https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

আমরা কি ঈশ্বরের দাস?

Tuesday, September 19, 2017
                                       
 বৈষ্ণব মহাশয়রা নিজেদের ঈশ্বরের দাস
প্রমাণ করতে বেদের যে মন্ত্রটি ব্যবহার
করে তা হলো -

“অরং দাসো ন মীড়হুষে করাণ্যহংদেবায়
ভূর্ণয়েহ’নাগাঃ”


অর্থাৎ— ‘জগতের পোষক ও অভিষ্টবর্ষী
ভগবানের দাস আমি, পর্যাপ্তরুপে তাঁহার
পরিচর্যা করিয়া নিষ্পাপ হইব ৷



সমীক্ষাঃ
প্রথমতঃ বৈষ্ণব মহাশয় সায়ণের
ভাষ্যের রমেশ চন্দ্র দত্ত কর্তৃক অনুবাদ আর
নিজের কথা একবারে গুলিয়েছেন | পুরো
অনুবাদও দেয়নি | তাই প্রথমে মন্ত্রের রমেশ
ভাষ্যটি দেখে নেওয়া যাক -

"অভিষ্টবর্ষী , পোষক বরুণের উদ্দেশ্যে
পাপরহিত হইয়া দাসের ন্যায় পর্য্যাপ্তরূপে
পরিচর্য্যা করিব | আমরা অজ্ঞান , আর্য্যদেব
আমাদের জ্ঞান দান করুন | প্রাজ্ঞতর দেব
স্তোত্রাকে ধনার্থ প্রেরণ করুন |"

মন্ত্রের কোথাও ভগবান পদ নেই | তো বৈষ্ণব
বাবু ভগবান কই পেলেন?? আর তিনি কি
মন্ত্রের দেবতা বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন? এই
মন্ত্রের দেবতা হচ্ছে বরুণ | তাহলে এবার
বরুণও কি দাসানুদাস হবেন নাকি ?? কারণ
"একেলা ঈশ্বর কৃষ্ণ বাকি সব ভৃত্য " চৈতন্য
চরিতামৃতের এই মহা শ্রুতিবাক্যের কি
হবে ?? বরুণ সমন্ধ্যে পৌরাণিক প্রিয় রমেশ
যে নোট লিখেছেন তা বরুণ কে দেবতা
প্রমাণ করেছে ঈশ্বর নয়।

"বরুণ আর্য্যদিগের পুরাতন দেবতা।
আবরনকারী (বৃ ধাতু হইতে) নৈশ আকাশকেই
আর্যগন বরুণ বলিয়া পূজা করিতেন এবং সেই
দেবকে গ্রীকগন ইরাণীয়গন "বরণ" ও হিন্দুগণ
"বরুণ" নামে জানেন। "মৈত্রং বৈ অহরিতি
শ্রুতে শ্রুয়তে চ বারুণী রাত্রী" সায়ন। আকাশ
জলীয়, এই বিশ্বাস হতে অবশেষে বরুণ জলের
দেবতা বলে পরিগণিত হইলেন। " (ঋগবেদ ১।২।
৭ এর টীকা)

আর যদি বরুণকে কেউ বরুণ = কৃষ্ণ মেনে অভেদ
বলেন তবে সেটা বৈষ্ণব দশবিধ নাম অপরাধে
পড়ল না ? দশবিধ নামাপরাধে তো বলাই
আছে ব্রহ্মা শিবাদি দেবতাকে কৃষ্ণের
সমান বলা মহা অপরাধ | তাহলে তিনি তো
দাস প্রমাণ করতে গিয়ে দাসানুদাস হয়ে
গেলেন?

তাই এখন আমাদের এই বিষয়ে জানা
প্রয়োজন যে, ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্পর্ক
কি? এ বিষয়ে বেদ স্বয়ং বলছে -

শৃন্বন্তো বিশ্বে অমৃতস্য পূত্রা (যজু ১১।৫)
অর্থাৎ এই জগতে আমরা সবাই অমৃতের পূত্র।
অর্থাৎ ঈশ্বরের সাথে আমাদের সমন্ধ পিতা
পূত্রের। এজন্যই ঈশ্বরকে পিতা মাতা বলে
সম্বোধন করে বেদ বলেছে -

ত্বং হি নঃ পিতা বসো ত্ব মাতা শতক্রতো
বভূবিথ | অধা তে সুম্নমীমহে ||
(ঋগ্বেদ ৮/৯৮/১১)

