https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ০২ - গীতাই উক্ত কৃষ্ণ পরমাত্মা না কি জীবাত্মা?

Monday, May 1, 2017

প্রশ্ন - গীতাই যে কৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে তিনি  পরমাত্মা নাকি জীবাত্মা?

উত্তর- দ্বাপর যুগের কৃষ্ণের কোন বর্ণনা বেদে নেই, কারণ কারো ইতিহাস তার জম্মের পরেই লিখা হয় পূর্বে না। তবে উপনিষদে একবার কৃষ্ণের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সেখানে কৃষ্ণকে ঈশ্বর মানা হয় নাই, উপনিষদে দেখা যায়

তিনি এক গুরুরনিকট থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন!!! তবে সেই কৃষ্ণ দ্বাপর যুগের কিনা এটা নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে।
তবে বেদে এই ধরণের কোন কিছু নেই। দ্বাপর যুগে যে দেহ ধারী কৃষ্ণকে আমরা দেখতে পাই তিনি ঈশ্বর বা পরমাত্মা নন। তিনি হলেন জীবাত্মা, আমরা যেমন প্রত্যেকেই জীবাত্মা তিনিও জীবাত্মাই ছিলেন, পরমাত্মা নয়। তবে পূর্ণ আত্মা, মুক্ত আত্মা ছিলেন। বেদে স্পষ্টই বলা আছে পরমাত্মার দেহ বা শরীর নেই, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের শরীর ছিল। এখন প্রশ্ন হল এই কথা
গুলোরভিত্তি কি??? চলুন প্রমাণ দেখি-
গীতা ৪।৫. কৃষ্ণ বলেছে ওনার ও অর্জুনের বহু জম্ম অতীত হয়েছে, আর সেই সব জম্মের
কথা কৃষ্ণ মনে করতে পারেন, কিন্তু অর্জুন তার
সবগুলো মনে রাখতে পারেন না।
এই শ্লোক থেকে প্রমাণিত পূর্বে কৃষ্ণের জম্ম হয়েছে এবং তিনি পূর্ব জন্মের  কথা মনে
রাখতে পারেন। যেমন কিনা কৌরব মাতা গান্ধারীও কিছু জন্মের কথা মনে রাখতে পারেন।
অনেকই বলে যে এই শ্লোকে মূলত ঈশ্বরের অবতারবাদের কথাই বলেছে। কিন্তু আমি বলবো এই শ্লোকটা অবতারবাদের কথা বলেনি, যেখানে
বলেছে সেখানেই অবতারের কথা আলোচনা করবো। আমরা কিছু প্রমাণ দেখবো যেখানে কৃষ্ণকে হরির অংশ বলা হয়েছে -
১। হরির অংশে পৃথিবীতে কৃষ্ণ ও বলরামের শোভা বর্ধন-
পুরা গ্রামেস্বাগ্রয়েণৈরৈন্দ্রিয়ৈশ্চ মহোৎসবৈ।
বভৌ ভূঃ পক্কশস্যাঢ্যা কলাভ্যাং নিতরাং হরে।।  (ভাগবতঃ ১০।২০।৪৮)
ভাবার্থ- নগর গ্রাম বৎসরের নতুন শস্যের অগ্রভাগে ইন্দ্র দেবের উদ্যেশে নিবেদন এবং মহোৎসব হচ্ছিলো। পরিপক্ক শস্য সমৃদ্ধা পৃথিবী হরির বিশেষ অংশ উভয়ে (কৃষ্ণ ও বলরাম) দ্বারা শোভা পাচ্ছিলো।
২। বিষ্ণুর অংশে কৃষ্ণ ও বলরামের অবতার -
যদোশ্চ ধর্মশীলস্য নিতরাং মুনিসত্তম।
তত্রাংশেনাবতীর্স্য বিষ্ণোবীর্যাণি শংস নঃ।।
(ভাগবত ১০।১।২)
ভাবার্থ- হে মহান মুনিবর! আপনি আমাদের প্রসংশার সহিত বর্ণনা করুন ধর্মানুরাগী উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন যদুবংশের। সেই বংশে বিষ্ণুর অংশে অত্যন্ত বীর্যের সহিত (কৃষ্ণ ও বলরাম) অবতীর্ণ হয়েছে।
এখানে বৈষ্ণবদের প্রিয় শ্রী জীব কষ্ট কল্পনা করিয়া অর্থ দাড় করিয়েছেন-
অংশের অর্থাৎ শ্রী বলরামের সংগে অবতীর্ণ কৃষ্ণ। সর্ব্বব্যপকতা দ্বারা পরিপূর্নতার পর্যবসান শ্রীকৃষ্ণে আছে। এই জন্য বিষ্ণু এ স্থলে শ্রীকৃষ্ণকে নির্দেশ করা হয়েছে।
কিন্তু পরিচ্ছিন্ন দেহধারী শ্রীকৃষ্ণ যে সর্বত্র বেপে থাকতেন সে কথা ব্যাসদেব মহাভারতের কোথাও বলেন নি। মহাভারত থেকে জানা যায়, কপট দ্যুতক্রিড়ায় সর্বস্ব হারিয়ে পান্ডব যখন বনে ছিলেন। তখন একদিন কৃষ্ণ সেখানে এসে বললেন-
নৈতৎ কৃচ্ছমনুপ্রাপ্তো ভবান স্যাদ বসুধাধিপ।
যদ্যহং দ্বারকায়ং স্যাং রাজন সন্নিহিত পুরা।।
অর্থাৎ আমি যদি তখন দ্বারকাতে থাকতাম তাহলে হে রাজন যুধিষ্ঠির তোমাদের এত কষ্ট ভোগ হতো না।
এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে তিনি সর্বত্র ছিলেন না।
৩। হরির অংশে দেবকীর গর্ভে কৃষ্ণের জন্ম-
দিষ্ট্যাম্ব তে কুক্ষিগতঃ পরঃ পুমান
অংশেন সাক্ষাৎ ভগবান ভাবয় নঃ।
(ভাগবত ১০।০২।৪১)
ভাবার্থ -হে মাতঃ! সৌভাগ্যক্রমে আমাদের কল্যাণের জন্য সাক্ষাৎ পরম পুরুষ ভগবান অংশে (হরির অংশে) আপনার গর্ভে আগমন করেছেন।
