https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষনঃ ০৮ - গীতায় স্বধর্ম ও পরধর্ম বলতে কি বুঝানো হয়েছে?

Sunday, May 7, 2017

প্রশ্ন -গীতায় বলা আছে কঠিন স্বধর্ম সহজ পর ধর্ম অপেক্ষা হিতকর। এখানে স্বধর্ম বলতে কি বুঝানো হয়েছে? আর পর ধর্মই বা কি?

উত্তর- গীতার ৩।৩৫ নং শ্লোকেই মূলত ঐ কথাটা বলা আছে।যথা- "স্বধর্ম কিঞ্চিতদোষ বিশিষ্ট হলেও উহা উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বধর্মে নিধনও কল্যাণকর, কিন্তু পরধর্ম গ্রহণ করা বিপদ জনক।"(গীতা ৩।৩৫)


এখানে ধর্ম বা স্বধর্ম বলতে বর্তমানে সাধারণ মানুষ যা বুঝে (হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান... বা
ইস্কন, রাম কৃষ্ণ মিশন বা অনুকুল ঠাকুরের মত) তা বুঝানো হয়নি। এখানে স্বধর্ম বলতে প্রকৃত পক্ষে কি বুঝানো হয়েছে তা জানতে হলে ১ম এ সবাইকে ধর্ম, অধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে।
তারপর স্বধর্ম কথাটা বুঝতে পারবেন। এবার দেখি ধর্ম দ্বারা কি বোঝায়?
ধর্ম একটি সংস্কৃত শব্দ, যার উৎপত্তি সংস্কৃত ধাতু
‘ধৃ’ হতে যার অর্থ ধারণ করা। অর্থাৎ যে বস্তু
যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তাই ঐ বস্তুর ধর্ম। যেমন: আগুনের ধর্ম তাপ, বরফের ধর্ম শৈত্য ইত্যাদি। তেমনি মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব।
বৈশেষিক দর্শনে কণাদ মুনি ধর্মের
সঙ্গা দিয়েছেন এভাবে-
‘য়তো অভ্যুদয় নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্ম’
(বৈশেষিক দর্শন ১ম অধ্যায়, ১ম আহ্নিক, ২য় সূত্র)
অর্থাৎ যা দ্বারা যথার্থ উন্নতি এবং পরম কল্যাণ লাভ হয় তাই ধর্ম। আর তার বিপরীত কর্মই অধর্ম। এখন আমরা ধর্মের লক্ষণগুলো দেখি।
মনুস্মৃতির ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৯২তম শ্লোকে ধর্মের
লক্ষণ বর্ণিত আছে-
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোস্তেয় শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃধীর্বিদ্যা
সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্।
অর্থাৎ, ধৃতি(যা পেয়েছ তাতেই সন্তুষ্ট থাকা), ক্ষমা, দম(আত্ম নিয়ন্ত্রণ), অস্তেয়(অনৈতিক
বিষয় হতে বিরত থাকা), শুচিতা, ইন্দ্রিয় নিগ্রহ
(ইন্দ্রিয়সমূহকে লোভ্য বস্তু থেকে বিরত রাখা), ধী(বুদ্ধি), বিদ্যা, সততা, অক্রোধ (রাগ বা ক্রোধ
না থাকা)। এই দশটি হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ।
কোন মানুষের মধ্যে যদি এই ১০টি লক্ষণ থাকে তাহলে তাকে ধার্মীক বলা যায়। আবার একজন
ধার্মীকেরও নিজেস্ব ধর্ম বা কর্তব্য কর্ম আছে। মূলত ইহাই তার জন্য স্বধর্ম । এই স্বধর্ম কি তা জানার জন্য গীতার ২।৩১ নং শ্লোকটা দেখুন।
এখানে বলা আছে-
"স্বধর্মের বিবেচনায়ও তোমার বিকম্পতি হওয়া চলিতে পারে না। ধর্মযুদ্ধ অপেক্ষা ক্ষত্রিয়ের পক্ষে শ্রেয়তর আর কিছু নাই।"
(গীতা ২।৩১)
.
অর্জুন ধার্মীক ছিলেন, আর প্রত্যেক ধার্মীকেরই স্বধর্ম বা নিজের ধর্ম বা বৈশিষ্ট আছে।
যেহেতু অর্জুন ক্ষত্রিয় ছিলেন সেহেতু একজন ক্ষত্রিয়ের স্বভাবসিদ্ধ স্বধর্ম বা কর্তব্য কর্ম হল যুদ্ধ করা। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ না করে যদি কোন ক্ষত্রিয়
পলায়ন করে বা অন্য ধর্মের প্রতি আসক্ত
হয়ে পড়ে (যথা- ভিক্ষাবৃত্তি, কৃষিকাজ বা ব্যবসা
বাণিজ্য ইত্যাদি পরধর্মের প্রতি)। তাহলে পুরো
