https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ০৯ - জীবাত্মা কি সর্বব্যাপী?

Monday, May 8, 2017

প্রশ্ন- গীতার ২।২৪ নং শ্লোকে বলা আছে জীবাত্মা সর্বব্যাপী থাকে, তার মানে কি জীবাত্মাই কি ব্রহ্ম? অথবা মোক্ষ প্রাপ্ত জীবাত্মাই কি ব্রহ্ম বা পরমাত্মা?

উত্তর- জীবাত্মা সর্বব্যাপী নয়, এমন কি সেই আত্মা যদি মোক্ষ বা মুক্তিও লাভ করে তাহলেও সর্বব্যাপী থাকে না। গীতার ঐ শ্লোকে সর্বাগত শব্দটার প্রকৃত আর্থ হল সর্বত্র যাতায়ত করতে
পারা। মানে, মোক্ষ প্রাপ্ত জীবাত্মা ইচ্ছা করলে সর্বব্যাপীযাতায়ত করতে পারেন।
মুক্তিতে যদি জীবাত্মার লয় বা বিনাশ হয় বা জীবাত্মা পরমাত্মায় পরিণত হয় তাহলে সেই জীবাত্মার অস্তিত্বই থাকে না, আর যদি জীবাত্মার অস্তিত্বই না থাকে তাহলে মোক্ষের আনন্দ ভোগ করে কে? তাহলে কি বলতে হবে জীবাত্মার নাশই হল মুক্তি?
কিন্তু তা তো নয়! কেননা জীবাত্মা অনাদি এবং কল্পের শেষে মোক্ষ বা মুক্তি প্রাপ্ত আত্মাকেও আবার দেহ ধারণ করতে হয়। তাহলে কি আমি আপনার(প্রশ্নকর্তার) কথানুসারে বলবো পরমাত্মা নতুন কল্পের শুরুতে খন্ডিত হয়? কিন্তু আমরা জানি আত্মা ও পরমাত্মা কেউই খন্ডিত হন না।
যা থেকে মুক্ত হওয়া যায় তাকেই মুক্তি বা মোক্ষ বলে। আর জীবাত্মার পক্ষে দুঃখ বিমুক্ত হয়ে আনন্দস্বরূপ, সর্বব্যাপক এবং অনন্ত পরমেশ্বরে সানন্দে অবস্থান করাই মুক্তি। উপনিষদে মুক্তি সম্পর্কে বলা আছে যে-
             
য়দা পঞ্চাবতিষ্ঠন্তে জ্ঞানানি মনসা সহ।
বুদ্ধিশ্চ ন বিচেষ্টতে তমাহুঃ পরমাং গতিম্।।
(কঠোপনিষদ ২/৩/১০)
অর্থ- যখন জীবের সহিত শুদ্ধ মনযুক্ত পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় বিদ্যমান থাকে এবং বুদ্ধি স্থির নিশ্চয় হয়, সেই অবস্থাকে পরমগতি বা মোক্ষ বলে।
দেখুন বেদান্তে কি আছে-

ব্যাসদেবের পিতা যিনি বাদরি তিনি মুক্তি অবস্থায়
জীবের সাথে মনের বিদ্যমানতা স্বীকার করেন।
অর্থাৎ মুক্তিতে পরাশর জীবের এবং মনের লয়
স্বীকার করেন না।

