প্রশ্নঃ
পৌরাণিক দাদাদের অনেকেই বলেন যে, দূর্গাসহ সকল দেব-দেবী নাকি কৃষ্ণের
দাস-দাসী বা সেবক/সেবিকা, তার ওপর চৈতন্য চরিতামৃত তেও বলা আছে, “একেলা
ঈশ্বর কৃষ্ণ, বাকি সব ভৃত্য”---এগুলোর সত্যতা কি?
উত্তরঃ প্রথমেই বলে নেয়া যাক- আমরা বৈদিকরা এই সকল আকার আকৃতি বিশিষ্ট দেব দেবীতে বিশ্বাসী নই এবং কৃষ্ণকে একজন বেদজ্ঞ, মহাত্মা ও যোগপুরুষ হিসেবে মানি। আর বেদ বিরোধী পুরাণের ঐ সকল শ্লোকেও বিশ্বাসী নই।
যাহোক, প্রশ্ন টা যেহেতু পৌরাণিক তাই পৌরাণিক গ্রন্থের আলোকেই দেখা যাক উক্ত দাবীর সত্যতা।
শারদীয় দূর্গাপূজা নিকটেই, তাই এই দেবীর ক্ষেত্রে থেকে দেখে নেয়া যাক উনি সত্যিই পৌরাণিক কৃষ্ণের দাসী কি না!
সাধারণ কমন সেন্স এটাই বলে যে কোন দাস/দাসী কে কোন মনিব নিশ্চই পূজা করেন না। অনুগামী ভৃত্যরাই মনিবের অনুগত থাকে।
পুরো বিচার্যটা পৌরাণিক আলোকে বিচার করে দেখা যাক---
শিবের স্ত্রী দূর্গা যদি কৃষ্ণের দাসীই হতো তাহলে নিশ্চই দূর্গা কৃষ্ণের পূজা করতো এবং কৃষ্ণ সে পূজা পেতো। কিন্তু বাস্তবে পৌরাণিক গ্রন্থ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেখা যায় যে, পরমাত্মা কৃষ্ণই দেবী দুর্গার পূজা করছে।
কেউ কেউ বলতে পারে যে, কৃষ্ণ আমাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেছে,মানব জীবনে এসে ভগবান মানুষের মতো সব কিছু করে ইত্যাদি বলে কেউ কৃষ্ণের পক্ষ নিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যা হলো ---
১। কৃষ্ণ পৃথিবীতে দূর্গা দেবীর পূজা করেন নি, তিনি গোলকের রাসমন্ডলে দূর্গা দেবীর পূজা করেছেন, সুতরাং এখানে এমন প্রশ্ন আসতেই পারে না যে তিনি আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য পূজা করেছেন।
২। গোলকে কৃষ্ণের কি অভাব ছিলো যে দেবী দুর্গার পূজা করতে হলো!
৩। কৃষ্ণ পরমাত্মা বা ঈশ্বর হলে তাকে তার তথাকথিত নিত্য ধামেও কেন দেবী দুর্গার পূজা করতে হলো??!
৪। শুধু পূজাই করলো তা নয় দুর্গা দেবীর যেভাবে স্তব-স্তুতি করলো ,পরমাত্মা হিসেবে কৃষ্ণের এ কাজ রীতিমতো চমকে দেয়ার মতো। কেননা যে কারো আরাধনা/পূজা করে সে কখনো আর যাই হোক ঈশ্বর হতে পারে না।
যাহোক, কথা না বাড়িয়ে উক্ত শ্লোক গুলো আগে দেখে নেয়া যাক---
নারায়ন উবাচ।
পুরা স্তুতা সা গোলকে কৃষ্ণেন পরমাত্মনা।
সংপূজ্য মধুমাসেচ প্রীতেন রাসমন্ডলে।
মধুকৈটভয়োর্যুদ্ধে দ্বিতীয়ে বিষ্ণুনা পুরা। ২।
তত্রৈব কালে সা দুর্গা ব্রহ্মণা প্রাণ সঙ্কটে।
চতুর্থে সংস্তুতা দেবী ভক্ত্যাচ ত্রিপুরারিণা। ৩।
পুরা ত্রিপুরযুদ্ধেন মহাঘোরতরে মুনে।
পঞ্চমে সংস্তুতা দেবী বৃত্রাসুরবধে তথা। ৪।
শক্রেণ সর্ব্বদেবৈশ্চ ঘোরেচ প্রাণ সঙ্কটে।
তদা মুনীন্দ্রৈরর্ম্মনুভির্ম্মানবৈঃ সুরথাদিভিঃ। ৫।
স’স্তুতা চ পূজিতা কল্পে কল্পে পরাৎপরা ।
স্তোত্রঞ্চ শ্রুয়তাং ব্রহ্মণ সর্ব্ববিমবিনাশনং।
সুখদং মোক্ষদং সারং ভবাদ্ধি পারকারণং। ৬।
----ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ডম্,অধ্যায় ৬৬,শ্লোকঃ ২-৬
