https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণ ৪১ঃ- গীতার ১০।২৩ নং শ্লোক এর (৪০নং পর্বের) সমাধান কি?

Wednesday, July 19, 2017


প্রশ্নঃগীতার ১০।২৩ নং শ্লোক এর (৪০নং পর্বের) সমাধান কি?

উত্তর- গীতা ১০।২৩ বলা আছে- "রুদ্রাণাং শঙ্করশ্চাস্মি অর্থাৎ রূদ্ররূপে আমি শঙ্কর (কল্যাণকারী) হই।"
বিস্তারীত জানার পূর্বে রূদ্র ও শংকর এই দুটি শব্দের অর্থ ভালো করে জানা প্রয়োজন। চলুন দেখে নেই-

শঙ্কর-(ডুকৃঞ্ করণে) 'শম' পূর্বক এই ধাতু থেকে শঙ্কর শব্দ সিদ্ধ হয়। "য় শঙ্কল্যাণং সুখং করোতি স শঙ্করঃ", যিনি কল্যাণ অর্থ্যাৎ সুখকারী, এইজন্য পরমেশ্বরেরই নাম শঙ্কর।

রুদ্র-(রুদির্ অশ্রুবিমোচনে) এই ধাতুর সাথে 'ণিচ্'(রক্) প্রত্যয়বযোগে রুদ্র শব্দ সিদ্ধ হয়। "য়ো
রোদয়ত্যন্যায়কারিণো জনান্ স রুদ্রঃ" অর্থাৎ যিনি দুষ্কর্মকারীদিগ কে রোদন করান, এই কারণে সেই
পরমেশ্বরেরই আরেকটি নাম রুদ্র।

অর্থাৎ রুদ্ররূপে আমাদের রোদন করিয়ে শান্তি বা কল্যান প্রতিষ্ঠা করেন বলেই গীতার ১০।২৩নং শ্লোকে পরমেশ্বর বলেছেন 'রুদ্র রূপে আমি শঙ্কর হই'। যেমন কিনা আমাদের পিতা মাতারা আমাদের কল্যানের জন্য খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখতে শাস্তি দিয়ে থাকেন, ঠিক তদরূপ পরমেশ্বরও আমাদের অপরাদের শাস্তিস্বরূপ রুদ্ররূপে রোদন করান এবং শঙ্কররুপে কল্যান বিধান করেন। এই কারণেই পরমেশ্বর রুদ্ররুপি শংকর অর্থাৎ কষ্টদায়ি রূপে কল্যানকারী।

রূপের কথা শুনে এখন যারা আতকে উঠবেন তাদের জন্য রূপের ব্যাপারটা পরিষ্কার করি একটু। আমরা সকলেই জানি ঈশ্বর "অকায়ম অর্থাৎ শরীর বিহীন যজুর্বেদ৪০।৮।" তাহলে ওনার রূপ থাকবে কিভাবে? প্রকৃত পক্ষে এখানে গাঠনিক রূপের কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে কর্ম ও গুণবাচক রূপের কথা। যেমন কিনা মানুষকেও বহুরূপী বলে, এই বহুরূপ বলতে কি আলাদা আলাদা কোন মানুষের রূপকে বুঝায়? না, প্রকৃত পক্ষে তা নয়। আমাদের ক্ষেত্রেও বহুরূপ বলতে আমাদের কর্ম ও গুণবাচক রূপকে 'বহুরূপ' বলে। যেমন কিনা একই ব্যক্তি যখন কৃষি কাজ করে তখন তাকে বলে 'কৃষক', আবার শিক্ষকতা করলে 'শিক্ষক', ব্যবসা করলে 'ব্যবসায়ী'। ঠিক তেমনি ঈশ্বরেরও কর্ম ও গুণভেদে আলাদা আলাদা নাম আছে। আর এগুলোকেই শাস্ত্রে এক একটা রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এগুলো ঈশ্বরের কোন গাঠনিক রূপ নয়, বরংচ স্বয়ং পরমেশ্বরের বিভিন্ন গুণ ও কর্মবাচক রূপ ও সেই অনুসারে নাম।

আবার- "বসূনাং পাবকশ্চাস্মি অর্থাৎ অষ্ট বসুর মধ্যে আমি অগ্নি।" গীতা১০।২৩.
এর ব্যাখ্যায় বলতে হয় দেবতাদের প্রকৃত পক্ষে কোন শক্তিই নেই, এগুলো তো এক ঈশ্বরেরই শক্তি। আর সেই শক্তিগুলোর মধ্যে তুলনা মূলক বিচারে অগ্নির শক্তি বেশি। এই কারণেই পরমেশ্বর বলেছেন অষ্ট বসুর মধ্যে আমিই অগ্নি।

আবার- "বিত্তেশঃ যক্ষরক্ষসাম্ অর্থাৎ যক্ষ রাক্ষসের মধ্যে ধনের স্বামী আমিই।" গীতা১০।২৩.
মনুষ্যের দুই শ্রেনীর। যক্ষ অর্থ পূজনীয় দেবতা এবং রাক্ষস অর্থ যার থেকে রক্ষা করা যায় অর্থাৎ অসুর। এই দুই প্রকার মানুষের মধ্যে যিনি ধনের স্বামী তিনি পরমেশ্বরের বিভূতির মধ্যে এক প্রধান বিভূতি। এই অভিপ্রায় থেকে "যক্ষরক্ষসাম বিত্তেশঃ" বলা হয়েছে।