত্য পন্ডিতগন বেদোক্ত, পরমাত্ম বাচক ঐ বিষ্ণু শব্দে বিষ্ণুনামা লোক কল্পনা করে গেছেন।
আসুন এই মন্ত্রের যথার্থ ভাবার্থ বোঝার চেষ্টা করি-


বিষ্ণু শব্দে সর্বব্যাপক পরমেশ্বর। বিচক্রমে (বিশিষ্টভাবে ব্যাপ্ত), ত্রেধা অর্থে তিন কাল বোঝায়। পদং শব্দে পা নয়। (পরমং পদম মানে কি তাহলে মোটা পা?)  পদং অর্থে অধিপত্য, ঐশ্বর্য, জ্যোতি প্রভূতি বোঝায়। নিধতে অর্থে ক্ষেপন নয়, নি নিতিরাং দধে, ধৃতবান। চিরধৃত অর্থাৎ চির অক্ষুন্ন ভাবের দ্যোতক। পাংসুরে শব্দে ধুলি নয়(সুক্ষভাব)
সমুঢং শব্দও এই জগৎ তাতেই সম্যকরূপে অবস্থিত এই ভাব প্রকাশ করেছেস বেদের প্রসিদ্ধ পন্ডিত দূর্গাদাশ লাহিড়ি মশাই এই রূপ অর্থ করাই অভিমত।

কাজেই এই ঋকটির ভাবার্থ দাড়ায়-






মন্তব্যঃ সৃষ্টির পর থেকে শুরু করে বেদ আজ পর্যন্ত অবিকৃত রয়েছে।  কিন্তু বর্তমানে কিছু লৌকিক পন্ডিত বেদের যথার্থ ভাবার্থ না বুঝে নিজ স্বার্থে মন্ত্রার্থের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। এবং সাধারনেরা সেসব অর্থ গ্রহন করে ভূলটাই বুঝছে।তাই আসুন সঠিক সত্যটিকে জানার চেষ্টা করি। এবং ভূল ভ্রান্ত মত পরিত্যাগ করি।