অনুবাদঃ নারায়ণ ঋষি কহিলেন- দেবর্ষে ! পূর্বে গোলক ধামে রাসমন্ডলে পরাৎপর পরমাত্মা কৃষ্ণ মধুমাসে প্রীতিপূর্ণ হৃদয়ে সেই পরমাপ্রকৃতি দূর্গা দেবীর পূজা করিয়া তাহার স্তব করিয়া ছিলেন। পরে মধুকৈটভ যুদ্ধে বিষ্ণু কর্তৃক সংস্তুতা হন, তৎকালে প্রাণসঙ্কট উপস্থিত হইলে ব্রহ্মা তাঁহার স্তব করেন, তৎপরে মহাঘোরতর ত্রিপুর যুদ্ধাকালে ত্রিপুরারি দেবাদিদেব তাঁহার স্তুতিবাদে প্রবৃত্ত হন, অতঃপর বৃত্রাসুর বধকালে ঘোর প্রাণ সঙ্কট উপস্থিত হইলে দেবরাজ সমস্ত দেবগণে পরিবৃত হইয়া তাঁহার স্তুতিবাদ করেন, তদনন্তর মুনিত্রয়, মনু ও সুরথাদি মানবগণ প্রতি কল্পে সেই পরাৎপরা পরমাপ্রকৃতির স্তব করিয়াছিলেন। যে যে সময়ে যে যে পুরুষ কর্তৃক সেই মহাদেবী পূজিতা ও স্তুতা হইয়াছিলেন তাহা কীর্ত্তন করিলাম। এক্ষণে তাহার সর্ব্ববিঘ্ন বিনাশন সুখমোক্ষপ্রদ ভবাদ্ধি পারের কারণ যে সার স্ত্রোত্র তাহা শ্রবণ কর। (শ্লোক-২-৬)
*লক্ষ করুন পাঠক এখানে স্পষ্ট যে প্রথম দূর্গা পূজা করেছিলেন কৃষ্ণ তাও আবার গোলকের রাসমন্ডলে। এবার দেখা যাক কৃষ্ণের দূর্গা স্তুতি ...
শ্রীকৃষ্ণ উবাচ
ত্বমেব সর্ব্বজননী মূলপ্রকৃতিরীশ্বরী।
ত্বমেবাদ্যা সৃষ্টিবিধৌ স্বেচ্ছয়া ত্রিগুণাত্মিকা। ৭।
কার্য্যার্থে সগুণাত্বঞ্চ বস্তুতো নির্গুণা স্বয়ং।
পরব্রহ্মস্বরুপাত্বং সত্যানিত্যা সনাতনী। ৮।
তেজস্বরূপা পরমা ভক্তানুগ্রহ বিগ্রহা।
সর্ব্বস্বরূপা সর্ব্বেসা সর্ব্বাধারা পরাৎপরা। ৯।
সর্ব্ববীজ স্বরূপা চ সর্ব্বপূজ্যা নিরাশ্রয়া।
সর্ব্বজ্ঞা সর্ব্বতো ভদ্রা সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গলা। ১০।
সর্ব্ববুদ্ধিস্বরূপাচ সর্ব্বশক্তি স্বরূপিণী।
সর্ব্বজ্ঞানপ্রদা দেবী সর্ব্বজ্ঞা সর্ব্বভাবিনী। ১১।
ত্বং স্বাহা দেব দানেচ পিতৃদানে স্বধা স্বয়ং।
দক্ষিণা সর্ব্বদানেচ সর্ব্বশক্তিস্বরূপিণী। ১২।
নিদ্রাত্বঞ্চ দয়াত্বঞ্চ ভৃষ্ণাতৃষ্ণাত্মনশ্চ মে।
ক্ষুৎক্ষান্তিঃ শান্তিরীশাচ কান্তিঃ সৃষ্টিশ্চ শাশ্বতী। ১৩।
শ্রদ্ধা পুষ্টিশ্চ তন্ত্রাচ লজ্জা শোভা দয়া সদা।
সতাং সস্পংসরূপা চ বিপত্তিরসতামিহ। ১৪।
প্রীতিরূপা পুণ্যবতী পাপিনাং কলহাঙ্কুরা।
শ্বশংকর্ম্মময়ী শক্তিঃ সর্ব্বদা সর্ব্বজীবিনাম্। ১৫।
----ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ডম্,অধ্যায় ৬৬,শ্লোকঃ ৭-১৫
অনুবাদঃ
প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ গোলকধামে সেই দুর্গা দেবীর এই রূপ স্তব করিয়াছিলেন, দেবী ! তুমি সর্ব্বজননী মূল প্রকৃতি, ঈশ্বরী ও সৃষ্টি বিধান কালে আদ্যাশক্তি বলিয়া কীর্ত্তিতা হইয়া থাক কেবল স্বেচ্ছাক্রমে তুমি ত্রিগুণাত্মিকা হও। ৭।
দুর্গে! তুমি বস্তুত স্বয়ং নির্গুণা, কেবল কার্য্যার্থে সগুণারূপে প্রকাশ মানা হও। তুমি পরব্রহ্ম স্বরূপা, সত্যরুপিণী, নিত্যা, সনাতনী, তেজ-স্বরূপা পরমা প্রকৃতি। ভক্তজনের প্রতি অনুগ্রহার্থ তোমার মূর্তি প্রকাশ হয় এবং তুমি সর্ব্বস্বরূপা সর্ব্বেশ্বরী সর্ব্বাধারা পরাৎপরা বলিয়া অভিস্থিতা হইয়া থাক। ৮-৯।
দেবি! তুমি সর্ব্ববীজস্বরূপা, সর্ব্বপূজা, নিরাশ্রয়া, সর্বজ্ঞা, সর্ব্বতো-ভদ্রা, সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গলা, সর্ব্ববুদ্ধি স্বরূপা, সর্ব্বশক্তি স্বরুপিণী, সর্ব্বজ্ঞানদায়িনী ও সর্ব্বভাবিনী নামে বিখ্যাত রহিয়াছ। ১০-১১।
***দুর্গা যদি সর্বজ্ঞা হন, তাহলে তো তিনিই স্রষ্টা হবার কথা। পৌরাণীক দাদারা সর্বজ্ঞা দুর্গাকেও কৃষ্ণের দাসী বানিয়ে ফেলেছে!
