https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ঈশ্বরীয় বাণী অপৌরষেয় গ্রন্থ বেদ

Friday, February 24, 2017
পৃথিবীতে যদি নিশ্চিতভাবে পিতার পরিচয় কেউ জানাতে পারে, তা একমাত্র মা সেটা পারে। পিতার সম্বন্ধে জন্মদাত্রী মায়ের কথাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এইরুপ সমগ্র বিশ্বের পিতার পরিচয় নিশ্চিতভাবে কেউ যদি বলতে পারে, সে হলো মা জ্ঞানদায়িনী বাক্ বেদমাতা। একজন মা তার সন্তানকে প্রথমে দুধ দিয়ে লালন-পালন করে।
সেইরুপ মানবজাতির আদিম শৈশবকালে সেই বাগ্দেবী বেদমাতা জ্ঞানরুপ দুগ্ধামৃত পান করিয়ে মানবের বুদ্ধির বিকাশ ঘটিয়েছিল, তাকে সত্যাসত্যে,সৃষ্টির সকল পদার্থ এবং সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কেও জ্ঞান প্রদান করেছিল। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন--আকাশেও নেই, ভূমিতেও একটাও নেই ,জিভের পরে একটাও নেই এবং বেদেও একটি নাই। সেগুলি কি? বলুন। অন্য একজন পণ্ডিত উত্তর দিলেন --আকাশে একটাও নাই কবর, ভূমিতে একটাও তালা নেই, জিভের পরে নেই একটাও চুল এবং বেদে নেই একটাও মিথ্যা কথা।
সৃষ্টির আদি থেকে বেদ যা ছিল, তাই আছে। তাই সত্যযুগ আসুক, কি ত্রেতা, দ্বাপর, কলিযুগ আসুক। বেদ তো বেদই, কোন কল্পে বা মতান্তরে তার পরিবর্তন হয় না এবং সদা সর্বদা বর্তমান। বেদে জ্ঞান, কর্ম, উপাসনা ও বিজ্ঞান কান্ড আছে এবং দাবী করা হয় যে বেদ সব সত্য বিদ্যার পুস্তক। বেদ ঈশ্বরের নিত্য বিদ্যা, তার উৎপত্তি বা অনুৎপত্তি হতেই পারে না। অতএব তার বৃদ্ধি, ক্ষয় অথবা তাতে কোন পরিবর্তন ঘটতে পারে না। এইসব কারণে বেদ প্রতিপাদিত বৈদিক ধর্ম শ্বাশত, সত্য ও সনাতন।
বেদের উপর পণ্ডিত মহীধর রাবণ, উবট, সায়ণাচার্যের যেসব ভাষ্য পাওয়া যায় সেগুলি সব মূলমন্ত্র ও ঋষিকৃত ব্যাখ্যান বিরুদ্ধ। উদাহরণ সরুপ- "গণনাং ত্বা " এই মন্ত্রে পণ্ডিত মহীধর "গণপতি" শব্দের অর্থ করেছেন "অশ্ব"।কিন্তু এমন হবে না।
যথার্থ হলো, "বয়ং গণনাং গণনীয়াং পদার্থসমূহানাং গণপতি পালকং স্বামিন ত্বা পরমেশ্বরং"=পরমেশ্বর অর্থ গ্রহনীয়।
বেদে পরা ও অপরা দুই প্রকার বিদ্যা আছে। অপরা বিদ্যা দ্বারা পৃথিবী এবং তৃণ থেকে প্রকৃতি পর্যন্ত পদার্থ সকলের গুনের জ্ঞান হয় এবং তদ্বারা সম্যক্ কার্যসিদ্ধি হয়। দ্বিতীয় পরা বিদ্যা দ্বারা সর্বশক্তিমান ব্রহ্মের যথাবৎ প্রাপ্তি লাভ হয়। বেদজ্ঞান সর্বদোষ রহিত এবং এর তুলনায় অন্য কোন জ্ঞান দাঁড়াতে পারে না। বেদে সব সত্য বিদ্যার মূল হওয়ায় বেদ পূর্ণ এবং বেদ প্রতিপাদিত ধর্মও পূর্ণ।
বৈদিক ধর্মের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলঃ
১)বৈদিক ধর্ম কোন ব্যক্তি বিশেষের আদেশ বা পুজা-অর্চনার নাম নয়। একটা জীবন ধারার নাম। এই ধর্ম মানব ও মানবসমাজকে সুখ-শান্তি ও প্রগতি প্রদান করে। এটা কোন বিশেষ দেশ, কাল ও পরিস্থিতির ফসল না হয়ে সর্বব্যাপক সত্য। এর তত্ত্ব সিদ্ধান্ত সার্বদেশিক ও সার্বকালিক।
