https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ঈশ্বরের রূপ বিষয়ক মূর্ত অমূর্ত ব্যাখ্যা

Wednesday, August 9, 2017

ঈশ্বর সমন্ধ্যে আমাদের চিন্তা চেতনা তথা ভাবনার যেন শেষ নেই। সবাই যেন যার যার মনের মতো করে  ঈশ্বরকে  সাজিয়ে রেখেছে। কারো মতে ঈশ্বর গলায় সাপ পেচিয়ে  হিমালয়ে অবস্খান করেন, আবার কারো মতে তিনি বৈকুন্ঠে সর্পের উপরে আসীন। কিন্তু  যিনি স্বয়ং "অচিন্ত্যরূপম্" তার রূপের চিন্তা করাটা কতখানি যৌক্তিক হতে পারে?   বেদ, উপনিষদ, গীতা, বেদান্ত ইত্যাদি বৈদিক শাস্ত্রে  ঈশ্বরের আমরা যেরূপ বর্ণনা পাই তাতে ঈশ্বরের "অরূপের" ই প্রমাণ মেলে।

ঈশ্বর সমন্ধ্যে বেদ বলছে -

স পর্য্যগচ্ছুক্রমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্।  (যজুর্বেদ ৪০।৮)

অর্থাৎ সেই পরমেশ্বর সর্বব্যাপী, বিশুদ্ধ,  শরীররহিত, অক্ষত, স্নায়ু ও শিরা রহিত,  শুদ্ধ এবং অপাপরহিত। 

উপনিষদ বলছে - 

যত্তদদ্রেশ্যমগ্রাহ্মমগোত্রমবর্ণমচক্ষুঃশ্রোত্রং তদপাণিপাদম্।
নিত্যং বিভূং সর্বগতং সূসুক্ষাং তদব্যয়ং যদ্ভুতযোনিং পরিপশ্যন্তি ধীরা।।
(মুন্ডক ১।১।৬)

অর্থাৎ যিনি অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, অগোত্র,  অবর্ণ, অচক্ষু, অশোত্র হস্তপাদশূণ্য, নিত্য বিভু,সর্বব্যাপী এবং অতিসুক্ষ্ম সেই অব্যয় এবং সর্বভূতের কারণকে ধীরাগন সর্বত্র দেখতে পান।

অশব্দমস্পর্শমরূপমব্যয়ং তথাহরসং নিত্যগন্ধবচ্চ যৎ।
অনাদ্যন্তং মহতঃ পরং ধ্রবং নিচায্য তন্মৃত্যুমূখাৎ প্রমূচ্যতে।।
(কঠোপনিষদ ১।৩।১৫)

অর্থাৎ যিনি অশব্দ, অস্পর্শ, অরূপ ও অক্ষর যিনি রসশূণ্য, নিত্য ও গন্ধশূণ্য, যিনি অনাদি, অনন্ত, মহৎ থেকেও মহৎ এবং ধ্রুব, তাকে জেনে লোকে মৃত্যুমুখ থেকে মুক্তি লাভ করে।

গীতা বলছে - 

কবিংপুরাণমনুশাসিতারমণোরণীয়াংসমনুস্মরেদ্ যঃ।
সর্ব্বস্য ধাতারমচিন্ত্যরূপমাদদিত্যবর্ণংতমসঃপরস্তাৎ।।
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা ৮।৯) 

অর্থাৎ সেই পরমপুরুষ, সর্বজ্ঞ, অনাদি,সর্বনিয়ন্তা, সুক্ষাতিসুক্ষ্ম, সকলের বিধাতা, অচিন্ত্যস্বরূপ, আদিত্যবৎ স্বপ্রকাশক, প্রকৃতির অতিত।

বেদান্তসূত্র বলছে - 

অরুপবদেব হি তত্প্রধানত্বাত্।।
(বেঃ সূঃ ৩।২।১৪)

অর্থাৎ নিশ্চয়ই পরমাত্মা রূপরহিত, কারন তাহার মুখরূপ দ্বারা ওইরূপই বর্ণনা করা হয়েছে।

অর্থাৎ সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র এটাই প্রতিপাদ করছে যে, পরমেশ্বর রূপরহিত  এজন্য তাহার কোন শরীর আদি কোন ইন্দ্রীয়ও নেই।  যদি এটা বলা হয় যে, পরমেশ্বরের একটা গঠনগত রূপ আছে তবে তাহার সর্বব্যাপক হওয়ায় হানি ঘটবে। কারণ গঠন বলতেই একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা। সর্বব্যাপক ঈশ্বরের উদাহরন দিতে গেলে আকাশের চাইতে  ভালো উদাহরন আর হয় না।

