https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বিরাট ঈশ্বরকে কি বস্ত্র পরানো সম্ভব?

Thursday, January 5, 2017

আমাদের  সমাজে ঈশ্বরের নাওয়া খাওয়া তথা স্নানাহার বিষয়ক  পরিচর্যা খুব প্রচলিত। অর্থাৎ  ঈশ্বরের প্রভাত জাগরন কীর্তন, প্রাতস্নান,নির্মল বস্ত্র তথা ঈশ্বরকে পৈতা ধারন করানোর ব্যাপার সেপারগুলো। এসব কার্যকলাপ সমন্ধ্য বলতে গেলে শঙ্করাচার্যের সেই শ্লোকটির উদ্ধৃতি করতেই হয়।  শঙ্করাচার্য তার পরা পূজায় বললেন -

.
নির্মলস্য কুতঃ স্নানং বস্ত্রং বিশ্বোদরস্য চ।
অগোত্রস্য ত্ববর্ণস্য কুতস্তস্যোপবীতম্।। ৩।।
.
যিনি সদা নির্মল তার স্নানের কি প্রয়োজন?  যার উদরে সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ড সমাবিষ্ট রয়েছে তাকে বস্ত্র কিভাবে পরাবে?  যিনি বর্ণ এবং গোত্র রহিত তাকে পৈতা কেমন করে ধারন করাবে?
.
অর্থাৎ ঈশ্বর হলেন নিত্য নির্মল। যজুর্বেদের ৪০ অধ্যায়ের  অষ্টম মন্ত্রে একটি বিশেষন  "শুক্রম" পাওয়া যায়।  ঈশুচিপূর্তি ভাবে (ধাতুপাঠে ৪.৫৪) এই ধাতু হতে শুক্র শব্দ তৈরী হয় "য শুচ্যতি শোচয়তি বা স শুক্র "। যিনি হলেন অত্যন্ত পবিত্র ব্রহ্ম যার সংস্পর্শে এসে অন্যেরাও পবিত্র হয়ে যায় তাকে শুক্র বলা হয়। যার স্বভাবই হলো নির্মল, তিনি কোন অবস্থাতেও নির্মলতা শূন্য হন না। কেননা স্বভাবের নাশ কখনোই হয় না। বায়ুকে কখনো ঠান্ডা বা কখনো উষ্ণ করা যেতে পারে। কারন শীতলতা বা উষ্ণতা বায়ুর গুন নয়।  পরন্ত অগ্নিকে শীতল করা যেতে পারে না। কারন উষ্ণতা তার স্বাভাবিক গুন। শঙ্করাচার্য শ্রুতিকে স্বতঃ প্রমাণ মেনেছেন। তাই আবার বলছেন - শত শত শ্রুতিবাক্যও অগ্নিকে  ঠান্ডা করতে পারে না। দূর্জনতোষ ন্যায় থেকে এটি মেনে নিলেও যে,  সর্বশক্তিমান ব্রহ্ম উপাধিগ্রস্থ হয়ে যান, এটা মেনে নেওযা যেতে পারো না। যিনি " সত্য জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম" কোন অবস্থাতে তার স্বাভাবিক গুনের পরিত্যাগ করতে পারে না। কেননা শঙ্করাচার্য বলেছেন -" নহ্যুপাধি যোগাদপি অন্য অদৃশস্য বস্তনোৎ ন্যাদৃশঃ স্বভাঃ সম্ভবতি " বেদান্তসূত্র ৩।২।১২। অর্থাৎ উপাধির কারনে কোন বস্তর স্বভাব পরিবর্তন হয় না।  এজন্য নিত্য পবিত্র পরমেশ্বরের স্নান করানো সর্বদা ব্যর্থ। বেদে ঈশ্বরের হস্ত পদাদির বর্ণনায়  অনেকে ঈশ্বরকে মানবাকৃতি মনে করে। এজন্য অথর্ববেদ সেই ঈশ্বরের বিরাট রূপের বর্ণনা এভাবে করেছে -
যস্য ভূমিঃ প্রমান্তরিক্ষমুতোদরম্।
দিবং যশ্চক্রে মূর্ধানঃ তস্মৈ জেষ্ঠায় বহ্মণে নমঃ।।
(অথর্ববেদ ১০।৭।৩২)
--- ভূমি যাহার পাদমূল এবং অন্তরিক্ষ উদর দ্যুল্যোক কে যিনি মস্তক বানিয়েছেন সেই সবার চেয়ে বৃহৎ পরমেশ্বরকে নমস্কার।।  ৩২।।
.
