এই পর্বটিতে অতীতের গীতা বিশ্লেষণ
পর্বগুলোতে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক লোক
যেসকল আপত্তি করেছিল তার খন্ডন করেছি
মাত্র। আর এটাই আমার গীতা বিশ্লেষণের
সমাপ্তি পর্ব।
পর্বগুলোতে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক লোক
যেসকল আপত্তি করেছিল তার খন্ডন করেছি
মাত্র। আর এটাই আমার গীতা বিশ্লেষণের
সমাপ্তি পর্ব।
আপত্তি নং ১:-
//গীতার ১৮ তম অধ্যায়ের প্রকৃত ব্যাখ্যা
জানুন...ভগবানের ৩টি তত্ত্ব,যথা-
i.নির্বিশেষ ব্রহ্ম- যা গুহ্যজ্ঞান।
(গীতা১৪/২৭+১৮/৬৩)
i. গুহ্যজ্ঞানঃ নির্বিশেষ প্রকাশ ব্রহ্ম
বিষয়ক-
যা গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৫১-৫৭ শ্লোক পর্যন্ত!
"অহংকারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং
পরিগ্রহম।
বিমুচ্য নির্মমঃ শান্তো ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।।
(৫৩)"
--অহংকার,বল,দর্প,কাম,ক্রোধ,পরিগ্রহ হতে
সম্পর্নভাবে মুক্ত হয়ে মমত্ব বোধশূন্য শান্ত
ব্যক্তির নির্বিশেষ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত ঘটে।//
আপত্তি নং ১এর জবাবঃ-
আপনি বলেছেন গীতার ১৮/৫১-৫৭ নং শ্লোক
হল গুহজ্ঞান। আর তা হল নির্বিশেষ প্রকাশ
ব্রহ্ম বিষয়ক জ্ঞান। অথচ এখানে কোথাও
নির্বিশেষ শব্দটাই নেই ! এমন কি-আপনি ৫৩
নং শ্লোকের অনুবাদে যে নির্বিশেষ শব্দটা
লাগিয়েছেন সেটাও আপনার প্রিয় ইসকন
ভাষ্যে নেই। আপনি নির্বিশেষ বলতে যদি
নিরাকার বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে এই
শ্লোকগুলো আপনার পরবর্তী মন্তব্যগুলোকেই
খন্ডন করে দেয়। কারণ পুরো বিশ্বসংসার
এবং কল্পনাতীত যে ফাঁকা জায়গা (অসীম)
তার পুরোটাই ওনার(নিরাকারের) ধাম। বরংচ
আপনার সাকারের ধাম যদি কোন গন্ডির
মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেখানে
অপার আনন্দ অনুভুত হবে না, কারণ
জেলখানায় যেমন সুখ নেই, ঠিক তেমনি
সাকার ঈশ্বরের সাকার ধামেও অনন্ত সুখ
নেই। আপনার কথা অনুসারে তিনি যেহেতু
সাকার সেহেতু ওনার ধামও সীমাবদ্ধ বা
সাকার। ৫৬ ও ৫৭ নং শ্লোকে বলা আছে
(আপনার প্রিয় ইসকন ভাষ্য)-
//গীতার ১৮ তম অধ্যায়ের প্রকৃত ব্যাখ্যা
জানুন...ভগবানের ৩টি তত্ত্ব,যথা-
i.নির্বিশেষ ব্রহ্ম- যা গুহ্যজ্ঞান।
(গীতা১৪/২৭+১৮/৬৩)
i. গুহ্যজ্ঞানঃ নির্বিশেষ প্রকাশ ব্রহ্ম
বিষয়ক-
যা গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৫১-৫৭ শ্লোক পর্যন্ত!
"অহংকারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং
পরিগ্রহম।
বিমুচ্য নির্মমঃ শান্তো ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।।
(৫৩)"
--অহংকার,বল,দর্প,কাম,ক্রোধ,পরিগ্রহ হতে
সম্পর্নভাবে মুক্ত হয়ে মমত্ব বোধশূন্য শান্ত
ব্যক্তির নির্বিশেষ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত ঘটে।//
আপত্তি নং ১এর জবাবঃ-
আপনি বলেছেন গীতার ১৮/৫১-৫৭ নং শ্লোক
হল গুহজ্ঞান। আর তা হল নির্বিশেষ প্রকাশ
ব্রহ্ম বিষয়ক জ্ঞান। অথচ এখানে কোথাও
নির্বিশেষ শব্দটাই নেই ! এমন কি-আপনি ৫৩
নং শ্লোকের অনুবাদে যে নির্বিশেষ শব্দটা
লাগিয়েছেন সেটাও আপনার প্রিয় ইসকন
ভাষ্যে নেই। আপনি নির্বিশেষ বলতে যদি
নিরাকার বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে এই
শ্লোকগুলো আপনার পরবর্তী মন্তব্যগুলোকেই
খন্ডন করে দেয়। কারণ পুরো বিশ্বসংসার
এবং কল্পনাতীত যে ফাঁকা জায়গা (অসীম)
তার পুরোটাই ওনার(নিরাকারের) ধাম। বরংচ
আপনার সাকারের ধাম যদি কোন গন্ডির
মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেখানে
অপার আনন্দ অনুভুত হবে না, কারণ
জেলখানায় যেমন সুখ নেই, ঠিক তেমনি
সাকার ঈশ্বরের সাকার ধামেও অনন্ত সুখ
নেই। আপনার কথা অনুসারে তিনি যেহেতু
সাকার সেহেতু ওনার ধামও সীমাবদ্ধ বা
সাকার। ৫৬ ও ৫৭ নং শ্লোকে বলা আছে
(আপনার প্রিয় ইসকন ভাষ্য)-
सर्वकर्माण्यपि सदा कुर्वाणो मद्व्यपाश्रयः।
मत्प्रसादादवाप्नोति शाश्वतं पदमव्ययम्।।18.56।।"আমার শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা সমস্ত কর্ম করেও
আমার প্রসাদে নিত্য অব্যয় ধাম
লাভ করেন ।"
আমার প্রসাদে নিত্য অব্যয় ধাম
লাভ করেন ।"
चेतसा सर्वकर्माणि मयि संन्यस्य मत्परः।
बुद्धियोगमुपाश्रित्य मच्चित्तः सततं भव।।18.57।।"
তুমি বুদ্ধির দ্বারা সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পণ
করে, মৎপরায়ন হয়ে, বুদ্ধিযোগের_আশ্রয় গ্রহণপূর্বক সর্বদাই মদ্গতচিত্ত হও।"
১৮/৫৬,৫৭.
আরো লক্ষণীয় যে, ৫৭ নং শ্লোক উক্ত "সমস্ত
কর্ম করেও আমার শুদ্ধ ভক্তরা সেই ধামে
প্রবেশ করতে পারে" এটাই তো প্রকৃত পক্ষে
গুহতমজ্ঞান। কারণ-
করে, মৎপরায়ন হয়ে, বুদ্ধিযোগের_আশ্রয় গ্রহণপূর্বক সর্বদাই মদ্গতচিত্ত হও।"
১৮/৫৬,৫৭.
