পৌরাণিকরা যেন শাস্ত্র বলতে ভাগবতকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে। নিমাই (চৈতন্যদেবের) মতে এটা না কি লীলা রসের সমুদ্র। তাই পৌরাণিকরা যেন ভাগবত থেকে সেই লীলা রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই রসে বিশুদ্ধতার পরিমান কতটুকু তারা কখনো বিশ্লেষন করেই দেখে নি। তাদের ব্যাপারটা এরূপ যে - নিমাই যেহেতু একথা বলেছেন আর বিশ্লেষন করার কি দরকার। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের বিবেক, বুদ্ধি দিয়েছেন বিচার করার জন্য। অর্থাৎ কোন বিষয় গ্রহন করার পূর্বে অবশ্যই তা বিচার পূর্বক গ্রহন করা উচিত। তো আসুন বিচার করা যাক এই ভাগবতের প্রামাণিকতা কতটুকু ???
ভাগবত ১.৪.২৫ : স্ত্রী শূদ্র আর নিন্দিত দ্বিজের বেদাধিকার নেই | ব্যাসদেব তাই তাঁদের প্রতি কৃপাপরবশ হয়ে মহাভারত রচনা করেন |
SB 1.4.25
strī-śūdra-dvijabandhūnāṁ
trayī na śruti-gocarā
karma-śreyasi mūḍhānāṁ
śreya evaṁ bhaved iha
iti bhāratam ākhyānaṁ
kṛpayā muninā kṛtam
trayī na śruti-gocarā
karma-śreyasi mūḍhānāṁ
śreya evaṁ bhaved iha
iti bhāratam ākhyānaṁ
kṛpayā muninā kṛtam
Synonyms:
strī — the woman class; śūdra — the laboring class; dvija-bandhūnām — of the friends of the twice-born; trayī — the three sacrificial Vedas; na śruti-gocarā — not allowed to be heard; karma-śreyasi — in the successful execution of ritual duties; mūḍhānām — of the less intelligent; śreyaḥ — supreme benefit; evam — thus; bhavet — achieved; iha — by this; iti — thus thinking; bhāratam — the great Mahābhārata; ākhyānam — historical facts; kṛpayā — out of great mercy; muninā — by the muni; kṛtam — is completed.
Translation:
Out of compassion, the great sage thought it wise that this would enable men to achieve the ultimate goal of life. Thus he compiled the great historical narration called the Mahābhārata for women, laborers and friends of the twice-born.
যজুর্বেদ ২৬.২ : "আমি মানবকল্যাণে যে বাণী তোমাদের দিয়েছি তা প্রচার কর ব্রাহ্মণক্ষত্রিয় বৈশ্য শুদ্র নারী পুরুষ পাপী পুণ্যাত্মা নির্বিশেষে সকলকে "