দেবদ্দেশে দানকালে তুমি স্বাহা পিতৃগণের উদ্দেশ্যে দান কালে স্বধা ও সর্ব্বদানে দক্ষিণা নামে শব্দিতা হও এবং তুমি সর্ব্বাশক্তি স্বরুপিণী হইয়া সর্ব্বদা সর্ব্বজীবে অধিষ্ঠান করিতেছ। ১২।
পরমেশ্বরি! তুমি আমার ও নিজেরও নিদ্রা, দয়া, তৃষ্ণা, ক্ষুধা, ক্ষমা ও শান্তি স্বরূপা আর তুমি ঈশ্বরী কান্তি ও নিত্যা সৃষ্টি বলিয়া নির্দ্দিষ্টা হইয়া থাক। ১৩।
***দেখুন দূর্গা কৃষ্ণকে ক্ষমা করে দেয়, ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণ করে। তাহলে এবার বিচার করে দেখুন তো কে কার দাস......!
তুমি শ্রদ্ধা, পুষ্টি, লজ্জা, শোভা, দয়া এবং সাধুদিগের সম্পত্তিরূপা ও অসাধুদিগের বিপত্তিওরূপা হইয়া অবস্থান করিতেছ। ১৪।
দেবি! তুমি প্রীতিরূপা, পুণ্যবতী, পাপিগণের কলহাঙ্কুরা এবং সর্ব্বদা সর্ব্বজীবের কর্মমুখী শক্তি রূপে সর্ব্বদা স্তিতি করিতেছ। ১৫।
দেবভ্যো স্বপদং দাত্রী ধাতুর্ব্বা শ্রীকৃপাময়ী।
হিতায় সর্ব্বদেবানাং সর্ব্বাসুর বিনাশিনী। ১৬।
যোগনিদ্রা যোগরূপা যোগধাত্রীচ যোগিনীং।
সিদ্ধিস্বরূপা সিদ্ধিনাং সিদ্ধিদা সিদ্ধযোগিণী। ১৭।
মাহেশ্বরী চ ব্রাহ্মণী বিষ্ণুমায়া চ বৈষ্ণবী।
ভদ্রদা ভদ্রকালীচ সর্ব্বলোক ভয়ঙ্করী। ১৮।
গ্রামে গ্রামে গ্রামদেবী গৃহদেবী গৃহে গৃহে।
সিতাং কীর্ত্তিঃ প্রতিষ্ঠা চ নিদ্রা ত্বমসতাং সদা। ১৯।
মহাযুদ্ধে মহামারী দুষ্টসংহার রূপিনী।
রক্ষাস্বরূপা শিষ্টানাং মাতেব হিতকারিণী। ২০।
বন্দ্যা পূজ্যা স্তুতাত্বঞ্চ ব্রহ্মাদীনাঞ্চ সর্ব্বশঃ
ব্রহ্মণ্যরূপা বিপ্রাণাং তপস্যাচ তপস্বিনাং। ২১।
বিদ্যা বিদ্যাবতাং ত্বঞ্চ বুদ্ধির্বুদ্ধিমতাং সতাম্।
মেধাস্মৃতিস্বরূপা চ প্রতিভা প্রতিভাবতাম। ২২।
রাজ্ঞাং প্রতাপরূপা চ বিশাং বাণিজ্যরূপিণী।
সৃষ্টৌ সৃষ্টিস্বরূপা ত্বং রক্ষারূপা চ পালনে। ২৩।
তথান্তে ত্বং মহামারী বিশ্বস্য বিশ্বপূজিতে।
কালরাত্রির্মহারাত্রির্মোহরাত্রিশ্চ মোহিনী। ২৪।
দূরত্যয়া মে মায়াত্বং যযা সংমোহিতং জগৎ।
মায়ামুগ্ধোহি বিদ্বাংশ্চ মোক্ষমার্গং ন পশ্যতি। ২৫।
ইত্যাত্ময়া কৃতং স্ত্রোত্রং দুর্গায়া দুর্গনাশনং।
পূজাকালে পঠেদযো হি সিদ্ধির্ভবতি বাঞ্ছিতা। ২৬।
----ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ডম্,অধ্যায় ৬৬,শ্লোকঃ ১৬-২৬
অনুবাদঃ
তুমি কৃপাময়ী, তোমার কৃপায় ব্রহ্মা সৃষ্টি কর্তৃত্ব ও দেবগণ স্বীয় স্বীয় পদ প্রাপ্ত হইয়াছেন। সমস্ত দেবের হিতার্থে তুমি সমস্ত অসুরগণের সংহার করিয়াছ। ১৬।
***ও আচ্ছা! তাহলে পৌরাণিক ব্রহ্মার সৃষ্টী ক্ষমতা দূর্গা থেকে প্রাপ্ত হইয়াছেন, আবার দেবতারাও তাদের পদ দূর্গা থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন!! তাহলে কৃষ্ণ কি করে পরমাত্মা হয়!!!? এখান থেকে তো বুঝা যায় দুর্গাই পরমাত্মা। ! (যদিও এই আকার আকৃতি বিশিষ্ট দূর্গা কখনোই পরমাত্মা নয়)
তুমি যোগনিদ্রা, যোগরূপা, যোগধাত্রী, যোগিণী, সিদ্ধস্বরূপা, সিদ্ধগণের সিদ্ধিদায়িনী ও সিদ্ধযোগিণী নামে কীর্ত্তিতা হও। ১৭।
