https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে কি ইতিহাস রয়েছে?

Friday, May 12, 2017

বেদ বিষয়ে একটা প্রশ্ন সর্বদা আমাদের সামনে আসে , বেদে কি ইতিহাস রয়েছে?  হিন্দু সমাজ বেদে  শ্রীরাম,  কৃষ্ণ, গণেশ থেকে শুরু করে ভৌগলিক পর্বত,  রাজার রাজ্য আদির  বর্ণনা মানেন। বিভিন্ন মত- মতান্তরের ব্যক্তি নিজ নিজ মতের প্রবর্তক যেন জৈন মত মান্যকারী মহাবীর [I],  কবীর মত মান্যকারী কবির সাহেব [ii],  ইসলাম মত মান্যকারী মুহাম্মদ সাহেব [iii],  ইসাই মত মান্যকারী ইসা মসীহ [iv] আদির বর্ণনা  বেদের মধ্যে  মান্য করেন
শঙ্কা 1 - বেদে ইতিহাস মানা কি কঠিন কিছু?

সমাধানঃ বেদ শাশ্বত। বেদ পরমাত্মার নিত্য বাণী [v]।  বেদে সৃষ্টি রচনা,  বেদ রচনা আদির  ইতিহাসই নিত্য হতে পারে।  কিন্তু কোন ব্যক্তি বিশেষের ইতিহাস নিত্য হতে পারে না [vi]। সৃষ্টির আদিতে চার বেদ ঋষির হৃদয়ে প্রকাশিত হয়েছে। বেদ জ্ঞানের দ্বিতীয় নাম। বেদের মাধ্যম দ্বারা ঈশ্বর সমস্ত মানব জাতিকে জ্ঞান প্রদান করেছেন।  এই জ্ঞান ঈশ্বর দ্বারা যেই প্রকারে বর্তমান সৃষ্টিতে প্রদান করেছেন সেই প্রকার তিনি পূর্ব সৃষ্টিতেও দিয়েছেন এবং ভবিষ্যত সৃষ্টির মধ্যেও দেবেন [vii]।  যেই জ্ঞানের উপদেশ পরমাত্মা সৃষ্টির আরম্ভে মনুষ্যকে দিয়েছেন তাতে কোন প্রকারের ইতিহাস থাকতে পারে না। কারন ইতিহাস কোন মনুষ্যের জন্মের পরই লেখা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ইতিহাস রচনার জন্য রচনার পূর্বে সেসব মানুষের অস্তিত্ব থাকা  অনিবার্য্য। সৃষ্টির আরম্ভে যখন কোন মানুষই ছিলো না তো  সেসব মনুষ্যের কোন প্রকার ইতিহাস  বেদে প্রথম থেকেই বর্ণিত হওয়া অসম্ভব। মনুষ্যের  ঐতিহাসিক ক্রম বেদের উৎপত্তির পশ্চাতেই আরম্ভ হয়েছে।  যেসব লোক বেদে শ্রী রাম,  কৃষ্ণ আদির ইতিহাস মানেন।  তারা কি ইহা মানবে যে, প্রত্যেক সৃষ্টিতে রামের বনবাসের কষ্ট ভোগ করতে হবে?  কি প্রত্যেক সৃষ্টিতে সীতার হরণ হবে?  কি প্রত্যেক সৃষ্টিতে কৃষ্ণের কারাগারে জন্ম নিতে হবে?  কি প্রত্যেক সৃষ্টিতে যাদব কুলের নাশ হবে?  না ইহা কদাপি সম্ভব নয়। বরং সমস্ত সাংসারিক বস্তুর নাম বেদ থেকে নিয়ে রাখা হয়েছে।   যেমন  পুস্তকের কোন পংক্তিতে যদি কোন প্রসিদ্ধ  ব্যক্তির নাম আসে তো ইহা স্পষ্ট যে সেই ব্যক্তির আবির্ভাবের পরই সেই পুস্তক লেখা হয়েছে। কিন্তু বেদ তো সৃষ্টির প্ররম্ভেই এসেছে তো সেখানে বহুকাল পরে জন্মগ্রহনকারী কোন ব্যক্তির নাম কিভাবে থাকতে পারে?  এই বিষয়ে মনুস্মৃতি সাক্ষী  -