সনাতন বৈদিক ধর্ম এমন একটি গোত্র যার প্রধান ধর্মগ্রন্থের প্রাপক ও প্রচারকদের মহামনিষীদের মধ্যে নারী ঋষিকাগণ ছিলেন যা পৃথিবীর অন্য কোন রিলিজিয়ন(ধর্ম একটিই,বৈদিক ধর্ম,বাকীগুলো মার্গ) এর পক্ষে চিন্তা করাও অসম্ভব।চলুন দেখে নেই পবিত্র বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিদের মধ্যে কিছু শ্রদ্ধেয় নারী ঋষিকার নাম-
১)ঘোষা(ঋগ্বেদ দশম মন্ডলের ৩৯-৪১ নং সুক্তের দ্রষ্টা,ঋষি কক্ষিবান এর কন্যা) ২)লোপামুদ্রা
৩)মৈত্রেয়ী
৪)গার্গেয়ী
৫)পৌলমি
৬)রোমশা
৬)অপালা
৭)বাক(ঋগ্বেদের বিখ্যাত দেবীসুক্তের দ্রষ্টা), ৮)অপত
৯)কত্রু
১০)বিশ্ববর
১১)জুহু ১২)ভগম্ভ্রীনি(মহর্ষি অম্ভ্রন এর কন্যা,ঋগ্বেদের অষ্টম মন্ডলের ১২৫ নং সুক্তের দ্রষ্টা)
১৩)যরিতা
১৪)শ্রদ্ধা
১৫)উর্বশী
১৬)স্বর্ণগা
১৭)ইন্দ্রানী
১৮)সাবিত্রী
১৯)দেবায়নী
২০)নোধা
২১)আকৃষ্ভাষা ২২)শীকাতনবাবরি ২৩)গণ্পায়নী
২৪)মন্ধত্রী
২৫)গোধ
২৬)কক্ষিবতী
২৭)দক্ষিনা
২৮)অদিতি
২৯)রাত্রি(মহর্ষি ভরদ্বাজের কন্যা) ৩০)শ্রীলক্ষ
বেদে স্ত্রীর অধিকার না থাকলে তিনি যজ্ঞে তাঁর পতির সাথে যজ্ঞ করবেন কি করে

"ব্রহ্মচর্যেন কন্যা যুবানাং বিন্দতে পতিম্।" (অথর্ববেদ ১১.৫.১৮)
অর্থাত্ ঠিক যেমন যুবক ব্রহ্মচর্য শেষ করে বিদুষী কন্যাকে বিয়ে করবে ঠিক তেমনি একজন যুবতীও ব্রহ্মচর্য শেষ করে পছন্দমত বিদ্বান যুবককে স্বামী হিসেবে গ্রহন করবে।
পাণিনি তার সংস্কৃত ব্যাকরণ শাস্ত্রে ছাত্রীদের ব্রহ্মচর্যের প্রতিষ্ঠান ছাত্রীশালা ও এর মহিলা অধ্যাপক আচার্যনি এর উল্লেখ করেছেন-
"মাতুলাচার্যাণামানুক্ত" -পাণিনি ৪.১.৪৬ এবং "ছাস্যাদযঃ ছাত্রীশালাযাম্" -পাণিনি ৬.২.৭৬
অথচ ভন্ড পৌরানিক পুরোহিতগন পুরুষতন্ত্র কায়েম করতে একসময় নারীদের শাস্ত্রপাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল,সতীদাহের মত জঘন্য প্রথা চালু করেছিল।আসুন,বেদের শুভ্র,অনন্য পথ অনুসরন করে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করি। এখন সম্মানিত পাঠকবৃন্দের কাছে প্রশ্ন অদ্বিতীয় বেদবিদ্ মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসের কি শর্ট টাইম মেমরি লস হয়েছিল যে তিনি এই বেদবিরুদ্ধ ভয়ানক কথা লিখেছেন

দেবী ভাগবত পুরাণ : ১.২.১৭ তে বলা হচ্ছে ব্যাসদেব পুরাণ রচনা করার পর মহাভারত রচনা করেন | After compiling the eighteen Purânas, Veda Vyâsa, the son of Satyavati composed Mahabharata, that has no rival, out of these Purânas.