আরো লক্ষণীয় যে, ৫৭ নং শ্লোক উক্ত "সমস্ত
কর্ম করেও আমার শুদ্ধ ভক্তরা সেই ধামে
প্রবেশ করতে পারে" এটাই তো প্রকৃত পক্ষে
গুহতমজ্ঞান। কারণ-
न हि कश्िचत्क्षणमपि जातु तिष्ठत्यकर्मकृत्।
कार्यते ह्यवशः कर्म सर्वः प्रकृतिजैर्गुणैः।।3.5।।"মানুষ কর্ম ছাড়া ক্ষণকালও থাকতে পারে
না। কারণ প্রকৃতিজাত ত্রিগুণের দ্বারা অবশ
হয়ে সকলে কাজ করতে বাধ্য হয়।"
এটা গীতা ৩/৫ নং শ্লোকেরই বাণী।
না। কারণ প্রকৃতিজাত ত্রিগুণের দ্বারা অবশ
হয়ে সকলে কাজ করতে বাধ্য হয়।"
এটা গীতা ৩/৫ নং শ্লোকেরই বাণী।
তাছাড়া গীতা ১৮/৬০ নং শ্লোকেও বলা
আছে-
আছে-
स्वभावजेन कौन्तेय निबद्धः स्वेन कर्मणा।
कर्तुं नेच्छसि यन्मोहात्करिष्यस्यवशोऽपि तत्।।18.60।।
"মোহ বশত তুমি এখন যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করছ না,
কিন্তু তোমার নিজের স্বভাবজাত কর্মের
দ্বারা বশবর্তী হয়ে অবশভাবে তুমি তা করতে
প্রবৃত্ত হবে।"
"মোহ বশত তুমি এখন যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করছ না,
কিন্তু তোমার নিজের স্বভাবজাত কর্মের
দ্বারা বশবর্তী হয়ে অবশভাবে তুমি তা করতে
প্রবৃত্ত হবে।"
অর্থাৎ কর্ম করা অবস্থায় স্মরণই সবচেয়ে
সহজ মাধ্যম ওনার ধামে যাওয়ার। কথায় বলে
না-
"কি মজা, কি মজা! মেলাও দেখবো, আবার
কলাও বেঁচবো!"
আর এটাই তো বুদ্ধিমানের কর্ম, তাছাড়া
গীতার ঐ শ্লোকগুলোতেও কিন্তু বুদ্ধিযোগে
আশ্রয় নেওয়ার কথাই বলেছে প্রভু!
আপত্তি নং ২:-
//ii.আংশিক প্রকাশ পরমাত্মা- যা
গ্রহ্যতরজ্ঞান (গীতা ১০/২০+১৮/৬৩)
গুহ্যতর জ্ঞানঃ- (আংশিক প্রকাশ পরমাত্মা
বিষয়ক) যা গীতার ৬১-৬২ শ্লোক পর্যন্ত!
"হে অর্জুন- ঈশ্বর সকল জীবের মধ্যে
পরমাত্মারূপে অবস্থান করিয়া নিজ
কর্মবশে সর্বদা মায়ায় বিমোহিত করিয়া
যন্ত্রের ন্যায় তাঁহার কার্য
চালাইতেছেন।"৬১
"হে অর্জুন- তুমি সর্বতভাবে তাঁহার শরণ লও।
তবেই তাঁহার দয়ায় তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত
পদ পাইবে।"৬২
"হে অর্জুন- আমি তোমার নিকট গুহ্য হতে
গুহ্যতর জ্ঞান প্রকাশ করিলাম। তুমি গুহ্যকে
নাকি গুহ্যতরকে গ্রহণ করবে তোমার
স্বাধীনতার বিষয়।"৬৩//
আপত্তি নং ২ এর জবাবঃ-
আপনি ১০/২০ নং শ্লোকে আংশিক প্রকাশ
পরমাত্মাকে খুজে পেয়েছেন! আপনার দিব্য
দৃষ্টিতে পরমাত্মা হল কৃষ্ণের আংশিক
প্রকাশ! অথচ আপনি যে শ্লোকের রেফারেন্স
দিয়ে ছেন তা কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দেয়! দেখ-
"হে গুড়াকেশ অর্জুন! আমি আত্মা সমস্ত
জীবের হৃদয়ে অবস্থিত। আমিই সর্বভূতের
আদি মধ্য ও অন্ত ।" গীতা ১০/২০.
প্রশ্ন হল এই পরমাত্মাই যদি আদি মধ্য ও অন্ত
হয় তাহলে তিনি আংশিক হল কিভাবে? জীব
স্বয়ংই আত্মা, আর সেই আত্মার হৃদয়ে থাকেন
পরমাত্মা। শুধু জীব তথা আত্মার হৃদয়ে নয়,
তিনি সমস্ত কিছুর শুরুতেও আছেন, মধ্যেও
আছেন, আবার অন্তেও আছেন। তাহলে তিনি
আংশিক হল কি করে?
সহজ মাধ্যম ওনার ধামে যাওয়ার। কথায় বলে
না-
"কি মজা, কি মজা! মেলাও দেখবো, আবার
কলাও বেঁচবো!"
আর এটাই তো বুদ্ধিমানের কর্ম, তাছাড়া
গীতার ঐ শ্লোকগুলোতেও কিন্তু বুদ্ধিযোগে
আশ্রয় নেওয়ার কথাই বলেছে প্রভু!
আপত্তি নং ২:-
//ii.আংশিক প্রকাশ পরমাত্মা- যা
গ্রহ্যতরজ্ঞান (গীতা ১০/২০+১৮/৬৩)
গুহ্যতর জ্ঞানঃ- (আংশিক প্রকাশ পরমাত্মা
বিষয়ক) যা গীতার ৬১-৬২ শ্লোক পর্যন্ত!
"হে অর্জুন- ঈশ্বর সকল জীবের মধ্যে
পরমাত্মারূপে অবস্থান করিয়া নিজ
কর্মবশে সর্বদা মায়ায় বিমোহিত করিয়া
যন্ত্রের ন্যায় তাঁহার কার্য
চালাইতেছেন।"৬১
"হে অর্জুন- তুমি সর্বতভাবে তাঁহার শরণ লও।
তবেই তাঁহার দয়ায় তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত
পদ পাইবে।"৬২
"হে অর্জুন- আমি তোমার নিকট গুহ্য হতে
গুহ্যতর জ্ঞান প্রকাশ করিলাম। তুমি গুহ্যকে
নাকি গুহ্যতরকে গ্রহণ করবে তোমার
স্বাধীনতার বিষয়।"৬৩//
আপত্তি নং ২ এর জবাবঃ-
আপনি ১০/২০ নং শ্লোকে আংশিক প্রকাশ
পরমাত্মাকে খুজে পেয়েছেন! আপনার দিব্য
দৃষ্টিতে পরমাত্মা হল কৃষ্ণের আংশিক
প্রকাশ! অথচ আপনি যে শ্লোকের রেফারেন্স
দিয়ে ছেন তা কিন্তু অন্য ইঙ্গিত দেয়! দেখ-
"হে গুড়াকেশ অর্জুন! আমি আত্মা সমস্ত
জীবের হৃদয়ে অবস্থিত। আমিই সর্বভূতের
আদি মধ্য ও অন্ত ।" গীতা ১০/২০.
প্রশ্ন হল এই পরমাত্মাই যদি আদি মধ্য ও অন্ত
হয় তাহলে তিনি আংশিক হল কিভাবে? জীব
স্বয়ংই আত্মা, আর সেই আত্মার হৃদয়ে থাকেন
পরমাত্মা। শুধু জীব তথা আত্মার হৃদয়ে নয়,
তিনি সমস্ত কিছুর শুরুতেও আছেন, মধ্যেও
আছেন, আবার অন্তেও আছেন। তাহলে তিনি
আংশিক হল কি করে?