সর্বষাং তু স নামানি কর্মাণি চ পৃথক পৃথক।
বেদ শব্দেভ্যঃ এবাদৌ পৃথক্ সংস্থাশ্চ নির্মমে।। [মনুস্মৃতি viii]

সৃষ্টির  প্রারম্ভে এই পরমাত্মা বেদ থেকে (পূর্ব পূর্ব কল্পে যাহার যেমন নাম ছিলো তা) অবগত হয়ে সকলের নাম (যেমন গো জাতির অন্তর্গত গো, অশ্বজাতির অশ্ব প্রভৃতি) কর্ম,( যেমন ব্রাহ্মণের অধ্যয়নাদি, ক্ষত্রিয়ের প্রজারক্ষনাদি) এবং নানারকম লৌকিকী ক্রিয়া ( যেমন ব্রাহ্মণের যজ্ঞাদি,  কুমারের ঘটনির্মান) পৃথক পৃথকভাবে (অর্থাৎ পূর্বকালে যার যেমন ছিলো সেইভাবে) নির্মাণ করলেন (এখানে বুঝতে হবে,  প্রলয়কালেও পরমাত্মার মধ্যে বেদরাশী সুক্ষভাবে বিরাজমান থাকে,  এটাই শাস্ত্র সিদ্ধান্ত)

শঙ্কা 2 - বেদ মধ্যে ইতিহাস হওয়া কবে শুরু  হয়েছে? 

সমাধানঃ বেদের সর্বানুক্রমনিয় তথা বৃহদ্দেবতা আদি গ্রন্থে বেদমন্ত্র আর সুক্তের ছন্দ, ঋষি এবং দেবতা আদির পরিগমন করা হয়েছে। এই গ্রন্থের অনেক বেদমন্ত্র এবং সুক্তের সাথে অনেক কথা এবং কাহিনী ও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।  সায়ন আদি ভাষ্যকার নিজ ভাষ্যে সেই কাহিনীকে আধার বানিয়ে বেদে ইতিহাস প্রচলিত করে দিয়েছেন।  বেদমন্ত্রে যদি  ভারতের ইতিহাসে বর্ণিত কোন প্রাচীন ঋষি এবং রাজার নাম উল্লেখ মিলে, তো ভাষ্যকর্তা সেই  নামকে আধার বানিয়ে কাহিনীর রচনা করে নেয়।  এসব কাহিনীকে পড়ার ফলে   না কেবল অনেক ভ্রান্তি উৎপন্ন হয়েছে। বরং বেদের প্রতি অনাদর এবং অশ্রদ্ধার ভাবনার উদয় হয়েছে।  বিদেশী বিদ্বান যেমন ম্যাক্সমুলার,  গ্রিফীথ আদি বেদের প্রতি তুচ্ছতা এবং সারহীনতার ভাবনা এবং এসব ব্যক্তিদের  মনগড়া হাস্যস্পদ কাহিনীর কারন হয়ে দাড়িয়েছে।  বর্তমানে  ভারতীয় লেখক ও তাহা অনুসরন করে বেদের প্রতি অনাস্থার প্রদর্শন করতে পিছিয়ে নেই। ইহা বেদের দোষ নয় বরং সেই ভারতীয় ভাষ্যকারের দোষ এবং সর্বানুক্রমনীয় লেখকের দোষ। যাদের অজ্ঞানতার কারনে বেদে ইতিহাস প্রচলিত হয়েছে।

শঙ্কা 3 - স্বামী দয়ানন্দের বেদে ইতিহাসের সাথে কিরূপ মান্যতা?

