https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বিবাহের সময় শ্রীরাম ও মাতা সীতার প্রকৃত বয়স

Thursday, November 17, 2016
মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম চন্দ্র এবং মাতা সীতার বিবাহের সময় বয়স নিয়ে একটা শঙ্কা প্রায়শই উঠে। বিবাহের সময় না কি শ্রীরাম এবং মাতা সীতার বয়স যথাক্রমে ১৩ এবং ৬ বছর ছিলো। এবং যা প্রচীনকালে বাল্যকালে বিবাহের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলে অপপ্রচারকারীরা উপস্থাপন করে।
আমাদের এই লেখার উদ্যেশ্য এই শঙ্কার সমাধান করা। বাস্তবে বিবাহের সময় তাদের বয়স কত ছিলো...?

এই শঙ্কার মূল উৎপত্তি হলো  রামায়নের অরণ্যকান্ড ৪৭।৪-১০ মধ্যে সীতা রাবনকে নিজ পরিচয় দেবার সময় বলেছিলো যে, আমার বয়স এই সময়  আঠারো এবং আমার স্বামীর বয়স ২৫ বারো বছর শশুড়ালয়ে থেকে সমস্ত ভোগ কে উপভোগ করে রাম লক্ষণের সাথে বনে এসেছি।  অর্থাৎ বিবাহের সময় সীতার বয়স কেবল ১৮-১২= ৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫ -১২ =১৩ বছর ছিলো।
এই শ্লোক কে বিচার করার পূর্বে আমরা রামায়নের মধ্যে থেকে বেশ কিছু শ্লোক সমীক্ষা করে দেখবো

মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে একথা বলেন-
" হে মুনিবর! হস্তি এবং সিংহের সমান চলনশীল,  দেবতার সমান পরাক্রমি তথা অশ্বিনী কুমারের মতো সমান সুন্দর এবং যৌবন কে প্রাপ্ত এই দুই কুমার কে?

গজসিংহগতী বীরৌ মার্ভূল বৃষভৌপমৌ।
যদমপত্রবিশালাক্ষী খঙ্গাতুণীর্ধনুর্ধারী।।
অশ্বিনাবিব রূপেন সমুপস্থিতযৌবনৌ।
যদৃচ্ছেবর্ণা প্রাপ্তৌ দেবলোকদিবামরৌ।।
(বাল্মিকী রামায়নঃ বাল কান্ড ৫০।১৮-১৯)                 


এখানে "সমুপস্থিতযৌবনৌ" শব্দটি বিশেষ রূপে দ্রষ্টব্য।  কারন ইহাতে স্পষ্ট হয় যে, সেই সময় রাম ও লক্ষণ দুজনেই যুবাবস্থায় প্রবেশ করেছিলো।  এবং জনক পুরী প্রবেশের পূর্বে অনেক রাক্ষস সংহার করেছিলো। তারপর সয়ম্বরে অনেক শূরবীর শিব ধনুক কে উত্তোলন করতে অসমর্থ হলে রামচন্দ্র সেটা সহজেই উত্তোলন করেন।  ইহাতে রামচন্দ্রের অতুল বলশালী হবার সাথে সাথে যৌবন প্রাপ্ত হবার প্রমাণ মেলে।

যখন বিশ্বামিত্র রাজকুমারীর ধনুক দেখতে ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। তখন রাজা জনক সীতার বিবাহের সন্দর্ভে ধনুক ভঙ্গের চর্চা করে বললেন -

ভূতত্ত্নাদুত্থিতাং তাং তু বর্দ্বমানাং মমাত্মজাম্।
বরয়া মসুরাগত্য রাজানো  সুনিপুঙ্গতা।।
(বাল কান্ড ৬৬।১৫)



যখন আমার কন্যা সীতা বর্দ্ধমানা = প্রাপ্তযৌবনা হয় তখন বহু রাজা তাহার পাণিগ্রহনের জন্য আসে।  পরে (ধনুক উঠানোর অসমর্থতার কারনে) সবাই  অসফল হন।
              