২)বৈদিক ধর্মে বিবেক দৈব-প্রেরণা মনে করে তার বিরুদ্ধাচরণ কে বর্জন করা হয়েছে। ৩)বৈদিক ধর্ম যুক্তিবাদী, কিন্তু অন্যান্য সকল ধর্ম অন্ধবিশ্বাসের উপর নির্ভর।তাদের বিশ্বাস যে, ধর্মে যুক্তি-তর্কের কোন অবকাশ নেই। খোদার কাজে বুদ্ধি দিয়ে নাকগলানো ঠিক নয়। ধর্মের লক্ষ্য হলো মানুষের কল্যাণ করা, তার বুদ্ধিহরণ করে তাকে মনুষ্য থেকে পশুতে পরিণত করা নয়।
৪)বৈদিক ধর্ম সিদ্ধান্তকে স্বাধীনভাবে প্রশ্রয় দেয়। মহর্ষি দয়ানন্দকে বিষ প্রদান, যীশুখৃষ্ট কে ক্রুশবিদ্ধ করা, সক্রেটিস কে বিষদানে মেরে ফেলা,মনসুরকে পাথরের আঘাতে হত্যা করা হয়েছিল। এসব এই জন্য হয়েছিল, কারণ তারা প্রচলিত ধর্মের উপর সন্দেহ ব্যক্ত করেছিলেন। বৈদিক ধর্ম বিচার স্বাতন্ত্র্যকে ধর্মের মুখ্য অঙ্গ স্বীকার করে, এর দৃষ্টিতে বিচার-স্বতন্ত্রতা মানবতার প্রতীক, মানব সমাজের প্রগতির মূল আধার।
৫)বৈদিক ধর্ম আচরণে উদার হতে শিক্ষা দেয়। এই পৃথিবী বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। দুটি মনুষ্যের গুণ-কর্ম সর্বাংশে একরকম হয় না। কোন লোক পৃথিবীতে স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, অর্থাৎ তার মধ্যে ভাল-মন্দের সমাবেশ থাকবে। অতএব মতভেদ ও পার্থক্যের জন্য যদি উদার মতাবলম্বী না হওয়া যায়, তাহলে পৃথিবীতে সংঘর্ষের কোন সমাপ্তি কোন সময় ঘটবে না। ধর্ম সংঘর্ষের জন্য নয়, কিন্তু শান্তি স্থাপনের জন্য। এইজন্য উদারতা ধর্মের মুখ্য গুণ এবং বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ঈশ্বরের এই জগতে বেচে থাকার একমাত্র উপায়। উদারতার অভিপ্রায় অসত্য, অন্যায়, অত্যাচারের সঙ্গে সন্ধি করা নয়। বরঞ্চ উদারতাকে পাপের বদলে সৃষ্টির গুণ মেনে তর্ক, যুক্তি ও অহিংসাযুক্ত প্রক্রিয়া দ্বারা সহৃদয় ভাবনা নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের মন ও মস্তিষ্ক পরিবর্তন করার চেষ্টা করা। উদারতা ও সহঅস্তিত্বের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে বিশ্বশান্তি স্থাপন করা অসম্ভব।
৬)বৈদিক ধর্ম ক্রম বিকাশবাদী ও আশাবাদী হওয়ায় পুনর্জন্মের সিদ্ধান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
৭)বৈদিক ধর্ম ঈশ্বরকে নিরাকার ও সর্বব্যাপক মানে। এইজন্য ঈশ্বর এই সৃষ্টির রচনায় সমর্থ হয়েছিলেন। ঈশ্বর কর্মফল প্রদান করেন, প্রার্থনা করলে তিনি প্রার্থনাকারী কে প্রেরণা ও শক্তি প্রদান করেন। ফল প্রাপ্তি নিজ কর্মানুসারে জীবের নিজের হাতে। ঈশ্বররের গুণ হৃদয়ে ধারণ করলে মানব সমস্ত প্রাণীকে সমানভাবে দেখে,উচু-নীচু, ছোট-বড় মনে করার ভাব নষ্ট হয় এবং এর দ্বারা বিশ্ববন্ধুত্ব, প্রেম, সেবাভাব জাগ্রত হয়। ঈশ্বরকে যে সর্বব্যাপক মনে করে ,সে পাপ করতে ভীত হয়। ন্যায়কারী ঈশ্বরের ন্যায় থেকে জীব রেহাই পায় না। তার ন্যায়বিচারে জীবের মৃত্যুর পরে পুনর্জন্ম পর্যন্ত যায়। ৮)বৈদিক ধর্ম সুস্থ শরীর ও শুভ ইচ্ছার সতত পূরণ কে স্বর্গ এবং অসুস্থ শরীর ও ইচ্ছার পূরণ না হওয়াকে নরক মনে করে।
