https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ভাষ্যাদিকরণ শঙ্কা সমাধানঃ যজুর্বেদ ৩১।১

Wednesday, March 7, 2018

দু চার সংস্কৃত লাইন পড়া পৌরানিক নবীন বালকগুলো যারা কিনা লীলা রসে প্রবাহিত তারা  বেদের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে। এদের ব্যাখ্যার ভিত্তি হলো হরফ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বেদের বাংলা ভাষ্যগুলো।  যেগুলো রমেশচন্দ্র মজুমদার,  বিজনবিহারী গোস্বামী,  পরিতোষ ঠাকুর কর্তৃক বাংলাতে । এসব ভাষ্যগুলোতে ব্যকরনগত  ত্রুটি থেকে শুরু করে অশ্লিলতা তথা অসার অনুবাদে পরিপূর্ণ
 তথাপি এসব পৌরাণিক বালক গুলো  রমেশ তথা বিজন বিহারী বলতে একদম অন্ধ [যেহেতু তারা লীলার রসে প্রবাহিত]।  এসব ভাষ্য থেকে যদি দু চারটা তথ্য উপস্থাপন করা হয়ে তবে এসব পৌরাণিক  বালকগুলোর "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি" অবস্থা শুরু হবে। অথচ এরাই কিনা আবার অন্যান্য ভাষ্যের ভূল ধরে।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর সমন্ধ্যে এদের আবার খুব এলার্জী কারন তিনি এসব পৌরাণিক ঈশ্বর ধারণার উচ্ছেদ করেছেন বলে।  পৌরাণিক ঈশ্বর ধারণা এরকম যে, তিনি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসে জগৎ কে নিয়ন্ত্রন করছেন। এবং তাহার একটি নির্দিষ্ট গঠন রয়েছে অর্থাৎ হাত পা চোখ ইত্যাদি [যদিও বেদের বর্ণনায় এসব অলংকারিক]  কিন্তু যিনি সর্বত্র বিরাজমান এমন কোন space নেই যে  তিনি সেখানে নেই তাহলে তাহাকে কিভাবে একটা নির্দিষ্ট গঠনকে সর্বত্র ছড়িয়ে রাখবেন?  মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ঈশ্বর সমন্ধ্যে এরূপ ধারণার প্রচার করেছেন বলে পৌরাণিক বালকগুলোর অন্তরের সন্তাপের জ্বালা প্রজ্জলিত হয়েছে। তারা ঈশ্বরের গঠন প্রদান করতে বেদের পুরুষ সুক্তের একটি  মন্ত্রের উল্লেখ করে এবং তৎপরে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুবাদ ভূল বলে চালায়।  তারা বেদ সমন্ধে যে কতটা বিশেষ - অজ্ঞ তা আলোচনায় স্পষ্ট হবে।  মন্ত্রটি -

সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাত্।
স ভূমিং সর্বত স্পৃত্বাহত্যষ্টদ্দশাঙ্গুলম্।।
(ঋগবেদ ১০।৯০।১, যজুর্বেদ ৩১।১)

মহর্ষিকৃত অর্থ -

পদার্থঃ হে মনুষ্য! যে (সহস্রশীর্ষা) সমস্ত প্রানীর সহস্র শির (সহস্রাক্ষঃ) সহস্র নেত্র এবং (সহস্রপাত্) অসংখ্য পাদ যাহার মধ্যে,  ওইরূপ (পুরুষঃ) সর্বত্র পরিপূর্ণ ব্যাপক জগদীশ্বর (সঃ) তিনি (সর্বতঃ) সমস্ত দেশে (ভূমিম্) ভূগোলে (স্পৃত্বা) সব প্রকারে ব্যপ্ত হয়ে (দশাঙ্গুলম্) পাঁচ স্থুলভূত,  পাঁচ সুক্ষভূত  এই দশ যাহার অবয়ব,  উক্ত সমস্ত জগৎ কে (অতি অতিষ্ঠত্) উলঙ্ঘন করে স্থিত অর্থাৎ সব কিছু থেকে পৃথক হয়ে স্থিত।

পৌরাণিক আক্ষেপঃ উক্ত মন্ত্রে কোন মনুষ্য কিংবা প্রাণীর কথা বলা হয় নি তবে দয়ানন্দ সরস্বতী কিভাবে প্রাণী কিংবা মনুষ্যের কথা তুললেন?  দেখুন বিজনবিহারীর ভাষ্য - 
"অসংখ্য যার মস্তক চক্ষু ও চরণ সে পুরুষ ব্রহ্মান্ডলোক ব্যেপে দশ আঙ্গুলি পরিমিত হৃদয় প্রদেশে অন্তর্যামী পুরুষরূপে অবস্থান করেন।"
[ ভাষ্যকার--বিজন বিহারী ]
অতবএব দয়ানন্দ ছল করে এরকম অর্থ করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি --

প্রত্যুত্তরঃ আচ্ছা পৌরাণিক মশাই বিজন বিহারী কার ভাষ্য থেকে অনুবাদ করেছে তা জানেন তো? যদি না জানেন তবে ভূমিকা অংশ পড়ে নেবেন। সেখানে বিজন বিহারী বলেছেন তিনি তারা ভাষ্য মহিধর,  সায়নের ভাষ্য অবলম্বন করে লিখেছেন।


আর যজুর্বেদের উক্ত মন্ত্রের  মহিধর ভাষ্য নিজে কখনো দেখেছেন না কি বিজন বিহারী পর্যন্তই দৌড় আপনার?  আচ্ছা মহিধর ভাষ্য দেখুন - "যানি সর্বপ্রাণিনাং শিরাংসি তানি সর্বাণি তদ্দেহান্তঃ পাতিত্বাত্ তসৈবেতি সহস্রশীর্ষত্বম" অর্থাৎ সমস্ত প্রাণীর শির যাহার মধ্যে তাহাকে সহস্রশীর্ষ বলে জানবে।

সায়ন আচার্য্য উক্ত মন্ত্রের ভাষ্যে ঋগবেদের পুরুষ সুক্তের ১ম মন্ত্রে বলেছেন -

"সর্বপ্রাণিসমষ্টিরূপো ব্রহ্মাণ্ডদেহী বিরাডাখ্যো  যঃ পুরুষ সোহয়ং সহস্রশীর্ষা। সহস্রশব্দস্যোপলক্ষণত্বাদনন্তৈঃ শিরোভির্যুক্ত ইত্যর্থঃ। যানি সর্বপ্রাণিনাং শিরাংসি তানি সর্বাণি তদ্দেহান্তঃপাতিত্বাত্তদীয়ন্যেদেতি সহস্রশীর্ষত্বম্।"


অর্থাৎ এখানে  পুরুষ দ্বারা বিরাট পুরুষ অভিপ্রেত যিনি সমস্ত প্রাণীর সমষ্টিরূপ।  সহস্র শব্দের অর্থ অনন্ত।  সমস্ত প্রাণীর যে অনন্ত শির তাহা সব ঈশ্বরের মধ্যে।  অতএব তাহার শির,  ইহা বলা হয়েছে,  এজন্য ঈশ্বরের সহস্র শির বলা হয়েছে


মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীও একই ভাবে তাহার ভাষ্যে নিরুক্তের পুরুষ এবং সহস্র শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রার্থ সরল করেছেন [ঋগবেদ ভাষ্যভূমিকা সৃষ্টিবিদ্যাবিষয় দ্রষ্টব্য ]।
"পুরুষঃ পুরিপাদঃ পরিশয়ঃ পুরয়তের্বা পুরয়স্যন্তরিত্যন্তরপুরুষমভিপ্রেত্য"
(নিরুক্ত ২।৩)

মন্ত্রে পুরুষ শব্দ বিশেষ্য এবং অন্যান্য পদ তাহারই বিশেষন। যিনি সমস্ত জগতে পূর্ণভাবে বিদ্যমার তাহাকেই পুরুষ বলে।  পুর শব্দে ব্রহ্মান্ড ও শরীর উভয়ার্থ বাচক। অতএব যিনি সমগ্র ব্রহ্মান্ডে ও মানবাদির শরীর স্থিত  দেহীরূপ জীবাত্মার অন্তরে অন্তর্যামীরুপে বিরাজমান তাহাকেই পুরুষ বলা হয়।

