https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদের কৃষ্ণ - মন্ত্র ভাগবত খন্ডন

Wednesday, November 8, 2017

মহাভারতের যুগে আমরা  শ্রীকৃষ্ণ চরিত্রের উল্লেখ পাই। যাহার অবদান মহাভারতের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে। তাহার বীরত্বের গাথা এবং নিপুন জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার কারনে তাহার গৌরবের গাথা পরবর্তীতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।  বৈষ্ণবীয় গাথাতে শ্রীকৃষ্ণ কে নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন রসালো কাহিনী।
 ভাগবত সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্রন্থ।  শ্রীকৃষ্ণ লীলার বিভিন্ন কাহিনী এর মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে।  আমাদের লেখার উদ্যেশ্য ভাগবতের শ্রীকৃষ্ণ কে নিয়ে নয়। বরং বেদের কৃষ্ণ নামক শব্দটি নিয়ে।   নীলকন্ঠ সূরি যিনি  বেদ হতে বিষ্ণু, কৃষ্ণ ইত্যাদি শব্দ বিশিষ্ঠ মন্ত্রের উপস্থাপন করে "মন্ত্র ভাগবত " নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।  এবং গ্রন্থটির মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে,  ভাগবতের কৃষ্ণ এবং বেদের কৃষ্ণ এক। বেদের মধ্যে কৃষ্ণ চরিত্র সুক্ষ্মভাবে রয়েছে। কিন্তু  বেদের মধ্যে ঐতিহাসিক চরিত্র খোজা যে কত বড় মূর্খতা আমরা তাহার বিভিন্ন মন্ত্র উদ্ধৃতির খন্ডন করে প্রমাণ করবো।


♦ কৃষ্ণের  অবতরণ প্রসঙ্গ

কৃষ্ণ নিয়ানং হরয়ঃ সুপর্ণা অপো বসানা দিবমুৎপতন্তি।
ত আববৃত্তন্ত্সদনাদৃতস্যাদিদ্ ঘৃতেন পৃথিবী ব্যুদ্যতে।।
(ঋঃ ১।১৬৪।৪৭, অঃ ৯।১০।২২)

উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন - 

" এই বরণীয় ভর্গদেব শ্রীকৃষ্ণকে (নিয়ানং) ধরাধামে অবতীর্ণ হইতে দেখিয়া (সুপর্ণা) শ্রীকৃষ্ণের শোভন পক্ষ গরুড়াদি বাহন (হরয়ঃ) যজ্ঞভাগ গ্রহনকারী সাধুপুরুষগণ ---- স্বর্গ হইতে আসিয়া (আববত্রন্) গোপ যাদবাদিরূপে শ্রীকৃষ্ণকে পরিবেষ্টন করিয়া অবস্থান করিয়াছিলেন। "
(মন্ত্রভাগবতঃ গোকুলকান্ড,  মন্ত্র সংখ্যা  ৫)



সমীক্ষাঃ  মন্ত্রটিতে কৃষ্ণ শব্দটি দেখে নীলকন্ঠ জী কল্পনার রথে আরোহন করেছেন। প্রথমত তিনি কৃষ্ণকে ধরাধামে অবতীর্ণ করেছেন এবং  সেই সাথে তাহার বাহন এর বর্ণনা করতেও ভূলে যান নি। তিনি যদি  বৈদিক কোষ নিরুক্ত নিঘন্টু আদি ভালোভাবে অধ্যয়ন করতেন তবে এ ভূল তিনি করতেন না।

নিরুক্তকার যাস্ক মন্ত্রটির সুন্দর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করেছেন (নিরুক্ত ৭।২৪)।  কৃষ্ণ শব্দের অর্থ হচ্ছে - আকর্ষন, কালো, অন্ধকার ইত্যাদি। আর সুপর্ণ শব্দটির অর্থ হচ্ছে কীরণ ( সুপর্ণ ইতি রশ্মিনামানি ; নিঘন্টু ১।৫) যেটাকে কিনা নীলকন্ঠ জী গরুড় পাখি বানিয়েছেন ।  অর্থাৎ আকর্ষনযুক্ত সূর্যের কীরণ যে জলকে  অন্তঃরিক্ষে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং সেই জল বৃষ্টির মাধ্যমে পুনরায় ফিরে আসে মন্ত্রে তারই বর্ণনা রয়েছে - 

