https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শ্রাদ্ধ ও পরলোক - পর্ব ০১

Friday, October 21, 2016
কর্মববাদকে অস্বীকার করায় জগতে নানা অশান্তি-উপদ্রবের সৃষ্টি হইয়াছে। পাপী যতই পাপ করুুক না কেন, তাহার কোনই চিন্তার কারণ নাই। আত্মীয়েরা মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান করিলেই তাহার মুক্তি। এই সর্বনাশকর প্রথার ফলে পূণ্যবানও পাপের ভয় করে না। দৈনিক, মাসিক, ষান্মাষিক ও বাৎসরিক শ্রাদ্ধে পিণ্ডদান করিয়া প্রেতের সদ্ গতি করা হয়। গয়া, প্রয়াগ, মথুরা কুরুক্ষেত্রাদি তীর্থ ক্ষেত্রে পিণ্ডদান করিয়াও পূর্ব পুরুষকে উদ্ধার করা হইল, কিন্তু তবুও উদ্ধারের কোনই লক্ষণদৃষ্ট হয় না।
তিথি অনুসারে একই ব্যক্তির শ্রাদ্ধ প্রতি বৎসরেই ঘুরিয়া ফিরিয়া আসে ও প্রতি বৎসরেই প্রেতকে উদ্ধার করা হয়। তীর্থে যত বার যত জন যায় শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা ও প্রেতোদ্ধারের সৎকার্যটি ততবার ততজনেই করে। মুসলমান খৃষ্টান বা ইহুদীর মুক্তি মাত্র এক মহম্মদ, যীশু ও মুসার দ্বারাই সম্ভব হয়, কিন্তু পৌরাণিকের স্বর্গ দিনে-দিনে, মাসে-মাসে বৎসরে কত শত পুরোহিতের দয়ায়, কত শত তীর্থে, কত শত পিণ্ডদানে, শ্রাদ্ধ-কার্যে ও পদধুলিতে তবে সম্ভবপর হয় (একই মৃত ব্যক্তির আত্মাকে কতবার যে উদ্ধার করিয়া পুনরায় আনিয়া পিণ্ড খাওয়ান হয় তাহার আর ইয়ত্তা নাই।)
শ্রাদ্ধের এত মাহাত্ম্য প্রচারিত হইল কেন ? গয়া, কুরুক্ষেত্র, প্রয়াগাদি তীর্থক্ষেত্রে শ্রাদ্ধ করিলে পিতরগণ অক্ষয় পূণ্য লাভ হইবে এই সব হিতবাণী প্রচারিত হইল কেন ? উত্তর অতীব সরল। জগতে দুই শ্রেণীর লোক আছে। প্রথম শ্রেণীর লোক ইহকালের ব্যবসায় গ্রহণ করিয়াছে। কৃষি, বাণিজ্য শারীরিক পরিশ্রমাদি দ্বারা তাহারা সমাজ সেবা করে। নাপিত ক্ষৌর কার্য দ্বারা, বেহারা পাল্কী বহন করিয়া, নাবিক নৌকা বাহিয়া, রজক কাপড় ধুইয়া, মেথর পায়খানা পরিস্কার করিয়া জীবিকা অর্জন করে। ইহাতে মূলধন বা শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। দ্বিতীয় দল, অর্থাৎ পুরোহিত পরকালের ব্যবসা লইয়া ব্যস্ত। ইহারা যে কোনও প্রকারের প্রেতাত্মা গণকে উদ্ধার করিবেই করিবে। ইহাদের ব্যবসার মূলধনের প্রয়োজন নাই, পিণ্ড দানের মন্ত্র দুই একটি কন্ঠস্থ করিলেই চলিবে। এ ব্যবসায়ে সাক্ষ্য প্রমাণের প্রয়োজন নাই, তাই পরকালের অন্ধকারের সমগ্র দায়ীত্ব তাঁহারাই লইয়াছেন। আত্মীয়ের নিকট হইতে মশারি, ছাতা, পালঙ্ক, থালা, বাটী, গাভী, পাদুকা ও খাদ্যদ্রব্যাদি লইয়া তাঁহারা প্রেতলোকে পাঠাইয়া দেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এ পর্যন্ত