
প্রশ্ন - গীতার ৪।৭নং শ্লোকে অবতারের কথা বলা আছে। আর আপনি বলেছেন মুক্ত আত্মারা দেহ ধারণ করে অবতরণ করতে পারে, তবে পরমাত্মা বা ঈশ্বর অবতরণ করে না। পরমাত্মা বা ঈশ্বর যে
অবতরণ করে না তার প্রমাণ বেদ থেকে দেখিয়েছেন, এখন মুক্ত আত্মারা যে অবতরণ করে এর কোন শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেখাতে পারবেন???
উত্তর-অবশ্যই দেখাতে পারবো, এর প্রমাণের জন্য গীতার ঐ শ্লোকই যথেষ্ট। গীতার ৪।৭ এই বলা আছে যে-
"যখন যখনই ধর্মের গ্লাণি হয় ও অধর্ম বেড়ে যায় ,তদা অর্থাৎ তখনই অহম অর্থাৎ আমি আত্মানং অর্থাৎ আত্মাকে(যোগী ধর্মাত্মাদের) সৃজামি অর্থাৎ সৃষ্টি তথা প্রকাশ করি।"
(গীতা ৪।৭)"
(গীতা ৪।৭)"
এখানে বলা হয়নি যে ঈশ্বর নিজে সৃষ্টি হন বা অবতরণ করেন, কারণ এমন কোন স্থান অবশিষ্ট নেই যেখানে ঈশ্বর থাকে না। এখানে মূলত বলা হয়েছে ঈশ্বর জীবাআত্মাকে সৃষ্টি বা প্রকাশ করেন। ধর্মের যখন গ্লানি হয় তখন সময়ে সময়ে আমরা এই ধরণে ধর্মাত্মাদের দেখেছি। এখন যারা অযথা কুতর্ক করে বলবেন যে ঐ শ্লোকে "আত্মানং " বলতে মূলত নিজেকে তথা কৃষ্ণজীকে বুঝিয়েছেন। তাদের এটাই বলতে চাই
যে এই ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের অবতরণ তত্ব টিকে না। কারণ আপনাদের কথা মত এটা শ্রীকৃষ্ণেজীর কথা। তাহলে আপনাদের কথা মতে তিনি নিজেই
বলছে যে যখন যখন ধর্মের গ্লানি হয় ও অধর্ম বেড়ে যায় তখন কৃষ্ণজী অবতরণ করে। আর মুক্তি প্রাপ্ত জীবাত্মারা(শ্রীকৃষ্ণজী ও মুক্ত আত্মা) যে নিজের ইচ্ছা মত অবতরণ করতে পারেন তা নিচের কিছু উদাহরণ থেকে প্রমাণ হয়। শতপথ
ব্রহ্মণ গ্রন্থ থেকে দেখুন-
যে এই ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের অবতরণ তত্ব টিকে না। কারণ আপনাদের কথা মত এটা শ্রীকৃষ্ণেজীর কথা। তাহলে আপনাদের কথা মতে তিনি নিজেই
বলছে যে যখন যখন ধর্মের গ্লানি হয় ও অধর্ম বেড়ে যায় তখন কৃষ্ণজী অবতরণ করে। আর মুক্তি প্রাপ্ত জীবাত্মারা(শ্রীকৃষ্ণজী ও মুক্ত আত্মা) যে নিজের ইচ্ছা মত অবতরণ করতে পারেন তা নিচের কিছু উদাহরণ থেকে প্রমাণ হয়। শতপথ
ব্রহ্মণ গ্রন্থ থেকে দেখুন-
"শৃণ্বন্ শ্রোত্রং ভবতি, স্পর্শয়ন্ ত্বগ্ভবতি, পশ্যন চক্ষুর্ভবতি,রসয়ন্ রসনা ভবতি, জিঘ্রন্ ঘ্রাণং
ভবতি, মন্বানো মনো ভবতি, বোধয়ন্ বুদ্ধির্ভবতি,
চেতয়ঁশ্চিত্তম্ভবত্যহঙকুর্বাণো হঙ্কারো ভবতি।।"
(শতপথ ব্রাহ্মণ কাং ১৪)
ভবতি, মন্বানো মনো ভবতি, বোধয়ন্ বুদ্ধির্ভবতি,
চেতয়ঁশ্চিত্তম্ভবত্যহঙকুর্বাণো হঙ্কারো ভবতি।।"
(শতপথ ব্রাহ্মণ কাং ১৪)
অর্থাৎ মুক্তি অবস্থায় জীবাত্মা শুনিতে ইচ্ছা করিলে স্বশক্তি দ্বারাই শ্রোত্র, স্পর্শ করিতে ইচ্ছা করিলে ত্বক, দেখিবার সংকল্প হইলে চক্ষু, স্বাদ গ্রহণের জন্য ঘ্রাণ, সংকল্প বিকল্প করিবার জন্য মন, নিশ্চয় করিবার জন্য বুদ্ধি, স্মরণ করিবার জন্য চিত্ত, অহংবুদ্ধির জন্য যেমন ইন্দ্রিয়গোলকের দ্বারা স্বকার্য সিদ্ধ করে সেইরূপ মুক্তি অবস্থায় স্বশক্তি দ্বারা সমস্ত আনন্দ ভোগ করে।"
