=>> শ্রী কৃষ্ণের জন্মঃ
নারায়ন কেশ হতে শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামের জন্ম -
স চাপি কেশৌ হরিরুদ্ধবই শুক্লমেকমপরং চাপি কৃষ্ণম।। ৩২।।
তৌ চাপি কেশৌ নিবিহোতা যদুনাং কুলে স্ত্রিয়ো দেবকৌ রোহনী চ।
তয়োরহেকো বলদেবো বভূব যেসৌ শ্বেতস্তস্য দেবস্য কেশঃ।
কৃষ্ণ দ্বিতীয়ঃ কেশবঃ সম্যভূব কেশে যোসৌ বর্ণতঃকৃষ্ণ উক্ত।। ৩৩।।
(মহাঃ আদি পর্ব, অঃ ১৯৬, শ্লোক ৩২-৩৩)
সরলার্থঃ সেই সময় ভগবান নারায়ন নিজ কেশ উৎপাটন করলেন। যার মধ্যে একটি শ্বেত বর্ণ দ্বিতীয় শ্যাম বর্ণ। সেই দুই কেশ যদুবংশী দুই স্ত্রী দেবকী তথা রোহিনীর মধ্যে প্রবিষ্ট হলো। তার মধ্যে রোহিনীর গর্ভে বলদেব প্রকট হলো যা নারায়নের শ্বেত কেশ ছিলো।দ্বিতীয় কেশ যা শ্যাম বর্ণের তা দেবকীর গর্ভে কৃষ্ণরূপে প্রকট হলো।
=>> কংশ বধ
মহাভারত সভাপর্বে কংস বধ প্রসঙ্গে যুধিষ্ঠির কে শ্রীকৃষ্ণ এরূপ বৃত্তান্ত বলে যে,
কিছুসময় পূর্বে ব্যর্থ বুদ্ধিসম্পন্ন কংস জরাসন্ধের কণ্যাকে বিবাহ করেন এবং জরাসন্ধের বল দ্বারা নিজ জাতি ভাইকে অপমান করে সবার প্রধান হন। এবং অনেক অত্যাচারী হয়ে উঠেন। তদনন্তর আমি এবং বলরাম কংসের সংসার করি -
হতৌ কংশসুনামানৌ ময়া রামেন ব্যপ্যুতে।।
(মহাঃ সভা পর্ব ১৪।৩৪)
আমি এবং বলরাম কংস এবং সুনামাকে বধ করি।
তথা কংস মহাতেজা জরাসন্ধেন পালিতঃ |
বিক্রমেণৈব কৃষ্ণেন সগণঃ পাতিতো রণে! ||৬||
(মহাভারতম্ দ্রোণপর্ব অধ্যায়ঃ ১১)
সরলার্থ : মহাবলবান তেজস্বী জরাসন্ধের দ্বারা পালিত কংসকে তাঁর সাথী সহিত যুদ্ধে পরাক্রমশালী শ্রীকৃষ্ণ বধ করেন |
=>> শ্রীকৃষ্ণের উপনয়ন ও শিক্ষা
আচার্য গর্গের নিকট শ্রীকৃষ্ণের উপনয়ন এবং সান্দিপানি মুনির আশ্রমে বেদ শিক্ষা লাভ -
ততশ্চ লব্ধসংস্কারৌ দ্বিজত্বং প্রাপ্ত সুব্রতৌ।
গর্গাদ যদুকুলাচার্যাদ্ গায়ত্রং ব্রতমাস্থিতৌ।।
(ভাগবত ১০।৪৫।২৯)
এইপ্রকার শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম যদুকুলাচার্য গর্গের নিকট উপনয়ন সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে দ্বিজত্বে উপনিত হলেন এবং গায়ত্রী ধারণ ধারণপূর্বক ব্রহ্মচর্য ব্রতে স্থিত হলেন।