পদার্থঃ (হরয়ঃ) রস হরণকারী (সুপর্ণঃ) কীরণ (অপঃ) জল (বসানাঃ) আহোরন করে (কৃষ্ণম্) আকর্ষন কারী (নি য়ানম্) নিত্য গমন স্থান অন্তরিক্ষে (দিবম্) প্রকাশময় সূর্যমন্ডলে (উত্ পতন্তি) চলে যায়।  ( তে) তাহাই (আত্) পুনরায় (ঋতস্য) জলের (সদনাত্)  ঘর থেকে (আ ববৃত্তন্) ফিরে আসে,  এবং (ঘৃতেন) জল দ্বারা (পৃথিবীম্) পৃথিবীকে (বি) বিবিধ প্রকারে (উদ্যতে) সিঞ্চন করে।। (ঋঃ ১।১৬৪।৪৭, অঃ ৯।১০।২২)

সায় ভাষ্য: 



এতো সুন্দর পানিচক্রের বর্ণনাকে নীলকন্ঠ জী কৃষ্ণের অবতরণ বানিয়ে  ফেলেছেন। 

♦ কালীয় নাগ দমন প্রসঙ্গ
অপাদোহস্তো  অপৃতন্যদিন্দ্রমাস্য বজ্রমধি সানৌ  জঘান।
বৃষ্ণো বধ্রিঃ প্রতিমানং বুভূষন্ পুরুত্রা বৃত্তো অশয়দ্ ব্যস্তঃ।।
(ঋগবেদঃ ১।৩২।৭)

উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন -

" (অপাদহস্তঃ) হস্তপদহীন সেই কালীয় নাগ (ইন্দ্রং) শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হইয়া (অপূতন্যৎ) তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইলো।  শ্রীকৃষ্ণ (অস্য সানৌ) এই কালিয়নাগের মস্তকে অর্থাৎ ফণার উপর (বজ্রং অঙ্ঘ ন) স্বীয় পদাঙ্করূপ বজ্র প্রহার করলেন --- (বৃত্ত) জলপ্রবাহ রোধকারী কালিয়-- (পুরুত্রা ব্যস্তঃ) বহুপ্রকারে সন্তাড়িত ও নিরন্ত হইয়া (অশয়ৎ) শয়ন করিল অর্থাৎ নিরুদ্যম হইয়া পড়িল "
(মন্ত্রভাগবতঃ বৃন্দাবন কান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ৪)


সমীক্ষাঃ 
মন্ত্রে " বৃত্ত" শব্দটিকে "কালীয় নাগ"  জ্ঞান করে করে নীলকন্ঠ জী সবাইকে ভ্রমে পতিত করেছেন। নিঘন্টুকার যাস্ক বৃত্ত শব্দের অর্থ করেছেন "মেঘ" (বৃত্ত ইতি মেঘস্য নাম; নিঘন্টু ১।১০)।   এবং ইন্দ্র এস্থলে সূর্য (অথঃ যঃ স ইন্দ্রোহসৌ স আদিত্য ; শতঃ ৮।৫।৩।২)।  মন্ত্রটিতে  মেঘ এবং সূর্যের যুদ্ধ  ইন্দ্র এবং বৃত্তের রূপকালঙ্কারে বর্ণনা করা  হয়েছে।  

পদার্থঃ হে সব সেনার স্বামী! আপনি (বৃত্তঃ) যেমন মেঘ (বৃষ্ণঃ) বীর্য সেচনকারী পুরুষ কে (প্রতিমানম্) সমানতা কে (বুভূষন্) প্রার্থনা করে (বধ্রিঃ) নির্বল নপুংসকের  সমান যেই (ইন্দ্রম্) সূর্যলোকের প্রতি (অপৃতন্যত্) যুদ্ধের জন্য ইচ্ছাকারীর সমান (অস্য) এই মেঘের (সানৌ অধি) পর্বতের শিখরের সমান মেঘের উপর সূর্যলোক (বজ্রম্) নিজ কিরণ রুপী বজ্র কে ( জঘান) নিক্ষেপ করেন,  তাহা দ্বারা মৃত মেঘ (অপাদহস্তঃ) হস্ত পদ কাটা মানুষের ন্যায় (ব্যস্তঃ) অনেক প্রকারে ছড়িয়ে পড়ে  (পুরুত্রা) অনেক স্থানে (অশয়ত্) শয়ন প্রদান করেন, এই প্রকার শত্রুকে ছিন্ন ভিন্ন করে সদা বিজয় লাভ করো। (ঋগবেদঃ ১।৩২।৭)

