https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

যজুঃ শাখার কৃষ্ণ শুক্ল ভেদ এবং তার নিরীক্ষণ

Saturday, September 30, 2017

বৈদিক বাঙ্ময়ে ঋগবেদের পরেই যজুর্বেদের স্থান।  মহাভাষ্য আদি প্রাচীন গ্রন্থে যজুর্বেদের ১০১ শাখার উল্লেখ মিলে- "একশতমধ্বর্যুশাখা "।
যজুর্বেদের এই ১০১ শাখায় শুক্ল এবং কৃষ্ণ দুই ভেদে বিভক্ত। এই দুই বিভাগের কারণ বিভিন্ন গ্রন্থাকার বিভিন্ন রূপে বর্ণনা করেছে -

(i) পুরাণ অনুসারে - "বৈশাম্পায়ন এর তিত্তিরি, যাজ্ঞবল্ক্য আদি অনেক শিষ্য ছিলো।  একবার বৈশাম্পায়ন দ্বারা অসাবধানতা বশতঃ ব্রহ্মহত্যা হয়ে যায়। তাহার নিবারনের জন্য বৈশাম্পায়ন নিজ শিষ্য কে প্রায়াশ্চিত্ত করার আদেশ দেন। যাজ্ঞবল্ক্য বললেন এই অল্পবীর্য ব্রাহ্মণ কে কষ্ট দেবার কি আবশ্যকতা।  আমি একাই সম্পূর্ণ প্রায়াশ্চিত্ত করে নেবো।  বৈশাম্পায়ন যাজ্ঞবল্কের এই গর্বোক্তি দ্বারা খিন্ন হয়ে বললেন- "তুমি ব্রাহ্মণের অপমান করেছো।  এইজন্য আমি তোমাকে যা পড়িয়েছি, তাহা ছেড়ে চলে যাও। যাজ্ঞবল্ক্য গুরু দ্বারা পঠিত বিদ্যা বমন করে দেয়। বৈশম্পায়নের অন্য শিষ্য গুরুর আজ্ঞা অনুসারে তীতরের রূপ ধারণ করে সেই বমন কৃত বেদ খেয়ে নেয়।  যাজ্ঞবল্ক্য আদিত্য কে স্তুতি করে যজু কে প্রাপ্ত করেন। (ভাগবত, বিষ্ণু,  অগ্নি আদি পুরাণের আশয় অনুসারে) 

(ii) পুরাণের উক্ত আধারের উপর মহিধর লিখেছেন - "তানি যজুর্ষি বুদ্ধিমালিন্যহেতুত্বান কৃষ্ণানি জাতানি" (মহিঃ যজুর্বেদ সংহিতা ভাষ্যের আরম্ভে)।  বিদ্যারণ্যস্বামী ও লিখেছেন - "বুদ্ধিমালিন্যেহেতুত্বানর তদ্যজুঃ কৃষ্ণমীয়তে" (পঃ রঘুনন্দন শর্মা কৃত বৈদিক- সম্পত্তি মধ্যে উদ্ধৃত)।  অর্থাৎ বমন কৃত হওয়ার দ্বারা বুদ্ধির মলিন করার কারণে তিত্তিরি আদি র অধীত যজুঃ কৃষ্ণ যজু বলা হয়। এবং  এর পরে মহিধর লিখেছেন - "শুক্লানি শুদ্ধানি" অর্থাৎ শুক্ল যজুঃ শুদ্ধ।


(iii) শতপথের ভাষ্যকার দ্বিবেদ গঙ্গ আদি পুরাণের কথনের আধারের উপর বলেছে - কথর্ভূতানি যজুষি? শুক্লানি শুদ্ধানি, যদ্ধা ব্রাহ্মণেন মিশ্রিতমন্ত্রাত্মকানি কৃষ্ণাণি"অর্থাৎ যেই প্রকার ভক্ষণকৃত  সমস্ত পদার্থ বমনে মিশ্রিত হয়ে বের হয়,  সেই প্রকার তৈত্তিরীয় আদি সংহিতায় মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ উভয় মিশ্রিত হওয়ার কারণে কৃষ্ণ= অশুদ্ধ বলা হয়এবং শুক্ল যজুর্বেদে ব্রাহ্মণের মিশ্রন না হওয়ার কারণে শুক্ল = শুদ্ধ বলা হয়

(iv) অন্য বিদ্বানের কথন - যেমন অন্ধকারে ঘট পট আদি বিভিন্ন পদার্থের পার্থক্যের জ্ঞান হয় না, সেই প্রকার তৈত্তিরীয় আদি সংহিতায় মন্ত্র এবং ব্রাহ্মনের পার্থক্য সুগমতা বিদিত হয় না।  বাজনেয় শাখায় মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ পৃথক- পৃথক।  অন্ধকারের রূপ কৃষ্ণ মানা হয়েছে, অন্তঃ তৈত্তিরীয় আদি সংহিতা কৃষ্ণ এবং বাজসনেয় সংহিতা শুক্ল নামে ব্যবহৃত হয়।