যস্য সূর্যশ্চক্ষুশ্চন্দ্রমাশ্চ পূনর্নবঃ।
অগ্নিং যশ্চক্রে আস্যম তস্মৈ জেষ্ঠায় ব্রহ্মণে নমঃ।।
( অথর্ববেদ ১০।৭।৩৩)
----  [সৃষ্টির আদিতে] বার বার নবীন হওয়া সূর্য এবং চন্দ্র যাহার  চক্ষু যিনি অগ্নিকে মুখ বানিয়েছেন সেই সবার চেয়ে বৃহৎ  পরমেশ্বরকে নমস্কার।।৩৩।।
.
যস্য বাতঃ প্রাণাপানৌ চক্ষরঙ্গিরসোভবতঃ।
দিশো যশ্চক্রে প্রজ্ঞানী তস্মৈ জেষ্ঠায় ব্রহ্মণে নমঃ।।
(অথর্বেদ ১০।৭।৩৪)
--- বায়ু যাহার প্রাণ এবং অপান প্রকাশকারী কিরণ নেত্র হয় দিশাকে যিনি   প্রকৃষ্ট জ্ঞানের  সাধক [শোত্র] বানিয়েছেন সেই  সবার চেয়ে বৃহৎ পরমেশ্বরকে নমস্কার।। ৩৪।।
মুন্ডোকোপনিষদ ২।১।৪ এ ঠিক এরকম বর্ণনাই এসেছে -
অগ্নির্মূর্ধা চক্ষুষী চন্দ্রসূর্যো দিশঃ শ্রোতে বাগ্বিবৃতাশ্চ বেদাঃ।
বায়ু প্রাণো হৃদয়ং বিশ্বমস্য পদভ্যাং পৃথিবী হ্যেষ সর্বভূতান্তরাত্মা।।
--- তেজোময় দূল্যোক তার শির, চন্দ্র সূর্য তার নেত্র,  দিশা হলো শোত্র। বায়ু প্রাণ এবং বিশ্ব হলো হৃদয় তথা পৃথিবী হলো পা তিনিই সমস্ত জগতের অন্তরাত্মা।
এই হলো পরমেশ্বরের বিরাট রূপের বর্ণনা। যার অভিপ্রায় হলো আলংকারিক রূপে ঈশ্বরের সর্বান্তর্যামিতা তথা সর্বশক্তিমানতার আভাষ দেওয়া।
তাহলে ঈশ্বর কি এইটুকু বড়? না। সেই পরমেশ্বর তো এইসব বিশ্বের অপেক্ষা অনেক মহান।স্থাবর জঙ্গম রূপ বিদ্যমান এই সর্বভূত প্রাণী তো পরমেশ্বরের এক পাদ। অপর তিন পাদ অবিনাশী প্রকাশরূপে বিদ্যমান "পাদস্য বিশ্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যমৃতং দিবি" (ঋগবেদ ১০।৯০।৩)।  পদ, পাদ,  অংশ, ভাগ এগুলি হলো একার্থ বাচক। এখানে এক পাদ বা ত্রিপাদ কোন পরিমানের দ্যোতক নয়।  