আরো লক্ষণীয় যে- ৬১ নং শ্লোকের
ব্যাখ্যায় আপনি পরমাত্মা শব্দটা ব্যবহার
করেছেন, তাও আবার আংশিক বুঝাতে! অথচ
গীতার ঐ শ্লোকে এই শব্দটাই নেই! আছে
ঈশ্বর শব্দটা, দেখুন-
"ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর
্জুন তিষ্ঠতি।
অর্থাৎ ঈশ্বর সর্ব জীবের হৃদয়ে অবস্থান
করছেন।" গীতা ১৮/৬১.
যদিও আমি বা আমরা ঈশ্বর বা পরমাত্মা এই
শব্দগুলো নিয়ে ভেদাভেদ করি না, কিন্তু
আপনার ভেদাভেদ যুক্ত মন্তব্যের বিপরীতে
বলতে হয় যে- এই শ্লোকে যেহেতু ঈশ্বর
শব্দটা আছে সেহেতু এই ঈশ্বরও কি আংশিক
প্রকাশ? আপনার দিব্য দৃষ্টিতে মনে হয় "এক
কৃষ্ণ" ভিন্ন সবই আংশিক প্রকাশ! অথচ
গীতাতেই বলা আছে-
"হে ভারত! তুমি তাঁহারই (আপনার কথা
অনুসারে আংশিক প্রকাশ পরমাত্মার/
ঈশ্বরের) শরণাগত হও। তাঁর প্রসাদে (কৃপায়)
তুমি পরা শান্তি এবং নিত্য ধাম প্রাপ্ত
হবে।" গীতা ১৮/৬২.
এখানেও লক্ষণিয় যে- কর্ম ত্যাগ না করেও
তোমার হৃদয়ে যে ঈশ্বর আছেন, ওনার স্মরণ
নিলে নিত্য ধাম পাওয়া যাবে। এটা ঠিক যে
পূর্বের জ্ঞান থেকে এটা গুহতর জ্ঞান।
কারণ, ঈশ্বর হৃদয়ে থাকা মানে তো সবচেয়ে
কাছে থাকা, অর্থাৎ আমারই হৃদয় মন্দিরে
তিনি আছেন। সাধক যখন তা বুঝতে পারে
তখন ওনাকে দেখার জন্য অন্য জড় মন্দিরে
ছুটা ছুটি করতে হয় না। প্রতিমা, মূর্তির মধ্যে
ওনাকে খুজতে হয় না, বিশাল অংকের টাকা
খরচ করে মন্দির বানানো ও তাতে ঈশ্বর
দর্শনের জন্য তীর্থে যাওয়ার কোন মানে হয়
না। শুধু সঠিক বিচার বিবেচনা তথা জ্ঞানই
প্রয়োজন। আর কর্ম করতে করতে ওনার শরণ
নিয়ে মুক্তি লাভ করা যেহেতু সহজ তাই এটা
অবশ্যই গুহতর জ্ঞান, গীতার ১৮/৬৩ নং
শ্লোকে এটাও বলেছে "এখন বিচার
বিবেচনার মালিক তুমি"। কিন্তু আপনার কথা
অনুসারে আংশিক প্রকাশ হচ্ছে না!
আপত্তি নং ৩:-
//iii.স্বয়ং প্রকাশ পুরুষোত্তম ভগবান-
যা গুহ্যতমজ্ঞান।
(গীতা ১৫/১৯ + ১৮/৬৪,৬৫,৬৬).
তারপর স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ,অর্জুনকে
বলছে, আমি তোমাকে এবার গুহ্যতম জ্ঞান
বলব কারন তুমি আমার প্রিয় ভক্ত!
"হে অর্জুন- আমি তোমাকে অত্যন্ত ভালবাসি,
সে কারণে তোমার কল্যাণের জন্য
সর্বাপেক্ষা গোপনীয় গুহ্যতম কথা বলি
শোন।" ৬৪.
তো সেই সবচেয়ে সেই গোপনীয় গুহ্যতম
জ্ঞানটি কি? সেটি হলোঃ-
"হে অর্জুন- তুমি আমাতে(স্বয়ং পুরুষোত্তম
ভগবান শ্রীকৃষ্ণে) মন অর্পণ কর, আমাকে
ভক্তি কর, আমাকে পূজা কর, আমাকে প্রণাম
কর, তুমি আমার পরম প্রিয় সেইজন্য সত্য
অঙ্গীকার করিতেছি যে, তুমি আমাকে
নিশ্চয় পাইবে।
হে অর্জুন- তুমি সর্বধর্ম ত্যাগ করিয়া
একমাত্র আমাকেই (শ্রী কৃষ্ণ) শরণ কর, আমি
তোমাকে সর্বপাপ হইতে মুক্ত করিব।" ৬৫,৬৬//
আপত্তি নং ৩ এর জবাবঃ-
সম্ভবত আপনি এই মন্তব্যটিই সবচেয়ে বোকার
মত করেছেন, এখন যদি ধরিয়ে দেই তাহলে
নিজে নিজেই হয়তো বলবেন- "আমি কি করে
এত বোকার মত কাজ করলাম (যদিও তা মুখে
বলবেন না, বরংচ উল্টাটাই বলবেন তথা তর্ক
করবেন!)?" কারণ কিছু ক্ষণ পূর্বে আপনি
পরমাত্মা ও ঈশ্বর বলতে আংশিক প্রকাশকে
বুঝিয়েছেন। অথচ গীতা বলছে পরমাত্মাই
উত্তম পুরুষ এবং তিনিই ঈশ্বর, গীতা থেকেই
দেখুন-
"...উত্তম পুরুষকে বলা হয় পরমাত্মা, যিনি
ঈশ্বর ও অব্যয় ত্রিজগতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে
পালন করছেন।" (ইসকন ভাষ্য ১৫/১৭)
অতপর বিশ্বরূপ দেখানোর পরও নানা রকম
উপদেশ দেওয়ার পরও সবচেয়ে গোপনীয় পরম
উপদেশ কিবা থেকে গেল তা একটু দেখা
আবশ্যক, আর তা হল-
.
"সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে (যে সমস্ত
ধর্মের কথা যথা সংসাররূপ ধর্ম, খাওয়া
দাওয়ারূপ ধর্ম, কর্ম করারূপ ধর্ম, মন ও ইন্দ্রিয়
সংযমরূপ ধর্ম ইতি পূর্বে অর্জুনকে যত জ্ঞান
ধান করেছেন তার সবই ত্যাগ করে) কেবল
আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত
পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো
না।"( ইসকন ভাষ্য ১৮/৬৬)
প্রশ্ন হল আপনি তো কৃষ্ণ দাস (কৈষ্ণব), তা
আপনি কি খাওয়া দাওয়ারূপ ধর্ম, পায়খানা
প্রস্রাব ত্যাগ করা রূপ ধর্ম, সকল প্রকার কর্ম
রূপ ধর্ম ত্যাগ করে শুধু ওনাকে শরণ করছেন,
নাকি মুখেই শুধু বলে যাচ্ছেন? কোন বৈষ্ণব ও
কৈষ্ণবকেই তো আজ অবদি এমন হতে দেখলাম
না। এমন কি ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা প্রভুপাদ
থেকে শুরু করে ওনার সকল শিষ্যদেরকেও না।
বৈষ্ণব রামাণুজকেও না। তাহলে কিভাবে
গীতার ঐ শ্লোকটা মানব জীবনে প্রতিফলিত
হবে। আপনারা যাকে গুরু মানছেন তারাই তো
তা পালন করতে পারছে না। আপনারা কি
করে পারেন, নাকি শুধু চাপা পিটে যাচ্ছেন?
