https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

অর্জুনকে যোগস্থ হয়ে শ্রীকৃষ্ণের গীতা জ্ঞান প্রদান

Tuesday, September 12, 2017

যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের অনবদ্য অবদান শ্রীমদ্ভগবত গীতা। বর্তমান কালে তা সবার কাছে বেশ সমাদৃত। গীতার প্রেক্ষাপট টি হচ্ছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কে কেন্দ্র করে। যুদ্ধে সম্মুখস্থ আত্মিয় সজন কে দেখে অর্জুন বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন।  ঠিক সেই সময় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আত্মতত্ত্বের উপদেশ দান করেন। এবং তা পরবর্তীতে গীতা নামে পরিচিতি লাভ করে। 
এই আত্মতত্বের উপদেশ শ্রীকৃষ্ণ নিজে যোগস্খ হয়ে অর্জুন কে দান করেছিলেন। কিন্তু অনেক পন্ডিতরা তা স্বীকার করতে চান না।  কিন্তু মহাভারতেই এই বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।  যুদ্ধ বিজয় শেষে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা গমনের প্রাক্কালে অর্জুন পূনর্বার সেই আত্বতত্বের উপদেশ শুনতে চেয়ে শ্রীকৃষ্ণকে বলেন -

বিদিতং মে মহাবাহো সংগ্রামে সমুপস্থিতে।
মহাত্ম্যং দেব দেবকীমাতস্তশ্চ তে রূপমৈশ্বরম্।। ৫।।

- মহাবাহো! দেবকীনন্দ! যখন সংগ্রামের সময় উপস্খিত ছিলো, সেই সময় আমার মহাত্মার জ্ঞান এবং ঈশ্বরীয় স্বরূপের দর্শন হয়েছিলো।


যত্ তত্ ভগবতা প্রোক্তং পুরা কেশব সৌহৃদাত্।
তত্ সর্বৈ পুরুষব্যাগ্র নষ্টং মে ভ্রষ্টচেতসঃ।।৬।।

- কিন্তু কেশব! নিজ সৌহার্দবশ প্রথমে আমাকে যে জ্ঞানের উপদেশ দিয়েছিলেন,  আমার সেসব জ্ঞান এই সময় বিচলিতচিত্ত হওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।


মম কৌতুহলং ত্বস্তি তেষ্বর্থেষু পুনঃ পুনঃ।
ভবাংস্তু দ্বারকাং গন্তা নচরাদিব মাধব।।৭।।

- মাধব! সেই বিষয় শোনার জন্য আমার মন বারংবার উৎকন্ঠিত হচ্ছে। আপনি শীঘ্রই দ্বারকা গমন করবেন,  অতঃ সেই বিষয় আমাকে শুনিয়ে দিন।

শ্লোকগুলোর তাৎপর্য এই যে, শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকাগমনকালে অর্জুন সেই ব্রহ্মজ্ঞানের উপদেশ শুনতে চান যেটা তিনি  কুরুক্ষেত্রে শুনেছিলেন।  এর কারণ অর্জুন নিজের চিত্তের বিচলিত হওয়ার কারণে সেসব উপদেশ ভূলে গিয়েছিলেন।  এ কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত  ব্যথিত হয়ে অর্জুনকে কিছু কটু কথা বললেন -

শ্রাবিতস্ত্বং ময়া গুহ্যং জ্ঞাপিতশ্চ সনাতনম্।
ধর্মৈ স্বরূপিণে পার্থ সর্বলোকাংশ্চ শাশ্বতান্।।৯।।
অবুদ্ধয়া নাগ্রহীর্যস্ত্বং তন্মে সুমহদপ্রিয়ম্।
ন চ সাদ্য পুনর্ভূয়ঃ স্মৃতির্মে সম্ভবিষ্যতি।।১০।।