যেমন  তেজ ধারী সূর্য নিজ বজ্ররূপী কিরণ দ্বারা বৃত্ত বা মেঘকে নাশ করেন। এবং সেই মেঘ হস্ত পদহীনের ন্যায় পৃথিবীতে পতিত হন।  তখন সে পৃথিবীতে শয়ন করেন অর্থাৎ ভূমিতে ছড়িয়ে থাকেন। এরূপ চমৎকার বৈজ্ঞানিক  বর্ণনা মন্ত্রটিতে এসেছে। অথচ নীলকন্ঠ জী মন্ত্রটিকে কৃষ্ণ এবং কালীয় নাগের যুদ্ধ বানিয়ে মন্ত্রটিকে ভাগবত বাননোর অপচেষ্টা করেছেন। 

সায় ভাষ্য: 


7 Footless and handless still he challenged Indra, who smote him with his bolt between the shoulders.
Emasculate yet claiming manly vigour, thus Vṛtra lay with scattered limbs dissevered.


♦ গোপীদের বস্ত্রহরণ প্রসঙ্গ

গৌরীর্মিমায় সলিলানি তক্ষত্যেকপদী দ্বিপদী সা চতুষ্পদী। 
অষ্টাপদী নবপদী বভূবুষী সহস্রাক্ষরা পরমে ব্যোমন্।। 
(ঋগবেদ ১।১৬৪।৪১) 

উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন -

"(পরমে ব্যোমন্) যমুনার তীরবর্তী কদম্ব তরুর উচ্চ প্রদেশে অবস্থা  করিয়া (গৌরীঃ) পতিকামনাপরা গোপঙ্গনিনা গণকে (মিমায়) এই বলিয়া নিন্দা করিতে লাগিলেন যে,তোমরা (সলিলানি তক্ষতী) নগ্নাবস্থায় তীর্থ জল স্পর্শ করিয়া ভালো করো নাই ---- যদি সেই দোষ পরিহারের নিমিত্ত ঈশ্বরের নিকট তোমাদের ইচ্ছা থাকে তাহা হইলে ঐ নগ্নবস্থাতেই তোমরা (একপদী দ্বিপদী, চতুষ্পদী, অষ্টপদী নবপদী ভবতঃ) জল হইতে তীর্থেন দিকে অগ্রসর হও --"
(মন্ত্র ভাগবতঃ বৃন্দাবন কান্ড, মন্ত্র সংখ্যা ৩০)


সমীক্ষাঃ
মন্ত্রে "পরমে ব্যোমন " শব্দটির মূলার্থ হচ্ছে " পরম আকাশ" সেটাকে " কদম গাছ" বলে কল্পনা করা কত বড় মূর্খামী সেটা আপনারাই বিচার করুন। সেখানে আবার তিনি যমুনার জল এবং  গোপীগণকেও খুজে পেয়েছেন। এবং সেসব গোপীদের বস্ত্র চুরি করিয়েছেন।  মন্ত্রের এমন অর্থ ভবিষ্যতে হবে জানলে ঋষিগণ লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখতেন।  প্রাচীন মহর্ষি  নিরুক্তাকার যাস্ক মন্ত্রটির অর্থ এই প্রকার করেছেন - 

" গৌ রীর্নির্মিমায় সলিলানি তক্ষতী কুর্বত্যেকপদী মধ্যমেন, দ্বিপদী মধ্যমেন বাদিত্যেন চাদিত্যেন চ,  চতুষ্পদী দিগ্ভিরষ্টাপদী দিগ্ভিশ্বাবান্তরদিগ্ভিশ্চ, নবপদী দিগ্ভিশ্বাবান্তরাদিগ্ভিশ্বাদিত্যেন চ, সহস্রাক্ষরা বহুদকা পরমে ব্যবনে" (নিরুক্ত ১১।৪০)

পদার্থঃ (গৌরী মিমায়) ধ্বনিকারক বাণী বিদ্যুৎ (সলিলানি) জল কে (তক্ষতি) উৎপন্ন করে,  তাহা (একপদী) [মেঘরূপ এক আশ্রয়ে স্থিতির জন্য] একপদী (দ্বিপদী)  [মেঘ এবং বায়ুর আশ্রিতের জন্য ] দ্বিপদী (চতুষ্পদী) [চারি দিশায় ব্যাপক হওয়ার কারনে] চতুষ্পদী (অষ্টাপদী) [ চারিদিশা এবং উপদিশায় ব্যাপক হওয়ার কারনে] অষ্টাপদী (নবপদী) [উপরের উর্ধ্ব দিশায় ব্যাপক হওয়ার কারনে ] নবপদী (বভূবুষী) হয়ে (সহস্রাক্ষরা)  সহস্র প্রকারে জলপ্রস্রবন করে (পরমে ব্যোমন্)  পরম আকাশে চমকাতে থাকে।  (ঋগবেদ ১।১৬৪।৪১)  

