প্রশ্ন---অনেকে বলেন যে,যুগে যুগে তারকব্রহ্ম নামের পরিবর্তন হয়। ইহা কি সত্য?
উত্তর--যে বস্তু সর্বদেশে ও সর্বসময়ে একইভাবে অবস্থান করেন,তাহাই সত্য---তাঁহারই নাম আত্মা বা ধর্ম। এই আত্মার কোন নাম বা রূপ নাই। যাহার পরিবর্তন আছে তাহা কখনো সত্য বা ধর্ম হতে পারে না। সত্য সকল যুগে একইভাবে অবস্থান করিতেছেন। সুতরাং তারকব্রহ্ম নাম যদি যুগে যুগে পরিবর্তন হইয়া থাকে, তবে তাহা সত্য ধর্ম নহে--সত্য হইলে তাহার কখনোই পরিবর্তন হইত না।
ভগবানের কি যুগে যুগে পরিবর্তন হয়? ভগবান কি সকল যুগে একজনই থাকেন না? ভগবানের যদি কোন পরিবর্তন না হয়, তবে তাঁহার নামেরই বা পরিবর্তন হইবে কেন? এতদ্ব্যতীত ভগবান কি কোথাও বা কাহাকেও বলিয়াছেন যে,কোন যুগে তাঁহার নাম পরিবর্তন হইয়া কি নাম হইবে? যদি তাহা হইত,তবে বেদ বা উপনিষদে তাহা অবশ্যই উল্লেখ থাকিত।
সত্যযুগের তারকব্রহ্ম নামে বলা হইয়াছে---
নারায়ণ পরাবেদা, নারায়ণ পরাক্ষরাঃ।
নারায়ণ পরামুক্তিঃ, নারায়ণ পরাগতিঃ।।
ত্রেতাযুগের তারকব্রহ্ম নামে বলা হইয়াছে---
রাম নারায়ণ অনন্ত মুকুন্দ মধুসূদন।
কৃষ্ণ কেশব কংশারে হরে বৈকুন্ঠ বামন।।
দ্বাপরযুগের তারকব্রহ্ম নামে বলা হইয়াছে---
হরে মুরারে মধুকৈটভারে, গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে।
যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণুঃ, নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ।।
কলিযুগের তারকব্রহ্ম নামে বলা হইয়াছে---
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
উপরে বিভিন্ন যুগের তারকব্রহ্ম নাম দেওয়া হইল। ইহারা যে তারকব্রহ্ম নাম,তাহা কোন বেদ বা উপনিষদে দৃষ্ট হয় না।বেদ এবং উপনিষদই হইতেছে আমাদের অতি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ।ভগবানের যেই নামের দ্বারা মানবগণ মুক্ত হইবে, সেই নাম বেদ ও উপনিষদ-সমূহে না থাকার কারণ কি??? তবে কি বুঝিতে হইবে এইসব নাম বৈদিক যুগে ছিল না? ইহারা যদি সত্যসত্যই তারকব্রহ্ম নাম হইত,তবে কোনও না কোন বৈদিক ধর্মগ্রন্থে অবশ্যই লিপিবদ্ধ হইত। গীতা গ্রন্থেও এইসব তারকব্রহ্ম নামের কোন উল্লেখ নাই। সুতরাং বুঝিতে হইবে যে, ইহারা কখনও তারকব্রহ্ম নাম নহে---এইসব নাম নিজেদের মতবাদকে পুষ্ট করিবার জন্য কোন সম্প্রদায় কর্তৃক প্রচারিত হইয়াছে।
ইহার প্রমাণস্বরূপ বলা যায় যে, ত্রেতাযুগে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় নাই এবং সেই সময়ে কংশও নিধন হয় নাই। কাজেই শ্রীকৃষ্ণের নাম যে কংশারী, তাহা ত্রেতাযুগের মানবগণ জানিলে কি প্রকারে? অথচ ত্রেতা যুগেই তারকব্রহ্ম নামে কংশারীর উল্লেখ করা হইয়াছে। অতএব এই নাম যে ত্রেতাযুগে ছিল না, এই নামের যে কলিযুগেই উৎপত্তি হইয়াছে,তাহা বুঝিতে আর কাহারও সংশয় থাকিবার কোন কারণ নাই। লক্ষ্যনীয় যে, তারকব্রহ্ম নামে ব্রহ্ম নামের কোন চিহ্নও নাই।
