♣রাজ যোগঃ
রাজযোগে বাহ্যিক শ্বাস-প্রশ্বাসরূপ প্রাণায়ামকে বিষয়মোহ ত্যাগের উপায় বলা হয় নাই । রেচক, পুরক ও কুম্ভক এই তিনটিকে একত্রে স্থূল প্রাণায়াম বলে ।



মনের কুচিন্তাগুলিকে বিচারপূর্বক পরিত্যাগ করার নাম রেচক । সৎচিন্তাদ্বারা মনকে পূর্ণ করার নাম পুরক এবং মনের মধ্যে সৎচিন্তা প্রবেশ করাইয়া সর্বচিন্তা ত্যাগ করিয়া শান্তভাবে অবস্থানের নাম কুম্ভক ।
এই মনের রেচক, পুরক ও কুম্ভকই মানসিক রোগের বীজ নাশের মহৌষধ ।




দীর্ঘ সময় প্রাণায়ামের ফলে শরীরের ক্লান্তিবশতঃ মন কিছু সময়ের জন্য শান্ত হয় বটে কিন্তু শরীরের শ্রম দূর হইলে পুনরায় বহির্বস্তুর সংযোগে মন বিক্ষেপ প্রাপ্ত হয় । ক্লোরোফর্মাকারীর মনও এইরূপ কিছুক্ষণের জন্য চিন্তার অভাবহেতু স্তব্ধভাবে থাকিয়া শান্তি লাভ করে বটে, কিন্তু ক্লোরোফর্মের নেশা কাটিয়া গেলে পূর্ববৎ চঞ্চল হইয়া থাকে। সুতরাং কোন প্রকৃয়ার দ্বারা মনকে কিছু সময়ের জন্য শান্ত করিয়া রাখিতে পারিলেই যে চিরশান্তি লাভ হইবে তাহা নহে— মনের অজ্ঞানতার মূল (আমি আমাকে জানি না, ইহাই মূল অজ্ঞান) হৃদয় হইতে উৎপাটিত করিয়া ফেলিয়া দিতে পারিলে মন চিরশান্ত হইয়া ব্রহ্মজ্ঞান লাভের অধিকার অর্জন করে । নিজের জ্ঞান ব্যতীত কোন কর্মের দ্বারা ইহা সম্ভব হয় না । অজ্ঞানেই বন্ধন, অজ্ঞানমুক্তিতেই মুক্ত । আত্মা সকলের অন্তরেই বিরাজমান রহিয়াছেন । তিনি কোথাও হইতে নূতনভাবে আসিবেন না । জ্ঞানের দ্বারাই তিনি লভ্য হন । কোন বল্মিক স্তুপের ভিতরে একটি কৃষ্ণসর্প লুক্কাইয়া থাকিলে তুমি লাঠিদ্বারা ঐ স্তুপের উপর যতই আঘাত কর না কেন, ঐ আঘাত কৃষ্ণসর্পের শরীরে কখনই লাগিবে না, তাই সে চিরসুখে সেখানে বসবাস করে । কিন্তু ঐ স্তুপের মধ্যে অগ্নি সংযোগ করিবামাত্র যেমন সাপটি উত্তাপ সহ্য করিতে না পারিয়া প্রাণের ভয়ে পলাইয়া যায়, সেইরূপ মনের অন্তর্দেশে যে অজ্ঞানরূপ কৃষ্ণসর্প রহিয়াছে তাহাকে বাহ্যিক পূজার্চনা, নামজপ, সংকীর্কন বা যোগযাগের দ্বারা সে স্থান হইতে তাড়াইবার উপায় নাই । বিচাররূপ অগ্নির উত্তাপেই উহা পলাইয়া যায় । ইহাই বেদের সিদ্ধান্ত । এইভাবে অন্তর রাজা হইতে সদসৎ সমুদয় বৃত্তি অপসারিত হইলে হৃদয়খানা বৃত্তিশূন্য হইয়া যে শান্তভাব ধারণ করে তাহারই নাম — “সর্বচিন্তা পরিত্যাগো নিশ্চিন্তো যোগ উচ্যতে” (পীঠমালা তন্ত্র)
—মন সর্বচিন্তা পরিত্যাগ করিয়া নিশ্চিন্তভাবে অবস্থান করার নাম যোগ ।

--------------- ইত্যোম্ ------------------
0 মন্তব্য(গুলি)