তুমি মহেশ্বরী, ব্রহ্মাণী, বিষ্ণুমায়া, বৈষ্ণবী, ভদ্রদায়িনী, ভদ্রকালী ও সর্ব্বলোক ভয়ঙ্করী বলিয়া নির্দ্দিষ্টা আছ। ১৮।
তুমি গ্রামে গ্রামে গ্রামদেবী ও গৃহে গৃহে গৃহদেবীরূপে অধিষ্ঠান করিতেছ, তোমাকে সর্ব্বদা সাধুগণের কীর্ত্তি ও প্রতিষ্ঠা এবং অসাধুগণের নিন্দারূপিনী বলিয়া নির্দেশ করা যায়। ১৯।
তুমি মহাযুদ্ধে মহামারী দুষ্ট সংহাররূপিণী ও শিষ্টগণের রক্ষাস্বরূপা, জননীর ন্যায় হিতকারিণী হও। ২০।
তুমি সর্ব্বদা ব্রহ্মাদি কর্ত্তৃক বন্দনায়া, পূজা ও স্তুতা হইয়া থাক, আর তুমি বিপ্রগণের ব্রাহ্মণ্যরূপা,
তপস্বীগণের তপস্যা, বিদ্যাবানদিগের বিদ্যা, বুদ্ধিমানদিগের বুদ্ধি, সাধুগণের মেধা ও স্মৃতিস্বরূপা, প্রতিভাশালী ব্যাক্তি দিগের প্রতিভা, রাজাদিগের প্রতাপরূপ, বৈশ্যগণের বাণিজ্যরূপিণী, সৃষ্টিবিষয়ে সৃষ্টিরূপা ও পালন বিষয়ে রক্ষারূপা হইয়া থাক। ২১-২৩।।
***কৃষ্ণ নয় শূধু ব্রহ্মাও দূর্গা পূজা করে!
বিশ্বপূজিতে! তুমি বিশ্ব সংহারকালে মহামারী স্বরূপা এবং তুমি কালরাত্রি, মহারাত্রি, মোহরাত্রি ও মোহিনী নাম ধারণ করিয়াছ। ২৪।
দেবি! তুমি আমার দুরত্যয়া মায়া। তোমা কর্তৃক সমস্ত জগত মোহিত রহিয়াছে। জ্ঞানবান ব্যক্তিও মায়া রূপিণী তোমার কর্ত্তৃক মুগ্ধ হইয়া মোক্ষ মার্গ দর্শন করিতে সমর্থ হয় না। ২৫।
হে নারদ! পরাৎপর পরমাত্মা কৃষ্ণ সেই পরমাপ্রকৃতি দূর্গাদেবীর এই দূর্গতিনাশন স্তব করিয়াছিলেন। পূজাকালে যে ব্যক্তি এই স্ত্রোত্র পাঠ করে তাহার মনোবাঞ্ছা পরিপূর্ণ হয়। ২৬।
উপরে শ্রীকৃষ্ণ কর্ত্তৃক দুর্গা স্তুতি সম্পন্ন বর্ণনা করা হলো। এবার পাঠক শ্রেণী নিজেরাই বিচার করুন যে কি করে দূর্গা কৃষ্ণের সেবিকা/দাসী হয়?! আর কি করে ই কৃষ্ণ পরমাত্মা হয় যে কি না অন্য কারো স্তব স্তুতি, পূজায় ব্যস্ত !!
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমরা বৈদিকরা পুরাণের উল্লেখিত আকার আকৃতিবিশীষ্ট দূর্গা কে মানি না কেননা তা বেদ বিরোধী। আমরা “দূর্গা”-কে ঈশ্বরের গুণবাচক নাম হিসেবে মানি।
আর কৃষ্ণ যে পরমাত্মা নয় তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেলো এবং চৈতন্য চরিতামৃতের কৃষ্ণ ছাড়া বাকি সব ভৃত্য কথাটীও মিথ্যা প্রমাণিত হলো পুরাণ দ্বারাই কেননা এক ঈশ্বরের কোন আরাধ্য থাকতে পারে না।
উত্তরঃ প্রথমেই বলে নেয়া যাক- আমরা বৈদিকরা এই সকল আকার আকৃতি বিশিষ্ট দেব দেবীতে বিশ্বাসী নই এবং কৃষ্ণকে একজন বেদজ্ঞ, মহাত্মা ও যোগপুরুষ হিসেবে মানি। আর বেদ বিরোধী পুরাণের ঐ সকল শ্লোকেও বিশ্বাসী নই।
যাহোক, প্রশ্ন টা যেহেতু পৌরাণিক তাই পৌরাণিক গ্রন্থের আলোকেই দেখা যাক উক্ত দাবীর সত্যতা।
শারদীয় দূর্গাপূজা নিকটেই, তাই এই দেবীর ক্ষেত্রে থেকে দেখে নেয়া যাক উনি সত্যিই পৌরাণিক কৃষ্ণের দাসী কি না!