সমাধানঃ আধুনিক ভারতে স্বামী দয়ানন্দ প্রথম চিন্তক যিনি বেদে ইতিহাস স্বীকার করেন না। সত্যার্থ প্রকাশে স্বামী জী লিখেছে - ইতিহার যাহার,  তাহার জন্মের পরই লিখা হয়ে থাকে। সেই গ্রন্থও তাহার জন্মের পরই হয়।  বেদে কাহারো ইতিহাস নেই,  কিন্তু তন্মধ্যে যে সকল শব্দ দ্বারা বিদ্যা জানা যায়,  সেই সকল শব্দের প্রয়োগ করা আছে।  কোন মনুষ্য বিশেষের সংজ্ঞা বা কথাপ্রসঙ্গ নেই [ix]  ঋগবেদভাষ্য ভূমিকাই স্বামী জী লিখেছেন - ইহা দ্বারা সিদ্ধ হয় যে বেদে সত্য অর্থ বাচক শব্দ দ্বারা সত্য বিদ্যার প্রকাশ করা হয়েছে,  লৌকিক ইতিহাসের নয়।  ইহা দ্বারা সায়ন আদি নিজ ভাষ্যে নিজ টীকাই বেদে যেখানে ইতিহাসের বর্ণন করেছে সেসব মিথ্যা [x]। যজুর্বেদ [ xi] এর উদাহরন দিয়ে স্বামী জী সিদ্ধ করেছে বেদের সঙ্গা যৌগিক,  রূঢ নয়। এই মন্ত্রে জমদগ্নি, কশ্যপ মুনি এবং ইন্দ্রাদী দেবের উল্লেখ মিলে।  অন্য ভাষ্যকাররা এই মন্ত্রে ইতিহাসের খোজ করেন। স্বামী জী ব্রাহ্মণ গ্রন্থের প্রমাণ উল্লেখ করে জমদগ্নি চক্ষু , কশ্যপ প্রাণ এবং দেব দ্বারা বিদ্বান মনুষ্যের আশয় প্রস্তুত করেছেন। স্বামী জী অর্থ করেছেন যে, আমাদের চক্ষু এবং প্রাণ যেন  তিনশত বর্ষ পর্যন্ত সুস্থ থাকে এবং বিদ্বান মনুষ্যদিগের মধ্যে শুভগুন ও আনন্দ বর্তমান থাকে ও ত্রিগুন আয়ুর বৃদ্ধি হয়।  এই ক্রম দ্বারা স্বামী দয়ানন্দ বেদের ভাষ্য করেছেন,  যাতে ইতিহাসের কোন বর্ণনা নেই।  স্বামী দয়ানন্দ পুরাতন ঋষি - মহর্ষির পদ্ধতি তথা ব্যাকরণ,  নিরুক্ত, নিঘন্টু এবং ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থের আধারে যৌগিক প্রকৃয়ায় নিজ বেদভাষ্যে  ইহা  স্পষ্ট করেছেন যে, ব্যক্তিবাচক লাগার মত শব্দ বস্তুতঃ বিশেষনবাচী তথা কোন গুন- বিশেষের বোধ করায়।

শঙ্কা 4 - বেদে ইতিহাস নেই কিন্তু বেদে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বংশ তথা রাজার নাম উল্লেখ  পাওয়া যায় এসব মন্ত্রের কি অর্থ? 

সমাধানঃ বস্তুত পুরাণ অথবা অনান্য গ্রন্থে আমরা এসব ইতিহাস পেয়ে থাকি।  কিন্তু বেদের মন্ত্র মধ্যে যদি দু একটি শব্দ সেসব ঐতিহাসিক ব্যক্তির সাথে মিলে তো   ভাষ্যকাররা  উক্ত মন্ত্রে সেসব ব্যক্তির কাহিনী বানিয়ে নিয়েছে। কিছু  বেদ মন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে আমরা ইহা সিদ্ধ করবো যে,  বেদে ইতিহাসের মান্যতা কেবল ভ্রান্তি মাত্র।

a. ঋগবেদ ১।৩৬।১৮ মন্ত্রে পৌরাণিক ভাষ্যকাররা যদু বংশের  সন্ধান পেয়ে মন্ত্রার্থ এরূপ করেছে যে -

" দস্যু দমনকারী অগ্নির সহিত তুর্বশু ও যদু উগ্রাদেবকে দুরদেশ হইতে আহ্বান করি,  অগ্নি নববাত্ব ও বৃহদ্রথ ও তুর্ব্বীতিকে এই স্থানে আনয়ন করুন"

