https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য কি বৃষ মাংস খেতেন?

Friday, March 17, 2017
মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক এর গোমাংস ভক্ষন নিয়ে  বড় একটা শঙ্কা আমাদের সামনে উত্থাপিত হয়। শঙ্কাটি এরূপ যে, শতপথ ব্রাহ্মণ ৩।১।২।২১ এ যাজ্ঞবল্ক্য  বলছে - " অশ্নামি এব অহম অংসল চেত্ ভবতি "  অর্থাৎ আমি বৃষ এবং পয়স্বিনী গাভীর মাংস খাই যদি সেটা কোমল হয়।
মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্যের এই দাবীটির সমর্থনে অনেক টীকাকার তাদের বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬।৪।৮ এর ভাষ্যে বলেছে যে,  প্রাচীনকালে গো মাংস ভক্ষন নিষিদ্ধ ছিলো না।    

                
কিন্তু বেদে যেখানে গাভীকে অহিংস এবং মাতৃস্বরূপ বলা হয়েছে।
  সেক্ষেত্রে বৈদিক ঋষি কর্তৃক এরূপ বর্ণনা কদাপি হতে পারে না। আমরা ইতিপূর্বে বৃহদারণ্যক উপনিষদের উক্ত কন্ডিকায় দেখিয়েছি যে,  সেখানে বৃষ মাংস ভক্ষণের কোন  প্রকরণ নেই।  এখন শঙ্কা এই যে,  সত্যই কি যাজ্ঞবল্ক্য বৃষ মাংস ভক্ষণ করতেন?
পন্ডিত দীননাথ শাস্ত্রী সরস্বতী তার "সনাতন ধর্মলোক" বইয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নিম্নে তাহার মূল সারাংশ এবং যুক্তি উপস্থাপন করলাম পাঠকদের সুবিধার জন্য। উক্ত কন্ডিকার মূল সংস্কৃত পাঠ হচ্ছে  -

" অথ এনং (যজমানং) শালাং প্রপাদয়তি। স ধেন্বৈ চ অনডুহশ্চ নাশ্নীয়াত্। ধেন্বনডুহৌ বৈ ইদং সর্ব বিভূতঃ। তে দেবা অব্রুবন - ধেন্বনডুহৌ বৈ ইদং সর্ব বিভৃতঃ হন্তঃ। যদন্যেষাং বয়সাং বীর্যম্,  তদ্ ধেন্বনডুহয়োর্দধাম - ইতি।যদ্ অন্যেষা বীর্যমাসীত্ তদ ধেন্বনডুহয়োরাদধুঃ। তস্মাদ ধেনুশ্চৈব অনডবাঁশ্চ ভূয়িষ্ঠং ভূঙ্ক্তঃ।  তদ্ হ এতত সর্বাশ্যমিব,  যো ধেন্বডুহয়োরশ্নীয়াত্।অন্তগতির্বি তং  অভিদ্র তমভিজনিতো জায়ায়ৈ গর্ভ নিরবধীদিতি পাপমকদ্ - ইতি পাপী কীর্তিঃ। তস্মাদ্ ধেন্বনডুহয়োনশিনীযাত্।  তদু হ উবাচ যাজ্ঞবল্ক্যঃ  অশ্নাম্যেব অহম অংসলং চেদ্  ভবতীতি।
(শতপথ ব্রাহ্মণ ৩।১।২।২১)



উক্ত কন্ডিকাই "ধেনু" "অনডুহ" "অংসলম" এই  তিনটি পদের উপর বিশেষ  গুরত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

 "লুপ্ত তদ্ভিদ প্রকৃয়ায় "ধেনু" অর্থ হচ্ছে গাভী হতে উৎপন্ন দুগ্ধ এবং দুগ্ধ হতে উৎপন্ন পণ্য।  এবং "অনডুহ" অর্থ হচ্ছে ষাড় দ্বারা চাষকৃত পণ্য।। 

সায়ন আচার্য্য পর্যন্ত উক্ত কন্ডিকায় গো মাংস স্বিকার করেন নি।  তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে - একজন গৃহস্থকে স্নান এবং উত্তম বস্ত্র পরিধারনপূর্বক  যজ্ঞস্থলে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে সে গৃহস্থ যজ্ঞে পূর্ণরূপ ব্রত ধারন করবে  এবং  তখন গাভীর দুধ হতে উৎপন্ন ক্ষীর আদি এবং বৃষ দ্বারা চাষকৃত খাদ্য গ্রহন করবে  না।