এখানে কৃষ্ণ যে অংশ পূর্ণ নন তা স্পষ্ট বলা হলো।
এতৌ ভগবতঃ সাক্ষাদ্ধরের্ণারায়ন্য হি।
অবতীর্ণ বিহাংশেন বসুদেবস্য বেশ্মনি।।
(ভাগবতঃ ১০।৪৩।২৩)
ভাবার্থ -অবশ্যই এরা দুজন সাক্ষাৎ ভগবান নারায়ন হরির অংশে এই লোকে বসুদেবের গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে।
৪। পৃথিবীর ভার হরনের জন্য হরির অংশে কৃষ্ণ ও অর্জুনের পৃথিবীতে আবির্ভাব-
তাবিমৌ বৈ ভগবতো হরেরংশাবিহাগতৌ।
ভারব্যয়য়া চবভূব কৃষ্ণৌ যদুকুরুদ্বহৌ।।
(ভাগবতঃ ৪।১।৫৯)
ভাবার্থ- এই উভয়ে অবশ্যই হরির অংশ কৃষ্ণ ও অর্জুন এখানে পৃথিবীর ভার হরনের জন্য যথাক্রমে যদু ও কুরু বংশে আবির্ভূত হয়েছেন।
কৃষ্ণ যে পরমাত্বার একটি কেশের অংশ মাত্র। মহাভারতের আদিপর্বেও তার বর্ণনা আছে।
"দেবগন কর্তৃক প্রার্থিত হয়ে শ্রী হরি কেশদ্বয় উৎপাটন করলেন। তার একটি শুক্ল অপরটি কৃষ্ণবর্ণ। সেই কেশদ্বয় যদুকুল মহিলা রোহিনী এবং দেবকীতে আবিষ্ট হইয়াছিলো। শ্বেতবর্ণ কেশ বলভদ্র এবং কৃষ্ণবর্ণ কেশ কৃষ্ণরূপে উক্ত হন"
(মহাভারত , আদিপর্ব ১৯৬।৩২-৩৩)
কৃষ্ণ ও অর্জুন নর ও নারায়ন ঋষি ছিলেন এবং ভূমাপুরুষের নিজের অংশ বলে দাবী করেছেন তাও একবার দেখুন-
কলাবতীর্ণব্বনের্ভারাসুরান্
হত্বেহ ভূয়স্তরয়োতমস্তি মে।।
(ভাগবত ১০।৮৯।৫৮)
ভাবার্থ- ভূমাপুরুষ বলছে, তোমরা আমার অংশে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছো। ভারস্বরূপ অসূরদের বধ করে পূনরায় আমার নিকট ফিরে।
পূর্ণকামাবপি যুবাং নরনারায়রনাবৃষৌ।
ধর্মমাচরতাং স্থিত্যৈ ঋষভৌ লোকসংগ্রহম্।।
(ভাগবত ১০।৮৯।৫৯)
ভাবার্থ- তোমারা দুজনে পূর্ণকাম সর্বশ্রেষ্ঠ নর এবং নারায়ন ঋষি। তথাপি (জগতের) স্থিতি এবং লোকরক্ষার জন্য ধর্মাচরন আবশ্যক।
এই ভূমাপুরুষের উপাখ্যানে জানা যায় যে, এক বাহ্মণের মৃত পুত্রকে ফিরিয়ে আনবার জন্য অর্জুনকে নিয়ে অনন্তদেব ভূমাপুরুষের ধাম মহাকালপুরে প্রবেশ করলেন। তখন ভূমাপুরুষের অঙ্গজ্যোতি দর্শনে অক্ষম হয়ে অর্জুন চক্ষু মুদিত করলেন। তারপর কৃষ্ণার্জুন উভয়েই সেই ভূমাপুরুষকে প্রণাম করলে তিনি বলেন-
তোমরা আমার অংশ। পৃথিবীর ভারস্বরূপ অসুর বধের জন্যই অবতীর্ণ হয়েছো। তা সম্পন্ন করে আমার কাছে আগমন করো।
অর্থাৎ পূর্ব জম্মের অনেক ত্যাগ তীতিক্ষার ফলে
আমরা দ্বাপর যুগের মোক্ষলাভ করা আত্মা বা মুক্ত আত্মা কৃষ্ণকে পাই।
গীতার ৪।৭ও৮ নং শ্লোক হল আপনাদের সেই
অবতারবাদ তত্ত্ব। আপনাদের কথা মত কৃষ্ণ এখানে বলেছেন তিনি অবতরণ করেন। এই প্রসঙ্গে আমি এটাই বলতে চাই যে মুক্ত
আত্মারা তা পারেন।
এই অবতরণ পরমাত্মার নয়, ইহা মোক্ষ লাভ করা আত্মারই হয়। কারণ আত্মারা যখনই দেহ ধারণ করে তখনই সেটাকে আমরা বলি জম্ম, যেমন আমাদের ক্ষেত্রে এটা জন্ম। আর মোক্ষলাভ করা আত্মা বা মুক্তি পাওয়া আত্মারা তাদের নিজের ইচ্চায় যখন দেহ ধারণ করে তখন সেটাকে বলে অবতরণ। আর ঐ দেহধারী আত্মাকে বলে অবতার।
পরমাত্মা যেহেতু সর্বত্র আছেন সেহেতু ওনার জম্ম বা অবতরণের প্রশ্নই আসে না। আর
তিনি যে শরীর ধারণ করেন না এটা পবিত্র বেদে স্পষ্ট করেই বলা আছে। পরমাত্মা তথা ঈশ্বর সম্পর্কে পবিত্র বেদের বাণী-
"পরমাত্মা সর্বব্যাপক, সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্ররহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত, রোগরহিত, জম্মরহিত, শুদ্ধ, নিষ্পাপ. সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি তাঁহার শাশ্বত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন।"
(যজুর্বেদ ৪০।৮)
উপরের বেদ মন্ত্র থেকে এটা নিশ্চিত পরমাত্মা শরীর ধারণ করে না। অর্থাৎ দ্বাপর যুগের কৃষ্ণ পরমাত্মা তথা ঈশ্বর নয়, অবতার।
[বিঃদ্রঃ অবতার সম্পর্কে আমার বিশেষ অভিমত
এই যে, আমরা প্রত্যেকেই এক এক জন অবতার হতে পারি। শুধু মাত্র আত্মার মহিমাকে বৃদ্ধি করুন, এবং মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করুন। যদিও মুক্তিলাভ বা মোক্ষলাভ খুব কঠিন, এর জন্য কঠোর তপস্যা প্রয়োজন।]