সাধারণ কমন সেন্স এটাই বলে যে কোন দাস/দাসী কে কোন মনিব নিশ্চই পূজা করেন না। অনুগামী ভৃত্যরাই মনিবের অনুগত থাকে।
পুরো বিচার্যটা পৌরাণিক আলোকে বিচার করে দেখা যাক---
শিবের স্ত্রী দূর্গা যদি কৃষ্ণের দাসীই হতো তাহলে নিশ্চই দূর্গা কৃষ্ণের পূজা করতো এবং কৃষ্ণ সে পূজা পেতো। কিন্তু বাস্তবে পৌরাণিক গ্রন্থ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেখা যায় যে, পরমাত্মা কৃষ্ণই দেবী দুর্গার পূজা করছে।
কেউ কেউ বলতে পারে যে, কৃষ্ণ আমাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য দেবী দুর্গার পূজা করেছে,মানব জীবনে এসে ভগবান মানুষের মতো সব কিছু করে ইত্যাদি বলে কেউ কৃষ্ণের পক্ষ নিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যা হলো ---
১। কৃষ্ণ পৃথিবীতে দূর্গা দেবীর পূজা করেন নি, তিনি গোলকের রাসমন্ডলে দূর্গা দেবীর পূজা করেছেন, সুতরাং এখানে এমন প্রশ্ন আসতেই পারে না যে তিনি আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য পূজা করেছেন।
২। গোলকে কৃষ্ণের কি অভাব ছিলো যে দেবী দুর্গার পূজা করতে হলো!
৩। কৃষ্ণ পরমাত্মা বা ঈশ্বর হলে তাকে তার তথাকথিত নিত্য ধামেও কেন দেবী দুর্গার পূজা করতে হলো??!
৪। শুধু পূজাই করলো তা নয় দুর্গা দেবীর যেভাবে স্তব-স্তুতি করলো ,পরমাত্মা হিসেবে কৃষ্ণের এ কাজ রীতিমতো চমকে দেয়ার মতো। কেননা যে কারো আরাধনা/পূজা করে সে কখনো আর যাই হোক ঈশ্বর হতে পারে না।
যাহোক, কথা না বাড়িয়ে উক্ত শ্লোক গুলো আগে দেখে নেয়া যাক---
নারায়ন উবাচ।
পুরা স্তুতা সা গোলকে কৃষ্ণেন পরমাত্মনা।
সংপূজ্য মধুমাসেচ প্রীতেন রাসমন্ডলে।
মধুকৈটভয়োর্যুদ্ধে দ্বিতীয়ে বিষ্ণুনা পুরা। ২।
তত্রৈব কালে সা দুর্গা ব্রহ্মণা প্রাণ সঙ্কটে।
চতুর্থে সংস্তুতা দেবী ভক্ত্যাচ ত্রিপুরারিণা। ৩।
পুরা ত্রিপুরযুদ্ধেন মহাঘোরতরে মুনে।
পঞ্চমে সংস্তুতা দেবী বৃত্রাসুরবধে তথা। ৪।
শক্রেণ সর্ব্বদেবৈশ্চ ঘোরেচ প্রাণ সঙ্কটে।
তদা মুনীন্দ্রৈরর্ম্মনুভির্ম্মানবৈঃ সুরথাদিভিঃ। ৫।
স’স্তুতা চ পূজিতা কল্পে কল্পে পরাৎপরা ।
স্তোত্রঞ্চ শ্রুয়তাং ব্রহ্মণ সর্ব্ববিমবিনাশনং।
সুখদং মোক্ষদং সারং ভবাদ্ধি পারকারণং। ৬।
----ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ডম্,অধ্যায় ৬৬,শ্লোকঃ ২-৬
অনুবাদঃ নারায়ণ ঋষি কহিলেন- দেবর্ষে ! পূর্বে গোলক ধামে রাসমন্ডলে পরাৎপর পরমাত্মা কৃষ্ণ মধুমাসে প্রীতিপূর্ণ হৃদয়ে সেই পরমাপ্রকৃতি দূর্গা দেবীর পূজা করিয়া তাহার স্তব করিয়া ছিলেন। পরে মধুকৈটভ যুদ্ধে বিষ্ণু কর্তৃক সংস্তুতা হন, তৎকালে প্রাণসঙ্কট উপস্থিত হইলে ব্রহ্মা তাঁহার স্তব করেন, তৎপরে মহাঘোরতর ত্রিপুর যুদ্ধাকালে ত্রিপুরারি দেবাদিদেব তাঁহার স্তুতিবাদে প্রবৃত্ত হন, অতঃপর বৃত্রাসুর বধকালে ঘোর প্রাণ সঙ্কট উপস্থিত হইলে দেবরাজ সমস্ত দেবগণে পরিবৃত হইয়া তাঁহার স্তুতিবাদ করেন, তদনন্তর মুনিত্রয়, মনু ও সুরথাদি মানবগণ প্রতি কল্পে সেই পরাৎপরা পরমাপ্রকৃতির স্তব করিয়াছিলেন। যে যে সময়ে যে যে পুরুষ কর্তৃক সেই মহাদেবী পূজিতা ও স্তুতা হইয়াছিলেন তাহা কীর্ত্তন করিলাম। এক্ষণে তাহার সর্ব্ববিঘ্ন বিনাশন সুখমোক্ষপ্রদ ভবাদ্ধি পারের কারণ যে সার স্ত্রোত্র তাহা শ্রবণ কর। (শ্লোক-২-৬)
*লক্ষ করুন পাঠক এখানে স্পষ্ট যে প্রথম দূর্গা পূজা করেছিলেন কৃষ্ণ তাও আবার গোলকের রাসমন্ডলে। এবার দেখা যাক কৃষ্ণের দূর্গা স্তুতি ...
