সনাতন ধর্মের মূল বেদ। বেদ স্বতঃপ্রমাণ। পার্থিব বস্তু প্রত্যক্ষ বা অনুমান প্রভৃতির দ্বারা জানা যায়, কিন্তু যাহা অপার্থিব, অচিন্তনীয়, অনুমানের অতিত, তাহা জানিতে হইলে বেদই একমাত্র অবলম্বন।বেদ কোন মনুষ্য দ্বারা রচিত নহে, তাহা অপৌরষেয় এবং নিত্য। অপৌরুষেয় বলিয়াই বেদ নিত্য। ন্যায় - শাস্ত্রীয় পন্ডিতগণ বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেন, কিন্তু অপৌরুষেয় ও নিত্যতা স্বীকার করেন না। তাহারা বলেন, বেদ পরমপুরুষ রচিত। পরমপুরুষও একজন পুরুষ, সুতরাং বেদ পৌরষেয় এবং অনিত্য।
ঋগবেদের পুরুষসুক্ত বলেন, চারিবেদ পরমেশ্বর রচিত নহে। শ্বাস - প্রশ্বাসের মত তাহার অঙ্গ হতে স্বতঃনির্গত। এই জন্য বেদ অপৌরষেয়। বৃহদারণ্যক উপনিষদ বলিয়াছেন, বেদ পরমেশ্বরের নিঃশ্বসিতম, চেষ্টাকৃত বা বুদ্ধিকল্পিত নহে। পরমেশ্বরের জ্ঞানই বেদ। সায়নাচার্য তাহার বেদের ভাষ্যের প্রারম্ভে বলিয়াছেন -যস্য নিঃশ্বসিতং বেদা যো বেদেভ্যোখিলং জগৎ।
নর্মমে তমহং বন্দে বিদ্যাতীর্থমহেশ্বরম্।।
অর্থাৎ যে চারিবেদ হইতে নিখিল বিশ্বের উৎপত্তি হইয়াছে, সেই বেদচতুষ্টয় তাহার নিঃশ্বাসস্বরূপ এবং যিনি সর্ববিদ্যার আধার, সেই মহেশ্বরকে আমি বন্দনা করি। ইহার দ্বারা বেদের অপৌরুষেয়ত্ব ও নিত্যতা স্বীকৃত হইলো।
এই সমন্ধ্যে ষড়দর্শনে ভিন্ন ভিন্ন মত। ন্যায়দর্শনের কথা বলিয়াছি। এখন বেদান্ত দর্শনের কথা বলিতেছি। বেদান্ত মতে নিত্যত্ব দুই প্রকার - কুটস্থ নিত্যত্ব ও প্রবাহ নিত্যত্ব। কুটস্থ নিত্যত্ব একমাত্র পরমব্রহ্মেরই আছে। ইহার কখনো কোন পরিবর্তন হয় না সর্বদা একরূপ নির্বিকার। দিবা ও রাত্রী সর্বদা পরিবর্তনশীল । গ্রীষ্ম বর্ষাদি ঋতু সর্বদা পরিবর্তনশীল। কিন্তু প্রবাহরূপে নিত্যতা আছে। বেদের কুটস্থ নিত্যতা নাই, প্রবাহরূপ নিত্য।
পূর্ব মিমাংসা দর্শন বেদের দুই প্রকার নিত্যতাই স্বীকার করিয়াছেন। সাংখ্যদর্শন বেদের কুটস্থ নিত্যতা স্বিকার করেন না, প্রবাহ নিত্যতা স্বীকার করেন। পাতন্জল দর্শন বলেন -বেদের অর্থ নিত্য, কিন্তু শব্দরাশী অনিত্য। প্রতিকল্পে বেদের শব্দরাশি বিনাশপ্রাপ্ত হয়, আবার নূতনকল্পে ঋষিরা স্মরণ করেন। কিন্তু বেদের অর্থের বিনাশ হয় না। সুতরাং পতন্জলির মতে বেদ নিত্য ও অনিত্য - অর্থের দিক দিয়া নিত্য অক্ষরের দিক দিয়া অনিত্য।
