https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ১৯ - গীতাই দান সম্বন্ধে কি বলা আছে?

Monday, May 22, 2017

প্রশ্ন ~গীতায় দান সম্পর্কে কি বলা আছে?
উত্তর~ গীতা থেকে শুরু করে সর্বপরি প্রায় সকল বৈদিক শাস্ত্রেই দানের মহিমা ব্যক্ত হয়েছে। উপনিষদ থেকেই শুরু করি-
"প্রজাপতি(ঈশ্বর) তিন প্রকারের সন্তান উৎপন্ন করে মনুষ্যগুণ সম্পন্ন সন্তানদের উপদেশ দিলেন "দ"। 


প্রজাপতি বলিলেন তোমরা কি বুঝেছ? তারা বলল-বুঝেছি। আপনি আমাদেরকে বলেছেন 'তোমরা দান কর'। প্রজাপতি বলিলেন, হ্যাঁ বুঝিয়াছ।"
(বৃহদারণ্যকউপনিষদ ৫।২।১থেকে৩ সংক্ষেপ)
বৈদিক সনাতন ধর্ম অনুযায়ী গরীব-দুঃখীদের দান করা একজন মানুষের তার ইহজীবনের
পাঁচটি মহাঋণের মধ্যে একটি। গীতায় দানকে অবশ্যই কর্তব্য কর্ম বলা হয়েছে-
"যজ্ঞ, দান ও তপস্যারূপ কর্ম ত্যাজ্য নহে, ইহা অবশ্যই করা কর্তব্য। যজ্ঞ দান ও তপস্যা বিদ্বানগণেরও চিত্তশুদ্ধিকর।"
(গীতা. ১৮।৫)
মহর্ষি মনু ওনার মনুসংহিতাতে বলেছেন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের কর্ম দান করা।
(মনুঃ ১।৮৮, ৮৯ ও ৯০)
পবিত্র বেদ সর্বদাই দান করাকে উৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের
১১৭ নং সুক্তটি সম্পূর্ণই দানের মহিমা নিয়ে
দৃষ্ট, যার কারনে সুক্তটির নাম দানস্তুতি সুক্ত। অথর্ববেদেও দান সম্পর্কে বলা আছে-
"শাত হস্ত সমাহার,সহস্র হস্ত সংকির।"
(অথর্ববেদ ৩।২৪।৫)
অনুবাদ-আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর
আর দান করতে তাকে সহস্রটিতে রুপান্তরিত কর!
"ধনীদের উচিত দুঃস্থদের দান করা, তাদের
দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত কেননা ধনসম্পদ হল
রথের চাকার মত, এখন যা এখানে পরমূহুর্তেই তা
অন্যখানে গতিশীল হয়।"
( ঋগবেদ ১০।১১৭।৫)
"মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বধ
ইত স তস্য।
নার্যমণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি
কেবলাদী।।"
(ঋগ্বেদ ১০।১১৭।৬)
অনুবাদ-যে ব্যক্তি দুঃস্থদের সাহায্য করেনা, অজ্ঞানী এবং অন্তঃদৃষ্টিহীন তার সকল উন্নতিই বৃথা, সকল সম্পত্তিই অনর্থক। যে অন্যদের সাহায্য করেনা,অভুক্ত রেখে কেবল নিজে
খায় সে মূলত পাপই ভোজন করে।
কিন্তু না জেনে ও বুঝে অপাত্রে তথা যেখানে সেখানে দান আবার ঠিক নয়। যে দান থেকে
প্রাপ্ত সম্পদের অপব্যবহার করে, তার অপকর্মের
দায় কিন্তু দানকারীরও বটে। এজন্যই কিন্তু
যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন-
"অনুপযুক্ত দেশে ও কালে, অপাত্রে যে দান এবং সৎকার শূন্য এবং অবজ্ঞাসহকারে যে দান, তাকে তামস দান বলে।"
(গীতা১৭।২২)
কিন্তু- "দান করা কর্তব্য এই চিন্তা করে, প্রতিদানের আশা না রেখে সৎপাত্রে, উপযুক্ত স্থানে, সঠিককালে যে দান করা হয় তাই সাত্ত্বিক(উৎকৃষ্ট) দান।"
(গীতা ১৭।২০)
মহর্ষি মনু বলেছেন-
"যে ব্যক্তি পাথরের তৈরী নৌকায় চড়ে জলপথ
পাড়ির চেষ্টা করেন তার সমাপ্তি যেমন সলিল সমাধিতে হয়, ঠিক তেমনি অযোগ্য গ্রহীতাতে
দানকারী অযোগ্য দাতাও অজ্ঞানতার গভীরে
নিমজ্জিত হন।"
(মনুঃ ৪।১৯৪)
তৈত্তেরিয় উপনিষদেও বলা হয়েছে-
শ্রিয়া দেয়ম্- আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী দান করবে
হ্রিয়া দেয়ম্- নম্রতার সহিত দান করবে ভিয়া দেয়ম্- ভয়ের সহিত দান করবে সংবিদা দেয়ম্- যা কিছু দান করবে বিবেকপূর্বক দান করবে।
(তৈত্তেরিয়উপনিষদ ১।১১।৩)
এখন কথা হল সর্বশ্রেষ্ঠ দান কোনটি? এই প্রসঙ্গে মহর্ষি মনু মহারাজ বলেছেন-
"সর্ব্বেষামেব দানানাং ব্রহ্মদানং বিশিষ্যতে।
বার্য্যন্নগোমহীবাস্তিলকাঞ্চনসর্পিষাম্।।"
( মনুসংহিতা ৪.২৩৩)
অনুবাদ-যত ধরনের দান এই পৃথিবীতে আছে, জলদান, অন্নদান, ধেনুদান, ভূমিদান, বস্ত্রদান,
তিলদান, স্বর্ণদান, এই সকল দানের মধ্যে বেদ দান অর্থাৎ বেদশিক্ষা দান সর্বশ্রেষ্ঠ দান!