সহস্র শব্দে সম্পূর্ণ জগৎ ও অসংখ্য বুঝায় - " সর্ব বৈ সহস্রম" শতপথ  ৪।৬।১।১৫।  এজন্য যাহার মধ্যে বা ব্যাপকতায় জগতে অসংখ্য শিরঃ চক্ষু পদাদি স্থিত রহিয়াছে।  তাহাকে সহস্রশীর্ষা,  সহস্রাক্ষ ও সহস্রপাৎ বলা যায়। যেহেতু তিনি অনন্তরূপে বর্তমান রয়েছেন। যেরূপ আকাশের মধ্যে বা ব্যপকতায় সমস্ত পদার্থ স্থিত কিন্তু সেই আকাশ সমগ্র পদার্থ হতে পৃথক সেরূপ পরমেশ্বরকেও জানবে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মহর্ষির ভাষ্য সায়ন,  মহিধর সমর্থিত। অথচ এই নবীন বালকগুলো না জেনে দয়ানন্দ সরস্বতীকে  কটুক্তি করে বরং তাদের আদরণীয় মহিধর,  সায়ন কেই কটুক্তি করলো।
তাই বলি কি পৌরাণিক মশাই অন্যের ধুতি টানতে যাবার পূর্বে নিজের ধুতি টা সামলে রাখবেন। নতুবা বিপদ কিন্তু আপনার নিজেরই ঘটবে।



Author

Unknown

  1. অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহসংভূতিমুপাসতে।
    ততো ভুয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাঃ রতাঃ।।

    যজুর্বেদ ৪০/৯) দয়ানন্দ ইহার এই অর্থ লিখেছে -
    “যাহারা ব্রহ্মের স্থানে ‘অসম্ভতি’ অর্থাৎ অনুৎপন্ন অনাদি প্রকৃতি কারণের উপাসনা করে, তাহারা অন্ধকার অর্থাৎ অজ্ঞানতা এবং দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয়। আর যাহারা ব্রহ্মের স্থানে ‘সম্ভূতি’ অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির শরীরের উপাসনা করে, তাহারা উক্ত অন্ধকার অপেক্ষাও অধিকতর অন্ধকার অর্থাৎ মহামূর্খ চিরকাল ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করে।”
    (সত্যার্থ প্রকাশ, ১১শ সমুল্লাস দেখুন)

    সমীক্ষাঃ যজুর্বেদ ৪০/১১ নং মন্ত্রে আছে ‘সম্ভূত্যাহমৃতমশ্নুতে’ অর্থাৎ সম্ভূতি দ্বারা অমৃতত্ব লাভ হয় ৷ তাহলে দয়ানন্দের ভাষ্য অনুযায়ী বলতে হয়— যারা ‘সম্ভূতি’ অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ ও বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদির শরীরের উপাসনা করে, তারা অমৃতত্ব লাভ করে ৷ কিন্তু দয়ানন্দ ইহার বিরোধীতা করেছেন ৷ এজন্যই কি তিনি নিজেই ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করিলেন? তিনি পরলোকের বাহ্যিক স্বর্গ-নরক মানতেন না, এইজন্যই কি জীবদ্দশাতেই তাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হলো? কেন তিনি বিষের যন্ত্রণারূপ নরকে পতিত হইয়া তিলে তিলে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে মারা গেলেন, পবিত্র বেদের এইরুপ বিকৃত অর্থ করার জন্যই কি?

    যজুর্বেদ ৪০/৯-১১ মন্ত্র তিনটির শ্রীঅরবিন্দ কৃত অনুবাদ ও ব্যাখ্যা (ঈশোপনিষদ ১২-১৪ হতে) দেখুন ৷—

    অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহ’সম্ভূতিমুপাসতে ৷
    ততো ভূয়া ইভ তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ ৷৷

    Into a blind darkness they enter who follow after the Non-Birth, they as if into a greater darkness who devote themselves to the Birth alone.
    অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুরসম্ভাৎ ৷
    ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ৷৷
    Other, verily, it is said, is that which comes by the Birth, other that which comes by the Non-Birth; this is the lore we have received from the wise who revealed That to our understanding.

    সম্ভূতিং চ বিনাশঞ্চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ৷
    বিনাশেন মৃত্যুং তীর্ত্বা সম্ভূত্যাহ’মৃতমশ্নুতে ৷৷

    He who knows That as both in one, the Birth and the dissolution of Birth, by the dissolution crosses beyond death and by the Birth enjoys Immortality.