তাছাড়া নাম শরণ করাও তো কর্মই। তাহলে
কর্মত্যাগ হল কি করে? পূর্বে বলা হয়েছে যে
ক্রম ব্যতীত মানুষ ক্ষণকালও থাকতে পারে
না, তাহলে এখন আমরা কর্ম ব্যতীত আমরা
থাকবো কি করে? যদি এই শ্লোকে বলা
হয়েছে যে সকল কর্ম ত্যাগ করার জন্য, অথচ
এর পরেরই দেখা যায় অর্জুন যুদ্ধরূপী কর্মে
লিপ্ত হয়েছে। তহলে এই শ্লোকের সার্থকতা
কোথায় গেল? আর তুমি রেফারেন্স দিয়ে
দেখাতে চাইলে যে এটাই হল সবচেয়ে গুহ্যতম
জ্ঞান! অবাক করা ব্যাপার হল, সেই জ্ঞানই
অর্জুনের মত ভক্ত ধারণ করতে পারল না। তার
মানে হল এটা ধারণ করার অযোগ্য সকলে!
তাহলে এটা গুহ্যতম জ্ঞান হল কি করে? যা
ধারণই করা যায় না তাতো ধর্মই হতে পারে
না। কারণ ধর্ম হল তা যা ধারণ করা যায়।
ধারণের অনুপোযগী জিনিস কখনোই ধর্ম নয়।
যে কোন ধর্মীয় সংগঠনের অনুষ্ঠানে গেলেই
দেখি এই শ্লোকটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করে,
অথচ সেখানেও দেখি কর্ম করে। তাহলে
কর্মহীন ভাবে থাকে কখন? এতো দেখি
সম্পূর্ণ বৈপরীত্য, এরাই তো ধ্বংশের
প্রান্তে পৌঁচাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।
যারা মুখে এক তো অন্তরে আরেক, আবার
কর্মে আরেক!
তাছাড়া আপনি যে স্বয়ং প্রকাশ পু
রুষোত্তম ভগবান বলেছেন, সম্ভবত আপনি
এটাই জানেন না যে ভগবানে মাত্র ছয়টি গুণ
থাকে এবং পুরুষোত্তম শব্দটার পুরুষ মানে যে
পরমাত্মা/ ঈশ্বর তা গীতার ১৫/১৭ নং
শ্লোকেই বলা হয়েছে। তাছাড়া পুরুষের যে
কোন ইন্দ্রীয় নেই অর্থাৎ হাত পা নেই, কিন্তু
ইন্দ্রীয়ের যত গুণ আছে সেগুলো সবই আছে
(গীতা১৩/১৫) এবং সেই পুরুষকেই যে
পরমাত্মা বলে এবং তিনিই আমাদের পালক,
সংহারকর্তা ও সৃষ্টিকর্তা (গীতা
১৩/১৬,১৭) তা আপনার মান্য ইসকন গীতা ভাষ্য
থেকে দেখে নিবেন আশাকরি। এটুকুই বলি শুধু
ব্রহ্ম, বিষ্ণু, শিব, পুরুষ, ভগবান, ঈশ্বর,
পরমাত্মা ইত্যাদি নামগুলো নিয়ে অযথা তর্ক
করে জল ঘোলাটে করবেন না। এগুলো আলাদা
কোন সত্ত্বা নয়, এক প্রভুরই অনন্ত নাম।
(বিঃদ্রঃ গীতা ১৮/৬৬ নং শ্লোকের প্রকৃত
ব্যাখ্যা পূর্বের গীতা বিশ্লেষণ পর্ব নং-৭
থেকে দেখে নিবেন।)
গীতার এই আপত্তিগুলো ছাড়াও আরো কিছু
আপত্তি বিভিন্ন সময়ে তুলেছেন আপনি, তাই
সেগুলোরও খন্ডন করা হল-
আপত্তি নং ১:-
//সংস্কৃত ভাষায় দুই প্রকার নঞ্ ব্যবহৃত হয়,
একটি ক্রিয়ার সাথে ও অন্যটি বিশেষ্য বা
বিশেষণের সাথে ৷ যনি নঞ্ বিশেষ্য বা
বিশেষণের সাথে ব্যবহৃত হয় তবে সেই বস্তুর
অত্যন্ত অভাব বোঝায় না ৷ যেমন- “ছেলেটির
মাথা নাই” একথাতে মাথার প্রকৃত অভাব
বুঝাইবে না ৷ ঐ বয়সে আর দশটি ছেলের মতো
পঠিত বিষয় গ্রহণে যোগ্যতার অভাব বুঝিতে
হইবে ৷ তেমনিভাবে ‘অরুপং’ ‘অকায়ম’
‘অপাণিপাদ’ পদসমূহে নঞর্থক ‘অ’-কার
বিশেষ্যর সহিত থাকার রুপ-দেহের প্রকৃত
অভাব বুঝাইবে না ৷ ভগবানের রুপ আমাদের
দশজনের মতো নয়—ইহাই বুঝিতে হইবে ৷
তাঁহার রুপ শাশ্বত নিত্য ৷ তাঁহার রুপ এমন, যার
এক কণ ডুবায় ত্রিভুবন ৷ তেমনিভাবেই বুঝিতে
হইবে যে তাঁহার শরীরও আমাদের দশ-
পাঁচজনের মতো জড়া-প্রকৃতির বিকার হইতে
জাত নয় ৷ তাঁহার দেহ অপ্রাকৃত সচ্চিদানন্দ-
ঘনীভূত ৷ তিনি সচ্চিদানন্দবিগ্রহ ৷
এই কারণেই মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গদেব
বলিয়াছেন—
“অপাণিপাদ শ্রুতি বর্জে প্রাকৃত পাণিচরণ
৷” (চৈঃ চরিতামৃত, ২৷৬৷১৫০)
ইহা বুঝিতে না পারিয়া ভ্রান্তমতি
নিরাকারবাদীরা নিরাকারবাদ সমর্থনে
কিছু শ্রুতির বচনের অযৌক্তিক অর্থ করিয়া
প্রচার করিয়া বেড়ায় ৷ সেইসব শ্রুতির প্রকৃত
অর্থ এখন থেকে পোস্ট করা হবে ৷
তিনি আরো বলিয়াছেন—
“সর্ব্বৈশ্বর্য্যপরিপূর্ণ স্বয়ং ভগবান্ ৷
তাঁরে নিরাকার করি’ করহ ব্যাখ্যান ৷
‘নির্ব্বিশেষ’ তাঁরে কহে যেই শ্রুতিগণ ৷
‘প্রাকৃত’ নিষেধি, করে অপ্রাকৃত স্থাপন ৷৷”
“তাঁহার বিভূতি দেহ সব চিদাকার ৷
চিদ্বিভূতি আচ্ছাদিয়া কহে নিরাকার ৷৷”
ইহা যারা জানেন না বা মানেন না তারা
নিরাকার ভেবে ভুল করেন৷ ঈশ্বরের সত্তা,
স্বরুপ ও দেহ সবই চিন্ময়, অপ্রাকৃত, দিব্য ৷//
খন্ডন ১:-
সম্ভবত আপনি চৈতন্য চরিতামৃত কখনো
চোখেও দেখেন নাই! হতে পারে কারো বই
পড়ে কপি পেস্ট তথা বমি করে দিয়েছেন
মাত্র!! কারণ, চৈঃ চরিতামৃতে ২/৬/১৫০ নং
শ্লোকে আপনার দেওয়া শ্লোকটা নেই,
এখানে বলা আছে-
"শ্রীবিগ্রহ যে না মানে সেইত পাষণ্ডী।
অদৃশ্য অস্পৃশ্য সেই হয় যমদন্ডী।।"
(গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর, ভারত থেকে
প্রকাশীত).
