https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গুরুর লক্ষণ - শ্রী দীনবন্ধু বেদ শাস্ত্রী

Monday, October 2, 2017
 
                   

👉 চিকিৎসা শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ হাতুড়ে বৈদ্যের হাতে পড়িলে যেমন রোগীর অকালমৃত্যু ঘটে, নৌকা চালনায় অপট মূর্খ কর্ণধারের হাতে পড়িলে যেমন নৌকা বিপথগামী হয়, অর্থলোভী, ব্যবসায়ী, মূর্খ গুরুর হাতে পড়িলে শিষ্যও তেমনি ধনে-প্রাণে সর্বশান্ত হয় ।
তন্ত্র-শাস্ত্রকার এইজন্যই বলিয়াছেন— 
‘বহবো গুরবঃ সন্তি শিষ্যা বিত্তাপহারকাঃ দূর্লভঃ সদ্গুরু দেবী শিষ্য সন্তাপহারকঃ’ 

→ “হে দেবী ! শিষ্যের ধন অপহরণের জন্য অনেক গুরুই আছে, কিন্তু শিষ্যের সন্তাপ অপহরণের জন্য গুরু পাওয়া দুষ্কর, গুরুর কবল হইতে নিস্কৃতি পাওয়া আজকাল একরূপ অসম্ভব হইয়াছে ।
বহু ব্রাহ্মণ বেদবিদ্যা ভুলিয়া ডাক্তার, কবিরাজ, উকিল, মোক্তার বা কেরাণী সাজিয়াছেন এবং যাহাদের ভাগ্যে তাহা ঘটে নাই, তাঁহারা তিনটির যে কোনও একটি ফুৎকার বৃত্তি গ্রহণ করিয়াছেন —
(১) উনোনে ফুঁ বা পাচকগিরি, (২) শঙ্খে ফুঁ বা পূজারীগিরি এবং (৩) কানে ফুঁ বা গুরুগিরি । এই কান ফুঁকা গুরুদের হস্ত হইতে নিস্কৃতি পাইবার জন্যই শাস্ত্রকারগণ গুরুর লক্ষণ বর্ণনা করিয়াছেন । বেদ প্রথমেই বলিলেন— ‘আচার্যো ব্রহ্মচর্যেণ ব্রহ্মচারিণমিচ্ছতে’ (অথর্ব্ব বেদ ১১। ৫।১৭)
অর্থ — গুরুকে ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন করিতে হইবে, তাহার পর ব্রহ্মচারী বা শিষ্যলাভের ইচ্ছা করিবে । শুধু তাহাই নহে । গুরুর এই সব গুণ আছে কি না পরীক্ষা করিতে হইবে ।
তাঁহাকে শুদ্ধতাপূর্বক বিদ্যাভ্যাসী এবং শিল্প কলা, কৌশল, চিত্র লেখনাদি ও হস্তক্রিয়াদিতে কুশল হইতে হইবে ; তাঁহাকে কর্মদক্ষ চতুর অথচ সরল স্বভাব ও শুদ্ধ হইতে হইবে ; তাঁহার হস্তাদি বৃথা কর্ম হইতে বিরত থাকিবে ; পাঠ্য পুস্তক ও মন্ত্রাদি বিষয়ে তাঁহাকে নিপুণ হইতে হইবে ; ইন্দ্রিয়াদি তাঁহার সবল থাকিবে । কোনরূপে যেন তিনি অঙ্গহীন বা রোগগ্রস্থ না হন ; তাঁহাকে পদার্থ বিদ্যায় পারদর্শী হইতে হইবে । কাহাকেও তিনি নিন্দা করিবেন না । তিনি ক্রোধ হীন, কষ্টসহিষ্ণু, শিষ্যবৎসল ও শাস্ত্রজ্ঞ হইবেন । শিষ্যকে জ্ঞাতব্য বিষয় সহজেই বুঝাইয়া দিবার ক্ষমতা থাকা চাই । যেমন উপযুক্ত সময় মেঘবর্ষণ করিলে শষ্য উৎপন্ন হয় এবং সকলে আনন্দিত হয় । তদ্রুপ শিষ্যের হৃদয়ক্ষেত্রে বিদ্যারুপ মেঘ বর্ষণ করাইয়া তাহাকে সর্ব্বগুণ সম্পন্ন করিতে পারিলে তবে সকলে আনন্দিত হইবে ।
গুরুর এইসব গুণ থাকা চাই । “গুরুকে সমগুণাবলম্বী ইন্দ্রিয়জয়ী, আচার -বিনয় বিদ্যাদি গুণযুক্ত, বিনীত শুদ্ধ বেশধারী, শদ্ধাচার সুপ্রতিষ্ঠা, পবিত্র, দক্ষ, সুবুদ্ধিমান, কুশলবুদ্ধিযুক্ত, সর্ব্বশাস্ত্রে পারদর্শী, নিত্য -নৈমিত্তিক কার্য্যাদিতে সুপটু, শুদ্ধ, দয়ালু, সচ্চরিত্র, সদ্বংশজাত, বিদ্বান পরস্ত্রীতে অনাশক্ত ও দৃঢ়সংকল্প হইতে হইবে ।”