প্রশ্ন - অনেকে বলে কলি যুগের ধর্মই নাকি "হরে কৃষ্ণ..." মহামন্ত্র জপ। এটাই নাকি কলি যুগের প্রধান ধর্ম, এই ব্যাপারে গীতা কি বলে দাদা???
উত্তর- পূর্বের গীতা বিশ্লেষণেই বলেছি যে হরে কৃষ্ণ নামক কোন কিছুই গীতা, উপনিষদ, মনুসংহিতা, বেদান্ত, বেদ ইত্যাদি কোন বৈদিক সনাতন শাস্ত্রেই নেই। সকলের মনে রাখা উচিত-
"ধর্ম অধর্ম তথা কর্তব্য কর্ম নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার একমাত্র প্রমাণ। তাই এই সংসারে শাস্ত্র বিধান উক্ত কর্ম করা উচিত।"
গীতা ১৬।২৪
"ধর্ম অধর্ম তথা কর্তব্য কর্ম নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার একমাত্র প্রমাণ। তাই এই সংসারে শাস্ত্র বিধান উক্ত কর্ম করা উচিত।"
গীতা ১৬।২৪
গীতাতে বলা আছে-
"যজ্ঞ, দান ও তপস্যারূপ কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়-এই সকল করাই উচিত। যজ্ঞ, দান, তপঃ কর্ম মনীষীদের চিত্তশুদ্ধিকর।"
(গীতা ১৮।৫)
"নিত্য কর্মের ত্যাগ যুক্তিযুক্ত নয়, মোহবশত নিত্যকর্মের ত্যাগকে তামস ত্যাগ বলে।"
(গীতা ১৮।৭)
"যজ্ঞ, দান ও তপস্যারূপ কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়-এই সকল করাই উচিত। যজ্ঞ, দান, তপঃ কর্ম মনীষীদের চিত্তশুদ্ধিকর।"
(গীতা ১৮।৫)
"নিত্য কর্মের ত্যাগ যুক্তিযুক্ত নয়, মোহবশত নিত্যকর্মের ত্যাগকে তামস ত্যাগ বলে।"
(গীতা ১৮।৭)
অর্থাৎ সকল যুগেই ঐ সকল কর্ম করা উচিত। আর যারা তা ত্যাগ করে তাদেরকে তামসিক বলে। এরপরও যারা কুতর্ক করবেন তারা দয়া করে মহর্ষি মনু মহারাজ রচিত মনুসংহিতাটা একটু খুলে দেখুন, মিলিয়ে নিন কষ্ট করে। দেখুন মহর্ষি মনু কলি যুগের প্রধান ধর্ম কি বলেছেন-
"তপঃ পরং কৃতযুগে ত্রেতায়াং জ্ঞানমুচ্যতে।
দ্বাপরে যজ্ঞমেবাহুর্দানমেকং কলৌ যুগে।।"
(মনুসংহিতা ১।৮৬)
অনুবাদ~ সত্যযুগে তপস্যাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম, ত্রেতাযুগে জ্ঞানই শ্রেষ্ঠ, দ্বাপর যুগে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ।
"তপঃ পরং কৃতযুগে ত্রেতায়াং জ্ঞানমুচ্যতে।
দ্বাপরে যজ্ঞমেবাহুর্দানমেকং কলৌ যুগে।।"
(মনুসংহিতা ১।৮৬)
অনুবাদ~ সত্যযুগে তপস্যাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম, ত্রেতাযুগে জ্ঞানই শ্রেষ্ঠ, দ্বাপর যুগে যজ্ঞ এবং কলিতে একমাত্র দানই শ্রেষ্ঠ।
এখন প্রশ্ন হতে পার এই দান কি? এর উত্তরও পরিষ্কার, দান অনেক প্রকারের হয়। তবে সকল দানের মধ্যে একটা দান আছে যা সর্বশ্রেষ্ঠ। দেখুন মনুসংহিতা থেকেই-
"জল, অন্ন, গরু, ভূমি, বস্ত্র, তিল, সোনা এবং ঘি-এই সব দানের তুলনায় ব্রহ্মদান অর্থাৎ বেদের অধ্যাপনা ও তার ব্যাখ্যা সর্বোৎকৃষ্ট ফলপ্রদ এবং সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।।"
(মনুসংহিতা৪।২৩৩)