 সায়ন কর্তৃক ভাষ্য নিম্নরূপ -
অস্যাপি (শালাপ্রবেশ - কর্তুঃ) প্রশনকালত্বাদ্ অত্র অশ্নতে কংচিদ্ নিয়মমাহ - ধৈন্বৌ - ধেনোঃ ক্ষীরাদিকম, অনডুহঃ সমন্ধি কর্ষণসাধ্য মিত্যর্থঃ তদুভয়ং নাশ্নীয়াত।.... তদ্ অশ্নতঃ সর্বাশনং ভবতি,  তস্য চ জায়াগ্ গর্ভ - সম্ভবে সতি তত্ সর্বাশতং তং রেতোরূপেণ পরিণতং গর্ভ হিংস্যাত্,  তত্ পাপকীর্তিঃ স্যাত্। তদ্ উভয়োঃ (ধেন্বনডুহয়োঃ) (পাপসম্) অন্নং (চ) নাশ্নীয়াত্। তত্র যাজ্ঞবল্ক্যপক্ষমাহ = চেত -যস্মদ্ উভয়া (ধেন্বনডুহা) ত্রাশনে শরীরম্ অংসলৌ [বলবদ্] ভবতি, তস্মাদ তয়োরন্নমশ্নীয়ামেব।





সায়ন এখানে পরিষ্কারভাবে  শব্দ দ্বয়ের অনুবাদ করেছে।   ধেনু = ধেনৌঃ ক্ষীরাদিকম্  অর্থাৎ গাভীর দুধ হতে উৎপন্ন ক্ষীর।  এবং অনডুহঃ সমন্ধি কর্ষণসাধ্য মিত্যর্থ অর্থাৎ বৃষ দ্বারা চাষকৃত পণ্য।  এখানে মাংস নামক কোন প্রকরণের তিনি উল্লেখই করেন নি।

যাজ্ঞবল্ক্য এখানে একজন যজ্ঞের পুরোহিত ছিলেন। এজন্য তাহার অনাহারও বাধ্যতামূলক ছিলো না। অনাহার শুধুমাত্র গৃহস্থের জন্য নির্ধারিত। এজন্য যাজ্ঞবল্ক্য বলেছিলেন যে, 
" অশ্নামি এব অহম অংসলং চেদ্ ভবতি ইতি"
আমি "অংসলং" গ্রহন করি।

 যাজ্ঞবল্কের মত অনুসারে যেহেতু যজ্ঞ দীর্ঘক্ষন ধরে চলতে থাকে সেহেতু যদি যজ্ঞসম্পাদকারী সম্পূর্ণরূপে খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকে তবে সে ক্লেশ প্রাপ্ত হবে। এবং তাহার পক্ষে যজ্ঞ সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে জন্য তিনি তার শরীর রক্ষার্থে কিছু খাবার গ্রহন করবেন।   সূতরাং তিনি ব্যক্ত করলেন যে, যজ্ঞ সম্পাদন করার জন্য আমি "অংশলম্" গ্রহন করি।

কিন্তু অপপ্রচারকারীরা "অংসলম" অর্থ করেছে গাভী এবং বৃষের নরম মাংস যা একদম প্রকরনের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। পূর্ণ বয়স্ক গাভী এবং ষাড়ের মাংস নরম হয় না।  বাছুড়ের মাংসই নরম হতে পারে। আর শতপথ ব্রাহ্মণের এই প্রসঙ্গে বাছুড়ের কোন পদই আসে নি। 

"অংসলম্" শব্দের অর্থ কোন প্রাণীর মাংস নয়।  পাণিনী ৫।২।৯৮ "বত্সাংসাম্য্যাং কামবলে " অনুসারে পুষ্টিকর,  শক্তিপ্রদায়ক।  



অমরকোষ ২।৬।৪৪ এ ইহার অর্থ মাংসলোংসল অর্থাৎ  অমসল হচ্ছে মাংসল।  এখানে মাংসল  প্রাণী মাংস অর্থে ব্যবহৃত হয় নি।  মাংসল মাখন এবং মিষ্টি জাতীয় কিছু,   সতেজ ফল এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।


নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থের মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ,  ঘী,  মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)। 



অতএব ইহা স্পষ্ট যে মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য যজ্ঞ সম্পাদনের জন্য দুগ্ধ, দুগ্ধ হতে উৎপন্ন পণ্য যেমন মাখন,  দুগ্ধ - চাউল মিশ্রিত অন্ন (ক্ষীর)  গ্রহন করেছিলো।   গাভী বা বৃষের মাংস ভক্ষন করেন নি। আমাদের স্থুল বিচার বুদ্ধির কারনেই মূলত এমন শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে।  বেদ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে -

স্বস্তি মাত্রে উত পিত্রে নো অস্তু স্বস্তি গোভ্যো জগতে পুরুষেভ্যঃ।
(অথর্ববেদ ১।৩১।৪)
--- আমাদের মাতার জন্য এবং পিতার জন্য সুখদায়ক হও এবং গাভীর জন্য পুরুষের জন্য জগতের জন্য সুখদায়ক হও।