৯)বৈদিক ধর্ম স্বয়ং সম্পূর্ণ। এর দ্বারা মনুষ্য সমাজের পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সমানভাবে সাধিত হয়। বিজ্ঞানকেও ধর্মের অঙ্গ মানা হয়েছে। বেদের মতে যে ব্যক্তি এই পার্থিব জগতে পরিব্যাপ্ত বিজ্ঞানের নিয়মগুলিকে তার শক্তির সূত্রগুলিকে জানে সে ব্রহ্মকেও জানতে পারে।
১০)বৈদিক ধর্মে বর্ণ ব্যবস্থা, শ্রম বিভাগ, শিক্ষক, পোষক, সেবক, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র জন্ম থেকে হয় না কিন্তু গুণ-কর্ম-স্বভাব অনুসারে হয়। তাছাড়া আশ্রম ব্যবস্থা, ব্রহ্মচর্য থেকে সন্ন্যাস পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি অবস্থার সম্যক্ জ্ঞান এই ধর্মে বিদ্যমান।
১১)বৈদিক ধর্মে মানুষের উপকারীদের অর্থাৎ ঈশ্বর, অন্য মনুষ্য, অন্য প্রাণী, অচেতন পদার্থ যেমন-অগ্নি, বায়ু, সূর্য, চন্দ্র, জলাদির প্রতি আদর ও কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করা হয়েছে। ১২)বৈদিক ধর্মে পশু-পাখী ও নারীর মধ্যে আত্মা স্বীকার করে, স্ত্রী জাতিকে পাপ মনে করা হয় না। শুধু তাই নয়, মাতাকে জীবন নির্মাণের মূল আধার ও রাষ্ট্র নির্মাণকারিণী বলে গণ্য করা হয়। অথর্ব বেদ অনুসারে পরিবারের সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্য ও আয়ের ১৬ভাগের মধ্যে, ৩ভাগ শ্রমিক ও কৃষক, ১ভাগ শাসনকর হিসাবে, ৮ভাগ গৃহস্বামী এবং অবশিষ্ট ৪ভাগ পত্নী পাবে। বৈদিক ধর্মে বিবাহ অটুট আত্মিক সম্পর্ক যা সন্ন্যাস বা মৃত্যু ছাড়া ছিন্ন হয় না। বহুবিবাহকে এই পবিত্র বন্ধনের শত্রু মনে করা হয়। সতী প্রথার কোন স্থান নেই। গর্ভাধান থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া(শবদাহ) পর্যন্ত ১৬টি সংস্কার মনুষ্যের উন্নতির জন্য যা অন্যত্র দুর্লভ।
১৩)বৈদিক ধর্মে সমগ্র জগতে ঐক্যের দর্শন পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীরা এই মান্যতার সমর্থন করেন। বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই বিশ্বকে বিজ্ঞানীরা Multiverse না বলে Universe বলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিজ্ঞানীরাও এই বিবিধের মাঝেও সৃষ্টির ঐক্য দর্শন করেছেন। এই মৌলিক গুণ বিশ্ব মানব সমাজের ঐক্যের পৃষ্ঠভুমি।
১৪)বৈদিক ধর্মের নিজস্ব পর্ব বা উৎসব আছে। সেগুলো শুধু ধর্মীয় নয় রাষ্ট্রীয় পর্বও বটে। এই পর্বগুলি সাধারণত দুটি ঋতুর সন্ধিক্ষণে হয়। হোমযজ্ঞ বা অগ্নিহোত্র, বায়ু-জলাদি শুদ্ধি হেতু এবং প্রদুষণের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাও বটে। রক্ষা বন্ধন, বিজয়াদশমী, দীপাবলী, হোলী-দোল ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় পর্ব, বসন্তোৎসব, নবান্ন, পহেলা বৈশাখ, ক্রান্তি ও পরিবর্তনের প্রতীক।