শ্রীকৃষ্ণ উবাচ
ত্বমেব সর্ব্বজননী মূলপ্রকৃতিরীশ্বরী।
ত্বমেবাদ্যা সৃষ্টিবিধৌ স্বেচ্ছয়া ত্রিগুণাত্মিকা। ৭।
কার্য্যার্থে সগুণাত্বঞ্চ বস্তুতো নির্গুণা স্বয়ং।
পরব্রহ্মস্বরুপাত্বং সত্যানিত্যা সনাতনী। ৮।
তেজস্বরূপা পরমা ভক্তানুগ্রহ বিগ্রহা।
সর্ব্বস্বরূপা সর্ব্বেসা সর্ব্বাধারা পরাৎপরা। ৯।
সর্ব্ববীজ স্বরূপা চ সর্ব্বপূজ্যা নিরাশ্রয়া।
সর্ব্বজ্ঞা সর্ব্বতো ভদ্রা সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গলা। ১০।
সর্ব্ববুদ্ধিস্বরূপাচ সর্ব্বশক্তি স্বরূপিণী।
সর্ব্বজ্ঞানপ্রদা দেবী সর্ব্বজ্ঞা সর্ব্বভাবিনী। ১১।
ত্বং স্বাহা দেব দানেচ পিতৃদানে স্বধা স্বয়ং।
দক্ষিণা সর্ব্বদানেচ সর্ব্বশক্তিস্বরূপিণী। ১২।
নিদ্রাত্বঞ্চ দয়াত্বঞ্চ ভৃষ্ণাতৃষ্ণাত্মনশ্চ মে।
ক্ষুৎক্ষান্তিঃ শান্তিরীশাচ কান্তিঃ সৃষ্টিশ্চ শাশ্বতী। ১৩।
শ্রদ্ধা পুষ্টিশ্চ তন্ত্রাচ লজ্জা শোভা দয়া সদা।
সতাং সস্পংসরূপা চ বিপত্তিরসতামিহ। ১৪।
প্রীতিরূপা পুণ্যবতী পাপিনাং কলহাঙ্কুরা।
শ্বশংকর্ম্মময়ী শক্তিঃ সর্ব্বদা সর্ব্বজীবিনাম্। ১৫।
----ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ডম্,অধ্যায় ৬৬,শ্লোকঃ ৭-১৫
অনুবাদঃ
প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ গোলকধামে সেই দুর্গা দেবীর এই রূপ স্তব করিয়াছিলেন, দেবী ! তুমি সর্ব্বজননী মূল প্রকৃতি, ঈশ্বরী ও সৃষ্টি বিধান কালে আদ্যাশক্তি বলিয়া কীর্ত্তিতা হইয়া থাক কেবল স্বেচ্ছাক্রমে তুমি ত্রিগুণাত্মিকা হও। ৭।
দুর্গে! তুমি বস্তুত স্বয়ং নির্গুণা, কেবল কার্য্যার্থে সগুণারূপে প্রকাশ মানা হও। তুমি পরব্রহ্ম স্বরূপা, সত্যরুপিণী, নিত্যা, সনাতনী, তেজ-স্বরূপা পরমা প্রকৃতি। ভক্তজনের প্রতি অনুগ্রহার্থ তোমার মূর্তি প্রকাশ হয় এবং তুমি সর্ব্বস্বরূপা সর্ব্বেশ্বরী সর্ব্বাধারা পরাৎপরা বলিয়া অভিস্থিতা হইয়া থাক। ৮-৯।
দেবি! তুমি সর্ব্ববীজস্বরূপা, সর্ব্বপূজা, নিরাশ্রয়া, সর্বজ্ঞা, সর্ব্বতো-ভদ্রা, সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গলা, সর্ব্ববুদ্ধি স্বরূপা, সর্ব্বশক্তি স্বরুপিণী, সর্ব্বজ্ঞানদায়িনী ও সর্ব্বভাবিনী নামে বিখ্যাত রহিয়াছ। ১০-১১।
***দুর্গা যদি সর্বজ্ঞা হন, তাহলে তো তিনিই স্রষ্টা হবার কথা। পৌরাণীক দাদারা সর্বজ্ঞা দুর্গাকেও কৃষ্ণের দাসী বানিয়ে ফেলেছে!
দেবদ্দেশে দানকালে তুমি স্বাহা পিতৃগণের উদ্দেশ্যে দান কালে স্বধা ও সর্ব্বদানে দক্ষিণা নামে শব্দিতা হও এবং তুমি সর্ব্বাশক্তি স্বরুপিণী হইয়া সর্ব্বদা সর্ব্বজীবে অধিষ্ঠান করিতেছ। ১২।
পরমেশ্বরি! তুমি আমার ও নিজেরও নিদ্রা, দয়া, তৃষ্ণা, ক্ষুধা, ক্ষমা ও শান্তি স্বরূপা আর তুমি ঈশ্বরী কান্তি ও নিত্যা সৃষ্টি বলিয়া নির্দ্দিষ্টা হইয়া থাক। ১৩।
***দেখুন দূর্গা কৃষ্ণকে ক্ষমা করে দেয়, ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণ করে। তাহলে এবার বিচার করে দেখুন তো কে কার দাস......!