"জল, অন্ন, গরু, ভূমি, বস্ত্র, তিল, সোনা এবং ঘি-এই সব দানের তুলনায় ব্রহ্মদান অর্থাৎ বেদের অধ্যাপনা ও তার ব্যাখ্যা সর্বোৎকৃষ্ট ফলপ্রদ এবং সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।।"
(মনুসংহিতা৪।২৩৩)
এখন দেখলেন তো কলি যুগেরও যে প্রধান ধর্ম বেদ জ্ঞান দান??? কারণ এক মাত্র বেদ জ্ঞান দানের মাধ্যমেই জগতে প্রকৃত সুখ শান্তি বিস্তার লাভ করতে পারে, আবার মুক্তি লাভ তথা ঈশ্বর প্রাপ্তিও সম্ভব। কারণ বেদেই জীবের জন্য সম্পূর্ণ জীবন বিধান দেওয়া আছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে এগুলো কি বেদ থেকেই আগত? উত্তরও খুব পরিষ্কার, এগুলো বেদ থেকেই আগত এবং তা মহর্ষি মনু মহারাজই বলেছেন। দেখুন তার প্রমাণ-
"চাতুর্বর্ণ্যং ত্রয়ো লোকাশ্চত্বারশ্চশ্রমঃ পৃথক্।
ভূতংভবদ্ভবিষ্যঞ্চ সর্বং বেদাৎ প্রসিদ্ধ্যতি।।
(মনুসংহিতা ১২/৯৭)
অনুবাদ- চারটি বর্ণ, তিন লোক, পৃথক পৃথক চারটি আশ্রম এবং ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান-এগুলো একমাত্র বেদ থেকেই প্রচারিত হয়।
"চাতুর্বর্ণ্যং ত্রয়ো লোকাশ্চত্বারশ্চশ্রমঃ পৃথক্।
ভূতংভবদ্ভবিষ্যঞ্চ সর্বং বেদাৎ প্রসিদ্ধ্যতি।।
(মনুসংহিতা ১২/৯৭)
অনুবাদ- চারটি বর্ণ, তিন লোক, পৃথক পৃথক চারটি আশ্রম এবং ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান-এগুলো একমাত্র বেদ থেকেই প্রচারিত হয়।
আর এই সব তথাকথিত "হরে কৃষ্ণ..." মহামন্ত্র কালের গর্বে হারিয়ে যাবে কারণ এগুলো বেদ থেকে প্রচারিত হয়নি। তাইতো মনু বলেছেন-
"এই বেদ ছাড়া আর যত শাস্ত্র আছে(ভাগবত, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান, চৈতন্যচরিতামৃত ইত্যাদি) সেগুলো কালক্রমে উৎপন্ন হয় এবং বিনাশও প্রাপ্ত হয়। সেগুলো সব অর্বাচীনকালীন, এজন্য সেগুলো সব নিষ্ফল ও মিথ্যা।"
(মনুসংহিতা ১২/৯৬)
"এই বেদ ছাড়া আর যত শাস্ত্র আছে(ভাগবত, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান, চৈতন্যচরিতামৃত ইত্যাদি) সেগুলো কালক্রমে উৎপন্ন হয় এবং বিনাশও প্রাপ্ত হয়। সেগুলো সব অর্বাচীনকালীন, এজন্য সেগুলো সব নিষ্ফল ও মিথ্যা।"
(মনুসংহিতা ১২/৯৬)
তারপরও যারা বলবেন যে কলি যুগে এক মাত্র মহামন্ত্র হরে কৃষ্ণ, তারা প্রকৃত পক্ষে সনাতন ধর্ম অবলম্বিই নয়। কারণ তারা তো গীতাটাই মানে না, বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ তো পরের কথা! তাছাড়া বেদে ব্যতীত অন্য যে কোন গ্রন্থের বাণীগুলোকে শ্লোক বলে, শুধুমাত্র বেদের ক্ষেত্রেই মন্ত্র বলা হয়। দেখুন গীতাতেই মহামন্ত্র কাকে বলেছে-
"গায়ত্রী ছন্দসামহম্
অর্থাৎ ছন্দ (মন্ত্র) সমূহের মধ্যে আমিই(পরমাত্মা) গায়ত্রী।"
গীতা ১০।৩৫.
অর্থাৎ গায়ত্রী মন্ত্রই একমাত্র মহামন্ত্র।
"গায়ত্রী ছন্দসামহম্
অর্থাৎ ছন্দ (মন্ত্র) সমূহের মধ্যে আমিই(পরমাত্মা) গায়ত্রী।"
গীতা ১০।৩৫.
অর্থাৎ গায়ত্রী মন্ত্রই একমাত্র মহামন্ত্র।
0 মন্তব্য(গুলি)