রাজ্যই আত্মরক্ষায় অসমর্থ হয়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে, যা কিনা ভয়াবহ একটা ব্যাপার।
ব্রাহ্মণ তার নিজের বৈশিষ্ট বা স্বধর্ম বা কর্তব্য কর্ম ত্যাগ করে যদি পর ধর্মের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে পুরো সমাজ বা জাতিটাই অজ্ঞেনতার অন্ধকারে ডেকে যাবে। ঠিক তেমনি বৈশ্য ও
যদি নিজের স্বধর্ম ত্যাগ করে যুদ্ধে যায় তাহলে পুরো রাজ্যেরই অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে এবং
বৈশ্যগণ রঙ্গানে গিয়েও তার দ্বারা কোন কার্য সিদ্ধ হবে না।
এখন ব্রহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রগণের গুণ ও কর্তব্যকর্ম তথা স্বধর্মের ব্যাপারে লিখিত হল। ব্রাহ্মণদের কর্ম ছয়টি, যথা-
"অধ্যয়ন করা ও করানো, যজ্ঞ করা ও করানো, দান দেওয়া ও গ্রহণ করা।"
(মনুসংহিতা ১।৮৮)
আর গুণ হল নয়টি, যথা-
"মন সংযম, ইন্দ্রিয় সংযম, তপস্যা, ক্ষমা, সরলতা, শাস্ত্রজ্ঞান, বিজ্ঞান, ঈশ্বর ও বেদে বিশ্বাস।"
(গীতা ১৮।৪২)
.
ক্ষত্রিয়ের কর্ম ও গুণ এগারটি, যথা-
"প্রজারক্ষা, দান করা, অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ করা, শাস্ত্র অধ্যায়ন করা, সর্বদা জিতেন্দ্রিয় থাকা।
(মনুঃ ১।৮৯)
পরাক্রম, তেজ বা দৃঢ় থাকা, ধৈর্য্য, কর্মদক্ষতা, যুদ্ধে পলায়ন না করা, দান করা, ঈশ্বরভাব।"
(গীতা ১৮।৪৩)
বৈশ্যের কর্ম ও গুণ সাতটি, যথা-
"পশুরক্ষা, দান করা, অগ্নিহোত্রদি যজ্ঞ করা,
অধ্যায়ন করা, সর্বপ্রকারের বাণিজ্য করা, কৃষিকাজ, বুদ্ধিজীবিকা অর্থাৎ টাকা সুদে খাটানো।"
(গীতা১৮।৪৪ ও মনুঃ১।৯০)
শূদ্রের কর্ম ও গুণ একটি, যথা-
"নিন্দা,ঈর্ষা এবং অভিমান ত্যাগ করে যথোচিত সেবা করা শূদ্রের একমাত্র কর্তব্য এবং
এরদ্বারা জীবন যাত্রা নির্বাহ করা।"
(গীতা১৮।৪৪ ও মনুঃ১।৯১)
প্রশ্ন- আপনি কি চার বর্ণকে মানেন? এটা তো সমাজের জন্য ক্ষতিকর!
উত্তর- জম্মসুত্রে চার বর্ণ ক্ষতিকর, কিন্তু আমরা গুণ ও কর্ম অনুসারে চার বর্ণ মানি। এই ব্যাপারে বিস্তারিত আরেকটা পর্ব আছে, তা দেখে নিবেন। এখন মনুসংহিতায় মনু মহারাজ কি বলেছেন তা দেখুন-
"চারটি বর্ণ, তিন লোক, পৃথক পৃথক চারটি আশ্রম এবং ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান-এগুলো সব বেদ থেকেই প্রচারিত হয়।
মনুসংহিতা ১২/৯৭.
.
সকলকেই মনে রাখা উচিত যে
"যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাগ করা উচিত নয়, তা অবশ্যই করা কর্তব্য।"
(গীতা ১৮।৫)
"নিত্যকর্ম তথা স্বধর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়, মোহবশত ত্যাগ করা হলে তাকে তামসিক ত্যাগ বলে।"
(গীতা১৮।৭)
"ফলের আকাঙ্ক্ষা রহিত ব্যক্তিগণ কর্তৃক শাস্ত্রের বিধি অনুসারে, অনুষ্ঠান করা কর্তব্য বা স্বধর্ম
এভাবেই মনকে একাগ্র করে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে তাকে সত্ত্বিক যজ্ঞ বলে।"
(গীতা১৭।১১)
"অতএব কর্তব্য ও অকর্তব্য নিধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত
হয়েছে যে কর্ম তথা স্বধর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে তথা স্বধর্ম পালন করতে যোগ্য হও।"
(গীতা ১৬।২৪)
.
তাই গীতার ৩।৩৫, ২।৩১ ও ১৮।৪৭,৪৮
এ স্বধর্ম, পরধর্ম ও স্বধর্ম ত্যাগ না করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে ধর্ম বলতে আমরা যা বুঝি তা বুঝানো হয় নাই।