পরবর্তীতে তারা সান্দিপানি মুনির আশ্রমে বেদ শিক্ষা লাভ করেন -
তয়োর্দ্বিজবরস্ত্তষ্টং শুধভাবানুবৃত্তিভিঃ।
প্রোবাচ বেতানখিলান্ সাঙ্গোপরিষদো গুরু।।
(ভাগবত ১০।৪৫।৩৩)
গুরুবর সান্দীপনি মুনিও তাদের সেবাপরায়নতা ও শুশ্রষায় পরম সন্তুষ্ট হয়ে উপনিষদ্ এবং ষড়ঙ্গ সহ সমগ্র বেদ উপদেশ করলেন।
ভীষ্ম শ্রীকৃষ্ণের গুণের কথন করে বলেন যে,
বেদ বেদাঙ্গ বিজ্ঞানং বলং বাচ্যধিকং তথা।
নৃণাং লোকে হি কোহন্যোস্তি বিশিষ্টঃ কেশাবাবৃতে।।
দানং দাক্ষ্যং শ্রুতং শৌর্যং হ্রিং কীর্ত্তির্বুদ্ধিরুত্তমা |
সন্নতি শ্রীর্ধৃতিস্তুষ্টিঃ পুষ্টিশ্চ নিয়তাচ্যুত্যে |
(মহাঃ সভা পর্ব ৩৮।১৯,২০)
অর্থাৎ বেদ বেদাঙ্গ, বিজ্ঞান এবং বল আদি সব গুণ শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে বিদ্যমান। মনুষ্য লোকে কেশবের অতিরিক্ত আর কে অধিক গুনসম্পন্ন?
=>> শ্রীকৃষ্ণের বিবাহ -
শ্রীকৃষ্ণ বিদর্ভরাজ ভীষ্মক এর কণ্যা রুক্মিনী কে তার সম্মতিতে হরণ পূর্বক বিবাহ করেন। কারণ রুক্মিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে শিশুপালের সহিত বিবাহ দেওয়া হচ্ছিলো।
মহাভারত সভাপর্বে এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে শ্রীকৃষ্ণ বলেন -
রুক্মিমণ্যামন্য মূঢস্য প্রার্থনাসীন্মুমূর্ষত।।
(মহা সভাপর্ব ৪৫।১৫)
এই মুঢ (শিশুপাল) মুত্যু অভিলাষী হয়ে রুক্মিনীর সাথে বিবাহের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন।
=>> শ্রীকৃষ্ণ কাহার তপস্যা করতেন?
সহস্র বর্ষ সেই কল্যাণস্বরূপ পরমেশ্বর শিবের উপাসনা
পূর্ণ বর্ষসহস্রং তু তপ্তবানেষ মাধবঃ।
প্রমাদ্য বরদং দেবং চরাচরগুরু শিবম্।।
(মহাঃ পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১২)
এই মাধব বরদায়ক দেব চরাচরগুরু ভগবান শিবকে প্রসন্ন করে পূর্বকালে পুরো এক হাজার বর্ষ পর্যন্ত তপস্যা করেছিলো।
=>> শ্রীকৃষ্ণ জগতে সবার প্রিয় কেন?