  1. তবে কি অর্জুন ও মুক্ত আত্মা?

    ReplyDelete
  2. কৃষ্ণকে লীলাধরও বলা হয়। তার বাক্য বোঝার জন্য শ্রদ্ধা ও ভক্তি আবশ্যক। যে অনুগিতার প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে সেখানে কৃষ্ণ এই জন্য বলেছিলেন "যে আমি আর সেই জ্ঞান প্রদান করতে পারবোনা" কারণ অর্জুনের হৃদয়ে সেই শ্রদ্ধা তিনি আর পুনরায় দেখতে পাননি। এই কথাটাও ওই অনুগীতা তেই লেখা আছে । এই নয় যে তিনি জানতেন না । বার বার একই জ্ঞান বিনা শ্রদ্ধায় প্রদান করতে থাকলে অমূল্য জ্ঞান খুবই সস্তার মনে হয়। যেমন:- প্রায় সবার ঘরেই গীতা থাকে কিন্তু পরে আর কয়জন? এমনকি ভগবৎ গীতাতেই অন্তিম অধ্যায় কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন এই জ্ঞান আর অন্য শ্রদ্ধা হীন ব্যক্তিকে সহজে না বলতে। আর মনে রাখা উচিৎ কৃষ্ণ পরমাত্মা কিনা সেটা কৃষ্ণের দেহ দেখে নয় তার আত্মার স্তর দেখে বোঝা উচিত কারণ কৃষ্ণ নিজেই দেহ কে নস্বর বলেছে। গীতার অধ্যায় 4 এর 1 থেকে 8 শ্লোক পড়লে সহজেই এই বিষয়টি বোঝা যাবে।

    ReplyDelete