    ব্যাখ্যাঃ প্রকৃতির বাইরে আত্মার চলনা বা ভূতি হয় না। আত্মা অপরিবর্তনীয় ও সনাতন। প্রকৃতির মধ্যে আত্মা বিভিন্ন নামরূপে ও বিভিন্ন অবস্থায় প্রকাশিত হয়। আত্মার দুটি অবস্থা-- একটি সর্বগত, অপরটি সর্বাতীত; একটি প্রকৃতিতে গতিশীল, অপরটি প্রকৃতির ঊর্ধে স্থিত। আত্মার এই দুটি অবস্থার জন্যই মানবীয় চেতন সত্তার দুটি ভাব দেখা যায়। একটি জন্ম বা 'সম্ভূতি', অপরটি অজন্ম বা 'অসম্ভূতি'। মানুষ জন্মের বিক্ষুব্ধ অবস্থা থেকে যাত্রা করে এবং ক্রমে এই গতি থেকে মুক্ত হয়ে চেতনসত্তার যে নিষ্ক্রিয় শান্ত অবস্থা তাতে পৌঁছায়-- এটাই 'অসম্ভূতি'। প্রকৃতিতে জন্মের গ্রন্থি হচ্ছে অহং জ্ঞান। এই অহং জ্ঞান বিনষ্ট হলে মানুষ অসম্ভূতির অবস্থা প্রাপ্ত হয়। এই কারণেই অসম্ভূতিকে বলা হয়েছে বিনাশ। সম্ভূতি ও অসম্ভূতি দৈহিক অবস্থা নয়, আত্মিক অবস্থা। অহং জ্ঞানের গ্রন্থি ছেদ করেও কোন লোক জড় দেহে থাকতে পারে। কিন্তু সে যদি অহং জ্ঞানের বিনাশের উপর চিত্তকে সমাহিত করতে পারে তবে তার আর জড় দেহে জন্ম হয় না। প্রকৃতির প্রেরণায় গঠিত বর্তমান দেহ শেষ হলে সে মুক্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে সে যদি সম্ভূতিতেই আসক্ত হয় তবে তার অহং- সত্তা সর্বদাই নতুন নতুন দৈহিক ও মানসিক রূপে প্রকাশ পাবার চেষ্টা করে। সম্ভূতি বা জন্মের অবস্থার উপর আসক্তির অর্থ আত্মাকে ক্রমাগত সীমাবদ্ধ করা এবং আমিত্ব বোধের নিম্ন থেকে নিম্নস্তরে জন্মগ্রহণ। এই অবস্থা থেকে উন্নততর অবস্থা লাভ বা মুক্তিলাভের কোন সম্ভাবনা থাকে না। এই অবস্থা অজ্ঞানের অন্ধকার থেকেও গভীর। কারণ এই অবস্থায় মুক্তির যে প্রেরণা তাও নষ্ট হয়ে যায়। সম্ভূতিকে (জন্মকে) তাই উন্নতি ও আত্মপ্রসারণের উপায় রূপে গ্রহণ করে মহত্তর পূর্ণতর জীবন লাভের পথে চলা ও ক্রমে তাই চরম লক্ষ্য সাধনের সিঁড়ি হয়ে উঠে।

    ReplyDelete
  2. দয়ানন্দ বলেন, ঈশ্বর কেবল নিরাকার, তাঁর সাকার হওয়ার ক্ষমতা নেই ৷ যদি তিনি সাকার হন, তবে তিনি একদেশী, সসীম হবেন, সর্বব্যাপী হতে পারবেন না ৷ এইরুপ অল্পবুদ্ধির অজ্ঞানপ্রসূত মন্তব্যের বিপরীতে শ্রীঅরবিন্দ বলেন— “ভগবান বন্ধনরহিত, তিনি নিরাকার ও সাকার, সাধককে সাকার হইয়া দর্শন দেন— সেই আকারে পূর্ণ ভগবান রহিয়াছেন, অথচ সেই একই সময়ে সমগ্র ব্রক্ষান্ড ব্যাপিত হইয়া আছেন। কেননা ভগবান দেশকালাতীত, অতর্কগম্য, দেশ ও কাল তাঁহার খেলার সামগ্রী। তিনি এই দেশ ও কালরুপ জাল ফেলিয়া সর্বভূতের সাথে ক্রীড়া করিতেছেন, আমরা কিন্তু তাঁহাকে সেই জালে ধরিতে পারিব না। যতবার তর্ক ও দার্শনিক যুক্তি প্রয়োগ করিয়া সেই অসাধ্য সাধন করিতে যাই, ততবার রঙ্গময় সেই জালকে সরাইয়া আমাদের অগ্রে, পিছনে, পার্শ্বে, দূরে, চারদিকে মৃদু মৃদু হাসিয়া বিশ্বরুপ ও বিশ্বাতীত রুপ প্রসার করিয়া আমাদের বুদ্ধিকে পরাস্ত করেন ৷”