বৈশেষিক দর্শন বেদকে ঈশ্বরীয় বাক্য বলিয়াছেন। কিন্তু পূর্বমিমাংসা ঈশ্বর মানেন নাই, বেদ ঈশ্বরীয় বাক্য - ইহা স্বীকার করেন নাই। পূর্বমিমাংসা মতে বেদের শব্দ নিত্য। বেদের শব্দ নিত্য বলিয়াই বেদ নিত্য, ঈশ্বর বাক্য বলিয়া নহে। অনেকে বলেন - ঋগবেদের মধ্যে এমন অনেক মন্ত্র রহিয়াছে যাহা পড়িলে বেদ ঈশ্বরীয় বাক্য বলিয়্ মনে হয় না, ঋষিগনের সৃষ্টি বলিয়া মনে হয়। ঋগবেদের সপ্তম মন্ডলের ১৮ শ সুক্তে চতুর্থ মন্ত্রে আছে - ব্রহ্মাণি সসৃজ বসিষ্ঠ, অর্থাৎ বসিষ্ঠ ঋষি মন্ত্ররাজি সৃষ্টি করিয়াছেন। আবার ঐ মন্ডলেরই ২২ সুক্তে নবম মন্ত্রে বলা হইয়াছে - "ব্রাহ্মাণি জনয়ন্ত বিপ্রাঃ" অর্থাৎ বিপ্রগণ মন্ত্র সকলের জন্ম দিয়েছেন। ১ম মন্ডলের ৬২সুক্তে ১৩ শ মন্ত্রে বলিয়াছেন - গৌতম ইন্দ্র নব্যমতক্ষদ্ ব্রহ্ম। ইহার অর্থ করেন - হে ইন্দ্র গোতম ঋষির পুত্র নোধা আমাদের জন্য তোমার এই নতুন মন্ত্র রচনা করিয়াছেন।ইহাতে স্বভাবতঃই তাহাদের মনে জাগে, অনেক মন্ত্রই ঋষি রচিত।
বেদের পৌরুষেয়ত্ব ও অপৌরুষেয়ত্ব সমন্ধ্যে নানা মত বলা হইলো। এখন দেখা প্রয়োজন বেদ নিজ সমন্ধ্যে কি বলেন। শতপথ ব্রাহ্মণে বলেন - বাগেব দেবাঃ। সত্যের জ্যোতির্ময় সাক্ষাৎরূপই দেবতা। দেবতাই মন্ত্র। অব্যক্ত হইতে ব্যক্ত লোকে দেবতারা জাগ্রত হয়েন মন্ত্রময় রূপে।
বেদের ঋকগুলি সব মন্ত্রমূর্ত - দেবতাদের সূক্ষ কায়া দেহ। "ঋঙমূর্তিরব্যয় (কৌষীতকি উপনিষৎ ১।৬) আপন তপস্যার তেজে ও শুদ্ধমনের প্রয়োগে ঋষিরা সত্যকে পরিস্ফুট করেন আপন হৃদয়ে। মন্ত্র ঋষিদের অন্তর্গুহা হইতে আবর্ভূত হয়, নিহিতং গুহাবিঃ (ঋ. ১০।৭১।১)। দেবতার ও মন্ত্রের অর্থ জাগরন, রবীন্দ্রনাথের কবিতা "নির্ঝরের সপ্নভঙ্গের মত। ঋষির তপস্যায় মন্ত্র জাগ্রত হয়েন। ঋষিরা গো দোহনের মতো সত্য ও ঋতকে দোহন করেন । কোথাও কোথাও তক্ষণ করেন এই ভাষা আছে। তক্ষণ তিষ ধাতু হইতে। তক্ষণ করেন অর্থ দীপ্তমান করেন। "ত্বিষোর্বা স্যাদ দীপ্তিকর্মণ "( নিরুক্ত ৮।১৪)
ঋষি মন্ত্র প্রত্যক্ষ করেন। সেই মন্ত্রই বেদ মন্ত্র। মন্ত্রের অক্ষরগুলি ঋষি দর্শন করেন । তিনি উচ্চারিত মন্ত্র শোনেন, সমস্ত সত্তাটি দিয়া অনুভব করেন। এইরূপ কয়েক সহস্র মন্ত্র আমরা পাইয়াছি। বাক্যের জন্মের ইতিহাস অনেক গভীরে। প্রথম আকাশ মহাকাশে স্পন্দনহীন। মূল চেতনা যখন আত্মমুখী বা সৃষ্টিমুখী তখন ইক্ষণ। ঈক্ষণ হইতে প্রথম স্পন্দন। এই স্পন্দই বাক্। বহু হইবো এই সৃষ্টির বাসনা। তাহা হইতে অরূপের আত্মরূপায়ন। মহাশূণ্য হইতে বাক্যের স্ফুরণ পর্যন্ত চারিটি ধাপঃ পরা, পশ্যন্তি, মধ্যমা ও বৈখরী।
