"সাক্ষাত্কৃতধর্মোণ ঋষয়ো বভূবুস্তেহবরেভ্যোহসাক্ষাত্ কৃতধর্মস্য উপদেশেন মন্ত্রানসম্প্রাদু ; নিরুক্ত ১।১৯"
অর্থাৎ তপের বল দ্বারা যারা ধর্মের সাক্ষাৎ করেছেন তারাই (ধর্মের সাক্ষাৎ দ্রষ্টা ঋষি)। আর তাহারাই যারা ধর্মের সাক্ষাৎ করে নি তাদের উপদেশ দিয়েছেন।
নিরুক্তাকারের এই কথন যে - ঋষিদের এরূপ প্রসংশা যে, নানা প্রকার অভিপ্রায় দ্বারা ঋষিদের মন্ত্রদর্শন হয় (ঋষিণাং মন্ত্রদৃষ্টয়ো ভবন্তি ; নিরুক্ত ৭।৩)। ঋষিদের নানা প্রকার দৃষ্টির তাৎপর্য এই যে, তাদের বৃহৎ পুরুষার্থ দ্বারা মন্ত্রের ঠিক ঠিক প্রকার সাক্ষাৎ হয়।
=> এখানে স্পষ্ট ঋষিদের মন্ত্রদ্রষ্টা বলা হয়েছে , স্রষ্টা নয় ! দ্রষ্টা অর্থে যিনি দৃষ্ট করেছেন । এখানে দৃষ্ট অর্থে উপলব্ধি করা ! তাহলে স্রষ্টা কে ?
-> অবশ্যই ঈশ্বর ! কেননা বেদ স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয় বেদ ঈশ্বর হতে উৎপন্ন হয়েছে।
অনেকে বলেন , ঈশ্বর ঋষিদের মধ্যে জ্ঞান প্রদান করেছিলেন । সেই জ্ঞান দিয়ে ঋষিগণ নিজের ভাষায় নিজের মত মন্ত্র রচনা করে নিয়েছেন । জ্ঞান যেহেতু ঈশ্বরের , তাই বেদও ঈশ্বরের সৃষ্টি বলা হয়।
এখানে বেদ* অর্থে যদি বেদের মন্ত্রসকল না হয়ে শুধু বেদজ্ঞান* হয় , তাহলে অর্থ দাড়ায় - "বেদজ্ঞান ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন !" তবে আমি প্রশ্ন করি , বেদজ্ঞান* সদা নিত্য হলে তার সৃষ্টি কিভাবে সম্ভব ? নিত্য জিনিসের সৃষ্টি ধ্বংস থাকতে পারে না।
অতএব , প্রতিপন্ন হয় যে , বেদ ঈশ্বরের সৃষ্টি* একথা বললে এটাই বুঝতে হবে - বেদ জ্ঞান সমৃদ্ধ মন্ত্রসকল ই ঈশ্বরের সৃষ্টি !
@ ঈশ্বর তো নিরাকার ! তবে তার হতে শব্দরূপ বেদ কি প্রকারে উৎপন্ন হতে পারে ?
=> ভাবিয়া দেখো তো , এমন প্রশ্ন করলে ঈশ্বরের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে কিনা ? পরমেশ্বর সর্বশক্তিমান এটা ভুলিলে চলবে না । নিরাকার নির্গুন ঈশ্বর যদি জগৎ সৃষ্টি করতে পারেন , তবে বেদের বেলায় এ শঙ্কা কেন ?