সায় ভাষ্য: 


মন্ত্রটিতে আকাশে বিদ্যুৎ শব্দ  করে যে বৃষ্টির উৎপন্ন করে তারই বর্ণনা এসেছে। অথচ নীলকন্ঠ জী সেখানে গোপীদের যমুনা নদীতে নগ্ন হয়ে স্নান তথা বস্ত্র চুরি ইত্যাদির মনোকল্পিত ব্যাখ্যা করেছেন।

♦ শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা প্রসঙ্গ

সেনেব সৃষ্টামং দধাত্যস্তুর্ন দিদ্যুত্বেষপ্রতীকা।
যমো হ জাতো যমো জনিত্বং জারঃ কনীনাং পতির্জনীনাম্।।
(ঋগবেদ ১।৬৬।৪)

উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন -

" ভগবান শ্রীকৃষ্ণই (যমঃ) অগ্নিরূপ অন্তর্যামী........... এবং তিনিই (কনীনাং) কণ্যাগণের অর্থাৎ বজাঙ্গনাগনের (জার) উপপতি এবং (জনীনাং) ব্রজ যুবতীগণের অথবা দ্বারকাদি ধামে মহিষীগণের (পতি) স্বামীরূপে যেমন তাহাদের হৃদয়ে (অমং দধাতি) সুখ বিধান করিয়া থাকেন।  সেইরূপ কন্যা ও যুবতী গণও তাহাদের সেই জার ও পতির হৃদয়ে সুখের অমৃতধারা বহাইয়া থাকেন। " 
(মন্ত্র ভাগবতঃ বৃন্দাবন কান্ড,  মন্ত্র সংখ্যা ৩২)



সমীক্ষাঃ মন্ত্রে নীলকন্ঠ জী  শ্রীকৃষ্ণের কণ্যাগনের অর্থাৎ ব্রজাঙ্গনাদের (জার) উপপতি  রূপে  কল্পনা করেছেন। নিরুক্ত ১।১৬  তে আদিত্য অর্থাৎ সূর্যকে জার বলা হয়েছে " আদিত্যহত্রজার উচ্যতে, রাত্রের্জরয়িতা "।  অর্থাৎ সূর্য রাত্রীর জীর্ণকারী বলে রাত্রীর জার।  ঋগবেদ ১।১২৭।৮ এ রাত্রিকে "দিব দুহিত" রাত্রীর কণ্যা রূপে বর্ননা করা হয়েছে। অর্থাৎ সূর্যের উদয়ে রাত্রি ক্ষীণ  হয়ে যায় এজন্য এ মন্ত্রে  কণ্যাবত রাত্রীর জার আদিত্যের বর্ণনা করা হয়েছে। 

পদার্থঃ হে মনুষ্যো! তোমরা যে সেনাপতি (যমঃ) নিয়মকারী (জাতঃ) প্রকট (যমঃ) সর্বদা নিয়ম কর্তা (জনিত্বম্) জন্মাদি কারণযুক্ত (কনীনাম্) কন্যাবত্ বর্তমান রাত্রির (জারঃ) আয়ুর হননকর্তা সূর্যের সমান (জননীনাম্) উৎপন্ন প্রজার (পতি) পালনকর্তা (সৃষ্টা) প্রেরিত (সেনেব) উত্তম শিক্ষা কে প্রাপ্ত বীর পুরুষের বিজয় কারী সেনার সমান (অস্তুঃ) শত্রুর উপর অস্ত্র শস্ত্র চালনকারী (ত্বেষপ্রতীকা)  দীপ্তির প্রতীতি কারী (দিদ্যুত্ত) বিজুলীর সমান (অমম্) অপরিপক্ব  বিজ্ঞানযুক্ত জনকে (দধাতি) ধারন করেন,  তাহার সেবন করো। (ঋগবেদ ১।৬৬।৪)

সায় ভাষ্য: 
4 He strikes with terror like a dart shot forth, e’en like an archer's arrow tipped with flame;
Master of present and of future life, the maidens’ lover and the matrons’ Lord.

অতএব নীল কন্ঠ জীর মন্ত্রে রাসলীলার বর্ননা খোজা কতটা কতটা যৌক্তিক আর সমীচিন হতে পারে? 