রাম-কৃষ্ণাদির নামের দ্বারা যদি মানবগণ ত্রাণ পাইতে পারে, তবে শিব,দুর্গা,কালী,গণেশ প্রভৃতি দেবতাগণের নামেই বা তাহারা ত্রাণ পাইবে না কেন? এইসব নামকেই বা তারকব্রহ্ম নাম বলা হইবে না কেন? প্রকৃতপক্ষে ইহারা কেহই তারকরহ্ম নাম নহে। বেদ ও উপনিষদাদিতে ভগবানের নিকটে পৌছাইয়া দেওয়ার জন্য ঋক,যজু,সাম ও অথর্ব এই চারিবেদে একই ব্রহ্মগায়ত্রী মন্ত্র নির্দেশিত হইয়াছে। সেই অনুসারে চারিযুগে এই মন্ত্রেরই প্রয়োগ হইয়া আসিতেছে---কোন যুগেই ইহার পরিবর্তন হয় নাই।
তথ্যসূত্র- ধর্ম রহস্য।
#আমার কিছু কথা---
কিছু কিছু পৌরাণিক আবার বলবে-তারকব্রহ্মগুলো বেদ উপনিষদে না থাকলে কি হবে,অন্য পৌরাণিক শাস্ত্রগুলোতে তো আছে। আমি বলবো-যেহেতু আপনারাই স্বীকার করলেন বেদ উপনিষদ এ এসকল তারকব্রহ্ম নেই, সেহেতু আপনারাই বিচার করুন সত্যযুগে তো বেদ ছাড়া কিছু ছিলো না,এমনকি এসব পৌরাণিক শাস্ত্রও না। জেনে রাখা ভালো,বর্তমানের সর্বপ্রথম পুরাণগুলোও সর্বোচ্চ ২৫০০-২৭০০ বছরের পুরোনো(মৌখিক হিসেবে)। লিখিত হিসেবে ধরলে ১৫০০-১৭০০ বছরের পুরোনো।। ঈশ্বর কি এতোই অবিবেচক যে সত্য যুগের মানুষদের তারকব্রহ্মের জ্ঞান দিবে না!!!?? সত্য,ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের মানুষরা সকলেই কি তাহলে নরকে পতিত হবে!!? তারা কি তাহলে কেউই মুক্তি পাবে না??!
অনেকে আবার বলবেন পুরাণ গুলো আগে থেকেই ছিলো-প্রতি কল্পেই পুরাণ গুলো প্রকাশিত হয়! ---এটা ডাহা মিথ্যা। কেননা, পুরাণগুলি যদি শুরুতেই থাকতো,তাহলে এতে কোন কাহিনী বা ঘটনা লিপিবদ্ধ থাকতে পারতো না।আর ত্রেতা যুগের তারকব্রহ্মে রাম ও কৃষ্ণ এর নাম এসেছে।কৃষ্ণ কে আবার কংশাহারে বলা হয়েছে। তাহলে তো বলতে হবে ত্রেতা যুগের মানুষ রাই জানতো যে কৃষ্ণ কংশকে বধ করেছেন! অথচ তা ত্রেতাযুগের পরের যুগ দ্বাপর যুগে হয়েছে।তাছাড়া ত্রেতাযুগের তারকব্রহ্ম নিশ্চই দ্বাপর যুগের মানুষরাও জানতো।তাহলে তো তারা কংশ বধের আগেই জানার কথা যে কৃষ্ণ নামে কেউ ইতিমধ্যেই কংস কে বধ করে ফেলেছে!!-কিন্তু বাস্তবে তা দেখি না।আবার রাম আসার আগেই কি তাহলে মানুষ রাম রাম বলে মুক্তি পাবার জন্য ত্রেতাযুগের তারকব্রহ্ম জপছে!! এই সকল সত্যই মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়া।অতএব এই সকল তারকব্রহ্ম যে কলিযুগে রচিত কিছু সম্প্রদায় এর লোকেদের দ্বারা তা সুনিশ্চিত।
0 মন্তব্য(গুলি)
Author
Durjoy Arya