আমরা মানসিক কোন বিষয় বিচার করিবার সময় মনে মনে বাক্যাদি সাধন ব্যতিরেকে প্রশ্নোত্তরাদিও শব্দোচ্চরনে সমর্থ হই । পরমেশ্বরের বিষয়েও এরূপ জ্ঞাত হওয়া কর্তব্য ! এইরূপেই ঈশ্বর অন্তরে কারনরূপ* শব্দে বেদ প্রদান করেছেন । বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত বুঝানোর চেষ্টা করি -
মহামুনি পাণিনী , পতঞ্জলি ,জৈমিনি সকলেই স্বীকার করেন শব্দ নিত্য । আমরা একটি শব্দ শুনিলে , সেই উচ্চারিত শব্দ জ্ঞানমধ্যে স্থির থাকে । পুণরায় একই শব্দ উচ্চারন করলে তা জ্ঞানমধ্যে স্থিত শব্দের অর্থপ্রকাশ করা হয় মাত্র যে ইহা সেই !! তাই উচ্চারণ ক্রিয়ার সাথে সাথে শব্দের শব্দের সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যায় না ! অতএব শব্দের নিত্যরূপ সর্বদা নিত্য থাকে , কার্যরূপ ধ্বংস হয় মাত্র ! উচ্চারণ ক্রিয়া না করলেও শব্দ বর্তমান থাকে !
এবং এই নিত্য শব্দে বেদ মন্ত্র সকল ও নিত্য থাকে !
পূর্বে বলেছি মনে মনে প্রশ্নোত্তরাদি শব্দোচ্চরনের কথা
আমরা জানি , কারণ ব্যতীত কার্য হয় না । এবং কার্য কারণ ব্যতীত হয় না ! সৃষ্ট মন্ত্ররূপ* কার্যের পিছনে সেই সৃষ্ট মন্ত্ররূপ* কার্যের কারণ থাকা আবশ্যক ! অতএব, কারণশব্দরূপে* বেদ মন্ত্র না থাকিলে কার্যশব্দরুপ* বেদ কোথা দিয়ে আসবে ? সমাধিস্ত ধ্যনস্থ ব্যক্তি সরাসরি ব্রহ্মে লিন হন ! তখন তার অন্তঃকরনে কারণশব্দরূপে* যে মন্ত্রোচ্চারিত হয় তা সরাসরি ঈশ্বরেরই সৃষ্টি ! এবং তার কার্যরূপ* হল উচ্চারিত মন্ত্র ! -তাছাড়া , এই কারণশব্দ অন্তঃকরণে উচ্চারিত না হইলে জ্ঞানই বা কিকরে উপলব্ধের অনুকূলে আসবে !
জ্ঞাণেন্দ্রিয় দ্বারা শ্রুত হইয়া যাহা গৃহীত হয় এবং বাগেন্দ্রিয় দ্বারা উচ্চারণে যাহা প্রকাশিত হইয়া থাকে ও যাহার নিবাসস্থল আকাশ - তাহাকেই শব্দ বলে।
> বেদ বিষয় ক্ষেত্রে যাহাই কারণ* তাহাই কার্য* হওয়া আবশ্যক ।কেননা , ঈশ্বর যতটুকু জ্ঞান প্রদান করেন, ঋষিদের শুধুমাত্র ততটুকুই বলার সামর্থ্য থাকতে পারে, তদ্ অতিরিক্ত বলার সামর্থ্য থাকতে পারে না ।এবার, কারণরূপ* মন্ত্রসকল ঈশ্বর সৃষ্ট হলে , কার্যরূপ মন্ত্রসকল ও ঈশ্বরের সৃষ্টি বলতে হবে ! ঋষি ওখানে প্রকাশের মাধ্যম মাত্র !
* বেদ নিত্য - তা সর্বকালের জন্যই একই ! কিকরে?
=> কারন (ঋ১০/১৯০/৩) প্রতিকল্পে সৃষ্টি একই ! একই সৃষ্টির জন্য একই জ্ঞান প্রয়োজন। জল তেষ্টা পেলে কারো নিকট " আমাকে একটু জল দাও" বলিব ! পুনরায় জল তেস্টা পেলেও সেই " আমাকে একটু জল দাও" বলিব । " আমাকে একটু দুধ দাও" বলিব না ! অতএব , সৃষ্টি যদি সকল কল্পে একই হয় ,বেদ মন্ত্রসকল ও একই হওয়া আবশ্যক।
সুতরাং , বেদ জ্ঞান সহ সকল মন্ত্রই ঈশ্বর প্রদত্ত । এজন্য একমাত্র বেদকেই অপৌরষেয় বলা হয় ! ঈশ্বরের বানী বলেই তা অভ্রান্তরূপে মানা হয়।
0 মন্তব্য(গুলি)