উত্তর- কথাটা শ্রীকৃষ্ণের নয়, কৃষ্ণের আত্মায় প্রকটিত হওয়া পরমাত্মার। কারণ কৃষ্ণের কথাটা
ছিল গীতার ১৮।৬১ ও ৬২ নং শ্লোকেরটা। সেখানে তিনি বলেছেন পরমাত্মারূপে সকলের হৃদয়ে বিদ্যমান ঈশ্বরের শরণ নিতে।
আর গীতা১৮।৬৬নং এ স্বয়ং পরমাত্মাই বলেছেন-
ছিল গীতার ১৮।৬১ ও ৬২ নং শ্লোকেরটা। সেখানে তিনি বলেছেন পরমাত্মারূপে সকলের হৃদয়ে বিদ্যমান ঈশ্বরের শরণ নিতে।
আর গীতা১৮।৬৬নং এ স্বয়ং পরমাত্মাই বলেছেন-
"সকল ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া (বেদ বিরোধী সকল কর্ম ও ধর্ম) তুমি একমাত্র আমারই শরণ লও (বৈদিক ধর্ম করা, কারণ ঈশ্বরের জ্ঞানই বেদ), আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে রক্ষা করিব, শোক করিও না।" (গীতা ১৮।৬৬)
এখানে ধর্ম বলতে প্রচলিত অর্থে আমরা যা বুঝি (হিন্দু, বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান ইত্যাদি) তা নয়, এখানে ধর্ম বলতে গার্হস্থ্য ধর্ম, সন্ন্যাস ধর্ম, রাজ ধর্ম, দান ধর্ম, অহিংসা ধর্ম ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। আবার অর্জুন গার্হস্থ্য ধর্ম, সন্ন্যাস ধর্ম ইত্যাদি নানা রকম লোকের নানা রকম ধর্মের মধ্যে কোনটা তার স্বধর্ম তা নির্ধারণ করতে পারছিল না। তাই ওখানে বলা হয়েছে সর্বধর্ম পরিত্যাগ করতে। যেহেতু অর্জুন ছিলেন ক্ষত্রিয় তাই তার ক্ষেত্রে ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করাটাই ধর্ম।
মহাভারতেই এই ধর্ম কি তার প্রমাণ আছে, যথা-
"সেই বিপ্র বেদোক্ত ধর্ম, শাস্ত্রোক্ত ধর্ম, শিষ্টগণের আচরিত ধর্ম এই ত্রিবিধ ধর্ম মনে মনে চিন্তা করিয়া কি করিলে আমার শুভ হয়, কোন ধর্ম আমার পরম অবলম্বন, ইহা ভাবিতে ভাবিতে নিয়ত খিন্ন হইতে লাগিল।"(মহাভারত)
এই ধর্ম অধর্ম পরিত্যাগ করার কথা কেন বলা হল এবং কখন এই ধর্ম অধর্ম পরিত্যাগ করিতে হবে? যখন মনুষ্য জাতি ঘোর সংকটময় বিপদে পড়ে এবং কোনটা ধর্ম ও কোনটা অধর্ম তা নির্ণয় করিতে পারে না, ঠিক তখনই তা পরিত্যাগের কথা বলা হয়েছে। যা কিনা অর্জুনের হয়েছিল, প্রমাণ দেখুন-
"সঞ্জয় কহিলেন, শোকাকুলিত অর্জুন এইরূপ বলিয়া যুদ্ধমধ্যে ধনুর্বাণ ত্যাগ করিয়া রথে উপরে
উপবেশন করিলেন।" (গীতা ১।৪৬)
যখন অর্জুন ধর্ম ও অধর্ম নির্ণয় করতে পারছে না, তখনই তা ত্যাগ করার জন্য বলেন এবং একমাত্র পরমাত্মার সরণ লওয়ার কথা বলেন। প্রকৃত পক্ষে এই কথা বলার মূল কারণ হল যখন কেউ এক পরমাত্মায় মন স্থির করে তখন সে আর কোন অধর্ম করতে পারে না। সবই ধর্মের কাজ করেন। সর্ব ধর্ম ত্যাগ ও পরমাত্মার সরণের কথা কঠ উপনিষদ থেকেও আমরা পাই। এর প্রমাণ কঠ উপনিষদ থেকে দেখুন।
নচিকেতা তার গুরু যমকে বলিলেন-
নচিকেতা তার গুরু যমকে বলিলেন-
"ধর্ম হতে ভিন্ন, অধর্ম হতেও ভিন্ন, এই কার্য ও কারণ হতেও ভিন্ন এবং ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান
হতেও ভিন্ন বলিয়া যে বস্তুকে আপনি প্রত্যক্ষ করছেন, তাই আমায় বলুন।" (কঠোপনিষদ ১।২।১৪)
হতেও ভিন্ন বলিয়া যে বস্তুকে আপনি প্রত্যক্ষ করছেন, তাই আমায় বলুন।" (কঠোপনিষদ ১।২।১৪)
যম বলিলেন-
"বেদসমূহ এক বাক্যে যে ঈপ্সিত বস্তুর প্রতিপাদন করেন, অখিল তপস্যাদি কর্মরাশি যার প্রাপ্তির সহায় এবং যার কামনায় লোকে ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে, আমি তোমায় সেই প্রাপ্যবস্তুর সম্বন্ধেই উপদেশ করিতেছি- ইহা ওম্ বা ওঁ।" (কঠোপনিষদ্ ১।২।১৫)
"বেদসমূহ এক বাক্যে যে ঈপ্সিত বস্তুর প্রতিপাদন করেন, অখিল তপস্যাদি কর্মরাশি যার প্রাপ্তির সহায় এবং যার কামনায় লোকে ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে, আমি তোমায় সেই প্রাপ্যবস্তুর সম্বন্ধেই উপদেশ করিতেছি- ইহা ওম্ বা ওঁ।" (কঠোপনিষদ্ ১।২।১৫)
ইহা করিতে পারিলে যে মানুষ শোকাতীত হন তাহাও ঐ উপনিষদে আছে এবং সকল পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় তাহাও ঐ উপনিষদে খুব সুন্দর করেই বলা আছে। অর্থাৎ যোগযুক্ত অবস্থায় কৃষ্ণের মধ্যে পরমাত্মা প্রকটিত হয়ে ওনার সরণ নেওয়ার কথা বলেছেন এবং সর্ব ধর্ম ত্যাগের কথাটাও ঐ হিসেবেই
বলেছেন।
0 মন্তব্য(গুলি)