পুরাণের মতে  যদু এবং তুর্বশু যজাতি নরপতির পুত্রদ্বয়।  সায়ন আদিও এ মন্ত্রে পৌরাণিক সিদ্ধান্ত মেনে যদু, তুর্বশু কে রাজর্ষির সঙ্গা দিয়েছেন।  তিনি লিখেছেন - তুর্বশনামকং যদুনামকম উগ্রদেবনামকং চ রাজর্ষীন্"
অর্থাৎ এসব পৌরাণিক ভাষ্য মতে বেদের রচনা যদুবংশের আবির্ভাবের পরে হয়েছে । কিন্তু আমরা  ইতিহাসে সূর্যবংশী রামচন্দ্র তথা বশিষ্ট আদি ঋষির বেদ পাঠের প্রমাণ পাই যা কি না যদুবংশেরও অনেক পূর্বে।  যদি বেদের আবির্ভাব যদু আদি রাজার অনেক পূর্বে হয়ে থাকে তবে বেদে তাদের নাম বেদে কিভাবে আসলো? মহর্ষি দয়ানন্দ  সরস্বতী উক্ত মন্ত্রার্থে নিঘন্টু নিরুক্তের প্রমাণ সহ অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যকরণসম্মত ব্যাখ্যা করেছেন।

অগ্নিনা তুর্বশং যদু পরাবত উগ্রাদেব হবামহে।
অগ্নির্নয়ত্তববাস্ত্বম্ বৃহদ্রথম্ তুর্বীতিম দস্যবে সহঃ।।

মন্ত্রে যদু, তুর্বশু আদি অনান্য নাম এসেছে।  নিঘন্টু অনুসারে,  যদু ইতি মনুষ্যনামসু পঠিতম (নিঘন্টু ২।৩) অর্থাৎ যদু মানুষের সমার্থবাচক নাম। যতী প্রযত্ন ইত্যস্মাদ্বাহুলকাদৌণাদিক উঃ প্রত্যয়স্তকারস্য দকারঃ। অর্থাৎ যদু = যতী + উ + যদু,  এখানে যতী প্রযত্নে সাথে উ প্রত্যয় এবং দকারে যদু শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে।  বৈদিক কোষে যদু শব্দের অর্থে বলা হয়েছে - অন্যের ধন গ্রাস করার জন্য যত্নশীল মনুষ্য।

এভাবে "তুর্বশম্ " নিঘন্টু ২।৩ এ "তুর্বশ ইতি মনুষ্যনামসু পঠিতম্ "  তুরা শীঘ্রতয়া পরপদার্থান বস্টি কাঙ্খতি সঃ। অর্থাৎ যে শীঘ্র পরপদার্থের কামনা করে এসব পুরুষকে তুর্বশু বলা হয়।

অর্থাৎ মন্ত্রে এসব নাম কোন নির্দিষ্টি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আসে নি বরং নামগুলো মনুষ্যের এক একটি বিশেষন বোধে এসেছে।   অতএব মন্ত্রটির সরলার্থ  হচ্ছে -

"আমরা অগ্নির সমান তেজস্বী সভাধক্ষ্য রাজার সাথে মিলে তেজ স্বভাববান কে জিতার ইচ্ছাকারী তথা শীঘ্রই অন্যের পদার্থ কে গ্রহনকারী অন্যের ধন গ্রাস করার  জন্য যত্নকারী ডাকু পুরুষকে অন্য দেশে যুদ্ধের জন্য আহ্বান করি, তিনি (তেজস্বী সভাধ্যক্ষ)   নিজ বিশেষ  বল দ্বারা অন্যের পদার্থ হরন কারী ডাকুর  তিরস্কার করার যোগ্য বল কে সব মুখ্য রাজা একান্তে ঘর নির্মাণকারী বড় বড় রমনের সাধন রথবান হিংসক দুষ্টপুরুষ কে এখানে কয়েদ রাখবে "

ভাবার্থঃ সব ধার্মিক পুরুষের উচিৎ যে, তেজস্বী সভাধক্ষের সাথে মিলে বেগবান অন্যের পদার্থ কে হরনশীল স্বভাবযুক্ত এবং নিজ বিজয় ইচ্ছা কারী  ডাকুর একান্ত স্থান মধ্যে নির্মিত ঘর কে ছিন্ন করে বেধে তাদের কয়েদে রাখবে।

b. ঋগবেদ ১০।৪৮।৫ মন্ত্রে পৌরাণিকদের অতীব মান্য রমেশ দত্ত পুরুবংশের সন্ধানের চেষ্টা করেছেন।  তিনি মন্ত্রের অর্থ করেছেন -

"কেহ কখন কোন সম্পত্তি আমার নিকট জয় করিয়া লইতে পারে নাই,  মৃত্যুর নিকট আমি কখনো নত হই না।  হে পুরুবংশীয়গণ! তোমরা সোমরস প্রস্তুত করিয়া যাহা ইচ্ছা আমার নিকট যাঞ্চা করো।  দেখিও আমার বন্ধুত্ব যেন কখনো তোমরা হারাইয়ো না।" 

