https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষঃ ০৬ - বিশ্বরূপ যে ঈশ্বরের ছিলো এর প্রমাণ কি?

Friday, May 5, 2017
প্রশ্ন - ৫নং পর্বে আপনি বলেছেন বিশ্বরূপ স্বয়ং পরমাত্মারই ছিল, কৃষ্ণের নয়। এর পক্ষে আর কোন প্রমাণ দেখাতে পারবেন গীতা থেকে?

উত্তর- অবশ্যই দেখাতে পারবো, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ নিজেই গীতাতে বলেছেন বিশ্বরূপ পরম ব্রহ্মের ছিল। দেখুন নিচের দুটো শ্লোক, শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলছেন-
"জ্ঞেয় যে বস্তকে জেনে মানুষ অমৃতত্বলাভ(ব্রহ্ম লাভ) করে তা তোমায় বলব। তিনি আদিহীন পরবহ্ম-তাকে সৎ বা অসৎ শব্দের দ্বারা বলা যায় না, এরূপ বলা হয়।"
(গীতা ১৩।১৩)
সর্বতঃ পাণিপাদং তৎ সর্বতোহক্ষিশিরো মুখম্।
সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি।।
(গীতা ১৩।১৪)
অনুবাদ- সর্বত্র যাঁর হাত পা, সর্বত্র যাঁর চোখ, মাথা ও মূখ, সর্বত্র যাঁর কান, তিনি ইহলোকের সব কিছুকে ব্যাপ্ত করে অবস্থান করেন।
দেখলেন তো দাদারা শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন যে ঐ রূপটা ওনার নয়। ওটা পরবহ্মের, আর সেই ব্রহ্মকে মানুষ সৎ, অসৎ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ডাকা যায়। কিন্তু তিনি অনন্ত ও অসীম, তাই তাকে এগুলো দিয়েও বুঝানো বা প্রকাশ করা যায় না। এই শ্লোকটি  শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ ৩।১৬ এর মধ্যেও পাওয়া যায়। এতটুকু পড়ে অনেকেই আবার বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে, কেননা বেদ, উপনিষদ ও গীতাতে ঈশ্বরকে স্পষ্ট ভাষায় নিরাকার বলা হয়েছে। আরো অনেকেই বিভ্রান্ত করেন ঋগ্বেদের "সহস্রশীর্ষ পুরুষঃ সহস্রাক্ষ সহস্রপদ" বা গীতার "অনেকবাহুদরবক্র
নেত্রং" ধরনের অনুচ্ছেদ দেখিয়ে। কারণ আমরা সর্বদাই বলি ঈশ্বর নিরাকার, তাহলে নিরাকার ঈশ্বরের হাত, পা, চোখ, মুখ কি করে এল এটাও অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন। তাহলে কি তিনি সাকার? তাই এই ব্যাপারটাও একটু পরিষ্কার করে দেই এই পর্বে।
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেই এর পরের শ্লোকে বলেছেন-
"সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কার্যের দ্বারা তিনি প্রকাশিত হন, (অথচ) তার কোনও ইন্দ্রিয় নেই। তিনি ইন্দ্রিয় ও তাদের কার্যের দ্বারা সংশ্লিষ্ট নন, তথাপি তিনি সকল সৃষ্টির ধারক। তিনি নির্গুণ ও সকল গুণের ঈশ্বর।"
(গীতা ১৩।১৫)
দেখলেন তো কৃষ্ণজী নিজেই কি বলেছেন শ্বেতাশ্বতর উপনিষদও এর দুই শ্লোক পরেই এর ব্যখ্যা পাওয়া যায়, দেখুন-
"অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা পশ্যতাচক্ষুঃ স
শৃণোত্যকর্ণঃ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা তমাহুরগ্র্যং
পুরুষং মহান্তম্।।
(শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্ ৩।১৯)
অর্থাৎ পরমাত্মা হস্তপদাদী শুন্য হয়েও সব কিছুর গ্রহীতা, চক্ষুহীন তথাপি সর্বদ্রষ্টা, কর্ণহীন তথাপি
সর্ব শ্রবনকারী। তিনি সনাতন, সর্বশ্রেষ্ঠ আদিতম
পুরুষ, তাঁর কোন জ্ঞাতা নেই।"
অর্থাৎ বিভিন্ন মন্ত্র বা শ্লোকে(যেমন গীতা) যখন তার অসংখ্য মাথার কথা বলা হয় তখন রুপকার্থে তা দিয়ে তিনি সর্বজ্ঞ তা বোঝানো হয়, যখন তাঁর অজস্র চোখের কথা বলা হয় তখন তার মাধ্যমে তিনি যে সর্বদ্রষ্টা তা বোঝানো হয়, যখন অজস্র বাহুর কথা বলা হয় তখন রুপকভাবে তিনি যে সর্বশক্তিমান তা বোঝানো হয়।
এগুলো কখনোই কোন আকারযুক্ত কোন কিছুর
বর্ণনা নয়, অর্থাৎ ঈশ্বর নিরাকার। অর্জুনের মাধ্যমে আমাদেরকে কৃষ্ণজী পরমাত্মা বা পরব্রহ্ম বা ওম্ সম্পর্কে আরো বলেছেন-
.
"তিনি সকল চরাচর জগতের বাহিরে ও ভেতরে রয়েছেন, অতিশয় সূক্ষ্মতা হেতু তাকে ইন্দ্রিয়গোচর করা যায় না বলে অবিজ্ঞেয় বা তাকে চক্ষু কর্ণ নাসিকা ইত্যাদি দিয়ে জানা যায় না। তিনি কাছে (জ্ঞানীর নিকট) এবং দূরেও (অজ্ঞানীর নিকট)।"
(গীতা ১৩।১৬)
"পরমাত্মাকে যদিও সমস্ত ভূতে বিভক্তরূপে ভোধ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। তিনি সর্বভূতের পালক,সংহারকর্তা ও সৃষ্টিকর্তা।"
(গীতা ১৩।১৭)
আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
                       viswarupa hd এর চিত্র ফলাফল