কেননা যার বিষয়ে এই সব বলা হয়েছে সে হলো নিরবয়ব অখন্ড ব্রহ্ম। এই প্রকার বাণী বচনে পরমাত্মার অনন্ত্য মাহাত্ম্যের বোধ হওয়ার সহায়তা মিলে। তাৎপর্য হলো যে, সেই অসীম সত্তার সম্মুখে এই অনন্ত বিশ্ব অত্যন্ত তুচ্ছ। অতএব এই বিরাট পুরষকে আচ্ছাদিত করার জন্য কত বড় বস্ত্রের প্রয়োজন? নিশ্চয় আচ্ছাদ্য থকে আচ্ছাদক বড় হওয়া উচিৎ। কোথাই পাওয়া যাবে এত বড় আচ্ছাদক বস্ত্র। সমস্ত ব্রহ্মান্ডকে যার শরীরের এক চতুর্থাংশের ভাগ বলা হয়েছে সে মন্দিরের একটি কোণে রাখা মূর্তি তো হতে পারে না। তাকে ঢেকে কেউ যদি এটা মনে করে আমি পরমেশ্বরকে ঢেকে দিয়েছি তাহলে এটা হবে তার পাগলামী।  এই জন্য শঙ্করাচার্য বলেছেন যে, সারা ব্রহ্মান্ড যার উদরে সমাহিত রয়েছে এবং তার পরেও উদর খালি পড়ে আছে।  কেননা এই ব্রহ্মান্ড তো তার এক চতুর্থাংশ থেকেও কম পড়ে। তাকে ঢাকার মত বস্ত্র কোথাই পাওয়া যাবে?
কঠোপনিষদ ১।৩।১৫ এ ঈশ্বরের পরিচয় এইরূপে দেওয়া আছে -
অশব্দমস্পর্শমরূপম্যবয়ংর তথাহরসং নিত্যহন্ধচ্চ যৎ।
অনাদ্যনন্তং মহতঃ পরম ধ্রুবং নিচার্য্য তনামৃতুখাৎ প্রমুচ্যতে।।
--- যিনি অশব্দ, অস্পর্শ, অরূপ ও অক্ষর,  যিনি রসশূন্য নিত্য গন্ধশূন্য। যিনি অনাদি, অনন্ত, মহৎ থেকেও মহৎ এবং ধ্রুব তাকে জেনে লোকে মৃত্যুমুখ থেকে মুক্তি লাভ করে।
মুন্ডকোপনিষদ ১।১।৬ এ রয়েছে,
যত্তদেশ্যমগ্রাহ্যমগোত্রমবর্ণচক্ষঃ শোত্র অপানিপাদম।
--- সেই ঈশ্বর হলেন অদৃশ্য, জ্ঞানেন্দ্রিয়ের বিষয় নয়,  কর্মেন্দ্রিয় থেকে অগ্রাহ্য,  তার না কোন গোত্র,  না বর্ণ আছে। না তার হাত পা না কান রয়েছে।
এই বর্ণনা হলো অবিনাশী অপরিনামী ব্রহ্মের স্বরূপ।  "অগোত্র অবর্ণম" উপনিষদের এই সংকেতের আধারে শঙ্করাচার্য্য নিজের শ্লোক "অগোত্রস্য ত্ববর্ণস্য " শব্দ করেছেন।
অর্থাৎ শঙ্করাচার্যের উক্তি হলো এই যে, যাকে অগোত্র তথা অবর্ণ ইত্যাদি শব্দে নির্দেশ করা হয়েছে সে নিরাকার হওয়ার কারনে যজ্ঞোপবীত ধারন করতে পারে না। কারন যজ্ঞোপবিত (পৈতা) বাম কাধের উপর দিয়ে কন্ঠের পাশ দিয়ে ডান কাধের নিচে কোমরে ধারন করা হয়।  তো ঈশ্বরের তো কোন শরীরই নেই তিনি অকায়ম (যজুর্বেদ ৪০।৮)।  তো তিনি যজ্ঞোপবিত ধারন করবেনই বা কোথাই।তবে তাকে বস্ত্র বা যজ্ঞোপবীত পরানোর নাটক কেন?