মন্ত্রের টীকাতে রমেশ লিখেছেন - "বোধ হয় পুরুবংশীদিগের কোন স্তোত্র দ্বারা এই সুক্ত রচিত"।  ঠিক এদের মতো ভাষ্যকার দের জন্যই  বিদ্বেষীরা আজ বেদ  বিষয়ে কুমন্তব্য করার সাহস করে।  ঈশ্বর কর্তৃক উদ্ভূত বেদ কে আজ এসব ভাষ্যকাররা পুরুবংশীদের রচনা বলে চালিয়ে দিচ্ছে।  বেদ ব্যাখ্যার জন্য যে যাস্কের  নিঘন্টু,  নিরুক্ত তথা পাণিনীর মতো ঋষির  ব্যকরনের প্রয়োজন হয় তা এদের মস্তিষ্কেই নেই।  মন্ত্রে যদি কোন শব্দ ঐতিহাসিক  কোন ব্যক্তির নামের সাথে মিল পাওয়া যায় তবে মন্ত্রটিকে একেবারে  ইতিহাসের পুস্তক বানিয়ে ছাড়বে। যাস্ক মুনি রচিত নিঘন্টু এ পুরুব হচ্ছে মানুষেরই সমার্থবাচক একটি নাম কোন ঐতিহাসিক নাম নয় (পুরবঃ ইতি মনুষ্য নামসু পঠিতম, নিঘন্টু ২।৩)।  মন্ত্রটিতে সমগ্র মানবদেব উদ্যশ্য করে ঈশ্বর বলছেন -

অহমিন্দ্রো ন পরা জিগ্য ইন্ধনং ন মৃত্যবেবতস্থে কদাচন।
সোমমিন্মা সুন্বন্তো য়াচতা বসু ন মে পুরবঃ সখ্যে রিষাথন।

সরলার্থঃ আমি পরম ঐশ্বর্যশালী  নিশ্চয়রুপে আমার ঐশ্বর্যকে কেউ পরাভূত করতে পারে না কখনো আমি মৃত্যু কবলিত হই না।  হে সোমের প্রস্তুতকারী  যজমান! আমার কাছেই ধন যাচনা করো, হে পুরুষ! আমার মিত্রতা কখনো নাশ হয় না।

c. ঋগবেদ ১০।৯৮।১ মন্ত্রে শন্তনু শব্দের উল্লেখ দেখে সায়ন,  রমেশ আদি ভাষ্যকার এখানে শন্তনু রাজার উল্লেখ করেছেন -

"হে বৃহস্পতি! তুমি আমার জন্য প্রত্যেক দেববতার নিকট গমন করো।  তুমব মিত্র বা বরুন বা পুষাই হও অথবা আদিত্যগন ও বসুগনসমেত ইন্দ্রই হও,  তুমি শন্তনু  রাজার জন্য মেঘকে বারিবর্ষন করাও।"

উক্ত মন্ত্রে টীকাই রমেশ লিখেছেন -  শন্তনু রাজার অনুষ্ঠিত যজ্ঞে বোধ হয়,  এই সুক্তি রচিত বা উচ্চারিত হয়েছিলো।