এতগুলো তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তিরা আছেন যারা ঈশ্বরের খুজতে ব্যস্ত।  তারা ঈশ্বরের রূপের পক্ষে যুক্তি দেখাতে বৃহদারণ্যক উপনিষদের নিম্নোক্ত কন্ডিকাটির উপস্থাপন করেন - 

"ব্রহ্মের দুইটি রূপ-মূর্ত ও অমূর্ত, মৃত ও অমৃত, স্থিতিশীল ও গতিশীল,সত্তাশীল ও অব্যক্ত।"
( বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২।৩।১)

ব্যাখ্যাঃ ব্রহ্ম শব্দ ঈশ্বর,বেদ, তত্ব, তপ, ও৩ম্, মোক্ষ,  প্রকৃতি, ব্রহ্মচর্য্য, সম্পত্তি, ভোজন, সত্য আদি অনেক অর্থ।  এখানে পঞ্চভূত সমূদায়ের জন্য প্রযুক্ত হয়েছে। সামনের কন্ডিকাগুলোতে এই কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ স্থলে পঞ্চভূত সমুদায়ের দুই রূপের বর্ণনা করা হয়েছে - এক মূর্ত্ত, এবং অন্য অমূর্ত্ত। এই দুই এর বিশেষন এই প্রকার -

মূর্ত্ত - মরনশীল, স্থিত এবং ব্যক্ত।
অমূর্ত্ত - অমরণশীল,  চলনশীল এবং অব্যক্ত।

=>> বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২।৩।২

অর্থ- (বায়োঃ চ অন্তরিক্ষাত্ চ যত্ অন্যত্) বায়ু এবং অাকাশ থেকে ভিন্ন যে,[অগ্নি, জল, পৃথিবী] (তত এতত্ মূর্তম্) এই যে [তিন] মূর্ত (এতত্ মর্ত্যম্ এতত্ স্থিতম্) ইহা মরনশীল,  ইহা স্থিত (এতত্ সত্) ইহা ব্যক্ত (তস্য এতস্য মূর্তস্য) তাহা এই মূর্তের (এতস্য মর্ত্যস্য এতস্য স্থিতস্য) এই মরণশীলের,  এই স্থিতের, (এতস্য সতঃ এষঃ রসঃ) এই ব্যক্তের ইহা রস। (যঃ এষঃ তপতি হি) যে ইহা [সূর্য] তাপ প্রদান করে নিশ্চয় (এষঃ সতঃ রসঃ) এই তিন ব্যক্ত ভূত - অগ্নি, জল এবং পৃথিবীর রস।

ব্যাখ্যাঃ এই কন্ডিয়ায় মূর্ত অগ্নি,জল এবং পৃথিবী কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এই তিন ভূত দেখা যায়।  কারন শেষ দুই (বায়ু ও আকাশ) অপেক্ষা ইহা স্থুল এইজন্য এগুলোকে মর্ত্য - মরণশীল, স্থিত এবং ব্যক্ত বলা হয়।  কারণ স্থুল পদার্থ, সুক্ষের অপেক্ষা শীঘ্র নষ্ট হয়ে যায়।  এগুলোকে স্থিত বলা কারণও সাপেক্ষিক ।যেই প্রকার বায়ু চলে এগুলো চলতে পারে না,  যেই প্রকার আকাশ সব জায়গায় রয়েছে এগুলো নেই।
এই তিন ভূতের রস = সার থেকে অধিক মহত্বপূর্ণ কার্য্য সূর্য্য কে বলা হয়েছে।

=>> বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২।৩।৩

অর্থ- (অথ অমূর্ত বায়ু চ অন্তরিক্ষং) এবং অমূর্ত বায়ু  এবং আকাশ (এতত্ অমৃতম্ এতত যত্) ইহা অমৃত, ইহা গমনশীল (এতত ত্যত তস্য এতস্য) ইহা অব্যক্ত।  তাহা এই (অমুর্তস্য এতস্য অমৃতস্য) অমুর্তের, এই অমৃতের (এতস্য যতঃ এতস্য তস্য) এই চলনশীল অব্যক্তের (এষ রসঃ অস্মিন মন্ডলে) ইহা রস। এই [সূর্য ] মন্ডলে (যঃ এষঃ পুরুষঃ) যে এই পুরুষ- শক্তি বিশেষ (হি এষঃ ত্যস্য) নিশ্চয় ইহা অব্যক্ত (বায়ু + রসঃ। ইতি অধি) আকাশের রস। দেবতা (দৈবতম্) সম্বন্ধী ব্যাখ্যা সমাপ্ত।