(বেদান্তসূত্র ৪।৪।১০)
ব্যাসদেবের মূখ্য শিষ্য আচার্য্য জৈমিনি ঋষি
মুক্ত অবস্থায় জীবের মনের ন্যায় শুদ্ধ সংকল্পময় শরীর এবং প্রাণাদি ওইন্দ্রিয়গণের শুদ্ধশক্তিও সর্বসময়েই বর্তমান থাকেন তা স্বীকার করেন, অভাব স্বীকার করেন না।
(বেদান্তসূত্র ৪।৪।১১)
ব্যাসমুনি মুক্তি অবস্থায় ভাব ও অভাব উভয়ই
স্বীকার করেন। অর্থাৎ তখন শুদ্ধসামর্থ্যযুক্ত জীব বিদ্যমান থাকে, অপবিত্রতা, পাপাচরণ দুঃখ এবং অজ্ঞানাদির অভাব স্বীকার করেন।
(বেদান্তসূত্র ৪।৪।১২)
এখন প্রশ্ন হল ঐ মুক্ত পুরুষ কি সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে বিচরণ করেন অথবা এক স্থানে অবস্থান করেন?
উত্তর- যারা মুক্ত পুরুষ বা মুক্তি লাভ করে তারা
পরমেশ্বরকে প্রাপ্ত হয় এবং সেই পরমাত্মার উপাসনায় রত থেকে তারই আশ্রয়ে অবস্থান
করেন। এজন্য তাদের সমস্ত লোক ও লোকান্তরে
গমনাগমন হয়ে থাকে। তাদের জন্য কোন স্থান
অবরুদ্ধ থাকে না এবং তাদের সকল প্রকার শুভ
বাসনা পূর্ণ হয়ে যায়। কোন কামনাই অপূর্ণ থাকে
না।
যিনি আত্মারও অন্তর্যামী, তাঁহাকেই ব্রহ্ম বলা হয় এবং তিনিই অমৃত অর্থাৎ মোক্ষস্বরূপ হয়ে থাকে। আর তিনি যেরূপ সকলের অন্তরর্যামী, পরন্তু তদ্রুপ তাঁহার কেহই অন্তর্যামী নাই, যেহেতু তিনি স্বয়ংই নিজের অন্তর্যামী, এই রূপ প্রজানাথ
পরমেশ্বরের ব্যাপ্তি রূপ সভাকে আমি যেন প্রাপ্ত
হই, এবং এই সংসার মধ্যে যারা পূর্ণ বিদ্বান
ব্রাহ্মণ আছেন তাদের কীর্তিকে আমি যেন প্রাপ্ত
হতে সমর্থ হই, তথা ক্ষত্রিয়গণ এবং যারা
ব্যবহার বিষয়ে নিপুণ, তাদের মধ্যেও যশস্বী হই।
হে পরমেশ্বর! আমি কীর্তি সকলের মধ্যে কীর্তি
স্বরূপ হয়ে, আপনাকে প্রাপ্ত হতে চাই। আপনি
কৃপাপূর্বক আমাকে সদা নিজ সমীপে রাখুন।
( ছান্দোঃ প্রপাঃ৮।খং১২(প্রবাক৬)
খং১৪(প্রবাক ১)
প্রশ্ন - গীতার ৪।৯ নং শ্লোকে বলা আছে পরমাত্মাকে জানলে আর পুনর্জম্ম হয় না।
উত্তর- এই কথা সকল কল্পের জন্য ঠিক নয়,
নির্দিষ্ট এক কল্পের জন্য ঠিক। কেননা পরের
কল্পে আবার সকল আত্মাকেই দেহ ধারণ করতে
হয়। দেখুন বেদে কি বলা আছে-
               
ঋগবেদ ১/২৪/১-২
১) অসংখ্য দেবগনের প্রধান প্রভু কে, কোনটি,
কার মঙ্গলকর নাম আমরা শ্রদ্ধার সহিত
আরাধনা করব? সুনিশ্চিতভাবে কে সে, যিনি
আমাদিগকে এই সুবিশাল পৃথিবীতে ফেরত পাঠান (সকল আত্মাকেই) যাতে আমরা পুনরায় আমাদের পিতামাতাকে দর্শন করতে পারি ও তাহাদের সহিত থাকতে পারি৷
২) আমরা অগ্নির (আলো ও জীবনের প্রভু)
মঙ্গলময় নাম শ্রদ্ধা করি ও আরাধনা করি যিনি
দেবগনের আদি ও সর্বোচ্চ৷ তিনিই আমাদিগকে
ফেরত পাঠান (মুক্তির আনন্দ ভোগ করিয়ে) আদি প্রকৃতির বিশাল জগতে যাতে আমরা পুনরায় (নতুন কল্পের শুরুতে)আমাদের
পিতা মাতাকে দর্শন করতে পারি ও তাহাদের সহিত থাকতে পারি৷
পরিশেষে এটাই বলবো যে গীতার ২।২৪ নং শ্লোকের সর্বাগত এর প্রকৃত অর্থ সর্বত্র যাতায়ত করা, কোন ক্রমেই সর্বব্যাপী নয়।