 হে সকলের আশ্রয়স্থল , অগণিত
শুভকার্যের সম্পাদক পরমাত্মন্ ! তুমিই
আমাদের সকলের পিতা , তুমিই মাতা , এজন্য
তোমাকে আমরা উত্তম রূপে মনন করি |

এখন এই বিষয়ে শঙ্কা আসতে পারে যে,
আমরা তার সন্তান হয়ে আবার তার দাস কেন
হতে যাবো? মূলতো মন্ত্রে আমাদের তার দাস
বলা হয় নি। মন্ত্রার্থ টি এরূপ -

"আমি পাপ থেকে রহিত হয়ে পালক সর্ব
সুখদাতা সর্বদাতা স্বামীর দাসের ন্যায়
অনেক সেবা করি।তিনি দানশীল প্রকাশস্বরূপ
প্রভূ সবার স্বামী অজ্ঞানী জন কে সদা
জ্ঞান প্রদান করেন এবং তিনি সবার থেকে
অধিক বিদ্বান হয়ে নিজ স্তুতিকর্তা ভক্তকে
ঐশ্বর্য্য প্রাপ্ত করানোর জন্য সন্মার্গে
নিয়ে চলেন। (অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা)"

মন্ত্রে বরুণ অর্থাৎ পরমাত্ম দেবকে দাসের
ন্যায় সেবা করতে বলা হয়েছে। বলা হয় নি
যে, আমরা তার দাস। কারণ পূর্বের মন্ত্র
দুটিতে স্পষ্ট হয়েছে যে, তার সাথে
আমাদের সম্পর্ক পিতা পূত্রের, দাসের নয়।
মন্ত্রটির আশয় এই যে, পরম পিতাকে তার
সন্তান একজন সেবকের ন্যায় সেবা করবেন।
একজন দাস যেমন সম্পূর্ণ তার প্রভূর জন্য
সমর্পিত থাকে সেরূপ সন্তান তার পিতার
জন্য সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োজিত থাকবে। এর
মানে এই দাড়ায় না যে, আমরা তার দাস হয়ে
গেলাম।

অনেকে আবার এই কুতর্ক করবেন যে, মন্ত্রে
তো বরুণ দেবের কথা রয়েছে এখানে আপনি
পরমাত্মা কোথাই পেলেন?
এর সমাধান স্বয়ই বেদই আমাদের দিয়েছেন।
বেদ বলেছেন -

"ইন্দ্রং মিত্রং বরুণ মগ্নি মাহু, রথো দিব্যঃ
স সুপর্ণো গরুত্মান।
একং সদ্বিপ্রা বহুদা বদন্ত্যগ্নি য়মং
মাতরিশ্বানমাহুঃ॥
(ঋগবেদ ১/১৬৪/৪৬)

অর্থাৎ এক সত্তা পরব্রহ্মকে জ্ঞানীরা ইন্দ্র,
মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য, সুপর্ণ, গরুত্মান, যম,
মাতরিশ্বা আদি বহু নামে অভিহিত করেন।।

ঋগবেদের ২।১।৪ এ বলেছে " ত্বমগ্নে রাজা
বরুণো " এবং মনুস্মৃতিতেও বলেছে -
"এই পরম পুরুষকেই কেউ অগ্নি বলে জানেন
,কেউ একে মনু বলেন ,কেউ প্রজাপতি ,কেউ
ইন্দ্র ,কেউ প্রাণ এবং কেউ আবার সনাতন
ব্রহ্ম বলে থাকেন।"

পরমাত্মার নাম বরুণ এজন্য যে,
বরুণঃ (বৃঞ, বরণে, বর ঈপ্সায়াম্) এই সকল
ধাতুর সহিত উণাদি "উনন" প্রত্যয় যোগে বরুন
শব্দ সিদ্ধ হয়।"যঃ সর্বান শিষ্টান্ মুমুক্ষূণ্ধার্ম
াত্মনে বৃণোত্যথবা যঃ শিষ্টৈর্মুমুক্ষ
ভির্ধামাত্মভির্ব্রিয়তে বর্য্যতে বা স বরুণঃ
পরমেশ্বর" যিনি আপ্তযোগী বিদ্বান,
মুক্তিকামী মুক্ত এবং ধর্ম্মাত্মাদিগেরও
স্বীকার্য্য অথবা যিনি শিষ্ঠ, মুমুক্ষ এবং
ধর্মাত্মাদিগের দ্বারা স্বীকৃত হন, সেই
ঈশ্বরের নাম বরুণ। অথবা "বরুণো নাম বরঃ
শ্রেষ্ঠঃ" যেহেতু পরমেশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ
সেহেতু তাহার নাম বরুণ।