তুমি শ্রদ্ধা, পুষ্টি, লজ্জা, শোভা, দয়া এবং সাধুদিগের সম্পত্তিরূপা ও অসাধুদিগের বিপত্তিওরূপা হইয়া অবস্থান করিতেছ। ১৪।
দেবি! তুমি প্রীতিরূপা, পুণ্যবতী, পাপিগণের কলহাঙ্কুরা এবং সর্ব্বদা সর্ব্বজীবের কর্মমুখী শক্তি রূপে সর্ব্বদা স্তিতি করিতেছ। ১৫।
দেবভ্যো স্বপদং দাত্রী ধাতুর্ব্বা শ্রীকৃপাময়ী।
হিতায় সর্ব্বদেবানাং সর্ব্বাসুর বিনাশিনী। ১৬।
যোগনিদ্রা যোগরূপা যোগধাত্রীচ যোগিনীং।
সিদ্ধিস্বরূপা সিদ্ধিনাং সিদ্ধিদা সিদ্ধযোগিণী। ১৭।
মাহেশ্বরী চ ব্রাহ্মণী বিষ্ণুমায়া চ বৈষ্ণবী।
ভদ্রদা ভদ্রকালীচ সর্ব্বলোক ভয়ঙ্করী। ১৮।
গ্রামে গ্রামে গ্রামদেবী গৃহদেবী গৃহে গৃহে।
সিতাং কীর্ত্তিঃ প্রতিষ্ঠা চ নিদ্রা ত্বমসতাং সদা। ১৯।
মহাযুদ্ধে মহামারী দুষ্টসংহার রূপিনী।
রক্ষাস্বরূপা শিষ্টানাং মাতেব হিতকারিণী। ২০।
বন্দ্যা পূজ্যা স্তুতাত্বঞ্চ ব্রহ্মাদীনাঞ্চ সর্ব্বশঃ
ব্রহ্মণ্যরূপা বিপ্রাণাং তপস্যাচ তপস্বিনাং। ২১।
বিদ্যা বিদ্যাবতাং ত্বঞ্চ বুদ্ধির্বুদ্ধিমতাং সতাম্।
মেধাস্মৃতিস্বরূপা চ প্রতিভা প্রতিভাবতাম। ২২।
রাজ্ঞাং প্রতাপরূপা চ বিশাং বাণিজ্যরূপিণী।
সৃষ্টৌ সৃষ্টিস্বরূপা ত্বং রক্ষারূপা চ পালনে। ২৩।
তথান্তে ত্বং মহামারী বিশ্বস্য বিশ্বপূজিতে।
কালরাত্রির্মহারাত্রির্মোহরাত্রিশ্চ মোহিনী। ২৪।
দূরত্যয়া মে মায়াত্বং যযা সংমোহিতং জগৎ।
মায়ামুগ্ধোহি বিদ্বাংশ্চ মোক্ষমার্গং ন পশ্যতি। ২৫।
ইত্যাত্ময়া কৃতং স্ত্রোত্রং দুর্গায়া দুর্গনাশনং।
পূজাকালে পঠেদযো হি সিদ্ধির্ভবতি বাঞ্ছিতা। ২৬।
----ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ডম্,অধ্যায় ৬৬,শ্লোকঃ ১৬-২৬
অনুবাদঃ
তুমি কৃপাময়ী, তোমার কৃপায় ব্রহ্মা সৃষ্টি কর্তৃত্ব ও দেবগণ স্বীয় স্বীয় পদ প্রাপ্ত হইয়াছেন। সমস্ত দেবের হিতার্থে তুমি সমস্ত অসুরগণের সংহার করিয়াছ। ১৬।
***ও আচ্ছা! তাহলে পৌরাণিক ব্রহ্মার সৃষ্টী ক্ষমতা দূর্গা থেকে প্রাপ্ত হইয়াছেন, আবার দেবতারাও তাদের পদ দূর্গা থেকে প্রাপ্ত হয়েছেন!! তাহলে কৃষ্ণ কি করে পরমাত্মা হয়!!!? এখান থেকে তো বুঝা যায় দুর্গাই পরমাত্মা। ! (যদিও এই আকার আকৃতি বিশিষ্ট দূর্গা কখনোই পরমাত্মা নয়)
তুমি যোগনিদ্রা, যোগরূপা, যোগধাত্রী, যোগিণী, সিদ্ধস্বরূপা, সিদ্ধগণের সিদ্ধিদায়িনী ও সিদ্ধযোগিণী নামে কীর্ত্তিতা হও। ১৭।
তুমি মহেশ্বরী, ব্রহ্মাণী, বিষ্ণুমায়া, বৈষ্ণবী, ভদ্রদায়িনী, ভদ্রকালী ও সর্ব্বলোক ভয়ঙ্করী বলিয়া নির্দ্দিষ্টা আছ। ১৮।
তুমি গ্রামে গ্রামে গ্রামদেবী ও গৃহে গৃহে গৃহদেবীরূপে অধিষ্ঠান করিতেছ, তোমাকে সর্ব্বদা সাধুগণের কীর্ত্তি ও প্রতিষ্ঠা এবং অসাধুগণের নিন্দারূপিনী বলিয়া নির্দেশ করা যায়। ১৯।
তুমি মহাযুদ্ধে মহামারী দুষ্ট সংহাররূপিণী ও শিষ্টগণের রক্ষাস্বরূপা, জননীর ন্যায় হিতকারিণী হও। ২০।
তুমি সর্ব্বদা ব্রহ্মাদি কর্ত্তৃক বন্দনায়া, পূজা ও স্তুতা হইয়া থাক, আর তুমি বিপ্রগণের ব্রাহ্মণ্যরূপা,
তপস্বীগণের তপস্যা, বিদ্যাবানদিগের বিদ্যা, বুদ্ধিমানদিগের বুদ্ধি, সাধুগণের মেধা ও স্মৃতিস্বরূপা, প্রতিভাশালী ব্যাক্তি দিগের প্রতিভা, রাজাদিগের প্রতাপরূপ, বৈশ্যগণের বাণিজ্যরূপিণী, সৃষ্টিবিষয়ে সৃষ্টিরূপা ও পালন বিষয়ে রক্ষারূপা হইয়া থাক। ২১-২৩।।
