https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ১৮ - ঈশ্বর কে কি নামে ডাকা যায়? গীতা এই ব্যাপারে কি বলে?

Sunday, May 21, 2017

প্রশ্ন - ঈশ্বরকে কি নামে ডাকা যায়? গীতায় এই ব্যাপারে কি বলা আছে? ঈশ্বরের কি অনেক নাম?
উত্তর- আপনি কি নামে ডাকেতে পারলে খুশি হবেন? কেননা গীতা থেকে শুরু করে বেদ, উপনিষদ, মনুসংহিতা ইত্যাদি সকল বৈদিক
শাস্ত্রেই স্পষ্ট বলা আছে ঈশ্বরের অনেক নাম। চলুন দেখে নেয়া যাক, গীতা থেকে শুরু করি-


"আপনি বায়ু, যম, অগ্নি, বরুণ ও চন্দ্র। আপনি প্রজাপতি এবং প্রপিতামহ ...।"
(গীতা ১১।৩৯)
এছাড়াও গীতা ১১।২৪ ও ৩০ নং
শ্লোকে ঈশ্বরকে  বিষ্ণু বলে ডাকা হয়েছে, আবার ঈশ্বর সকল দেবতাদেরও দেবতা বলে গীতার ১১।৩৮ এ ঈশ্বরকে "আদিদেব " বলা হয়েছে। আবার গীতা ১১।৪৩ এ বলা ঈশ্বরকে পিতা পূজনীয় গুরু ও গুরুরও গুরু "বলা হয়েছে।
অনেকে বলে বায়ু, বরুণ, অগ্নি যম প্রজাপতি... এরা নাকি বিভিন্ন দেবতা,আবার অনেকে বলে এরা নাকি অবতার? এই ব্যাপারে কি বলবেন? যারা এই সব কথা বলে তারা শাস্ত্রের কথা না মেনে নিজেদের তৈরি কৃত শাস্ত্র (তথাকথিত মিথ্যা কিচ্ছা কাহিনীযুক্ত পুরাণসমূহ) অধ্যায়ন করে এমন ভ্রমে পতিত হয়েছে। যার ফলে আমাদের সনাতনী বন্ধুরাও বিপদগ্রস্থ হচ্ছে এবং দিন দিন ব্যাঙ্গের ছাতার মত নিত্য নতুন বিভিন্ন সম্প্রদায় সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ কেউই বৈদিক তথ্যগুলো প্রচার করছে না। উপরের ঐ নামে অনেক দেবতাও আছে, কিন্তু গীতার ঐ শ্লোকগুলোতে ঐ নামগুলো স্বয়ং ঈশ্বরেরই গুণ ও কর্মবাচক নাম ,কোন দেবতার নাম নয়। বৈদিক শাস্ত্রের অনেক স্থানেই এমন দেখা যায়, শ্লোক ও মন্ত্রের কোথায় নামগুলো কি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে তা না বুঝলে কোন সৎ গুরুর কাছে গিয়ে শিক্ষা নিন। এখন মনুসংহিতা থেকে দেখুন-
"এই পরম পুরুষকেই কেউ অগ্নি বলে জানেন ,কেউ একে মনু বলেন ,কেউ প্রজাপতি ,কেউ ইন্দ্র ,কেউ প্রাণ এবং কেউ আবার সনাতন ব্রহ্ম বলে থাকেন।"
( মনুসংহিতা ১২।১২৩)
পূর্বে গীতা ও মনুসংহিতা থেকে প্রমাণ
দিয়েছি, এখন বেদ থেকে
দিচ্ছি দেখুন গুণ ও কর্মভেদে এক ঈশ্বরেরই কত নাম হতে পারে-
                
इन्द्रं मित्रं वरुणमग्निमाहुरथो दिव्यः स सुपर्णो गरुत्मान |
एकं सद विप्रा बहुधा वदन्त्यग्निं यमं मातरिश्वानमाहुः || 

ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু ,রথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান।
একং সদ্বিপ্রা বহুদা বদন্ত্যগ্নি য়মং মাতরিশ্বানমাহুঃ॥
(ঋগবেদ ১/১৬৪/৪৬)
বঙ্গানুবাদঃ -এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুত্মান, যম, মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।।
এছাড়াও যজুর্বেদের আরো একটি
মন্ত্রে বলা আছে-
              
তদেবাগ্নিস্তদাদিত্য স্তদ্বায়ু স্তদু চন্দ্রমাঃ।
তদেব শুক্রং তদব্রহ্মতা আপঃ স প্রজাপতিঃ।।
(যজুর্বেদ ৩২।১)
অনুবাদ- সেই পরমাত্মাই অগ্নি, আদিত্য, বায়ু, চন্দ্রমা, শুক্র, ব্রহ্ম, আপ ও প্রজাপতি।
নিম্নে ঈশ্বরের কিছু নামের ভাবার্থ লিখিত হল-
ইন্দ্র = ইন্দতি পরমৈশ্বর্যবান্ ভবতীন্দ্রঃ ;যিনি পরমৈশ্বর্যবান্ তিনি  ইন্দ্র ।
মিত্র=  মেদ্যতি স্নিহ্যতি স্নিহ্যতে বা স
মিত্রঃ; যিনি সর্ব্বাপেক্ষা অধিক স্নেহ
করেন ও প্রীতির পাত্র তিনি  মিত্র ।
বরুন =  বৃণোতি ব্রিয়তে বাহসৌ বরুনঃ; যিনি বরণ করেন বা বরণ যোগ্য তিনি বরুণ ।
অগ্নি =  যোসঞ্চতি অচ্যতেহ গত্যঙ্গত্যেতি বা সোহয়মগ্নিঃ; যিনি জ্ঞান স্বরূপ ,সর্ব্বজ্ঞ ,জ্ঞাতব্য
,প্রাপ্তব্য ও পূজ্য তিনি অগ্নি।
দিব্য = দিবি ভবঃ ইতি দিব্যঃ; যিনি জ্যোতিঃস্বরূপ তিনি দিব্য ।
সুপর্ণ = শোভনানি পর্ণানি পালনানি য়স্য সঃ সুপর্ণঃ; যিনি উত্তমরূপে পালন করেন তিনি  সুপর্ণ ।
গরুত্মান =  গুর্বাত্মা গরুত্মান্ ; মহান্ আত্মা
যাঁহার তিনি গরুত্মান্ ।
যম = নিয়ন্তা যমঃ; যিনি নিযন্তা তিনি
যম ।
মাতরিশ্বা বায়ুঃ; বাতি ,গচ্ছতি ,জানাতি বেতি বায়ুঃ; যিনি বেগবান বা জ্ঞান দাতা তিনি বায়ু বা মাতরিশ্বা
একই পরমাত্মার এই রূপ অসংখ্য গুণ ,ক্রিয়া ও স্বভাব বাচক নাম আছে। যা শাস্ত্রে বর্ণনা করা
হয়েছে।তবে সকলের জেনে রাখা উচিত যে বেদ,
উপনিষদ, গীতা বেদান্ত ইত্যাদি বৈদিক শাস্ত্রসমূহ ওম্ বা ওঁ বা ও৩ম কেই ঈশ্বরের প্রধান নাম বলে ঘোষণা করেছে।