কোনও পার্শেলেরই ফেরৎ রসিদ আসিল না। পার্শেল যমরাজের বাড়ীতে বা প্রেতলোকে না গিয়া প্রতি শ্রাদ্ধেই তাহা পুরোহিতের বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হয়। এই জন্যই ঋষি বৃহস্পতি বলিয়াছিলেন— “মৃত পুরুষের শ্রাদ্ধ করিলেই যদি তাহা তৃপ্তিদায়ক হয় তবে বিদেশ যাত্রীর জন্য পাথেয় কল্পনা করা নিষ্প্রয়োজন।” ¹ গৃহ হইতে শ্রাদ্ধ করিলেই বিদেশগামীর নিকট সেই সব জিনিসপত্র গিয়া পৌঁছিত। ব্রাহ্মণ ভোজনের ব্যবস্থা দৃঢ় করিবার জন্য ঘোষিত হইল— “শ্রাদ্ধের প্রথম দিন যে সব ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রন করা হয় পিতরগণ তাঁহাদের শরীরের ঢুকিয়া ভোজন করিয়া তবে স্বস্থানে গমন করেন।” ²
অন্য দিকে পদ্ম পুরাণ বলিতেছে— “যাহারা তামাকখোর ব্রাহ্মণকে দান দক্ষিণা দেয় তাহারা নরকে যায় এবং সেই ব্রাহ্মণ গ্রাম্য শূকর হইয়া জন্মে।”³ ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইয়া বা ভোজ্য বস্তু দান করাইয়া দক্ষিণা দিতে হয় কিন্তু পূজা, অর্চনা, ব্রত, পার্বণ, বিবাহ ও শ্রাদ্ধে যে সব তামাক খোর ব্রাহ্মণ কড়ি-বাঁধা হুকায় তামাক খাইতে উপস্থিত হয় বা বিড়ি সিগারেট পান করে তাহাদিগকে দান দিয়া গৃহস্বামী নরক ভোগ করিতেছে এবং সেই সব ব্রাহ্মণ পদ্ম-পুরাণের মতে গ্রাম্য শুকর হইয়াছে সন্দেহ নাই।
শ্রাদ্ধ মাহাত্ম প্রচার করিবার অন্যান্য কারণও আছে। সমাজের মধ্যে অনেক দুষ্প্রবৃত্তির মনুষ্য বাস করে, তাহারা বিধবা বিবাহ দেখিয়া ভয় করে, তাহারা বিধবা হাত ছাড়া করিয়া বিবাহ দিতে চায় না, তাহলে তাঁহাদের ক্ষতি আছে। তাহারা সব সময়েই পতিলোকের মাহাত্ম্য কীর্তন করে। পতিলোকে পতি পিণ্ড খাইবার জন্য কিরূপ উদ্গ্রীব হইয়া আছে, মরিবার পরেই বা কিরূপে পতির পার্শ্বে গিয়া উপস্থিত হইতে পারিবে— এই সব কাহিনী সমাজের মধ্যে প্রচার করে। শ্রাদ্ধ রাখিতে হইলে বিধবাকে বিধবা করিয়াই রাখিতে হইবে তবেই ত সে পতি লোকে পতি কল্পনা করিয়া বৈধব্য পালন করিবে।
শ্রাদ্ধে দেশ ও সমাজ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। প্রথমতঃ— অন্নবস্ত্র সমস্যা, দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের দিনে কতকগুলি অলস, নিমন্ত্রণ জিবী শঠ ও ধূর্তকে ভোজন করাইতে গিয়া ঋণগ্রস্ত হইয়াও অজস্র অর্থ ব্যয় করিতে হয়। এক একটি গৃহ শ্রাদ্ধে শ্রাদ্ধেই নিঃশেষ হইয়াছে। দ্বিতীয়তঃ— সেই সব অলস, নিমন্ত্রণ প্রিয় পেটুক জগতের কোনও কার্যে না গিয়া সমাজের মধ্যে মৃত্যু ও শ্রাদ্ধের তালিকা সংগ্রহ করিয়া বেড়ায়। তৃতীয়তঃ— মৃত্যুর পর শোকাচ্ছন্ন পরিবারের শোকের আগুন নিভিতে না নিভিতেই অনেক সময় নিষ্ঠুর পুরোহিত অশক্ত,অক্ষম