    ReplyDelete
  3. “বেদ ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে বেদের চূড়ান্ত পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, দয়ানন্দ সম্মানিত হবেন প্রথম সঠিক সূত্র আবিষ্কারক হিসেবে ৷” এইকথাতে কিন্তু স্পষ্ট যে দয়ানন্দের বেদ-ব্যাখ্যা চূড়ান্ত তথা নির্ভুল না ৷ কারণ হিসেবে বলা যায় যে, দয়ানন্দের বেদভাষ্যে ক্রম-ভঙ্গ দোষ দেখা যায় ৷ তার ঋগ্বেদ ভাষ্যের অনেক স্থলেই দেখা যায় যে, কোন সূক্তের একটি মন্ত্রকে ঈশ্বরপক্ষে ব্যাখ্যা করলেও ঠিক পরের মন্ত্রটিকে একইভাবে ঈশ্বরপক্ষে ব্যাখ্যা করতে তিনি সক্ষম হননি ৷ এই ক্রম-ভঙ্গ দোষ দেখে, ধর্মানন্দ সরস্বতী সেসব স্থলে নিজে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৷
    (উদাহরণস্বরূপ- দয়ানন্দ কৃত ঋগ্বেদ ভাষ্যের ধর্মানন্দ সরস্বতী কৃত ইংরেজি অনুবাদ, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬২ দেখুন)



    শ্রীঅরবিন্দ দয়ানন্দের বেদভাষ্য সম্পর্কে আবার বলেছেন ৷—


    “দয়ানন্দ বেদের যে ব্যাখ্যা করেছে তা এই ধারণা দ্বারা শাসিত হয়েছে যে বেদ হলো আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সত্যের এক সর্বাঙ্গীন প্রকাশ ৷” বেদ আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও বৈজ্ঞানিক সত্যের ভান্ডার— একথাগুলো বেশ ভালো, কিন্তু আমাদের বক্তব্য এই যে, বেদের প্রকৃত সত্য নির্ণয় করতে হলে বেদ ঠিক যেরুপ সেইরুপই ব্যাখ্যা করা উচিত, নিজস্ব কোন ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে বেদ ব্যাখ্যা করতে গেলে সেইসব ধ্যান-ধারণারই অনুবাদ হয়, প্রকৃত সত্য নির্ণয় হয় না ৷ যাহোক, শ্রী অরবিন্দ বলেছেন যে দয়ানন্দের মতবাদ অনুসারে - “বেদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব হলো একেশ্বরবাদ ও বৈদিক দেবতারা হলেন এক দেবের বিভিন্ন বর্ণনাত্মক নামমাত্র ৷” দয়ানন্দ দেবতাদের রূপ স্বীকার করত না, দয়ানন্দের এইরুপ মতবাদের বিরুদ্ধে শ্রীঅরবিন্দ বলেন— “সত্য বটে ঋগ্বেদ নিজেই বলেছে যে দেবতারা হলেন এক বিশ্বাত্মক সৎ-এর বিভিন্ন নাম ও প্রকাশ, যিনি আবার বিশ্বকে অতিক্রম করেও আপন স্বরুপে অবস্থান করেন ৷ কিন্তু সূক্তগুলোর বক্তব্য থেকে আমরা এই উপলব্ধি করতেও বাধ্য যে শুধু নামই নয়, দেবতারা হলেন এক সত্তার রূপ, শক্তি ও ব্যষ্টি প্রকাশ ৷ বেদের একেশ্বরবাদে অদ্বৈতবাদ, সর্বেশ্বরবাদ, বহুদেবতাবাদও অন্তর্ভূক্ত ৷ যদি আমরা বেদের মন্ত্রগুলোর সাথে প্রবল ধ্বস্তাধ্বস্তি করি, তাহলেই শুধু তার ওপর আমরা (দয়ানন্দের মতো) একটি কম জটিল মতবাদ জোর করে চাপাতে পারি ৷”
    এইকথাতে স্পষ্টই অনুমান করা যায় যে, দয়ানন্দ তার নিজস্ব মতবাদকে বেদের ওপর চাপাতে গিয়ে বেদমন্ত্রের অর্থ কতটা টানা-হেঁচড়া করেছে ৷ শ্রী অরবিন্দ কপালী শাস্ত্রী ইনস্টিটিউট এর বেদভাষ্যকার R L Kashyap তার ঋগ্বেদ ভাষ্যের শেষে লিখেছেন— “দয়ানন্দ একই শব্দের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্থ করেছে, যাতে করে তিনি কোন মন্ত্রের যেরুপ অর্থ আকাঙ্ক্ষা করেন, সেরুপ অর্থই বানাতে পারেন ৷” অর্থাৎ দয়ানন্দের বেদভাষ্য হচ্ছে তার নিজস্ব মতবাদের ভাষ্য

    ReplyDelete