আপনার দেওয়া অপাকৃত রেফারেন্স ভুল,
প্রকৃত রেফারেন্স হল ২/৬/১৩৯. আশাকরি
মিলিয়ে দেখবেন।
তাছাড়া আপনি কোন সংস্কৃতের (লৌকক
নাকি বৈদিক) কোন ব্যাকরণ গ্রন্থ থেকে এই
ব্যাকরণ নিয়ে এলেন দাদা? নাম তো বলুন! ওই
মন্ত্রে তো এটাও বলা হয়েছে যে অব্রণম্ ,
এটাকেও ব্রণম্ বিশেষণ এর নঞ, যার অর্থ
ঈশ্বরের কোনো ক্ষত নাই, তাহলে কি আপনি
বৈয়াকরণিকের মতে ধরতে হবে ঈশ্বরের
প্রাকৃত ক্ষত নাই কিন্তু অপ্রাকৃত ক্ষত
আছে??? আরো বলা হয় ঈশ্বর অব্যয় অর্থাৎ
যার বিনাশ নাই, মানে ব্যয় বিশেষণ এর
সাথে নঞ, তবে কি এটাও ধরতে হবে ঈশ্বরের
প্রাকৃত বিনাশ নাই কিন্তু অপ্রাকৃত বিনাশ
আছে??? তাহলে তিনি সচ্চিদানন্দ হলেন কি
করে? তিনি অক্ষর, মানে ক্ষয় বা বিনাশহীন
হবেন কেমন করে? কারণ,আপনার মতো দিব্য
দৃষ্টিতে তো ওনার অপ্রাকৃত ক্ষয় আছে!!!
বেদান্ত সূত্রে বলা আছে-
" অক্ষরমম্বরান্তধৃতেঃ ।। বেঃ সূঃ ১/৩/১০.
অর্থাৎ অক্ষর তথা যিনি ক্ষয় রহিত, তিনি
আকাশ থেকে শুরু করে সমস্ত পদার্থকেই
তিনি ধারণ করিয়া আছেন।"
আচ্ছা, আপনার কথানুসারে যেহেতু ওনার
অপ্রাকৃত ক্ষয় আছে তহলে তো তিনি যা ধারণ
করে আছে সেগুলোও অপ্রাকৃত ভাবে ক্ষয়ে
যাওয়ার কথা!!!
নাকি চৈতন্য চরিতামৃতকে ব্যায়করণ মেনে
(তাও আবার ভুল রেফারেন্স) নিয়েই সারিয়ে
দিলেন? আচ্ছা যেহেতু চৈতন্য চরিতামৃত
থেকেই রেফারেন্স দিয়ে সারিয়েছেন, এখন
তো দেখা দরকার সেই গ্রন্থটাই বা কতটুকু
ঠিক! চৈঃ চরিতামৃতে বলা আছে-
"মৌষল-লীলা আর কৃষ্ণ অন্তর্ধান।
কেশাবতার আর যত বিরুদ্ধ ব্যাখ্যান ।।"
(চৈঃ চরিতামৃত ২/২৩/৫৫)
অবিশ্বাষ্য হলেও এটাই সত্য হল যে আপনার
প্রিয় চৈতন্য চরিতামৃত তথা বৈষ্ণবরা
মহাভারতকেই মানে না । মহাভারত ও
বিষ্ণুপুরাণে আছে কৃষ্ণ হল বিষ্ণু
র কেশ অবতার । আর চৈতন্য চরিতামৃত
ওগুলোকে বিরূদ্ধ ব্যাখ্যা বলে চালিয়ে
দিয়েছে!
মহাভারতের সাথে মিলে, কিন্তু
চৈঃচরিতামৃতের অমৃত নামক বিষ্ঠার সাথে
মিলে না!
আপত্তি নং ২:-
//সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসাং সর্বেন্দ্রিয়বি
বর্জিতম্।
সর্বস্য প্রভুমীশানং সর্বস্য শরণং বৃহৎ।।
—শ্বেতাশ্বতর ৩/১৭)
“তাহাতে সকল অপ্রাকৃত
ইন্দ্রিয়ের কার্য, অথচ তিনি সমুদয় প্রাকৃত
ইন্দ্রিয়ব্যাপার শূণ্য। তিনি সকলেরই
শক্তিশালী নিয়ন্তা, সকলের আশ্রয় এবং পরম
কারণ।”//
খন্ডন ২:-
সংস্কৃত শ্লোকটার কোন ২টা শব্দের অর্থকে
তুমি একবার অপ্রাকৃত ও আরেকবার প্রাকৃত
বললে? ওখানে তো স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে-
"উনি সকল ধরণের ইন্দ্রীয় বর্জিত কিন্তু সকল
ইন্দ্রীয়ের গুনের প্রকাশক।"
মিথ্যাচার করতে লজ্জা করে না? নাকি
তথাকথিত পুরাণগুলোর ঐ লীলাগুলো পড়তে
পড়তে সেটাও চলে গেছে? তাই রাস্তায়
হেঁটে হেঁটে প্রচার করে বেড়াচ্ছ-
"আমার শরীরে প্রাকৃত জামা কাপড় নেই,
কিন্তু অপ্রাকৃত জামা কাপড় আছে। আর সেই
অপ্রাকৃত জামা কাপড় দিয়ে সব ডেকে
রেখেছি, যার ফলে লজ্জা লাগে না, কিছুই
দেখা যাচ্ছে না!!!"
আপত্তি নং ৩:-
//অপানিপাদো জবনো গ্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ
স
শৃনতোকর্ণঃ৷
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্।।
—শ্বেতাশ্বতর ৩/১৯)
“তাঁহার প্রাকৃত হস্তপদ নাই, কিন্তু তাঁহার যে
অপ্রাকৃত হস্ত-পদ আছে তাহা দ্বারা তিনি
দ্রুত গমন করেন এবং গ্রহণ করেন, প্রাকৃত চক্ষু
না থাকিলেও অপ্রাকৃত চক্ষু দ্বারা দর্শন
করেন, তেমনি প্রাকৃত কর্ণ না থাকিলেও যে
অপ্রাকৃত কর্ণ আছে তাহা দ্বারা শ্রবণ
করেন। তিনি জ্ঞাতব্য সর্ববস্তু জানেন, অথচ
তাঁহাকে কেহ জানে না।
ব্রহ্মবিদ্গণ তাঁহাকে সর্বাগ্রণী, পরিপূর্ণ
এবং মহান্ বলিয়া থাকেন।”//
খন্ডন ৩:-
হৈ বৈষ্ণব! তাহার 'অপ্রাকৃত হস্ত পদ চক্ষু কর্ণ
আছে' এটা শ্লোকের কোন লাইনটা? এটা তুমি
কিভাবে জানলে? একেবারে ব্রহ্মজ্ঞ হয়ে
গেলে দেখি! তা ঐ অপ্রাকৃত দেহকে ডাকার
জন্য কি অপ্রাকৃত জামা কাপড়ও আছে
নাকি? তা সেগুলো সেলাই করে কে? অথচ ঐ
শ্লোকে তো স্পষ্ট বলা হয়েছে " তিনি সব
কিছু জানেন, অথচ তাকে কেহ জানে না।"
তাহলে তুমি কি করে জানলে (শ্লোকে তো
নেই) যে ওনার অপ্রাকৃত হস্ত,পদ,চক্ষু ও কর্ণ
আছে? তোমার অপ্রাকৃত জামা কাপড়ের মত
অপ্রাকৃত বুদ্ধিও আছে নাকি? আর সেই
অপ্রাকৃত বুদ্ধির বলেই বুঝি ওনার সব কিছুতে
প্রাকৃত দেহ, রূপ, জামাকাপড় নেই বলে আবার
এটাও বলছ যে, ওনার অপ্রাকৃত দেহ, রূপ,
জামাকাপড় আছে? তা এই অপ্রাকৃত
জিনিসটা কেমন? গল্পীর ঘরে গল্পী এসে
গল্প করলে গল্পের তো আর সীমা থাকে না
বৈষ্ণব! এও তেমনি দেখছি!
