https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ০১ - গীতার বাণিগুলো কি শ্রীকৃষ্ণ সারাক্ষন যোগযুক্ত অবস্থায় বলেছিলেন?

Sunday, April 30, 2017

প্রশ্ন -গীতার বাণীগুলো কি শ্রীকৃষ্ণ সারাক্ষণ যোগযুক্ত অবস্থায় থেকে বলেছিলেন?

উত্তর- মহাভারত অশ্বমেধিক পর্বের ১৬ তম অধ্যায়ে অর্জুন কে গীতা দান প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন যে,

  " পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া।।১৩।। "
 অর্থাৎ সেই পরম ব্রহ্মের উপদেশ আমি যোগযুক্ত অবস্থায় করেছিলাম।



এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, কৃষ্ণ অর্জুন কে যোগযুক্ত অবস্থায় গীতা জ্ঞান দান করেছিলেন।  কিন্তু  সম্পূর্ণ গীতা অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে যে, তিনি  সারাক্ষণ যোগযুক্ত অবস্থায় বলেনি। কিছু কিছু যোগ যুক্ত অবস্থায় বলেছেন(যা কিনা পরমাত্মার বাণী) ও কিছু কিছু বাণী যোগ মুক্ত অবস্থায় বলেছেন(যা কিনা ওনার নিজের জ্ঞান থেকেই বলেছেন)। কৃষ্ণ ছিলেন মুক্ত আত্মা বা মোক্ষলাভ করা আত্মা, আর মুক্ত আত্মারা পরমেশ্বরের মধ্যে থেকে অনেক কিছুই করতে পারেন। গীতায় আমি বলতে মূলত ২টি সত্ত্বাকে বুঝায়, একটা মুক্ত জীবাত্মা কৃষ্ণজী ও অপর সত্ত্বাটা পরমেশ্বরকেই বুঝিয়েছেন।  প্রমাণ স্বরূপ কৃষ্ণজী বলছেন যে-


ईश्वरः सर्वभूतानां हृद्देशेऽर्जुन तिष्ठति।
भ्रामयन्सर्वभूतानि यन्त्रारूढानि मायया।।18.61।।
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশের্জুন তিষ্ঠতি৷
ভ্রামযন্সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢানি মাযযা৷৷18.61৷৷  
"হে অর্জুন!  ঈশ্বর সর্ব জীবের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত থাকিয়া মায়াদ্বারা যন্ত্রারূঢ় পুত্তলিকার মত
তাহাদিগকে ভ্রমণ করাইতেছেন।"
(গীতা ১৮।৬১)

तमेव शरणं गच्छ सर्वभावेन भारत।
तत्प्रसादात्परां शान्तिं स्थानं प्राप्स्यसि शाश्वतम्।।18.62।।
তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত৷
তত্প্রসাদাত্পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্৷৷18.62৷৷

 "হে ভারত, সর্বতোভাবে তাঁহার (ঈশ্বরের) শরণ
লও, তাঁহার অনুগ্রহে পরম শান্তি ও চিরন্তন স্থান প্রাপ্ত হইবে।"
(গীতা১৮।৬২)

इति ते ज्ञानमाख्यातं गुह्याद्गुह्यतरं मया।
विमृश्यैतदशेषेण यथेच्छसि तथा कुरु।।18.63।।
 ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং গুহ্যাদ্গুহ্যতরং মযা৷
বিমৃশ্যৈতদশেষেণ যথেচ্ছসি তথা কুরু৷৷18.63৷৷
 
"আমি তোমার নিকট এই গুহ্য হতেও গুহ তত্ত্বকথা ব্যাখ্যা করিলাম, তুমি ইহা বিশেষভাবে পর্যালোচনা করিয়া যাহা ইচ্ছা হয় তাহাই কর।"
(গীতা ১৮।৬৩)
উপরের এই ৩টি শ্লোক থেকে পরিষ্কার এই সময় কৃষ্ণ স্বাভাবিক মানুষদের মতই তথা জীবের মতই
কথা বলছেন। যোগযুক্ত অবস্থায় কথা বলছেন না। কারণ এই স্থলে কৃষ্ণ আমার বা আমাকে শরণ লও এই কথা বলে নাই। বলেছে ঈশ্বরের শরণ নেওয়ার কথা। আর যখন দেখলেন এতেও অর্জুন স্থির হতে পারেন নাই তখনই কৃষ্ণ
যোগযুক্ত হলেন এবং তখন যোগযুক্ত কৃষ্ণজীর আত্মায় পরমাত্মা বা ঈশ্বর প্রকটিত হয়ে বলিলেন-

