https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ২৩ - আর্যরা দেবদেবী ও মূর্তি পূজারীদের কি ঘৃণা করে?

Friday, May 26, 2017


প্রশ্ন- আর্যরা একেশ্বরের উপাসনা করে ভালো কথা কিন্তু অন্যদেরকে বিশেষ করে যারা দেবদেবী ও মুর্তি পূজা করে তাদের ঘৃণা করেন কেন?
উত্তর- কে বলেছে আমরা তাদেরকে ঘৃণা করি? যারা এটা বলে তারা হয় প্রকৃত সত্য জানেনা(তাই মূর্খ) অথবা জেনেও আর্যদের নামে মিথ্যা প্রচার করছে(তাই ভন্ড)। প্রকৃত সত্য কি তা দেখুন-


"নানা কামনা বাসনার দ্বারা বশীভূত হয়ে যারা বিবেকজ্ঞান হারিয়েছে, তারা অন্যদেবতাদের শরণাগত হয় ও তাদের উপাসনা করে।"
গীতা ৭।২০.
এখানে ঈশ্বর বলেননি দেবতাদের উপাসনা করতে, বলা হয়েছে যাদের বিবেকজ্ঞান নষ্ট হয়েছে তারা করে অর্থাৎ দেবতাদের উপাসনা করার কথাটা ঈশ্বরের আহ্বান নয় বরংচ এটা মানুষের নিজেদের তৈরি করা বিধান বা ইচ্চা।
"যে যে ভক্ত যে যে দেবতার দেহে অর্চনা করতে ইচ্চা করে সেই সেই ভক্তের সেই সেই দেবতার প্রতি অচলা শ্রদ্ধা আমিই বিদান করি।"
গীতা ৭।২১.
এখানেও ঐ দেবতাদের কোন সামর্থের কথা বলা হয়নি, বরংচ এটা বলা হয়েছে যে, মানুষের হৃদয়ে দেবতাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা জাগ্রত হয় তাও ঈশ্বরই দিয়ে থাকেন। শুধু শ্রদ্ধা নয়, যদি কোন মানুষ কোন কিছুর প্রতি অশ্রদ্ধাও করতে চায় তাও ঈশ্বরই দিয়ে থাকেন। কারণ ঈশ্বর সর্বকারণের কারণ এবং ফল দাতা। তার প্রমাণ-
"...তার মনমত কামনার বিষয় লাভ করেন, এসকল বিধান আমিই করেছি।"
গীতা ৭।২২.
যারা এক ঈশ্বর ব্যতিত অন্য কিছুর আরাধনা করে তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে-
"সেই অল্প মেধা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ফল শেষ হয়ে যায়। দেব উপাসকরা দেবলোক প্রাপ্ত হন কিন্তু আমার ভক্তরা আমাকেই পেয়ে থাকেন।"
গীতা ৭।২৩
"অতএব সর্বদা আমাকে স্মরণ কর... আমাকে(ঈশ্বরকে) মন বুদ্ধি সমর্পন করলে আমাকেই পাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।"
গীতা ৮।৭.
উপরের কোথাও ঈশ্বর মানুষদের প্রতি আহ্বান করেননি যে দেবতাদের পূজা বা উপাসনা করতে। বরংচ এটাই আহ্বান করেছেন যে শুধু মাত্র ঈশ্বরেরই উপাসনা করতে এবং ওনাতেই মন প্রাণ সমর্পন করতে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ নিজেদের মন মত নিয়ম কানুন তৈরি করে বিভিন্ন দেবদেবী ও মূর্তি পূজা করে। এটা সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের তৈরি করা, করার জন্য ঈশ্বরের কোন আহ্বান নয়। "...শ্রদ্ধা সহকারে যারা অন্যদেবতার পূজা করে তারাও অজ্ঞানতা পূর্বক আমারই পূজা করে থাকে।"
গীতা ৯।২৩
এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার সেই সকল দেবতাদের প্রকৃত পক্ষে নিজস্ব কোন শক্তিই নেই। কারণ তারা নিজেরাও ঈশ্বরের শক্তিতেই শক্তিমাণ। তার আরো প্রমাণ কঠ উপনিষদ থেকে দেখুন-
"এই পরমেশ্বরের ভয়ে অগ্নি তাপ দেন, ভয়ে সূর্য কিরণ দেন, ভয়ে ইন্দ্র ও বায়ু এবং পঞ্চমস্থানীয় মৃত্যুও স্বকার্যে প্রবৃত্ত থাকেন।"
কঠোপনিষদ্ ২।৩।৩.
"সেই ব্রহ্মকে (ঈশ্বরকে) সূর্য প্রকাশ করেন না, চন্দ্র তরকাও প্রকাশ করতে পারে না, এই বিদ্যুৎও প্রকাশ করতে পারে না। এই অগ্নি আবার কিরূপে করিবে? তিনি প্রকাশমান বলেই সমস্ত বস্তু তদনুযায়ী দীপ্তিমান হয়। তাহার দীপ্তিতেই এই সমুদয় বিবিধরূপে প্রকাশ পায়।"
কঠোপনিষদ ২।২।১৫.
তাহলে কেন আমরা ঐ সকল মুর্তি ও দেবতা পূজারিদের ঘৃণা করবো? আমরা শুধু সকলকে এটাই বলতে চাই যে বৈদিক ঋষিগণ যেরূপ কর্তব্যকর্ম করেছেন, যেরূপ এক ঈশ্বরের উপাসনা করেছেন, যেরূপ ঈশ্বরের আমাদেরকে আহ্বান করেছেন একমাত্র ওনারই উপাসনা করতে, তোমরাও সকলে সেইরূপ কর। তাহলে আর সকলের মাঝে ভেদাভেদ থাকবেনা, ফলে ব্যঙ্গের ছাতার মত কোন নিত্যনতুন সম্প্রদায়েরও সৃষ্টি হবে না। দেখুন গীতা উপনিষদের মত মানব জাতির একমাত্র সংবিধান বেদের নির্দেশ শুধু মাত্র এক ঈশ্বরের উপাসনা করতে এবং অন্য কারো উপাসনা না করতে।
১. "তুমি শুধু তাহারই(এক প্রভুরই) উপাসনা কর...।"
অথর্ববেদ ৬।১।২.
২. "অন্য কাহারো উপাসনা করিও না...।"
অথর্ববেদ ২০।৮৫।১.
প্রশ্ন- আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা বেদমূর্তি মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তো মূর্তি পূজাকে ঘৃণা করতো বলে শুনেছি।
উত্তর- যার কাছে আপনি এই কথা শুনেছেন তিনি হয়তো সত্য জানেন না অথবা সত্য জেনেও মিথ্যাচার করেছেন। দয়ানন্দজী যে মূর্তি পূজারিদের ঘৃণা করতেন না, মহর্ষির রচিত # সত্যার্থ_প্রকাশ . ই তার চূড়ান্ত প্রমাণ। দেখুন সত্যার্থ প্রকাশ এর চতুর্দ্দশ সমুল্লাসের ৩১নং পয়েন্টে ৫২৫নং পৃষ্ঠায় মহর্ষি যবনদের সাথে কথা প্রসঙ্গে কি বলেছেন তা একটি বার দেখুন-
"তোমরা যাদেরকে পৌত্তলিক মনে কর তারাও নানা প্রকার মূর্তিকে ঈশ্বর মানে না, কিন্তু তাদের সম্মুখে পরমেশ্বরেরই পূজা করে। তোমরা মূর্তি ভঞ্জক হইলে সেই সব বড় মূর্তি(কাবা) ভঙ্গ কর নাই কেন?" এবং শেষ পর্যন্ত এটাই বলেছেন যে-
"অবশ্য তোমরাও যদি আমাদের ন্যায় বৈদিক ধর্ম অবলম্বন কর তাহলে মূর্তিপূজাদি কুকর্ম হইতে অব্যাহতি পাইতে পার, নতুবা নয়।"
তাই পরিশেষে এটাই বলতে চাই যে যারা না জেনে অথবা সত্যি জেনেও অযথা আর্যদের নামে মিথ্যা রটাচ্ছেন তারা এর থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখবেন বলে আশাকরি। সকলের কল্যাণ হোক, মঙ্গল হোক, অজ্ঞানতা দূর হোক, এই কামনাই করি।