বেদ প্রচারের ধারায় আজকে বেদের মহত্ত্বের গুণগানে চারিদিক মুখরিত। অশ্লিলতা, কাল্পনিকতা হার মেনেছে বেদের নির্মল বিশুদ্ধ জ্ঞান প্রবাহে। কলুষতা দূরীকরনে ছড়িয়ে পড়েছে বেদের তেজময় দীপ শিখা। কিন্তু জগতে যার প্রতিষ্ঠা যত পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে সেই সাথে অপশক্তিগুলোও যেন মাথা চারা দিয়ে উঠে। আপনারা জানেন যে, মুসলিম সমাজে মৃত্যুর পর বেহেস্তে তাদের জন্য হুর অর্থাৎ সুন্দরী যুবতী রাখা হয়েছে শারীরিক সম্পর্কের জন্য।
কোরাণ বা হাদিসে এগুলোর বিশদ বর্ণনা রয়েছে। তারাও এ ব্যাপারে সম্পূর্নরূপে জ্ঞাত। কিন্তু অধিকাংশ সময় তাদের এ বিষয়ে কটুকথা শুনতে হয়। তাই তারা তাদের সমর্থনকে বলবৎ করতে বেদের একটি মন্ত্র উপস্থাপন করে বলে যে, শুধু কোরাণে নয় বরং বেদেও স্বর্গে বিভিন্ন অপ্সরাদের লোভ দেখানো হয়েছে। কিন্তু বেদে কি সত্যই এমন বলা আছে? তারই সমীক্ষা করতে আজকের এই লেখা।
তারা যে দাবী উপস্থাপন করে তা হলো -
"নাইশাম শিশ্না মং প্রা দাহাতি যাতাভেদাহ, স্বর্গলোকে বহু স্ত্রী নামেশাম" (অঃ ৪।৩৪।২)
অর্থঃ অগ্নি (যাহারা ধার্মিক) তাহাদের লিংগ (শিশ্না) পোড়াবে না এবং স্বর্গে তাহারা পাবে বহু স্ত্রী।
সমীক্ষাঃ মন্ত্রটি সমন্ধ্যে বলার পূর্বে আমাদের জানতে হবে স্বর্গ কাকে বলে? বৈদিক বিচারধারায় স্বর্গ বলতে বিশেষ কোন স্থানকে স্বীকার করা হয় নি।বরং জীবনের সুখাবস্থা বা মৃত্যুর পর পরম পুরুষার্থ বা মোক্ষকেই স্বর্গ বলা হয়েছে।
“স্বর্গ- স্বর্ + গ। (১) সুখ প্রদান করে এমন পদার্থ। (২) আনন্দময় মোক্ষ। (৩) সুখার্থ পুরুষার্থ।”
স্বর্গ সমন্ধে বেদে বলা হয়েছে-
অষ্টচক্র নবদ্বারা দেবনাং পুরযোধ্যা।
তস্যাং হিরণ্ময় কোশঃ স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতা।।
(অথর্ববেদ ১০।২।৩১)
সরলার্থঃ এই শরীররূপ নগরী সব সূর্য্যাদি দেবের অধিষ্ঠানভূত। আট চক্র এবংনয় ইন্দ্রীয় দ্বার বিশিষ্ট এইনগরী অজেয়। এই নগরীতে এক প্রকাশময় কোশ আছে [মনোময় কোষ ] আনন্দময় জ্যোতি দ্বারা আবৃত।
অর্থাৎ বেদে দেবপুরী বা স্বর্গলোক বলতে মূলত এই শরীরকেই বোঝানো হয়েছে। অথর্বেদে স্বর্গের বর্ণনা আরো দেওয়া রয়েছে -
ঘৃতহৃদা মধুকূলা সুরোদকঃ ক্ষীরেন পূর্ণা উদকেশ দধ্ন।
ত্রতস্তা ধারা উপয়ন্ত সর্বাঃ স্বর্গে লোকে মধুম্য
পিন্বমানাঃ উপত্বা তিষ্ঠন্ত পুষ্করিণী সমন্তাঃ।
(অথর্ববেদ ৪।৩৪।৬)