সর্বব্যাপক মহাদেবকে প্রসন্ন হেতু সবার প্রিয়তা লাভ
রুদ্রভক্তা তু কৃষ্ণেন জগদ্ ব্যাপ্ত মহাত্মনা।
তং প্রসাদ্য তদা দেবং বদরী কিল ভারত।।
অর্থাৎ প্রিয়তরত্বং চ সর্বলোকেষু বৈ তদা।
প্রাপ্তবানেব রাজেন্দ্র সূবর্ণাক্ষান্মশ্বরাত।।
(মহাঃ অনুশাসন পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১০-১১)
রুদ্রদেবের প্রতি ভক্তির কারনেই মহাত্মা শ্রীকৃষ্ণ সম্পূর্ণ জগৎকে ব্যপ্ত করে রেখেছে। তিনি পূর্বকালে মহাদেবকে প্রসন্ন করে সেই মহেশ্বর দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ সব পদার্থ অপেক্ষা প্রিয়তর ভাবকে প্রাপ্ত করে অর্থাৎ সম্পূর্ণ লোকের প্রিয় হন।
=>> শ্রীকৃষ্ণের পূত্র প্রাপ্তির জন্য শিবের উপাসনা -
কল্যাণস্বরূপ পরমেশ্বর শিবের কৃপাই উত্তম পুত্র প্রাপ্তি -
ঐশ্বর্য যাদৃশং তস্য জগদ্যোনের্মহাত্মনঃ।
তদয়ং দৃষ্টবাম্ সাক্ষাত্ পূত্রার্থে হরিরচ্যুত।।
(মহাঃ অনুশাসন পর্ব, অঃ১৪, শ্লোক ১৪)
জগতের কারনভূত পরমাত্মা শিবের ঐশ্বর্য যেমন সেরূপ পূত্রের জন্য তপস্যা করে এই অচ্যুত হরিকে প্রত্যক্ষ করেন।
ব্রহ্মচর্য্যং মহদ্ ঘোরং চীর্ত্বা দ্বাদশবার্ষিকম্ |
হিমবৎ পার্শ্বমভ্যেত্য যো ময়া তপসার্জিতঃ ||৩০||
সমান ব্রতচারিণ্যাং রুক্মিণ্যাং যোহন্বজায়ত |
সনত্কুমার তেজস্বী প্রদ্যুম্নো নাম মে সুতঃ ||৩১||
(মহাভারতম্ সৌপ্তিক পর্ব অধ্যায় ১২)
শ্রীকৃষ্ণ নিজের পত্নি রুক্মিনীর সাথে হিমালয়ে ১২ বছরের মহান ঘোর ব্রহ্মচর্য ব্রত ধারণ করে তপস্যা করেছিলেন | দুইজনে সনত্ কুমারের ন্যায় তেজস্বী পুত্র প্রদ্যুম্ন নামক পুত্র উত্পন্ন করেছিলেন |
=>> অর্জুন কে যোগযুক্ত হয়ে গীতা জ্ঞান প্রদান -
গীতা শ্রীকৃষ্ণের এক অনবদ্য অবদান। কুরুক্ষেত্রের ময়দানে বিষন্ন অর্জুন কে শ্রীকৃষ্ণ যোগস্থ হয়ে গীতা দান করেন -
পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া।
(অশ্বমেধিক পর্বঃ অঃ ১৬ শ্লোক ১৩)
শ্রীকৃষ্ণ বললেন সেই সময় আমি যোগযুক্ত হয়ে পরমাত্মতত্ত্বের বর্ণনা করেছিলাম।
=>> শ্রীকৃষ্ণকে গান্ধারীর অভিশাপ-
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের সঠিক নির্দেশনায় কৌরবদের পরাজয় এবং গান্ধারীর শতপুত্র নিহত হেতু পুত্রশোকে শ্রীকৃষ্ণকে গান্ধারীর অভিশাপ -
পান্ডবা ধার্তরাষ্টাশ্চ দগ্ধা পরস্পরম।
উপেক্ষিতা বিনাশ্চ্যন্তসত্ব্যা কস্মাজনার্দন।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৩৯)
হে জনার্দন! পান্ডব এবং ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র পরস্পরের সাথে লড়ে ভস্ম হয়ে গিয়েছে। তুমি এদের নষ্ট হতে দেখেও ইহার উপেক্ষা কি করে করলে?