আপত্তি নং ৪:-
//যা তে রুদ্র শিবা তনূরঘোরাহ’পাপকাশিনী ৷
তয়া নস্তনুবা শন্তময়া গিরিশন্তাভিচাকশ
ীহি৷৷
—শ্বেতাশ্বতর ৩/৫)
“হে রুদ্র! তোমার যে মঙ্গলপ্রদ, ভয়বিনাশক,
অলৌকিক শরীর আছে,সেই শরীর স্মরণমাত্র
সমস্ত পাপ বিনাশ হয়৷ তুমি পর্ব্বতস্থায়ী হইয়া
অখিল জগতের কল্যাণ করিতেছ৷ এই ক্ষণ এই
প্রার্থনা করিতেছি, তুমি সেই মঙ্গলপ্রদ
শরীর দ্বারা
আমাদিকে অবলোকন কর, তোমার শুভ
অবলোকনে আমরা সর্ব্বত্রই কল্যাণ প্রাপ্ত
হইব৷”
যামিষুং গিরিশন্ত হস্তে বিভর্ষ্যস্তমে৷
শিবাং গিরিত্র তাং কুরু মা হিংসীঃ পুরুষং
জগৎ৷৷
—শ্বেতাশ্বতর ৩/৬) “হে গিরিশন্ত! তুমি জগতে
নিক্ষেপণার্থ হস্তেতে ধনুঃ ধারণ করিতেছ,
সেই ধনুঃদ্বারা আমাদিগকে হিংসা করিও
না, মঙ্গলপ্রদ গিরিশত্ব প্রদান কর,
আমাদিগকে হিংসা করিও না এবং তোমার
সাকার ব্রহ্মরুপ প্রদর্শন দ্বারা জগতের
প্রার্থনা পরিপূরণ করো৷
খন্ডন৪:-
ভুতের মুখে "রাম নাম" দেখি! আপনার মত
কৈষ্ণবরা আবার কবে থেকে এত শিব ভক্ত
হল? নেরা বেল তলায় গেল কেন আবার? বেল
পড়ে তো মাথা ফাটবে! তা স্নান করেছেন
তো? আপনারা তো আবার শিব নাম মুখে
নিলে স্নান করতে হয়! এখন কি করে শিব নাম
মুখে নিলেন? যাই হোক কৈষ্ণব বাছা শ্লোক
দুটিতে "তনু" এবং "হস্ত" শব্দ দুটি দ্বারা ঈশ্বর
কে সাকার বানিয়ে ফেলেছে। আচার্য্য
শঙ্কর যজুর্বেদ যজুর্বেদ ৪০।৮ মন্ত্রের
ব্যাখ্যায় বলেছেন তিনি স্থুল সুক্ষ ও কারণ
শরীর রহিত। অর্থাৎ ঈশ্বরের কোন প্রকার
শরীর কল্পনা করা মানে বেদের বিরোধীতা
করা। তদ্রুপ এখানে তনু শব্দ দ্বারা ঈশ্বরের
শরীর কে বোঝাচ্ছে না। লৌকিক পন্ডিতরা
তনু মানে শুধু শরীরই বোঝে, কিন্তু তন্ (বিস্তৃত
করা) + উ = তনু। যেমন টি বেদের অন্য স্থলেও
এসেছে - "তন্তুং তন্বন (ঋঃ ১০।৫৩।৬) অর্থাৎ
জ্ঞানের তন্তুকে বিস্তৃত করো। অতএব এই
শ্লোকে ঈশ্বরের সেই কল্যাণকারী বিস্তৃত
অর্থাৎ সর্বব্যাপী স্বরূপের কথা বলা হচ্ছে।
আর হস্ত শব্দ দ্বারাও ঈশ্বরের মানুষের মতো
কোন হাত বুঝাচ্ছে না। শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ
এর ৩।১৬ শ্লোকে বলা হয়েছে সর্বত্র তাহার
হস্ত পদ। এর মানে তিনি সব জায়গায় হাত পা
দিয়ে দিয়ে রাখেনি বরং তার কার্য এবং
ব্যপকতা যে সব জায়গায় তাই বুঝিয়েছে।
এখানে " হস্ত" কার্য বা অনন্ত বল এর
প্রতীকী অর্থে।
"হে বেদবাণী [সত্যবাণী] দ্বারা সুখ
প্রেরণকারী! হে রুদ্র! [দুষ্টকে ন্যায় দন্ড
দিয়ে রোদনকারী ] যে আপনার ঘোর উপদ্রব
রহিত শান্ত সত্য ধর্ম প্রকাশিত কল্যাণকারী
বিস্তৃত স্বরূপ সেই শান্তময় বিস্তৃত স্বরূপ
দ্বারা আমাদের দেখো অর্থাৎ কৃপাদৃষ্টি
করো।"
(শ্বেতাশ্বতর ৩।৫)
হে বেদবাণী দ্বার্ আমাদের সুক দানকারী
ঈশ্বর! যেই বাণ কে নিক্ষেপের জন্য আপন
হনন সমর্থ হস্ত [অনন্ত বল দ্বারা ] ধারণ
করেছো সেই বাণ কে মঙ্গলময় করো [ অর্থাৎ
আমাদের রক্ষা করো ] । হে
বেদোপদেশকারী ঈশ্বর! পুরুষার্থযুক্ক মনুষ্য
বা সংসার কে হিংসা করো না অর্থাৎ কৃপা
করে সবাই কে রক্ষা করো।
(শ্বেতাশ্বতর ৩।৬)
আপত্তি নং৫ঃ-
//ঈশোপনিষদের দুটি মন্ত্র লক্ষ্য করা করি—
১৫. হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং
মুখম্৷
তত্ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে৷৷
—“হিরণ্ময় পাত্র দ্বারা সত্যের (সূর্যমন্ডলের
অভ্যন্তরীণ পুরুষের) মুখ আচ্ছাদিত ৷ হে পুষন্—
জগতের পোষণকর্তা, তুমি সেই আচ্ছাদনটি
অপসরণ কর ৷ যাহাতে আমি সত্যধর্ম-স্বরুপ
পরমপুরুষকে দর্শন করতে পারি ৷”
১৬. পুষন্নেকর্ষে যম সূর্য প্রাজাপত্য বূহ্য
রশ্মীন্ সমূহ তোজো
যত্তে রূপং কল্যাণতম তত্তে পশ্যামি ৷
যোহ’সাবসৌ পুরুষঃ সোহ’হমস্মি ৷৷
—“হে পূষন্, হে একাকী বিচরণকারী, হে
নিয়ন্তা,
হে প্রজাপতিতনয়, হে সূর্য, আপনি কিরণসমূহ