এই মন্ত্রে স্বর্গতূল্য গৃহের বর্ণনা দিয়ে বলা হচ্ছে যে, এই গৃহে যেন ঘৃত, মধু, পবিত্র জল, দুধ, দধি কম না হয়। এই স্বর্গতুল্য গৃহপ্রদেশ মাধুর্য্যুক্ত রসের সেচনকারী হয় এবং চারিদিশাই পদ্মের সরোবর হয়।
ঠিক এই প্রকরনেই বলা হয়েছে যে, " স্বর্গ লোকে বহুস্ত্রৈণমেষাম"। এই বর্ণনা সমৃদ্ধ ঐশ্বর্যশীল এবং বৈভবসম্পন্ন গৃহের। অর্থাৎ এ গৃহে ঘৃত দুধের নুন্যতা না হয়ে যেন গৃহ পরিপূর্ণ থাকে। এবং পরিবারে নানা সম্পর্কযুক্ত মহিলারা থাকবেন - বোন, ভাতৃবধু, কণ্যা ইত্যাদি। এইভাবে গার্হস্থকে পার্থিব দিক থেকে স্বর্গ বলা হয়েছে এবং একেই " বহুস্তৈণমেষাম্" বলা হয়েছে। মন্ত্রটির পূর্ণাঙ্গ অর্থ নিম্নরূপ -
অনস্থাঃ পুতঃ পবনেন শুদ্ধাঃ শুচয়ঃ শুচিমপি যন্তি লোকম।
নৈষাং শিশনং প্রদহতি জাতবেদাঃ স্বর্গ লোকে বহুস্ত্রৈণমেষাম।।
(অথর্ববেদ ৪।৩৪।২)
পদার্থঃ (অনস্থা) অস্থি আদি স্থুল পদার্থের শরীরের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে (পুতঃ) পবিত্র বৃত্তিবান হয়ে (পবনেন শুদ্ধা) প্রাণায়াম দ্বারা শুদ্ধ হয়ে (শুচয়) জ্ঞান দ্বারা দীপ্ত মস্তিষ্কশালী যে ব্যক্তি (শুচিম লোকম) পবিত্র লোক কে (অপয়ন্তি) প্রাপ্ত হয়। (এষাম) তাহার (শিশ্নম) উপস্থ ইন্দ্রীয় কে ( জাতঃবেদা) কামাগ্নি (প্রদহতি) সন্তপ্ত করতে পারে না। [যে কামাগ্নি দ্বারা সন্তপ্ত না হয় তাহার ঘর স্বর্গে পরিণত হয় এবং] (এষাম) তাহার এই (স্বর্গ লোকে) স্বর্গ লোকে (বহু স্ত্রৈনম) বোন, ভাতৃবধু,পত্নি, মাতা পূর্বক স্ত্রীর সহিত সুখপূর্বক নিবাস করে।
অর্থাৎ মন্ত্রটিতে একটি সুখের আধারভুত গৃহকেই স্বর্গ বলা হয়েছে। যাহাতে একজন ব্যক্তি শরীরের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ জীবন গঠন করে এবং কামবাসনা পরিত্যাগ করে সবার সাথে সুখপুর্বক বসবাস করে।
অর্থাৎ বেদে পার্থিব ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যেসব বর্ণনা করা হয়েছে সেমেটিক ধর্মগুলো তার অপব্যাখ্যা করেছে।
তাহলে শুধু নারীদের কথাই বলা হল কেন? পুরুষ কি পরিবারে নেই, বাবা, ভাই, স্বামী এদের বিষয়ে নাই কেন? মানে নারী দিয়ে কামনামুক্ত হয়ে যদি স্বর্গভাব হয়, তবে নারীদের পুরুষ কামনা শূণ্য হয়ে স্বর্গের ব্যাপারে বলা নাই কেন?
ReplyDeleteবলা নেই এটা আপনি নিশ্চিত হয়ে বলছেন কি করে?? অন্য কোনো শ্লোকে সে বিষয়ে বলা থাকতে পারে
Delete