♦ কংস বধ প্রসঙ্গ 

ইন্দ্রো বিশ্বৈবীর্যৈঃ পত্যমান উভে আ প্রপৌ রোদসী মহিত্বা।
পুরংদরো বৃত্তহা ধৃষ্ণুষেণঃ সংগৃভ্যা ন আ ভরা ভূরি পশ্চঃ।।১৫।।
(ঋগবেদ ৩।৫৪।১৫)

উক্ত মন্ত্রের অর্থ নীলকন্ঠ জী এই প্রকার করেছেন -

"(ইন্দ্রঃ) শ্রীকৃষ্ণ (বিশ্বৈবীর্যে) সমস্ত বলের সহিত (পত্যমানং) পতিত হইয়া অর্থাৎ রঙ্গমঞ্চ হইতে ভূতলে নিপাতিত কংসের উপর পতিত হইয়া  (মহিত্বা) মহত্বের দ্বারা (উভে রোদসী) অন্তরিক্ষ ও পৃথিবীমন্ডল (আপপ্রৌ) পূর্ণ করিলেন অর্থাৎ স্বীয় অন্তর্গত ত্রিলোকের ভার তাহার উপর নিক্ষিপ্ত করিলেন। "
(মন্ত্র ভাগবতঃ মথুরা কান্ড,  মন্ত্র সংখ্যা ২)


সমীক্ষাঃ নীলকন্ঠ জী অত্যন্ত চতুরতার সহিত বেদ মন্ত্রটিকে ব্যবহার করেছেন। পূর্বের কালীয় নাগ দমন প্রসঙ্গে তিনি "বৃত্ত" অর্থ কালীয় নাগ করেছিলেন।  এ স্থলে তিনি "বৃত্ত" অর্থ কংস করেছেন।  অর্থাৎ ভাগবতের সাথে মিল করানোর জন্য তিনি প্রতিটা শব্দকে তিনি সুবিধামত অর্থ গ্রহন করে অনুবাদ করেছেন।  প্রাচীন কোন বেদ ভাষ্যকারদের মধ্যে এরূপ কোন ভাষ্য দেখা যায় না যারা বেদের মধ্যে ভাগবত কে খুজে পেয়েছেন। মন্ত্রটিতে বৃত্ত হন্তার উপমা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন বৈদিক কোষ নিঘন্টুতে   বৃত্ত ইতি মেঘস্য নাম; নিঘন্টু ১।১০। অর্থাৎ মেঘের হন্তা সূর্যকে বলা হয়েছে - 

পদার্থঃ হে রাজন! যে (বৃত্তহা) মেঘের নাশকারী সূর্যের সদৃশ (পুরন্দরঃ) শত্রুর নগরীর নাশ কারী (পত্যমানঃ) স্বামীর সদৃশ আচরন করে (ধৃষ্ণুসেনঃ) দৃঢ সেনা এবং (ইন্দ্রঃ) অত্যন্ত ঐশ্বর্যযুক্ত রাজা আপনি (বিশ্বৈঃ) সম্পূর্ণ (বীর্যৈঃ) পরাক্রম দ্বারা (মহিত্বা) মহিমা দ্বারা (উভে) উভয় (রোদসী) ন্যায় এবং ভূমির রাজ্য কে ( প্রপৌ) ব্যপ্ত করে, আপনি (ভূরি) অনেক (নঃ) আমাদের এবং (পশ্চঃ) পশুদের (সংগৃভ্য) উত্তম প্রকারে গ্রহন করে (আ, ভর) সব প্রকার পোষণ করুন।।

ভাবার্থঃ যেমন ভূমি এবং সূর্য সব পদার্থের ধারণ এবং উত্তম প্রকার পোষণ করে বৃদ্ধি করে,  ওইরূপই রাজা আদি অধ্যক্ষ্য সমস্ত উত্তম গুণের ধারণ,  প্রজার পোষ্ণ,  সেনার বৃদ্ধি এবং শত্রুর নাশ করে প্রজার বৃদ্ধি করবে। 

সায় ভাষ্য: 


আমরা নীলকন্ঠ সুরি রচিত মন্ত্রভাগবত হতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রের উপস্থানপন এবং সেগুলোর সমীক্ষা করে দেখিয়েছি বেদের বর্ননা কোন ঐতিহাসিক চরিত্রের নয়। বরং বেদের বর্ননা নিত্য সত্য জ্ঞানের। পাঠকগণ নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন নীলকন্ঠ সুরি জী কতটা চতুরতার সহিত বেদের মন্ত্রগুলোকে ভাগবতের সাথে মিল করানোর চেষ্টা করেছেন।