(v) "আর্যবিদ্যাসুধাকর" এর রচয়িতা এবং তৈত্তিরীয় শাখার অধ্যেতা ভদ্র যজ্ঞেশ্বরের মত - "যজ্ঞকর্মানুষ্ঠানমার্গস্য দুর্বিজ্ঞেয়ত্বান্ কৃষ্ণত্বমিতি"।  অর্থাৎ যজ্ঞকর্মের অনুষ্ঠান মার্গ কে দুর্জ্ঞেয়তার কারণ তৈত্তিরীয় সংহিতাকে কৃষ্ণ বলে।  তৈত্তিরীয় সংহিতায় ইষ্টি এবং অগ্নিষ্টোম আদির কর্মকান্ডের সম্যক বিভাগ নেই। শুক্ল যজুতে সব যজ্ঞের পৃথক - পৃথক ব্যবস্থিত রূপে প্রতিপাদন রয়েছে।
এই প্রকার অনন্তদেব "" ১-৩ এর ভাষ্যে লিখেছে -
"বুদ্ধিমালিন্যেহেতুত্বান্ তদ্যজুঃ কৃষ্ণমীর্য়তে
ব্যবস্থিতপ্রকরণত্বান্ তদ্যজুঃ শুক্লমীর্য়তে।।"

(vi) চরণব্যুহের টীকাকার মহিদাসের মত-
"বেদোপক্রমণে চতুর্দশীয়ুক্তপৌর্ণিমাগ্রহণাত্ শুক্লযজুঃ। প্রতিপদায়ুক্তপৌর্ণিমাগ্রহণাত্ কৃষ্ণযজুরিতি বা।"
অর্থাৎ যে শ্রাবণী পূর্ণিমা মধ্যাহ্ন থেকে পূর্ব সমাপ্ত হয়,  সেই পূর্ণিমার বিষয়ে যাজুষ বেদোপক্রমণ (উপাকর্ম) সংজ্ঞক কর্মে দুই পক্ষ। কোন লোক চতুর্দশীযুক্ত পূর্ণিমায় উপাকর্ম করে। অন্য উদয় পক্ষ মেনে কৃষ্ণপক্ষ প্রতিপদ্ যুক্ত পূর্ণিমায় উপর্কম করে। অতঃ যে চতুদর্শীযুক্ত পূর্ণিমায় উপাকর্ম করে তাহা শুক্লপক্ষীয়, এবং যে কৃষ্ণপ্রতিপদ্ যুক্ত পূর্ণিমায় উপাকর্ম করে তাকে কৃষ্ণপক্ষীয় বলে। তাহার অনুসারে যজুর্বেদেরও শুক্ল এবং কৃষ্ণ দুই বিভাগ হয়ে যায়।

(vii) বেদের পরিচয় গ্রন্থে ডঃ যোগীরাজ বসু কৃষ্ণ যজুঃ সমন্ধ্যে বলেছেন - কৃষ্ণযজুঃ সংহিতার ও তন্নিষ্ঠ তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের স্বতন্ত্র সংহিতা ও ব্রাহ্মণের লক্ষণ রক্ষিত হয় নাই।  সংহিতার অনেক অংশ ব্রাহ্মণে পাওয়া যায়,  আবার তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে সংহিতার অনেক অংশে দৃষ্ট হয়। সংহিতা ও ব্রাহ্মণের সাঙ্কর্য ঘটিয়াছে। এই সাঙ্কর্য বা মিশ্রণ জন্যই "কৃষ্ণ" নাম হইয়াছে। "কৃষ্ণ" শব্দটির সংস্কৃতে একটি অর্থ মিশ্রণ। ব্রাহ্মণ লক্ষণের অভিব্যপ্তি ঘটিয়াছে সংহিতায় এবং সংহিতালক্ষণের বা মন্ত্রলক্ষণের অভিব্যাপ্তি ঘটিয়াছে ব্রাহ্মণে।  মিশ্রিত যাহা শুদ্ধ, তাহা শুক্ল আর যাহা মিশ্রিত তাহা শুদ্ধ নহে, শুক্ল নহে, তাহা কৃষ্ণ


এই প্রকার যজুষ শাখার শুক্ল কৃষ্ণ  সংজ্ঞার কতিপয় কারন রয়েছে যা প্রাচীন বাঙ্ময় অনুসারে উপস্থিত করা হয়েছে।  এই দুই প্রকার শাখার মধ্যে কৃষ্ণ যজুঃ বর্তমানে উপলব্ধ শাখা মূল যজুর্বেদের নয়। কারণ এতে ব্রাহ্মণভাগের মিশ্রন রয়েছে এবং অশুদ্ধ হওয়ার কারণে কৃষ্ণ নাম ধারণ করেছে। একমাত্র শুক্ল যজুই  শুদ্ধ


  1. অাপনার প্রতি রইল, নমস্কার, দাদা।

    ReplyDelete