প্রথমে আনন্দের আন্দোলন তাই পরা। তারপর রূপ পশ্যন্তি। রূপ ফুটিয়া ওঠে ভাবের মধ্যে - মধ্যমা। ভাব ফুটিয়া ওঠে ভাষায় - বৈখরী।
স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ পরিচয় আদিকবি। জগতে কবির সৃষ্টিই প্রকৃত সৃষ্টি একথা বলিয়াছি। তাহাতে নিমিত্ত ও উপাদান অভিন্ন। আর যত সৃষ্টি সব নির্মাণ। একমাত্র কবিই স্রষ্টা। পরম চৈতন্যের সৃষ্টির আবেগে স্ফুরিত হয় মন্ত্র। প্রথমে নিজেন মধ্যে তারপর বিশ্বজগতে।
সকল সিদ্ধ মন্ত্রেরই অর্থ শাশ্বত নিত্য। বেদের মন্ত্রের কেবল অর্থ নিত্য নহে - অক্ষরও নিত্য।
বিশ্বামিত্র ঋষির দৃষ্টিসৃষ্টি গায়ত্রী মন্ত্রের কেবল অর্থই নিত্য নহে। ঐ মন্ত্রের আনুপূর্বিক অক্ষরবিন্যাসও নিত্য। ঐ অক্ষরগুলি ঐভাবেই ফুটিয়া উঠিয়াছে।ঋষির যখন মন্ত্রপ্রাপ্তি ঘটে তখন তিনি একটি ক্ষুদ্র মানুষ নহেন। ক্ষুদ্র মানুষের ক্ষুদ্র পুরুষকারের তিনি উর্ধে। তিনি তখন অপৌরষেয়। তাহার প্রাপ্তিও অপৌরষেয়।
মন্ত্রটি একটি স্বতঃস্ফুর্ত অভিব্যক্তি। ভাবের অনুকুল ভাষার স্পন্দন। ঋষি মন্ত্রটির প্রবক্তা। কিন্তু ওই মন্ত্রে তাহার কোন কর্তৃত্ব নাই , কোন মালিকানা স্বত্ব নাই । কারন উহা সত্য। কোন সত্য বলিবার সময় কোন ব্যক্তির কর্তৃত্ব স্বীকার করার প্রয়োজন হয় না। সকল ব্যক্তিরই ভ্রম , প্রমাদ, ইন্দ্রিয়ের অপটুতা, কোন স্বার্থ প্রেরণা থাকিতে পারে। সত্য ঈশ্বরকৃতও নহে। সত্যের সত্যতা কোন ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল নহে। ঈশ্বর অসত্যকে সত্য করিতে পারেন না। সত্যের উপরে কোন গুনাধান করিতে পারেন না। সত্যের সত্য ছাড়া কোন বিশেষন চলে না। এজন্য বৈদিক ঋষিরা বেদ বাক্যকে ঈশ্বর বাক্যও বলেন না। যাহা প্রকৃত সত্য, চিরন্তন সত্য, তাহা অপৌরষেয় হতে হবে। বেদ ঋষির অপৌরুষেয় সাক্ষাৎকার। মুনিরা এই অপৌরষেয়বাদ লইয়া অনেক তর্ক - বিচার করিয়াছেন। এই অপৌরুষেয় মন্ত্ররাজিকে যাহারা কন্ঠে করিয়া গুরুশিষ্য পরস্পরায় সহস্র সহস্র বৎসর ধরিয়া রাখিয়াছেন তাহাদের নাম মিমাংসক। কিভাবে এই মন্ত্রগুলি এতকাল বাঁচিয়া আছে, অক্ষুন্ন আছে তাহা অলৌকিক ব্যাপার, বিস্ময়কর ঘটনা।
ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী
(বেদ বেদান্ত। উত্তরখন্ড। বেদ- বিচিন্তন)
এক্ষণে আমরা উক্ত বেদের তিনটি মন্ত্রের উপর বিশ্লেষন করে দেখবো। আসলে মন্ত্রগুলোতে কি বলা হয়েছে যে, বেদমন্ত্র ঋষি সৃষ্ট? যেহেতু উপরের আলোচনা থেকে ইহা স্পষ্ট হয়েছে যে, বেদ মন্ত্র নিত্য এবং অপৌরুষেয় ।সেহেতু বেদ মন্ত্র কোন পুরুষ দ্বারা রচিত হতে পারে না। এবং তাহাতে কোন অনিত্য ইতিহাস অথবা অনিত্য ব্যক্তিবাচকের নাম থাকতে পারে না।
ঋগবেদের প্রথম মন্ডলের ৬২ সুক্তে দাবীকৃত মন্ত্রটি হচ্ছে,
সনায়তে গোতম ইন্দ্র নব্যমতক্ষদ্ ব্রহ্ম হরিয়োজনায়।
সুনিথায় নঃ শবসান নোধাঃ প্রাতর্মক্ষু ধিয়াবসুর্জগম্যাত্।।
(ঋগবেদ ১।৬২।১৩)
অর্থাৎ হে ইন্দ্র! গোতম ঋষির পুত্র নোধা আমাদের জন্য তোমার এই নতুন মন্ত্র রচনা করিয়াছেন।
সমীক্ষাঃ মন্ত্রটিতে "নোধা" "গোতম" এবং ব্রহ্ম এই তিনটি শব্দ গুরত্বপূর্ণ। বেদকে যারা পৌরুষেয় স্বীকার করেন তারা এসব শব্দে কোন ব্যক্তিবাচকের নাম বোঝেন। মূলত এসব শব্দগুলো কোন ব্যক্তিবাচকের নাম নয়। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী অনেক সুন্দরভাবে মন্ত্রে এসব ব্যাখ্যা করেছেন। পাণিনিমুনিকৃত অষ্টাধ্যায় এর দ্বাদশ ভাগ উণাদিকোষ ৪।২২৬ এ নোধা শব্দের অর্থ হচ্ছে স্তুতিকারী, নব ধুট চ। নৌনি স্তৌতি ন্যুয়তে স্তয়তে বা সঃ নোধাঃ। গোতম শব্দের অর্থ হচ্ছে স্তুতির যোগ্য ; গচ্ছতীত গোঃ স্তোতা সোহতিশয়িতঃ সঃ। এবং যে শব্দটির কারণে এমন শঙ্কা উৎপন্ন হয়েছে তা হলো "ব্রহ্ম"। পৌরাণিক ভাষ্যকাররা "ব্রহ্ম" শব্দের অর্থ বেদ মন্ত্র করেছে। এজন্য তারা মনে করে কোন পুরুষ মন্ত্রগুলো সৃষ্টি করেছে। কিন্তু নিঘন্টু ২।১০ এ ব্রহ্ম হচ্ছে ধনের আরেক টি নাম ; ব্রহ্মেতি ধনননামসু পঠিতম। এবং নিঘন্টু ২।৭ এ ব্রহ্ম অর্থে অন্ন বলা হয়েছে; ব্রহ্মেতি অন্ননামসু পঠিতম। অর্থাৎ এ মন্ত্রে ধন বা অন্ন উৎপন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নিম্নে মন্ত্রটির পদার্থ এবং ভাবার্থ দেখুন -