সংবরণ
করুন, তেজ উপসংহার করুন; আপনার (অভ্যন্তরে
দৃষ্ট পুরুষের) যাহা অতি সুশোভন রূপ, তাহা
আপনার
কৃপায় দর্শন করিব ৷ ঐ, ঐ যে পুরুষ, আমিও সেই
৷”
শুক্ল যজুর্বেদের ৪০তম অধ্যায়টিই ঈশোপনিষদ
৷
অর্থাৎ বেদ সংহিতায় ঈশ্বরের রুপ দর্শনের
স্পষ্টোক্তি পাওয়া গেল৷//
খন্ডন ৫ঃ-
যজুর্বেদ এর ৪০তম অধ্যাকে ঈশোপনিষদ বলে
এবং ঈশোপনিষদকে বেদ সংহিতা বলে,
আবার সেই ঈশোপনিষদে(আপনার কথা
অনুসারে বেদ সংহিতায়) আপনি ঈশ্বরের
রূপের কথা বলে মূর্খতার পরিচয় দিয়েছেন।
কারণ, এগুলো যজুর্বেদ এর মন্ত্র নয় বরং
উপনিষদে ঋষি উবাচ। কারণ, ঈশোপনিষদে
কয়েকটা শ্লোক বেশি আছে যজুর্বেদ এর
৪০নং অধ্যায় থেকে এবং বেদের কয়েকটা
মন্ত্র ঐ উপনিষদে নেই। তাই ঈশোপনিষদকে
হুবোহু যজুর্বেদ এর ৪০নং অধ্যায় বলা মূর্খতা
ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আপনি যে ভাষ্য
দিয়েছেন তাও কিছুটা বিকৃত। নিচে,
পদার্থসহ দেওয়া হল-
=>> (সত্যস্য, মুখম্) সত্যের মুখ (হিরণ্ময়েন
পাত্রেন) সুবর্ণের পাত্র দ্বারা (অপিহিতম)
ঢাকা রয়েছে (পুষণ) হে পুষণ! (সত্যধর্মায়,
দৃষ্টয়ে) সেই সত্য ধর্ম দেখানোর জন্য (ত্বম)
তুমি (তত্) সেই আবরন (অপাবৃণু) সরিয়ে দিন।।
১৫।।
=>> (পুষন) হে সর্বপোষক (একর্ষে) অদ্বিতীয়
(যম) ন্যায়কারী (সূর্য) প্রকাশস্বরূপ
(প্রাজপত্য) প্রজাপতি (রশ্মিন) তাপ [দুঃখপ্রদ
কীরণ কে] (ব্যহু) দূর করুন (তেজঃ) সুখপ্রদ তেজ
কে (সমুহ) প্রাপ্ত করাও (যে) যে (তে)
আপনার (কল্যাণতমম্ রূপম্) মঙ্গলময়ী রূপ
[সচ্চিদানন্দময় স্বরূপ ] (তত্) তাহা আমি
(পশ্যামি) দেখি [অনুভব করি] এই জন্য (যেঃ)
যে (অসৌ পুরুষঃ) এই পুরুষ (সঃ) তিনি (অহম
অস্মি) আমি হই।। ১৬।।
প্রথমত ১৫ নাম্বার শ্লোকে সর্বপোষক
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে সত্যের
মুখের আবরন সরিয়ে দেবার জন্য যাতে
(সত্যধর্ম দৃষ্টয়ে) সত্য ধর্ম দর্শন করতে পারি।
আর যদি বলাও হয় যে পুরষকে দর্শন করি
তথ্যাপি ঈশ্বর সাকার হন না। কারন দর্শন শব্দ
দ্বারা শুধু দেখা অর্থ হয় না। যেমনটি
ঋষিদের মন্ত্রদ্রষ্টা বলা হয়। এর মানে
ঋষিরা মন্ত্র তাদের চক্ষু দিয়ে দেখছেন না।
বরং তারা মন্ত্র নিজ হৃদয়ে অনুভব করছে।
এর পর ১৬ নাম্বার মন্ত্রে ঈশ্বরের
"কল্যাণতমম্ রূপ" এর কথা বলা হয়েছে। এই রূপ
কোন মানুষের মত গাঠনিক রূপ নয়। এখানে
কল্যাণতম রূপ বলতে ঈশ্বরের স্বভাবগত গুণ
প্রকাশ পেয়েছে। যেমনটি মানুষকে বহুরূপী
বলা হয় তার স্বভাব অনুসারে। উদাহরনস্বরূপ
মূর্খকে গাধা, গরু আদি সম্বোধন করা হয়।
তদ্রূপ এখানে ঈশ্বরের সেই কল্যাণস্বরূপের
কথা বলা হয়েছে যেই স্বরূপে অবস্থান করে
তিনি সবাইকে কল্যাণ প্রদান করেন।
আপত্তি নং৬ঃ-
//এই রুপের বর্ণনা দিয়েছে ছান্দোগ্য
উপনিষদ—
“সূর্যের অভ্যন্তরে যে পুরুষ দৃষ্ট হন তিনি
হিরণ্যবর্ণ, তাহাঁর হিরণ্যশ্মশ্রু, হিরণ্যকেশ—
নখাগ্র হতে সকল অঙ্গই সুবর্ণময়৷ তাঁহার চক্ষু
দুইটি রক্তাভ পদ্মের ন্যায় আরক্তিম৷ তাঁহার
নাম ‘উৎ’ কারণ তিনি সকলের উর্দ্ধে, তিনি
সকল পাপ অতিক্রম করিয়া সর্বোপরি
বিরাজমান৷ যিনি তাঁহাকে এইরুপে জানেন,
তিনিও সকল পাপ হইতে উত্তীর্ণ
হন৷” [ছান্দোগ্য শ্রুতি, ১/৬/৬-৭]
সূর্যমন্ডলের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই পুরুষকে
আদিত্যপুরুষ বলা হয়।//
খন্ডন ৬ঃ -
উল্ল্যেখিত শ্লোক দেখিয়ে অনেকে দাবি
করে ঈশ্বরের মনুষ্যকৃতির বা দেহধারী রূপ
আছে। কিন্তু কখনোই তারা সম্পূর্ণ শ্লোক
দেয় না। কারণ কি জানেন? তাহলে তাদের
ছল চতুরি ধরা পড়ে যাবে। প্রকৃত পক্ষে ঐ
বর্ণনাটা জড় বস্তু তথা সূর্যের ভিতরে ঈশ্বরে
অবস্থান বোঝাতে ঋষির কাব্যিক বর্নণা।
ছান্দোগ্য উপনিষদ শ্লোক ১/৬/৬ হতে ১/৬/৮
নং এ তিনি এই বর্ণনা দিয়েছেন।
.