***কৃষ্ণ নয় শূধু ব্রহ্মাও দূর্গা পূজা করে!
বিশ্বপূজিতে! তুমি বিশ্ব সংহারকালে মহামারী স্বরূপা এবং তুমি কালরাত্রি, মহারাত্রি, মোহরাত্রি ও মোহিনী নাম ধারণ করিয়াছ। ২৪।
দেবি! তুমি আমার দুরত্যয়া মায়া। তোমা কর্তৃক সমস্ত জগত মোহিত রহিয়াছে। জ্ঞানবান ব্যক্তিও মায়া রূপিণী তোমার কর্ত্তৃক মুগ্ধ হইয়া মোক্ষ মার্গ দর্শন করিতে সমর্থ হয় না। ২৫।
হে নারদ! পরাৎপর পরমাত্মা কৃষ্ণ সেই পরমাপ্রকৃতি দূর্গাদেবীর এই দূর্গতিনাশন স্তব করিয়াছিলেন। পূজাকালে যে ব্যক্তি এই স্ত্রোত্র পাঠ করে তাহার মনোবাঞ্ছা পরিপূর্ণ হয়। ২৬।
উপরে শ্রীকৃষ্ণ কর্ত্তৃক দুর্গা স্তুতি সম্পন্ন বর্ণনা করা হলো। এবার পাঠক শ্রেণী নিজেরাই বিচার করুন যে কি করে দূর্গা কৃষ্ণের সেবিকা/দাসী হয়?! আর কি করে ই কৃষ্ণ পরমাত্মা হয় যে কি না অন্য কারো স্তব স্তুতি, পূজায় ব্যস্ত !!
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমরা বৈদিকরা পুরাণের উল্লেখিত আকার আকৃতিবিশীষ্ট দূর্গা কে মানি না কেননা তা বেদ বিরোধী। আমরা “দূর্গা”-কে ঈশ্বরের গুণবাচক নাম হিসেবে মানি।
আর কৃষ্ণ যে পরমাত্মা নয় তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেলো এবং চৈতন্য চরিতামৃতের কৃষ্ণ ছাড়া বাকি সব ভৃত্য কথাটীও মিথ্যা প্রমাণিত হলো পুরাণ দ্বারাই কেননা এক ঈশ্বরের কোন আরাধ্য থাকতে পারে না।
good post, thanks a lot dada
ReplyDeleteধন্যবাদ ভাই।
DeleteIshwar ak abong adwitio. Je rupay vabi tini akhanda. Agulo patitai tar rup r lila. Ke kake puja korlo ta na, apni je akta bitarkito kotha bolchen setao valo na. Path vinno kintu dheo akjon. Ishwar bhakter das hon r tar mahima prakash korar janna. Kakeo boro ba choto kora valo na. Tar lila tini janen. Durga rup Krishna r Krishna rup maa Durga. Om tath sath
ReplyDeleteআপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত হতে পারলাম না। দূর্গা রূপ কৃষ্ণ!! আবার কৃষ্ণ রূপ দূর্গা!!
Deleteঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। তিনি নিরাকার। তাঁর কোন রূপ নেই।
যজুর্বেদ- ৩২/৩ ও ৪০/৮ পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বি।দ্রঃ আমি কি বিতর্কিত কথা বলেছি তা জানান।
Ishwar ak abong adwitio. Je rupay vabi tini akhanda. Agulo patitai tar rup r lila. Ke kake puja korlo ta na, apni je akta bitarkito kotha bolchen setao valo na. Path vinno kintu dheo akjon. Ishwar bhakter das hon r tar mahima prakash korar janna. Kakeo boro ba choto kora valo na. Tar lila tini janen. Durga rup Krishna r Krishna rup maa Durga. Om tath sath
ReplyDeleteনমস্কার, দাদা।
ReplyDeleteপ্রশ্ন ?
আর্য শব্দের অর্থতত্ত্ব ও ব্যাবহারিক এবং বিবর্তনতত্ত্ব কেনো।
প্রশ্ন ?
ReplyDeleteআর্য শব্দের অর্থতত্ত্ব ও ব্যাবহারিক এবং বিবর্তনতত্ত্ব কেনো।