सर्वधर्मान्परित्यज्य मामेकं शरणं व्रज।
अहं त्वा सर्वपापेभ्यो मोक्षयिष्यामि मा शुचः।।18.66।।
 সর্বধর্মান্পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ৷
 অহং ত্বা সর্বপাপেভ্যো মোক্ষযিষ্যামি মা শুচঃ৷৷18.66৷৷  
"সকল ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া তুমি একমাত্র আমারই(পরমেশ্বরের) শরণ লও।আমি(পরমেশ্বর) তোমাকে সকল পাপ থেকে রক্ষা করিব, শোক করিও না।"
(গীতা১৮।৬৬)

উপনিষদেও আমরা দেখতে পাই গুরু শিষ্যকে   অহংভাবে "আমি,  আমার " বোধে উপদেশ দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে থাকি। উদাহরণ স্বরূপ ছান্দোগ্যপনিষদ এ সনদ মুনি উপদেশ দিচ্ছেন -
"তিনিই নিম্নে, তিনি উর্ধে, তিনি পশ্চাতে, তিনি সম্মুখে,  তিনি পশ্চাতে,  তিনি দক্ষিনে,  তিনি উত্তরে অর্থাৎ তিনি সর্বত্র।
এর পরই আবার তিনি অহংভাবে উপদেশ দিচ্ছেন -
আমিই অধোভাগে, আমি উর্ধে,  আমি পশ্চাতে,  আমি সম্মুখে,  আমি পশ্চাতে,  আমিই দক্ষিনে।
(ছান্দোগ্যপনিষদ ৭।২৫।১)
[এখানে বিশেষ ভাবে এই কথাটা বলে রাখতে হবে যে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন মুক্ত পুরুষ, আর মুক্ত পুরুষরা তাহা পারেন। শ্রীকৃষ্ণ যখনই উচিৎ মনে করেন তখনই মানুষী শরীর ধারণ করিবেন ইহা তার ইচ্ছা ]
ছান্দগ্যোপনিষদ ও বেদান্তসূত্রেও বলা আছে যে মুক্ত জীবাত্মারা তা পারেন। প্রমাণ দেখুন-
"ভাবং জৈমিনিঃ, বিকল্পামননাৎ"
(বেদান্তসূত্র ৪।৪।১১)
অর্থাৎ মুক্ত আত্মার দেহ ও ইন্দ্রিয়াদি থাকে, ইহা জৈমিনি মুনিরর মত। কারণ শাস্ত্রে বলা আছে যে, তারা নানা রূপ দেহধারণ করার ক্ষমতা আছে।
             

"...তিনি(মুক্ত জীবাত্মা) এক প্রকার থাকেন, তিন প্রকার হন, পঞ্চ প্রকার, সপ্ত প্রকার এবং নব
প্রকার হন...।"
(ছান্দোগ্যোপনিষদ্৭ ।২৬।২)

এছাড়াও তিনি যে যা ইচ্চা তাই পেয়ে থাকেন তথা করতে পারেন।  তার প্রমাণ আরো দেখুন-

"তিনি যদি পিতৃলোক কামনা করেন, তবে তাহার সঙ্কল্পমাত্রই পিতৃগণ তাঁহা সহিত মিলিত হন...। মাতৃলোক কামনা করলে মাতৃগনের সহিত মিলিত
হন... ভাতৃলোক কামনা করলে তাদের সহিতও মিলিত হতে পারেন... । ভগিনীলোক কামনা করলে, বন্ধুলোক কামনা কললে তাদের সহিতও মিলিত হন। এক কথায় যাহা চান তাহাই প্রাপ্ত হন।"
(ছান্দোগ্য_উপনিষদ ৮।২।১-১০)
অর্থাৎ অর্জুনকে সম্পূর্ণ গীতা উপদেশ দানকালে শ্রীকৃষ্ণ সর্বত্র যোগযুক্ত ছিলেন না। অনেক স্থলে তিনি সাধারন মানুষের মতোই কথা বলেছেন।


  1. কৃষ্ণ সম্পর্কে আজ আমার ধারনা পুরোপুরি বদলে গেলো।তার উপরেও কেউ আছেন এখন সেরকমই মনে হচ্ছে। যদিও আরো প্রমান দরকার৷

    ReplyDelete