ঋষি শেষ শ্লোক ৮ এ "ইতি অধিদৈবতম" নামে
একটি শব্দ ব্যাখ্যা করেছেন৷ কপিল মুনি
সাংখ্য শাস্ত্র সূত্র ১/১ নং এর মতে তিন
ধরনের দুঃখ আছে তারা হল আধ্যাত্মিক,
আধিভৌতিক ও
আধিদৈবিক।
ধর্মময় পথ অনুসরন করে যেমন অষ্টাঙ্গ যোগ
দর্শন ইত্যাদি এবং সন্ন্যাস অর্জন করে
আত্মা মুক্তি অর্জন করতে পারে৷ তাই আমরা
অনুধাবন করব যে আধিদৈবিক হল দুঃখের এক
বর্ণনা
যে দুঃখ মাটি, জল, আগুন, বাতাস ইত্যাদি
হতে প্রাপ্ত হয়৷ ছান্দোগ্য উপনিষদের ঋষি
উক্ত শ্লোকে অধিদৈবতম শব্দটি দ্বারা
জীবিত নয় এমন বস্তুসমূহকে (যেমনঃ সূর্য
ইত্যাদি) ব্যাখ্যা করেছেন কিন্তু জীবিত
সত্তাকে (যেমন নিরাকার
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে) ব্যাখ্যা করেননি৷
এখানে ঋষি একজন কবি, তিনি অন্যত্র
সূর্যকে সোনালী পুরুষের ন্যায় তুলনা
করেছেন।
যর্জুবেদ৭ /৪২
ঈশ্বর সম্পর্কে বলে-
"সূর্য আত্মা জগস্তাস্থুত.... ..." অর্থাৎ
নিরাকার
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিনি দিব্য আলো, তিনি
জীবনহীন সূর্যের আত্মা৷ অর্থাৎ নিরাকার
ঈশ্বর সূর্যকে আলোক রশ্মি দান করেন৷
আপত্তি নং৭ঃ-
//উপরিক্ত শ্রুতিকে লক্ষ্য করিয়া
আপত্তি হইতে পারে যে, আদিত্যপুরুষ মূলত
কোনো জীব বিশেষ, পরমেশ্বর নয়৷ কেননা,
শ্রুতি এই পুরুষের বিশেষ বিশেষ রুপ বর্ণনা
করিয়াছে ৷ যেহেতু, পরমেশ্বর ‘অপাণিপাদ’
‘অরুপং’,
তাই এই আদিত্য পুরুষ পরমেশ্বর হইতে পারেনা
৷
এই আপত্তি মহর্ষি ব্যাসদেব খন্ডন
করিয়াছেন এই
সূত্রে—“অন্তস্তদ্ধর্ম্মোপদেশাৎ
” [বেদান্তসূত্র
১/১/২০], সূত্রের অর্থ সূর্যের অভ্যন্তরে
অবস্থিত পুরুষ পরমেশ্বরই বটে, কেননা শ্রুতি ঐ
পুরুষের নিষ্পাপত্ব, দেবাদিগণের নিয়ন্তত্ব
প্রভৃতি
যেসকল গুণ বর্ণনা করিয়াছে তাহা কোন
জীববিশেষের হইতে পারেনা ৷
এই মীমাংসা দ্বারা পরমেশ্বরের সাকার
রুপ স্বীকৃত হইল৷//
খন্ডন ৭ঃ-
এছাড়াও তিনি আরো বলেছেন যে-
ব্রহ্মসূত্রের ১।১।২০ এ নাকি ঈশ্বরের সাকার
রূপ স্বীকৃত হয়েছে!!! চলুন প্রকৃত পক্ষেই
ব্রহ্মসূত্র কি বলেছে দেখে নেই-
"অন্তস্তদ্ধর্মোপদেশাৎ" বেঃ সূঃ ১/১/২০.
অর্থাৎ অন্তঃ(অভ্যন্তরে) তদ্ধর্মোপদেশাৎ
(যেহেতু তাহার গুণ সমূহের উপদেশ করা
হয়েছে)।
অর্থাৎ সূর্য এবং চক্ষুর অভ্যন্তরে যিনি
আছেন তিনি হলেন ব্রহ্ম। কারণ ব্রহ্মের
গুণগুলি উল্লেখ করা হয়েছে সূর্য ও চক্ষুর
মধ্যে, তাছাড়া এই সূত্রের অধিকরণই হল
আদিত্য এবং চক্ষুর অন্তস্থিত পুরুষই ব্রহ্ম।
গুণের বর্ণনা মানে তো সাকার নয় বরংচ তা
হল স্বগুন ব্রহ্ম। আর সাকার বলতে বুঝা যার
নির্দিষ্ট আকার আছে। আর ঈশ্বরের যদি
নির্দিষ্ট আকারই থাকে তাহলে আকারের
বাহিরে কে আছে??? তাছাড়া বেদান্ত সূত্র
স্পষ্টভাবেই ওনাকে নিরাকার বলেছে।
দেখুন-
"অরূপবদেব হি তৎপ্রধানত্বাৎ।।"
বেঃসূঃ ৩/২/১৪.
অরূপবৎ (রূপবিহীন) এব (একমাত্র) হি (নিশ্চিৎ
ভাবেই) তৎ প্রধানত্বাৎ (তাহাই সকল শ্রুতির
প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়)।
আপত্তি নং৮ঃ-
//এখন বলা বাহুল্য যে, উপনিষদসমূহের
কোথাও ঈশ্বরের রুপ দর্শনের স্পষ্ট
স্বীকারোক্তি ও অবয়ব বর্ণনা, আবার
কোথাও তাঁহার রুপ নাই ‘অরুপং’, শরীর নাই
‘অকায়ম’, হাত-পা নাই ‘অপাণিপাদ’ বলা
হয়েছে৷ এই দুই বিরোধী কথার সমাধান এই
যে–পরমেশ্বরের প্রাকৃত হাত-পা-শরীর, রুপ
নাই; তাঁহার অপ্রাকৃত রুপ, দেহ আছে।//
খন্ডন ৮ঃ-
এটাও সম্পূর্ণ ঠিক নয়, উপনিষদের যেখানে
অরূপের কথা বলা হয়েছে তা দিয়ে এটাই
বুঝানো হয়েছে যে ওনার গাঠনিক তথা
শারীরিক রূপ নেই। আর যেখানে রূপের কথা
বলা হয়েছে তা দিয়ে কর্ম, গুণ ও স্বভাবগত
রূপের কথাই বলা হয়েছে। যেমন কিনা
মানুষকেও বহুরূপী বলে তার গুণ, কর্ম ও স্বভাব
অনুসারে এবং এর ফলে একই মানুষের অনেক
নাম হয়। যেমন কিনা পশুর মত, মূর্খের মত
আচরণ করলে ছাগল, গাধা, গরু ইত্যাদি অনেক
নামে ডাকা হয়। আবার একই ব্যক্তি
শিক্ষকতা করলে শিক্ষক, ডাক্তারি করলে
ডাক্তার ইত্যাদি বলে। ঠিক একই ভাবে প্রভু
সকলের কল্যানকারী বলে ওনার নাম শিব
তথা শংকর। এই কারণেই পরমাত্মার অনন্ত
নাম হয়ে থাকে, একটা বেদ মন্ত্র হতেই তা
দেখাচ্ছি-
"ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহু, রথো দিব্যঃ স
সুপর্ণো গরুত্মান। একং সদ্বিপ্রা বহুধা
বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।"
ঋগবেদ ১/১৬৪/৪৬.
ভাবার্থ- এক সত্তা পরম ব্রহ্মকে জ্ঞানীরা
ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুৎমান,
যম, মাতারিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত
করেন।
"এতমেকে বদন্ত্যগ্নি মনুমন্যে প্রজাপতিম্।
ইন্দ্রমমেকে পরে প্রাণমপরে ব্রহ্ম শাশ্বতম্।।"
মনুসংহিতা ১২/১২৩.
ভাবার্থ- এই পরম পুরুষকেই কেউ কেউ অগ্নি
বলে জানেন, কেই একে মনু বলেন, কেউ
প্রজাপতি, কেউ ইন্দ্র, কেউ প্রাণ এবং কেউ
আবার সনাতন ব্রহ্ম বলে থাকেন।
____________গীতা বিশ্লেষণ সমাপ্ত____________
------------------ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি---------
-------
0 মন্তব্য(গুলি)