আর ভাগবত পুরাণ 1.5.3 : এতে বলা মহাভারত এর পর ব্যাসদেবের ভাগবত রচনার পুর্বকথা |
SB 1.5.3 — Your inquiries were full and your studies were also well fulfilled, and there is no doubt that you have prepared a great and wonderful work, the Mahābhārata, which is full of all kinds of Vedic sequences elaborately explained
দুটিতেই বিরোধীতা বিদ্যমান এবং দুটোই ব্যাসদেবের নামে প্রচলিত | যার ফলে এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধীতা বিদ্যমান | এভাবে পুরাণসমূহ সনাতনীদের ঐক্য বিনষ্ট করে আসছে |
যজুর্বেদ ৪০-৮
সপর্য্যগচ্ছুক্রমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথাতথ্যতোর্থান ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্য।।
পদার্থঃ (সঃ) পরমেশ্বর (পরি) সব দিক থেকে (অগাৎ) ব্যপ্ত আছেন (শুক্রম) সর্বশক্তিমান (অকায়ম) শরীররহিত (অব্রণম্) ছিদ্র রহিত (অস্নাবিরম্) স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত (শুদ্ধম্) দোষ রহিত (অপাপবিদ্ধম্) পাপরহিত (কবিঃ) সর্বজ্ঞ (মনীষী) অন্তর্যামী (পরিভূঃ) দুষ্টের দমন কর্তা (স্বয়ম্ভূঃ) স্বয়ম্ভূ (যাথাতথ্যত) যথাভাবে (অর্থান্) সব পদার্থের (বি) বিশেষরূপে (দধাত্) উপদেশ করেছেন (শাশ্বতীভ্য) শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ (সমাভ্যঃ) প্রজাদের জন্য।। ৮।।
সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব দিক থেকে ব্যপ্ত আছেন, তিনি সর্বশক্তিমান, শরীররহিত (দেহ ধারন করেন না), ছিদ্র রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত (ইন্দ্রীয়াদি থাকে না), দোষ রহিত, পাপরহিত, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমন কর্তা, স্বয়ম্ভূ (যাকে কেউ জন্ম দেয় না) তিনি যথাভাবে সব পদার্থের বিশেষরূপে উপদেশ করেছেন শাশ্বত, অনাদিস্বরূপ প্রজাদের জন্য।।৮।।
উক্ত মন্ত্রটি বেদ হতে নেওয়া যা আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।
উক্ত মন্ত্রটি একটু ভাল করে পড়ুন, অনেক কিছুই। জানার আছে ঈশ্বর সম্পর্কে,যা প্রচলিত ধারাকে/বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ও সঠিক ভাবনার উদয় করে।
তাইতো অনেক সময় ভাবি,-প্রচলিত ধর্মপ্রচারকারীরা কেন বেদকে আমাদের থেকে দূরে রেখেছে? বিভিন্নজনকে পূর্ণব্রহ্ম /ঈশ্বর বানিয়েছে, অনেকজনকে পৃথিবীতে ঈশ্বর হিসেবে নামিয়েছে (এমন মনে হয়- ঈশ্বর পৃথিবীতে নেই), নিজের সুবিধায় যা ইচ্ছা তাই করেছে।
সাথে বলেছে-> বেদ কলিযুগে বুঝা যাবে না তাই নিষিদ্ধ।
বেদে অবতারবাদ নেই | অজ, সর্বব্যাপক ঈশ্বর অবতার নেন না |
কিন্তু পৌরাণিক অবতারবাদ নিজেরাই পরস্পর সাংঘর্ষিক | যেমন
ভাগবত ১.৩.৭ : বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার বরাহ |এ অবতারে তিনি রসাতলে নিমগ্ন পৃথিবীকে দন্তে নিয়ে ঊদ্ধার করেন |
SB 1.3.7 —
The
supreme enjoyer of all sacrifices accepted the incarnation of a boar
[the second incarnation], and for the welfare of the earth He lifted the
earth from the nether regions of the universe.
গরুড়_পুরাণ পুর্ব খণ্ড ৪.১৪ : ব্রহ্মা বরাহ অবতার নেন |
ভাগবত পুরাণ ৫.১.৩১ : প্রিয়ব্রত রাজার রথের ঘর্ষণে যে গর্ত হয় তার থেকেই সপ্ত সমুদ্রের সৃষ্টি |
SB 5.1.31 — When Priyavrata drove his chariot behind the sun, the rims of his chariot wheels created impressions that later became seven oceans, dividing the planetary system known as Bhū-maṇḍala into seven islands
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ডম্ ১১.৫০ : শ্রীরাধিকা বলছেন, শ্রী কৃষ্ণ বিরজাকে দৃঢ়রূপে আলিঙ্গন করে তাহার গর্ভে বীর্য্যাধান করেন | তাতেই সপ্তসমুদ্রের সৃষ্টি |
এখন সম্মানিত পাঠকবৃন্দের কাছে প্রশ্ন বেদব্যাস এর রচয়িতা ???
............ স্বয়ং বিচার করুন | নমস্কার
পুরাণ গুলো পাগলদের গ্রন্থ ছাড়া আর কিছুই নয়
ReplyDelete