দীন, দরিদ্র পরিবারকে শ্রাদ্ধে পিণ্ডদানের ব্যয় ও দক্ষিণা নির্মম কসাইয়ের মত আদায় করে এবং নিজেকে রাক্ষসী বৃত্তিতে ভরপুর করিয়া তুলে। চতুর্থতঃ— স্বার্থপর সমাজপতি ও কুচক্রী স্বজন, শ্রাদ্ধের অবসরে অনেক গৃহস্বামীকে ছলে-বলে-কৌশলে বিপন্ন করিয়া বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। পঞ্চমতঃ— শ্রাদ্ধের সময় নানারূপ বাধা-বিপত্তি আসিতে পারে এই আশঙ্কায় অনেকে বিবেক বিরুদ্ধ কার্য করিয়া থাকেন। ষষ্ঠতঃ— শ্রাদ্ধকে কেন্দ্র করিয়াই ব্রাহ্মণপ্রাধান্য, জাতিভেদ, কৌলীন্য অস্পৃশ্যতার ব্যাধি প্রবল আকার ধারণ করিয়াছে। ব্রাহ্মণ ভোজন ও পুরোহিতের অনুগ্রহ না হইলে মৃত মাতাপিতাকে প্রেতলোকেই বাস করিতে হইবে,গঞ্জিকাসেবী মদ্যপায়ী ব্যাভিচারী পুরোহিতও সাধু সচ্চরিত্র পুরুষের শ্রাদ্ধ করিয়া তাহাকে স্বর্গে পাঠায়। শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদানই পুরুষ পরম্পরায় অভিজাত্যের সিংহাসনকে সুদৃঢ় রাখিয়াছে। সপ্তমতঃ— শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদানকে অবলম্বন করিয়া নানারূপ ভূত-প্রেতের কল্পিত কাহিনী দেশে প্রচারিত হইয়া অসংখ্য কুসংস্কারের রাজত্ব স্থাপন করিয়াছে। অষ্টমতঃ— পুরোহিত বংশের সর্বনাশ হইল। যজমানের মৃত পিতা-মাতাকে প্রেতলোক হইতে উদ্ধার করিতে করিতে পুরোহিতগণ নিজেরাই উদ্ধার পাইতে বসিয়াছে। অসত্য ও প্রতারণার জীবিকা যিনিই গ্রহণ করিবেন ধরা পৃষ্ঠ হইতে তিনিই মুছিয়া যাইবেন। পুরোহিতের ছেলেরা প্রায়ই শিক্ষা লাভের সুযোগ পায় না। কোনও প্রকারে প্রেতোদ্ধারের মন্ত্র ছেলেকে শিখাইতে পারিলেই কয়েক ঘর যজমানে সংসার চলিয়া যাইবে— ইহাই সাধারণতঃ পুরোহিতের মনোভাব। মানুষ মরিয়া কোথায় যায়, মানুষ কোথা হইতে আসিয়া জন্মগ্রহণ করে, মৃত্যুর পরপারে কি,— স্মৃতি ও দর্শন শাস্ত্র এসব বিষয়ে কি বলে— এসব ভুলিয়া গিয়াই হিন্দু এই সব শ্রাদ্ধ কল্পনা করিয়াছে।
____________
পরলোক সম্বন্ধে বৈদিক সিদ্ধান্ত এইরূপ ।বর্তমানের অস্তিতেই অতীত ও ভবিষ্যতের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় ।অদ্য আছে বলিয়াই কল্য এবং ইহলোক আছে বলিয়াই পরলোক ।যাহার অস্তিত্ব আছে তাহার নাস্তিত্ব আসিতে পারে না এবং যাহার নাস্তিত্ব আছে তাহার অস্তিত্ব আসিতে পারে না - “নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিদ্যতে সতঃ” ।জীবন সত্য বলিয়াই মৃত্যু ও পরজন্ম একই সত্যের তিনটি পরিভাষা ।আত্নার শরীর গ্রহণের নাম জন্ম এবং শরীর ত্যাগের নাম মৃত্যু ।অস্থি মাংসের জড় পিণ্ড এই শরীর নষ্ট হইলেই আত্নার নাশ হইতে পারে না -ইহাই বৈদিক সিদ্ধান্ত । কিন্তু এই শরীর পরিবর্তন বা মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায় ইহাই প্রশ্নঃ কর্মই মানুষকে মৃত্যুর পর উপযুক্ত পথে লইয়া যায় ।