https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণঃ ৩৮-গীতাতে মুর্তিকে ঈশ্বর ভেবে পূজা করার কথা নেই বুঝলাম, কিন্তু না করা কথা তো বলা। আপনার কি মত?

Tuesday, July 18, 2017


প্রশ্ন: গীতাতে মুর্তিকে ঈশ্বর ভেবে পূজা
করার কথা নেই বুঝলাম, কিন্তু না করা কথা তো বলা হয়নি। আপনি কি বলেন?

উত্তর: না করার কথা বলা হয়নি এটা ঠিক! কিন্তু যারা
করে তাদেরকে কি বলে এবং তাদের কি অবস্থা
হবে তা আপনিই ভালো করে দেখুন-

"যে জ্ঞান একটি দেহে বা প্রতিমাতে বা কার্য়ে,
সম্পূর্ণ আত্মা বা ঈশ্বর এই পর্যন্তই বা ইহাই যাহা কিছু
সমস্ত এই
রূপ আসক্তির উদয় হয়, সেই অযৌক্তিক, অযথার্থ ও
তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে।"  গীতা১৮ ।
২২.

আর যে ব্যক্তি সর্বত্র ঈশ্বরকে উপলব্দি করে
তাদের কি বলে তা দেখুন-
"যে জ্ঞান দ্বারা পরস্পর বিভক্ত ভাবে প্রতিয়মান
সর্বভূতে এক অবিভক্ত পরমাত্মাকে অনুভব হয়,
সেই জ্ঞানকে
সাত্ত্বিক জ্ঞান বলে।" গীতা১৮।২০.

আর জড় উপাসনা নিয়ে পবিত্র বেদে বলা আছে তা
দেখুন-
"যারা ব্রহ্মের স্থানে অসম্ভুতি অর্থাৎ অনুৎপন্ন
অনাদি প্রকৃতি কারণের উপাসনা করে, তারা অন্ধকারে
অর্থাৎ অজ্ঞানতা ও দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয়। আর যারা
ব্রহ্মের স্থানে সম্ভুতি অর্থাৎ কারণ হতে উৎপন্ন
কার্যরূপ
পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির
শরীরের উপাসনা করে, তারা উক্ত অন্ধকার
থেকেও অধিকতর অন্ধকার অর্থাৎ মহামূর্খ চিরকাল
ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হয়ে মহাক্লেশ ভোগ
করে।"
যজুর্বেদ৪০।৯.

অথবা, "গভীরতম অন্ধকারে তারা পতিত হয় যারা শুধু
আদি প্রকৃতির উপাসনা করে৷ আরও গভীর ও
অন্ধকারে তারা পতিত হয় যারা শুধুমাত্র অস্তিত্বশীল
গঠনকে উপাসনা করে এবং তাহাতে মগ্ন থাকে৷"
যজুর্বেদ ৪০।৯.

আজ কাল যারা অপাকৃত চিন্ময় বিগ্রহ বলে যে সকল
মুর্তির উপাসনা করে তাদের কি বলে দেখলেন
তো? এখন আপনি বলতে পারেন শ্রীকৃষ্ণের
বিগ্রহকে তো অনেকে তাই বলে! তাই আপনার
উদ্দেশ্যে মৃত্যুর পর শ্রীকৃষ্ণের দেহের কি
হয়েছিল তা মহাভারত থেকেই দেখাচ্ছি। মহাভারতের
মৌসলপর্বের সপ্তম অধ্যায়ে তাঁর
অন্তেস্ত্যিক্রি য়ার কথা বর্ণনা করা আছে। অর্জুন
যখন খবর পেলেন যে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মারা
গেছেন তখন তিনি দ্রুত দ্বারকায় রওনা হলেন এবং
পৌঁছে দেখলেন তাঁদের পিতা বসুদেব
পুত্রশোকে কাতর এবং অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায়
আছেন। সবাই দুঃখে বিলাপ করছেন, পরদিন বসুদেব
মারা গেলেন, তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে
অর্জুন গেলেন যাদবদের যুদ্ধক্ষেত্রে,
সেখান থেকে খুঁজে বের করলেন বলরাম এর
মৃতদেহ, বন থেকে বের করলেন কৃষ্ণ এর
মৃতদেহ। এরপর সম্পন্ন করলেন তাঁদের দাহকার্য।
সরাসরি মহাভারত থেকে উদ্ধৃত করলাম-


ততঃ শরীরে রামস্য বাসুদেবস্য চোভয়োঃ।
অনিষ্য দাহয়ামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ।।
(মহাঃ।  মৌষল পর্ব। অঃ ৭  শ্লোক ৩১)

তদনন্তর বিশ্বস্থ পুরুষ দ্বারা বললাম তথা বসুদেবনন্দন শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের শরীর খোজ করে অর্জুন তাদের দাহ সংস্কার করলেন।


অপাকৃত চিন্ময় দেহের এই বুঝি অবস্থা? অর্থাৎ যারা
অপাকৃত চিন্ময় বিগ্রহ বলে কৃষ্ণের দেহের পূজা
করে তাদের জ্ঞান তামসিক জ্ঞান সম্পন্ন। কিন্তু যিনি
চিন্তা করেন সর্বত্রই ঈশ্বর বিদ্যমান তিনিই প্রকৃত
জ্ঞানী তথা সাত্ত্বিক জ্ঞানী। অর্থাৎ কোন একটা
নিদির্ষ্ট বস্তুতে ঈশ্বর চিন্তা নয়, সর্বত্র চিন্তা করাই
প্রকৃত জ্ঞান।