পদার্থঃ হে (শবসান) বলযুক্ত (ইন্দ্র) উত্তম ধনবান সভাধ্যক্ষ (ধিয়াবসু) বুদ্ধি এবং কর্মের সাথে অবস্থানকারী (গোতমঃ) অত্যন্ত স্তুতির যোগ্য [গচ্ছতীত গোঃ স্তোতা সোহতিশয়িতঃ সঃ ] (নোধাঃ) স্তুতি কারী আপনি [নবো ধুট চ। নৌনি স্তৌতি ন্যুয়তে স্তুয়তে বা স নোধাঃ উণাঃ ৪।২২৬] (হরিযোজনায়) মনুষ্যদের সমাধানের জন্য [হরয় ইতি মনুষ্যনামসু পঠিতম্, নিঘুঃ ২।৩] (নব্যম) নবীন (ব্রহ্ম) উত্তম ধন কে [ব্রহ্মেতি ধননামসু পঠিতম্ নিঘু ২।১০। অন্ননামসু পঠিতম্, নিঘু ২।৭] (অতক্ষত্) ক্ষীণ করেন (নঃ) আমাদের (সুনীথায়) সুখ প্রাপ্তির জন্য (প্রাতঃ) প্রতিদিন (মক্ষু) শীঘ্র (সনায়তে) সনাতনের সমান আচরন করো তথা (নঃ) আমাদের সুখের জন্য শীঘ্র (জগম্যাত্) প্রাপ্ত হও।
ভাবার্থঃ সভাপতি আদির উচিৎ যে, মনুষ্যের জন্য প্রতদিন নতুন- নতুন ধন এবং অন্ন উৎপন্ন করে। যেভাবে প্রাণবায়ু দ্বারা মানুষের সুখ হয়, সেভাবে সভাধ্যক্ষ সবাই কে সুখী করে।
এরপর ৭ম মন্ডলের দুটি সুক্তে দাবীকৃত মন্ত্রগুলো হচ্ছে - ঋগবেদ ৭।১৮।৪ এবং ৭।২২।৯। মন্ত্র দুটিতে দাবী ছিলো - ব্রহ্মাণি সসৃজে বসিষ্টঃ অর্থাৎ বসিষ্ট মন্ত্রগুলো সৃষ্টি করেছে (৭।১৮।৪) এবং ব্রহ্মাণি জননয়ন্ত বিপ্রাঃ। বিপ্রগণ মন্ত্রের জন্ম দিয়েছে (৭।২২।৯)। মন্ত্র দুটিতেই "ব্রহ্মাণি" শব্দ রয়েছে যা পূর্বেই নিঘন্টু থেকে দেখানো হয়েছে যে, " ব্রহ্মেতি ধননামসু পঠিতম্ নিঘু ২।১০ এবং ব্রহ্মেতি অন্ননামসু পঠিতম্, নিঘু ২।৭]। তাই পূণর্বার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। তাই শুধুমাত্র মন্ত্র দুটির পদার্থ এবং ভাবার্থ দেখে নেওয়া যাক।
ধেনুং ন ত্বা সুয়বসে দুদুক্ষন্নুপ ব্রহ্মাণি সসৃজে বসিষ্টঃ।
ত্বামিন্মে গোপতিং বিশ্ব আহা ন ইন্দ্রঃ সুমতিং গন্ত্বচ্ছ।।
(ঋগবদ ৭।১৮।৪)
পদার্থঃ হে রাজন! যে (বসিষ্টঃ) অতিব ধন [অতিশয়েন বসু] (সুয়বসে) সুন্দর ভক্ষণ করার যোগ্য ঘাসের নিমিত্ত (ধেনুম) গাভী কে (ন) যেরূপ, সেরূপ (ত্বা) তোমাক (দুদুক্ষন্) কাম দ্বারা পরিপূর্ণ করে (ব্রহ্মাণি) বহুত অন্ন বা ধন কে (উপ, সসৃজে) সিদ্ধ করে (মে) আমার (গোপতিম্) ইন্দ্রীয়কে পালনকারী ( ত্বাম) তোমাকে (বিশ্বঃ) সব জন যা (আহ) বলে (ইত্) সেরূপ (নঃ) আমাদের (সুমতিম) সুন্দর মতি কে (ইন্দ্রঃ) পরমৈশ্বর্যযুক্ত রাজা আপনি (অচ্ছ, আ, গন্তু) উত্তম প্রকারে প্রাপ্ত হউন।
ভাবার্থঃ এইমন্ত্রে উপমালঙ্কার রয়েছে। যদি আপনি আমাদের বিদ্বান এর সম্মতিতে অবস্থান করেন বা কোন প্রজাজন স্বকীয় সুখ দুঃখ প্রকাশকারী বচন কে শুনায়। সেই সব বচন কে শুনে যথাবত্ সমাধান প্রদান করেন তো আপনাকে আমরা সবাই গাভী দুধ দ্বারা যেরূপ, সেরূপ রাজৈশ্বর্য উৎপন্ন করবো।