কর্মের দিক হইতে বিচার করিলে আমরা মানুষকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করিতে পারি । প্রথমতঃ— যাহাদের কর্ম পাপ ও পুণ্য মিশ্রিত ; দ্বিতীয়তঃ — যাঁহারা পাপ কার্য না করিয়া পুণ্য কার্য করেন কিন্তু সে পুণ্য কর্ম সকাম ; তৃতীয়তঃ— যাঁহারা পাপ না করিয়া পুণ্য কার্য করেন এবং সে পূণ্য কর্ম নিষ্কাম । এই তিন প্রকারের কর্ম অনুষারে মানুষ তিন প্রকার গতি প্রাপ্ত হয় ।দ্বিতীয় গতিকে পিতৃযান ও তৃতীয় গতিকে দেবযান বলে । এ পথ গ্রাণ্ড ট্রাঙ্ক রোডের ন্যায় কোন ভৌতিক পথ নহে ।
জীবের পারমার্থিক উন্নতির স্তর প্রকাশ করিবার জন্যই পিতৃযান ও দেবযান শব্দ ব্যবহৃত হয় ।
মানুষের শরীরও তিন প্রকারের -স্থূল ,সূক্ষ্ণ ও কারণ । এই তিন শরীরেরই পৃথক্ পৃথক্ কার্য । এক শরীর দ্বারা অন্য শরীরের কার্য চলে না ।
স্থূল শরীর-হস্ত , পাদ, বাক্, পায়ু ও উপস্থ এই পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় ; চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক্ এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং হৃত্ পিণ্ড ,ফুসফুস ইত্যাদি অবয়বের সমষ্টি মাত্র । এই স্থূল শরীর পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ এই পঞ্চভুত দ্বারা নির্মিত । পঞ্চভূত কারণ এবং শরীর কার্য । সূক্ষ্ণ শরীর বুদ্ধি, অহঙ্কার শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ, — প্রাণ-আপান-সমান-ব্যান এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন দ্বারা গঠিত ।
সূক্ষ্ন শরীর শক্তি রূপে অবস্থান করে ,সূক্ষ্ন শরীরের পুষ্টিতেই মানসিক উন্নতি । সত্ত্ব ,রজ ও তম গুণের সাম্যবস্থার নাম কারণ প্রকৃতি, ইহা দ্বারাই কারণ শরীর নির্মিত । এই শরীরের পুষ্টি হইলেই মনুষ্য যোগী এবং ঈশ্বরের ভক্ত হয় । স্থুল শরীরে অন্নময় কোষ, সূক্ষ্ণ শরীর প্রাণময় কোষ ও বিজ্ঞানময় কোষ এবং কারণ শরীরে অনন্দময় কোষ । স্থূল শরীরের মৃত্যুকেই লোকে মৃত্যু বলে । সূক্ষ্ণ শরীর ও কারণ শরীর আত্না হইতে বিচ্যুত হইলেই সম্পূর্ণ স্বাধিনতা বা মুক্তত।
চলবে........

কার্টেসী- পন্ডিত দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রীর "শ্রাদ্ধ ও পরলোক" বই

  1. পরকালের শাস্তিরব্যবস্থা কি

    ReplyDelete
  2. Thanks , have to change our wrong culture .

    ReplyDelete
  3. Very authentic. But those who are doing good karma and sins ie papi karma what is their destination after death ?

    ReplyDelete