মূল শ্লোকে বর্দ্ধমানা শব্দ এসেছে ।  টীকাকার এর অর্থ যৌবন সম্পন্ন করেছে।  আবার অনেকে প্রাপ্তযৌবনা করেছে।  ইহাতে স্পষ্ট জানা যায় যে, "শ্রী রাম চন্দ্রের সাথে মাতা সীতার বিবাহের পূর্বে তাদের শরীরে যৌবনের সূত্রপাত হয়েছিলো। আর একটি শ্লোক দ্বারা ইহা আরো স্পষ্ট হয় -

পতিসংযোগসুলভা বয়োবেক্ষ্য পিতা মম।
চিন্তামজ্যগমদ্দীনো বিত্তনাশদি বা ধন।।
(অযোধ্যাকান্ড ১১৮।৩৪)
                               

সীতা অনুসূয়াকে বলছেন - পিতা যখন আমাকে পতি সংযোগ সূলভ দেখন তো বড় চিন্তিত হতেন। আমার পিতার ঐরূপ দুঃখ হতো যেমন কোন দরিদ্রের ধন নাশ হয়েছে।

শ্লোকটিতে সীতাকে পতিসংযোগ সূলভ বয়স বলা হয়েছে। এর সহজ অর্থ বিবাহ যোগ্য বয়স অর্থাৎ পতির সাথে সংযোগ বা গর্ভাধানে সমর্থ হওয়ার বয়স।  এই বিষয়ে শুশ্রুত সংহিতাই লেখা আছে -
"পঞ্চবিংশো ততো বর্ষ পুমাণ নারী তো ষোড়শে"
অর্থাৎ পুরুষের জন্য এই অবস্থা ২৫ বর্ষ হবার পর এবং স্ত্রীর জন্য ১৬ বর্ষ হবার পর আসে।
অর্থাৎ ইহাতে স্পষ্ট হয় যে মাতা সীতা তখন যৌবন সম্পন্না ছিলেন।

এবার আসি আরোপকৃত শ্লোকটির সত্যতা নিয়ে যেখানে রামচন্দ্র ও মাতা সীতার বয়স বিবাহের সময  যথাক্রমে ১৩ ও ৬ বলা হয়েছিলো। রামায়নের কোন কোন সংস্করনে পঞ্চবিংশক স্থলে সপ্তবিংশক পাঠও দেখতে পাওয়া যায়।
শ্রীরামচন্দ্রের বনগমনের সময় কৌশল্যা রাম কে বলেন -
 "দশসপ্ত চ বর্ষাণি তব জাতস্য রাঘব ; অযোধ্যাঃ ২০।৪৫"।
অর্থাৎ তোমার জন্ম (দ্বিজের মাধ্যমে দ্বিতীয় জন্ম) হয়ে ১০+৭ = ১৭ হয়েছে।  



                    
 একাদ্দশো ক্ষত্রিয়স্য (রঘুকুলের মান্য পরম্পরা অনুসারে) ক্ষত্রিযের উপনয়ন সংস্কার ১১ বছরে হয়। এই প্রকার রামায়ন অনুসারে রামের বনগমনের সময় ১১+১৭= ২৮ বর্ষ ছিলো।(অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ১।১৭।৩)



অপরদিকে মাতা সীতার বিবাহের সময়  বয়স ৬ বছর ছিলো তা উপরোক্ত বিবরন থেকে অশুদ্ধ প্রমাণিত হয়।  কারন ৬ বছরের কোন বালিকাকে "পতি সংযোগ সুলভ বয়স" হিসেবে ধরা হয় না।এটা ঠিক ১৬ বছর বয়সকেই ধরা হয়ে থাকে। আরো একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মাতা সীতারা  চার বোন ছিলো এবং সীতা সবার জ্যেষ্ঠ এবং শ্রূতকীর্তি সবার কনিষ্ঠ ছিলো।  এবং চার বোনের বিবাহ একসাথে সম্পন্ন হয়।  একটা সাধারন হিসেব মতে যদি বিবাহের সময় সীতার বয়স ৬ বছর ধরা হয় তবে শ্রুতকীর্তির বিবাহের বয়স আনুমানিক ছিলো ৩-৪ বছর। একটি ৩-৪ বছরের বালিকার বিবাহ কি আদৌ সম্ভবপর হতে পারে?