এবং দ্বিতীয় মন্ত্রটি হচ্ছে -
যে চ পূর্ব ঋষয়ো যে চ নুত্না ইন্দ্র ব্রহ্মাণি জননয়ন্ত বিপ্রাঃ।
অস্মৈ তে সন্তু সখ্যা শিবানু যুয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ।।
(ঋগবেদ ৭।২২।৯)
অস্মৈ তে সন্তু সখ্যা শিবানু যুয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ।।
(ঋগবেদ ৭।২২।৯)
পদার্থঃ হে (ইন্দ্র) রাজন্ (যে) যে (পূর্বে) বিদ্যা পঠিত হয়ে (ঋষয়ঃ) বেদার্থবেত্তা জন (চ) এবং ধার্মিক জন (যে) যে (নুত্নাঃ) নবীন পাঠক জন (চ) এবং (বিপ্রাঃ) উত্তম বুদ্ধিমান জন (তে) তোমার এবং(অস্মৈ) আমাদের জন্য (ব্রহ্মাণি) ধন বা অন্ন কে (জনয়ন্ত)উৎপন্ন করে, তাহার সাথে আমাদের এবং তোমার (শিবানি) মঙ্গল দানকারী (সখ্যা) মিত্রের কর্ম (সন্তু) হয় যেরুপ (যুয়ম) তুমি আমাদের মিত্র হয়ে (স্বস্তিভিঃ) সুখ দ্বারা (নঃ) আমাদের কে (সদা) সদা (পাত) রক্ষা করো।
ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে বাচকলুপ্তোপমালঙ্কার রয়েছে। হে রাজা! বেদার্থবেত্তা এবং পদার্থ বিদ্যা কে জানা যোগী জন বিদ্যাধ্যয়নে নিরত বুদ্ধিমান আমাদের কল্যান কে ইচ্ছা কারী হয় তার সাথে মিত্রতা করে ধনধান্য কে বৃদ্ধি করে তাদের রক্ষা করো এবং তারাও আপনাকে রক্ষা করবে।
উপরে তিনটি মন্ত্রের বাংলা অনুবাদ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কর্তৃক ঋগবেদ ভাষ্য হতে দেখানে হয়েছে। তিনি অনেক সুন্দরভাবে মন্ত্রগুলোর যথাযোগ্য অর্থ উদঘাটন করেছেন। তাইতো ঋষি অরবিন্দ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সমন্ধ্যে বলে গিয়েছেন - In the matter of Vedic interpretation I am convinced that whatever may be the final complete interpretation, Doyananda will be honoured as the first discoverer of the right clues. Amidst the choas and obscurity of old ignorance and age- long misnderstanding his was the eye of direct vision that pierced to the truth and fastened on that which was essential. He was found the keys of the doors that time had closed and rent asunder the seals of the imprisoned fountains.
0 মন্তব্য(গুলি)