-- অর্জুন! সেই সময় অত্যন্ত গোপনীয় জ্ঞানের শ্রবন করিয়েছিলাম। নিজ স্বরুপভূত ধর্ম সনাতন পুরুষোত্তমত্বের পরিচয় দিয়েছিলাম এবং (শুক্ল কৃষ্ণ গতির নিরুপন করে) সম্পূর্ণ নিত্য লোকেরও বর্ণন করেছিলাম।  কিন্তু তুমি যে নিজে না বোঝার কারণে সেই উপদেশের স্মরণ করতে পারছো না, ইহা আমার অত্যন্ত অপ্রিত।  সেই কথার এখন পুরোপুরি স্মরণ সম্ভব নয়।

নূনমশ্রধানোহসি দুর্সেধা হ্যসি পান্ডব।
ন চ শক্য পূনর্বক্তুমশেষেণ ধনন্জয়।।১১।।

- পান্ডুনন্দন! নিশ্চয়ই তুমি বড় শ্রদ্ধাহীন, তোমার বুদ্ধি অত্যন্ত মন্দ।  ধনন্জয়!  এখন আমি সেই উপদেশের বর্ণনা করতে পারবো না।

স হি ধর্মঃ সুপর্যাপ্তো ব্রহ্মণঃ পদবেদনে।
ন শক্যং তন্ময়া ভূয়স্তথা বক্তুমশেষতঃ।।১২।।

-সেই ধর্ম ব্রহ্ম পদের প্রাপ্তি করানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিলো। তাহার সারের ধর্ম সেই রূপে পূনরায় প্রদান করা এখন আমার বশের কথাও নয়।

শ্লোকগুলোতে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানিয়ে দিলেন যে, সেই জ্ঞানের উপদেশ পূনরায় তিনি করতে পারবেন না। কেননা  সেই জ্ঞানের উপদেশ করার মতো অবস্থা তাহার বশে নেই। 
শ্রীকৃষ্ণ কেন সেই  উপদেশ পূনরায় দিতে পারবেন না সেই কথা কে স্পষ্ট করতে তিনি বলেন -

পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া।
ইতিহাসং তু বক্ষ্যামি তস্মবন্নথৈ পুরাতনম্।।১৩।।

-শ্রীকৃষ্ণ বললেন সেই সময় আমি যোগযুক্ত হয়ে পরমাত্মতত্ত্বের বর্ণনা করেছিলাম। এখন সেই বিষয় এর জ্ঞান করানোর জন্য আমি এক প্রাচীন ইতিহাসের বর্ণনা করছি।

শেষের শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ নিজ মুখে স্বীকার করেছেন তিনি যে গীতার উপদেশ করেছিলেন তা যোগে যুক্ত হয়ে। এখন তিনি যোগযুক্ত নেই বলে গীতার উপদেশ না দিয়ে বরং একটি প্রাচীন উপদেশের বর্ণনা করলেন।  অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ যে যোগ যুক্ত হয়ে গীতা জ্ঞান দান করেছিলেন তা অতি  স্পষ্ট।

এখানে উল্লেখ্য যে, যোগে যুক্ত অবস্থায় "আমি" "আমার" শব্দ পরমাত্মার জ্ঞান করায়।  অর্থাৎ প্রাচীনকালে গুরু তাদের শিষ্যকে অহংবোধে উপদেশ করতেন।  যেমন লোকনাথ ব্রহ্মচারী  উপদেশ কালে আমি শব্দের প্রয়োগ করতেন।
ছান্দ্যোগ্য উপনিষদে সনদকুমার অহং বোধে উপদেশ করে বলেছেন →
আমিই অধোভাগে, আমিই উর্ধ্বভাগে, আমিই পশ্চাতে, আমিই সম্মুখে (৭।২৫।১)।
তাছাড়া শঙ্করাচার্য্যও আমি আমার শব্দে উপদেশ করতেন।  সেরূপ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ গীতাই আমি আমার শব্দে পরমাত্মাকে নির্দেশ করেছেন কেননা তিনি তখন যোগে যুক্ত ছিলেন।

[ সন্দর্ভঃ মহাভারত অশ্বমেধিক পর্ব ১৬ অধ্যায়। গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর]

  1. অসাধারণ! প্রাণটা জুড়ে গেল এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আকর্ষণ আরো বেড়ে গেল।

    ReplyDelete