https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতার উপদেশ

Monday, September 25, 2017
সম্পর্কিত ছবি
🛂 ভগবান গীতায় বলিয়াছেনঃ —
লোকেহস্মিন দ্বিবিধা নিষ্ঠা পুরা প্রোক্তা ময়ানঘ ।
জ্ঞানযোগেন সাংখ্যানাং কর্মযোগেন যোগিণাম্ ।। (৩/৩)
অর্থ —এই পৃথিবীতে নিষ্ঠা (নিঃশেষরূপে স্থিতিলাভ, ব্রাহ্মীস্থিতি) লাভের জন্য আমি (ভগবান) সৃষ্টির পূর্ব হইতেই পথের কথা বলিয়াছি (নিয়ম করিয়া দিয়াছি) । এই দুইটি পথের মধ্যে যাহারা জ্ঞাননিষ্ঠ, তাঁহাদের জ্ঞানের দ্বারা এবং যোগিগণের কর্মযোগের দ্বারা মুক্তি হইবে ।
ভগবান এখানে ভক্তির কোন কথা উল্লেখ করেন নাই । কারণ
জ্ঞান ও কর্ম এই দুইটি মৌলিক পদার্থ । ভক্তি কোন মৌলিক পদার্থ নহে—ভক্তি একটি যৌগিক পদার্থ । যেমন অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন দুইটি মৌলিক বায়বীয় বস্তু । এই দুইটি গ্যাসের একত্র মিলন হইলে জলের সৃষ্টি হয় । এই জল একটি যৌগিক বস্তু । তাই জলকে উত্তপ্ত করিলে উহা পুনরায় স্বকারণ অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন নামক গ্ল্যাসদ্বয়ে বিলীন হইয়া যায়— জলের কোন চিহ্নও থাকে না । এইরূপ ভক্তিও একটি যৌগিক বস্তু । জ্ঞান ও কর্মের সমুচ্চয় অবস্থার নাম ভক্তি অর্থাৎ জ্ঞানের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে ব্রহ্মত্ব লাভ হয় এবং কর্মগুলি যদি জ্ঞানমিশ্রিত নাহয়, তবে সেই কর্মে বন্ধন সৃষ্টি করে ; আর কর্মগুলি যদি জ্ঞানমিশ্রিত হয়, তবে চিত্ত শুদ্ধ হইয়া কর্মী ব্রহ্মজ্ঞান লাভের অধিকার অর্জন করে জ্ঞানমিশ্রিত কর্মানুশীলনের ফলে যে অনুভূতি লাভ হয়, সেই অনুভূতিরই নাম ভক্তি । তাই ভক্তি জ্ঞানেরই প্রকার ভেদ —ভক্তির নিজস্ব কোন সত্তা নাই —ইহা জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল ।
🛂 ভগবান গীতাতে দুই প্রকার ভক্তির কথা বলিয়াছেন—
(১) অনন্যা ভক্তি, ও(২) অব্যভিচারিণী ভক্তি।
যেখানে দুই থাকে না, দুইটি মিলিয়া এক হইয়া যায় (ন+অন্য =অনন্য), যেমন জীবাত্মার পরমাত্মার মধ্যে লীন হইয়া যাওয়া, নদীর সাগরের মধ্যে বিলীন হইয়া যাওয়া —এই সকলই অনন্যা ভক্তির দৃষ্টান্ত । যেখানে ভক্ত ও ভগবানের দুইটি পৃথক বস্তুর অস্তিত্ব থাকে না, তাহাই অনন্যা ভক্তি । ‘অব্যভিচারিণী’ ভক্তির অর্থ হইতেছে, যে ভক্তিতে ব্যভিচার (দুই) থাকে না, তাহাই অব্যভিচারিণী ভক্তি । ভক্তি—ভজ্ ধাতু ক্ত প্রত্যয়যোগে ভক্ত শব্দ নিষ্পন্ন হইয়াছে । ভজ্ ধাতু সেবায়াং —ভজ্ ধাতুর অর্থ সেবা এবং ক্ত পদের অর্থ প্রবেশ করা —সেবা দ্বারা একের অপরের মধ্যে (জীব ব্রহ্মের মধ্যে) প্রবেশ করিয়া দুইটি বস্তু এক হইয়া যাওয়ার নাম ভক্তি।
📖 গীতার ভক্তিযোগে (দ্বাদশ অধ্যায়ে) ভগবৎ ভক্তের যেসব লক্ষণ দেওয়া হইয়াছে, সেগুলি সবই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের লক্ষণ —সাধারণ মানবের ঐসব লক্ষণ হয় না । এইজন্য ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষই ভগবানের প্রিয় ভক্ত । নিন্মে ভগবৎ ভক্তের কয়েকটি লক্ষণ দেওয়া হইলঃ—
“অদ্ব্যেষ্টা সর্বভূতানাম্” (গীতা ১২/১৩)- সকল ভূতের সঙ্গে যিনি দ্বেষ করেন না, তিনিই ভগবানের প্রিয় ভক্ত ।
“নির্মমঃ নিরহঙ্কারঃ”—যাহার মোহ নাই এবং দেহেতে যাহার আত্মবুদ্ধি নাই অর্থাৎ ‘এই স্থূল দেহটি আমি’ এইরূপ যাহার বোধ নাই, তিনিই ভগবানের প্রিয় ভক্ত ।
“যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয়”—যাহার ইন্দ্রিয়গণ সংযত হইয়াছে এবং ‘আমি ব্রহ্মই, জীব নহি’ এইরূপ যাহার বুদ্ধি নিশ্চয় করিয়াছে, তিনিই ভগবানের প্রিয় ভক্ত ।
“হর্ষামর্ষভয়োদ্বেগৈঃ মুক্তঃ” যিনি হর্ষ-বিষাদ, মৃত্যুভয়, মানসিক চাঞ্চল্য হইতে মুক্ত হইয়াছেন —এরূপ ব্যক্তিই ভগবানের প্রিয় ভক্ত ।
বর্তমান সমাজে যে রাধাকৃষ্ণে ভক্তি, কালী-দূর্গা-শিবে ভক্তি ইত্যাদি ভক্তির নামে মনগড়া সাধন-ভজন চলিতেছে —এই সকলই শাস্ত্রবহির্ভূত অজ্ঞানকৃত ভক্তি । দ্বাপর যুগের পূর্বে যখন কৃষ্ণের জন্ম হয় নাই, তখন মানব কাহার উপাসনা করিয়া শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করিয়াছিলেন? তাহারা কি কালী,দূর্গা,শিব প্রভৃতি দেবতাগণের উপাসনা করিয়া ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন ? বেদে আকারবান কোন মূর্তি উপাসনা বিহিত হয় নাই । তাই এই সকল অবৈদিক উপাসনা ।
📖গীতা বলেন,—
যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ। ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।। (১৬/২৩)
অর্থ—যাহারা শাস্ত্রীয় নির্দেশ অমান্য করিয়া নিজেদের খেয়াল খুশিমত সাধন-ভজন করে, তাহারা সিদ্ধিলাভ করিতে পারে না, তাহাদের জীবনে সুখ বা মোক্ষলাভও হয় না ।