শক্তেন বহুমৃত্যেন বিপুলে তিষ্ঠতা বলে।
উভয়ত্র সমর্থেন শ্রুতবাক্যেন চৈব হ।।
ইচ্ছতোপেক্ষিতো নাশাঃ কুরুণাং মধুনুদন।
যস্মাৎ ত্বয়া মহাবাহো ফল তস্মাদবাপ্নুহি।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪০-৪১)
মহাবাহু মধুসুদন! তুমি শক্তিশালী ছিলে তোমার পাশে অনেক যোদ্ধা এবং সৈনিক ছিলো। তুমি মহান বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ছিলে। দুই পক্ষ আপনার কথা মেনে নেওয়ার সামর্থ আপনার মধ্যে ছিলো। তুমি বেদশাস্ত্র ও মহাত্মাদের কথা শুনেছো এবং জেনেছো তথাপি তুমি কুরু কুলের নাশকে উপেক্ষা করেছো। জেনে বুঝেও এই বংশের বিনাশ হতে দিয়েছো। ইহা তোমার মহা দোষ, অতঃ তুমি ইহার ফল প্রাপ্ত করো।
পতিত্র শুষয়া যেন্মে তপঃ কিচিদপজিতম্।
তেন ত্বাং দূরবাপেন শপ্স্যে চক্রগদাধর।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪২)
চক্র এবং গদাধারী কেশব! আমি পতির সেবা দ্বারা যা কিছু তপ করেছি। সেই দূর্লভ তপবল দ্বারা তোমাকে শাপ করছি।
তমসুপস্থিতে বর্ষ ষটত্রিংশে মধুসুদন।
হতশাতির্হতাত্যো হতপুত্রো বনেচর।।
অনাথবদবিজ্ঞাতো লোকেষ্বনভিলক্ষিত।
কুসিতেনাভ্যপায়েন নিধনং মমবাক্যসি।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪৪-৪৫)
হে মধুসুদন! আজ থেকে ছত্রিশ বর্ষ উপস্থিত হওয়ার পর তোমার কুটুম্ব স্ত্রি পুত্র সবাই নিজেদের মধ্যে লড়ে মারা যাবে। তুমি অপিরিচিত লোকের দৃষ্টিতে অচল হয়ে অনাথের সমান বনে বিচরন করবে এবং কোন নিন্দিত উপায়ে মৃত্যুকে প্রাপ্ত করবে।
তবাপ্যেং হতসুতা নিহতজ্ঞাতিবান্ধবাঃ।
স্ত্রিয়ঃ পরিপতিযন্তি যথৈতা ভরতস্ত্রিয়ঃ।।
(স্ত্রী পর্বঃ অঃ ২৫, শ্লোক ৪৬)
এই ভরতবংশের স্ত্রীদের সমান তোমার কুলের স্ত্রী ও পুত্রী তথা ভাই মারা যাবার পর তাদের শবের পাশে বিলাপ করবে।
=>> জরা ব্যাধের শরে শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগ
শ্রীকৃষ্ণ নিজ বংশের বিনাশ দেখে দেহ থেকে মুক্তি লাভের ইচ্ছা করলেন। এবং মন বানী এবং ইন্দ্রীয়ের নিরোধ করে যোগ সমাধি আশ্রয় করে স্থিত করলেন। সেই সময় জরা নামক ভয়ংকর ব্যাধ মৃগ শিকারে সেই স্থানে উপস্থিত হলেন। এবং শ্রীকৃষ্ণকে মৃগ মনে করে তীর নিক্ষেপ করলেন এবং সেই তীর শ্রীকৃষ্ণের পায়ে বিদ্ধ হলো। যখন মৃগ কে ধরার জন্য সেখানে আসলেন তখন সেখানে যোগে স্থিত শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে পেলেন এবং নিজেকে অপরাধী মনে করে ভয় পেলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বস্থ করে নিজ কান্তিতে পৃথিবী এবং আকাশ ব্যপ্ত করে উর্ধলোকে চলে গেলেন।
স কেশবং যোগযুক্তং শয়ানং -
মৃগাসক্তো লুব্ধকং সায়কেন।।
জরাবিধ্যত পদতলে ত্বয়াবাং।
(মৌষল পর্ব, অঃ ৪ শ্লোক ২২-২৩)
মৃগে আসক্ত হয়ে জরা ব্যাধ যোগেস্থিত কেশবকে মৃগ মনে করে তীর নিক্ষেপ করে তার পদতল বিদ্ধ করলেন।
=>> অর্জুন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের অন্তিম সৎকার -
ততঃ শরীরে রামস্য বাসুদেবস্য চোভয়োঃ।
অনিষ্য দাহয়ামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।।
(মহাঃ। মৌষল পর্ব। অঃ ৭ শ্লোক ৩১)
তদনন্তর বিশ্বস্ত পুরুষ দ্বারা বললাম তথা বসুদেবনন্দন শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের শরীর খোজ করে অর্জুন তাদের দাহ সংস্কার করলেন।
0 মন্তব্য(গুলি)