ব্যাখ্যা- পঞ্চভূত সমুদায়কে দুই ভাগ মূর্ত এবং অমূর্ত অথবা স্থুল এবং সুক্ষ্ম ভাগে বিভক্ত করে স্থুলাংশ অগ্নি জল এবং পৃথিবী, এই তিন ভূতের রস অথবা সবথেকে মহত্বপূর্ণ কার্য সূর্য কে বলা হয়েছে। সূক্ষাংশ বায়ু এবং আকাশ - ইথার (Ether) এই দুই ভূতের রস,  এই কন্ডিকায় সূর্য কে শক্তি বিশেষ (আকর্ষন আদি) কে বলা হয়েছে।

=>> বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ২।৩।৪

অর্থ-(অথ অধ্যাত্মম্) এখন অধ্যাত্ম [শরীর সমন্ধী বর্ণনা করছে ]।  (প্রাণাত্ চ অন্তরাত্মন্ চ)  প্রাণ এবং শরীরের ভীতর (যঃ অয়ং আকাশঃ যত্ অন্যত্) যে এই আকাশ যে ইহা ভিন্ন [অগ্নি, জল পৃথিবীর অংশ] (ইদম্ এব মূর্তম্, এতত মর্ত্যম্) ইহা মূর্ত্ত, ইহা বিনশ্বর (এতত্ এতস্য মূর্তস্য এতস্য) তাহা এই মূর্ত্তের রস (মর্তস্য এতস্য স্থিতস্য)  নাশবানের এই স্থিতের (এতস্য সতঃ এষঃ রসঃ) এই ব্যক্তের রস (যত্ চক্ষুঃ হি এষঃ) যে চক্ষু,  নিশ্চয় ইহা (সতঃ রস) ব্যক্ত [এবং মূর্ত আদির] রস।

ব্যাখ্যাঃ মনুষ্যের এই স্থুল শরীর পঞ্চ ভূতের তৈরী।  শরীরের মধ্যে যে, অগ্নি, জল এবং পৃথিবীর অংশ তাহাই মূর্ত, বিনশ্বর স্থিত এবং ব্যক্ত। তাহারই অংশের রস = সার = মূল্যবান্ কার্য চক্ষু।  যেই প্রকার বাহ্য জগতে এই তিন ভূতের রস সূর্য, সেই প্রকার এই অধ্যাত্ম জগতে তাদের রস সূর্য স্থানী চক্ষু।

=>> বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ২।৩।৫

অর্থঃ (অথ অমূর্ত প্রাণঃ চ) এখন অমূর্ত প্রাণ এবং (অন্যাতব আত্মন্ আকাশঃ) শরীরের ভীতরের আকাশ। (এতত্ অমৃতম্ এতত্ যত্)  ইহা অমৃত,  ইহা গমনশীল (এতত্ ত্যত্ তস্য এতস্য) ইহা অব্যক্ত তাহা এই (অমূর্তস্য এতস্য অমৃতস্য) অমূর্তের এই অমৃতের (এতস্য যত এতস্য ত্যস্য) এই চলনশীলের এই অব্যক্তের (এষঃ রসঃ। যঃ অয়ম্) ইহা রস। যে এই  (দক্ষিণে অক্ষন্ পুরুষঃ) দক্ষিণ চক্ষুতে শক্তি বিশেষ (হি এষঃ ত্যস্য রসঃ) নিশ্চয়ই ইহা ব্যক্তের রস।

ব্যাখ্যাঃ শরীরের অব্যক্ত অন্য ভাগ যে প্রাণ এবং শরীরের ভিতরের আকাশ তার প্রথম ভাগের অপেক্ষা থেকে অমুর্ত্ত, অমৃত, গতিবান্ এবং অব্যক্ত বলা হয়েছে, তার রস দক্ষিণ চক্ষুর  শক্তি বিশেষ। যেমন শরীরের স্থুল ভাগের রস চক্ষু  সেই প্রকার দ্বিতীয় ভাগের চক্ষুর শক্তি বিশেষ,  যেমন সূর্যের শক্তির স্থানের উপর বোঝা উচিৎ। চক্ষুর সাথে দক্ষিণ বিশেষন লাগানোর কারণ ইহা প্রতিত হয় যে, সুক্ষ শরীর বা তার বিশেষ অবয়বের স্থিতি দক্ষিণ চক্ষুতে বলা যায়।  আর ইহাও বলা যায় যে, সুক্ষ্ম শরীরের উপর প্রায় এই চক্ষুর দ্বারা চিত্র অঙ্কিত হয়।

উপরোক্ত কন্ডিকাগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যার পর এটা স্পষ্ট যে, উক্ত কন্ডিকায় ব্রহ্মের কোন রূপের বর্ণনা করা হয় নি।  বরং পঞ্চভূত সমুদায় এর বর্ণনা করা হয়েছে।  যার মধ্যে অগ্নি, জল, পৃথিবী মূর্ত্ত / ব্যক্ত  এবং আকাশ,  বায়ু অমূর্ত্ত/অব্যক্ত।