ঠিক একই ভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে এসব ভাষ্যকাররা।   তাদের ভাষ্য দেখলে স্বভাবতই সবার মনের উদ্বেগ জাগবে যে, বেদ কি তাহলে বিক্ষিপ্ত সংকলন?  কখনো পুরবংশীদের রচনা কখনো আবার শন্তনু রাজার সমসাময়িক রচনা? কিন্তু  আমরা দেখেছি বেদ বাণী নিত্য এবং সৃষ্টির প্রারম্ভে ঈশ্বর সমগ্র মানব জাতির জন্য বেদ বানী প্রেরণ করেছেন। তাহাতে কোন রূপ ব্যক্তির ইতিহাস কখনো থাকতে পারে না। কারন ইতিহাস কখনো নিত্য নয় কল্পান্তরে একমাত্র বেদই সুক্ষভাবে থেকে যায়। যেখানে বেদ স্বয়ং নিজেকে নিত্য বলেছেন [v]  এবং ব্যসদেবও বেদ নিত্য স্বীকার করেছেন [xii] তাহলে এসব ভাষ্যকারদের বেদ কে অনিত্য তথা অপৌরুষেয় প্রমাণ করার জন্য এতো প্রচেষ্টা কেন?   এদের কারণেই আজ আমাদের বেদ বিষয় নিন্দ কথা শুনতে হয়।  মন্ত্রে "শন্তনু" শব্দটি দ্বারা কোন নির্দিষ্ট রাজাকে বুঝায় না।  শন্তুনু শব্দের অর্থ হচ্ছে (শম্ + তনু) অর্থাৎ শান্তির বিস্তারকারী।  অর্থাৎ শান্তির বিস্তারকারী যে কোন রাজাকেই শন্তনু  শব্দে অভিহিত করা যেতে পারে। নিরুক্ত ২। ১২ তে শন্তনু অর্থে বলা হয়েছে - "শন্তনু শং তনোস্তিতি বা শমস্মৈ ত্বন্বা অস্ত্বিতি " অর্থাৎ শন্তনু = কোন ( রোগ পীড়া দেখে বলে যে) হে শরীর তোমার কল্যাণ হোক বা ইহার শরীর দ্বারা কল্যান হোক। অর্থাৎ নিরুক্তেও আমরা শন্তনু অর্থে কল্যানকারী অর্থ পেলাম।  কিন্তু পৌরাণিক ভাষ্যকাররা শন্তনু শব্দে একটি নির্দিষ্ট রাজাকে মেনে এরূপ ভ্রমে পতিত হয়েছে।  অতএব মন্ত্রটির যথার্থ অর্থ  হচ্ছে -

"হে বেদবাণীর পালক! তুমি মিত্র এবং বরণ যোগ্য শ্রেষ্ঠ দুঃখের নিবারক।  এবং জগতের পোষনকারী সূর্যের কীরণ বা নিবাস কারী বীর, মনুষ্যের স্বামী।  তুমি শান্তি বিস্তারকারী রাজার জন্য নানা সুখের বৃষ্টি বর্ষন করো। "

অতএব ইহা স্পষ্ট যে, বেদ কোন ইতিহাসের গ্রন্থ নয়, বেদ হচ্ছে ব্রহ্মবিদ্যা।  এতে কোন মনুষ্যের ইতিহাসের খোজ করতে যাওয়া মানে বেদের অপৌরুষেয়তা এবং নিত্যতার দিকে আঙ্গুল তোলা।

[I] ঋগবেদ ১।৩২।৬ মন্ত্রে মহাবীর শব্দ এসেছে যার অর্থ অত্যন্ত্য বলযুক্ত শূরবীর।   কিন্তু জৈন মত অবলম্বনকারী এখানে তাদের মতের প্রবর্তক মহাবীর তীর্থকর কে দেখানোর প্রচেষ্টা করেছে।

[ii] যজুর্বেদ  ৪০।৮  মন্ত্রে কবির্মনীষী শব্দ দ্বারা কবিরপন্থিরা তাদের মহাত্মা কবির কে দেখানোর প্রয়াস করেছে।

[iii] অথর্ববেদ ২০।১২৭।১-১৩ মন্ত্রে নরাশংশ শব্দ দ্বারা মুহাম্মদ সাহেবের কল্পনা ইসলাম মতাবলম্বীরা করে থাকেন।

[iv] যজুর্বেদের ৪০ অধ্যায়ের ১ম মন্ত্রে ঈশাবাস্যম পদ দ্বারা ঈশা মসীহের তুলনা ঈসাই মত মান্যকারীরা করেন।

[v] ঋগবেদ ৮।৭৫।৬ " বাচা বিরূপ নিত্যয়া"
[vi] ঋগবেদ ১০।৯০।৯, যজুর্বেদ ৩১।৭
[vii] ঋগবেদ ১০।৯০।৩ " সূর্যাচন্দ্রমসৌ ধাতা যথা পূর্বমকল্পয়ৎ।।
[viii] মনুস্মৃতি ১।২১
[ix] সত্যার্থপ্রকাশ সপ্তম সমুল্লাস
[x] ঋগবেদ ভাষ্য ভূমিকা - বেদ সঙ্গা বিচার প্রকরণ
[xi] যজুর্বেদ ৩।৬২
[xii] বেদান্তসূত্র ২।১।২৯ "অতএব চ নিত্যব্যম"