১৫)বৈদিক ধর্ম তথাকথিত ধর্মগুলির মূলস্রোত।আজ থেকে প্রায় ২০০কোটি বছর আগে শুরু হয়েছে। যা কিছু ভাল তা সব এর অবদান। পৃথিবীর কোন ধর্ম এখনও এমন সত্য জ্ঞানের পরিচয় দিতে পারেনি যা পূর্ব হতে বেদে বিদ্যমান ছিল না। বেদ সমস্ত মনুষ্য মাত্রের জন্য। বেদ মন্ত্রে উল্লেখ আছে --- "ওম্।য়থেমাম্ বাচম্ কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ"। অর্থঃ আমি যেমন সব মনুষ্যমাত্রকে কল্যানময়ী বেদ প্রদান করেছি, তোমরাও সেই জ্ঞান সবাই কে দান কর ।
"ওম্। মিত্রস্য চক্ষুসা সর্বানি ভূতানি সমীক্ষা মহে। পশ্য দেবস্য কাব্যং ন মমার ন র্জীয়তি"। অর্থঃ সবাই কে মিত্রবৎ মনে করবে। পরমেশ্বর এর জ্ঞান বেদ কখনও নষ্ট হয় না বা জীর্ণ হয় না।
কত উচ্চ আদর্শ, শিক্ষা এবং দর্শন ও উপদেশপূর্ণ ;যা অন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ। বেদ বিষয়ে মহান দার্শনিক,বিদ্বান,যোগীগণ বলেছেন-- ১)আমেরিকান বিদ্বান থেরো উল্লেখ করেছেন যে - "Of all the so called revelations,Vedas are the only ones whose principles are based on reason and science. " যতসব ঈশ্বরীয় গ্রন্থ আছে তাদের মধ্যে কেবল বৈদিক সিদ্ধান্ত যুক্তি ও বিজ্ঞানের উপর আধারিত।
২)প্রোফেসর ম্যাক্সমুলার উল্লেখ করেছেন যে- "I maintain that there is nothing of importance equal to the Vedas. " আমার মতে বেদের সমান গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।
৩)ঋষি অরবিন্দ ঘোষ বলেছেন- "Vedas only contain the truth of science and the truth religion ". বেদের মধ্যে বিজ্ঞান ও ধর্মের সত্য নিহিত আছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মের নিবাস কোথায়? মহাভারত অনুসারে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এবং যক্ষরাজের মধ্যে যে প্রশ্নোত্তর হয়েছিল, ঐ সময় যক্ষরাজ যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন ককরেছিলেন--ধর্মের নিবাস কোথায়? যুধিষ্ঠির উত্তরে বলেছিলেন, সজ্জনতার মধ্যে ধর্ম থাকে। ধর্মপ্রেমী মানব তিন প্রকারের। কাহারো নামে শ্রদ্ধা হয়, কাহারো ধামে শ্রদ্ধা হয়,এবং কাহারো কর্মে শ্রদ্ধা হয়ে থাকে। ধার্মিক হতে গেলে বা করতে গেলে -শুদ্ধ বিচার, শুদ্ধ আচরণ, শুদ্ধ আহার-বিহারের প্রয়োজন হয়। ধর্মই জীবন।বলা হয়েছে -"ধর্মেণ হন্যতে ব্যাধি, ধর্মেণ হন্যতে রিপুঃ, ধর্মেণ হন্যতে পাপং, য়তো ধর্মঃ, ততো জয়ঃ"।অর্থাৎ ধর্মের দ্বারা ব্যাধি, রিপু, পাপ এসব নাশ হয়, যেখানে ধর্ম, সেখানে জয়।
মনু মহারাজ বলেছেন- "ধর্মো এব হতো হন্তি ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ। অর্থাৎ ধর্মকে যে হত্যা করে, ধর্ম তাকে হত্যা করে এবং ধর্মকে যে রক্ষা করে, ধর্ম তাকে রক্ষা করে।