এর থেকে একেবারে নিশ্চত ভাবে যানা যায় যে মুক্ত আত্মারা চাইলে অবতরণ করতে পারেন। কৃষ্ণজীও মুক্ত আত্মা ছিলেন, যার ফলে তিনি
ইচ্ছা করেছিলেন যে যখনই ধর্মের গ্লাণি হয় অধর্ম বেড়ে যায় তখন সাধুদের রক্ষার জন্য তিনি অবতরণ করে। এই অবতরণ মুক্ত বা মোক্ষ প্রাপ্ত জীবাত্মার হয়,ঈশ্বর বা পরমাত্মার বা পরমেশ্বরের বা পরমব্রহ্মের নয়।
ইচ্ছা করেছিলেন যে যখনই ধর্মের গ্লাণি হয় অধর্ম বেড়ে যায় তখন সাধুদের রক্ষার জন্য তিনি অবতরণ করে। এই অবতরণ মুক্ত বা মোক্ষ প্রাপ্ত জীবাত্মার হয়,ঈশ্বর বা পরমাত্মার বা পরমেশ্বরের বা পরমব্রহ্মের নয়।
মুক্ত আত্মারা যে দেহধারণ করে তার আরো কিছু প্রমাণ দেখুন, ছান্দগ্যোপনিষদ ও বেদান্ত
সূত্রেও বলা আছে যে মুক্ত জীবাত্মারা তা পারেন।
প্রমাণ দেখুন-
সূত্রেও বলা আছে যে মুক্ত জীবাত্মারা তা পারেন।
প্রমাণ দেখুন-
"ভাবং জৈমিনিঃ, বিকল্পামননাৎ"
(বেদান্তসূত্র ৪।৪।১১)
(বেদান্তসূত্র ৪।৪।১১)
অর্থাৎ মুক্ত আত্মার দেহ ও ইন্দ্রিয়াদি থাকে, ইহা জৈমিনি মুনিরর মত। কারণ শাস্ত্রে বলা আছে
যে, তারা নানা রূপ দেহধারণ করার ক্ষমতা আছে।
যে, তারা নানা রূপ দেহধারণ করার ক্ষমতা আছে।
"...তিনি(মুক্ত জীবাত্মা) এক প্রকার থাকেন, তিন
প্রকার হন, পঞ্চ প্রকার, সপ্ত প্রকার এবং নব
প্রকার হন...।"
(ছান্দোগ্যোপনিষদ ৭।২৬।২)
প্রকার হন, পঞ্চ প্রকার, সপ্ত প্রকার এবং নব
প্রকার হন...।"
(ছান্দোগ্যোপনিষদ ৭।২৬।২)
এছাড়াও তিনি যে যা ইচ্চা তাই পেয়ে থাকেন তথা করতে পারেন তার প্রমাণ আরো দেখুন-
"তিনি যদি পিতৃলোক কামনা করেন, তবে তাহার
সঙ্কল্পমাত্রই পিতৃগণ তাঁহা সহিত মিলিত হন...।
মাতৃলোক কামনা করলে মাতৃগনের সহিত মিলিত
হন... ভাতৃলোক কামনা করলে তাদের সহিতও মিলিত হতে পারেন... । ভগিনীলোক কামনা করলে, বন্ধুলোক কামনা কললে তাদের সহিতও মিলিত হন। এক কথায় যাহা চান তাহাই প্রাপ্ত
হন।"
(ছান্দোগ্য_উপনিষদ ৮।২।১-১০)
সঙ্কল্পমাত্রই পিতৃগণ তাঁহা সহিত মিলিত হন...।
মাতৃলোক কামনা করলে মাতৃগনের সহিত মিলিত
হন... ভাতৃলোক কামনা করলে তাদের সহিতও মিলিত হতে পারেন... । ভগিনীলোক কামনা করলে, বন্ধুলোক কামনা কললে তাদের সহিতও মিলিত হন। এক কথায় যাহা চান তাহাই প্রাপ্ত
হন।"
(ছান্দোগ্য_উপনিষদ ৮।২।১-১০)
বোধ করি কৃষ্ণজীও মুক্ত আত্মা বা মোক্ষলাভ করা আত্মাই ছিলেন। তাই আপনাদের গীতা ভাষ্য মতে এই সিদ্ধান্তেই উপনিত হওয়া যায় যে
তিনি মুক্ত আত্মা। আর পরমাত্মা বা ঈশ্বর যে অবতরণ করে না তা যজুর্বেদের ৪০।৮ নং মন্ত্রে স্পষ্ট করেই বলা আছে।
তিনি মুক্ত আত্মা। আর পরমাত্মা বা ঈশ্বর যে অবতরণ করে না তা যজুর্বেদের ৪০।৮ নং মন্ত্রে স্পষ্ট করেই বলা আছে।
0 মন্তব্য(গুলি)