
বিশ্বকর্মার উপাসনা বা প্রর্থনা
করে না। এটা কি ঠিক দাদা?
.
উত্তর - যারা এটা বলে, তারা হয়তো সত্য জানে না অথবা সত্য জানলেও আর্যদের নামে মিথ্যাচার করছে। বিশ্বকর্মা শব্দের অর্থ বিবিধ জগৎ উৎপাদক অর্থাৎ যিনি এই জগৎকে উৎপন্ন করে তাকেই বিশ্বকর্মা বলে। অর্থাৎ বিশ্বকর্মা বলতে এক পরমেশ্বরকেই বুঝায়। আর্যরা এইরূ বিশ্বকর্মারই প্রর্থনা করে।
তবে বতর্মানে হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বকর্মার পূজা
(পৌরাণিক রীতিতে ছবিতে যা দৃশ্যমান) আর্যরা করে না।
দেখুন আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা
,যুগান্তকারী বেদভাষ্যকার ও সর্ব
ত্যাগী বেদজ্ঞ সন্যাসী মহর্ষি
দয়ানন্দ সরস্বতি ওনার রচিত
আর্য্যাভিবিনয. গ্রন্থে বেদ
মন্ত্রের ব্যাখ্যায় কি ভাবে
বিশ্বকর্মার প্রার্থনা করেছেন,
যজুবেদের ১৭নং অধ্যায়টাই মূলত
বিশ্বকর্মা কে নিয়ে। এই অধ্যায়ের
ঋষি হল ভুবনপুত্রো বিশ্বকর্মা,
দেবতা বা বিষয় হল বিশ্বকর্মা,
নিম্নে কিছু মন্ত্র ও তার ব্যাখ্যা
দেওয়া হল-
.
বিশ্বকর্মা বিমনা আদ্বিহাষা ধাতা
বিধাতা পরমোত সনদৃক্।
তেষামিষ্টানি সমিষা মদন্তি যত্রা
সপ্ত ঋষীন্ পর একমাহুঃ।।
যজুর্বেদ ১৭।২৬.
ব্যাখ্যা- সর্বজ্ঞ সর্বরচক ঈশ্বর
বিশ্বকর্মা এবং অনন্ত বিজ্ঞানবান
তথা সর্বব্যাপক ও আকাশবৎ
নির্বিকার, অক্ষোভ্য এবং
সর্বাধিকরণ। তিনিই জগতের
ধারণকর্তা ,উয়পাদক এবং
সর্বোৎকৃষ্ট যথাবৎ সকলের পাপ ও
পুণ্যের দ্রষ্টা। যে জন সেই
ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ,বিশ্বাস এবং
তারই উপাসনা করে, অন্য কারো
প্রতি লেশমাত্র বিশ্বাস রাখে না, সে
সর্বপ্রকার অভীষ্ট লাভ করে থাকে,
অন্য কেহ করে না। সেই ঈশ্বর
আপন ভক্তগণকে সুখেই রাখেন এবং
সেই ভক্তগণ সম্যক সেচ্ছায়
পরমানন্দেই নিবাস করে, তারা
কদাপি দুঃখ ভোগ করে না। সেই
পরমাত্মা এক এবং অদ্বিতীয়।
সামর্থ্যে সপ্ত অর্থাৎ পঞ্চপ্রাণ
সূত্রাত্মা ও ধনঞ্জয়, এই সব
প্রলয়বিষয়ক কারভূতে থাকে ,তিনিই
জগৎ উৎপত্তি স্থিতি ও প্রলয়
বিষয়ে নির্বিকার আনন্দস্বরূপ
থাকেন। তার উপাসনা করলে আমরা
সদা সুখে থাকতে পারবো।
বাচস্পতি বিশ্বকর্মাণমুতয়
মেনোজুয়ং বাজে অদ্যা হুবমে।
স নো বিশ্বানি হবনানি
জোষদ্বিশ্বশম্ভুরবসে সাধুকর্মা।।
(যজুর্বেদ ১৭।২৩)
.
পদার্থঃ (বাচস্পতি) বেদ বাণীর
স্বামী (বিশ্বকর্মাণম) সমস্ত
কার্যের কর্তা (মনোজুয়ম) মনের
সমান গতিকারী (বাজে) সংগ্রামে
(উতয়ে) রক্ষা আদির জন্য (অদ্যা)
আজ (হুবমে) আহ্বান করি (স) সেই
প্রভূ (নঃ) আমাদের (বিশ্বানি)
সমস্ত (হবনানি) আহ্বান কে
(জোষত) শ্রবন করেন [তিনি]
(বিশ্বসম্ভু) বিশ্বের কল্যাণকারী
এবং (অবসে) রক্ষা আদির জন্য
(সাধুকর্মা) উত্তম কর্মকারী।
.
সরলার্থঃ বেদ বাণীর স্বামী সমস্ত
কার্যের কর্তা মনের সমান গতিকারী,
সংগ্রামে রক্ষা আদির জন্য আজ
আহ্বান করি। সেই প্রভূ আমাদের
সমস্ত আহ্বান কে শ্রবন করেন
[তিনি] বিশ্বের কল্যাণকারী এবং
রক্ষা আদির জন্য উত্তম
কর্মকারী।
এখন ব্যাখ্যা ছাড়া বিশ্বকর্মা
সম্পর্কিত আরো কিছু মন্ত্র
দেওয়া হল-
য ইমা বিশ্বা ভুবনানি
জুহ্বদৃষির্হোতা ন্যসীদৎ পিতা নঃ।
স আশিষা দ্রাবণবিচ্ছমানঃ
প্রথমচ্ছদবরাঁ আবিবেশ।।
যজুঃ ১৭।১৭
কিংস্বিদাসীদধিষ্ঠানমারম্বণং
কতমৎ স্বিৎ কথাসীৎ।
যতো ভুমিং জনযন্বিশ্বকর্মা
বিদ্যামৌর্ণোন্ মহিনা
বিশ্বচক্ষোঃ।।
যজু ১৭।১৮.
বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো
বিশ্বতোরাহুরুত বিশ্বতস্পাৎ।
সং বাহুভ্যাং ধমতি সং পতত্রৈ
দ্যাবাভূমী জনযন্দেব এবঃ।।
যজুঃ ১৭।১৯
যা তে ধামানি পরমাণি যাবমা যা
মধ্যমা বিশ্বকর্মন্নুতেমা।
শিক্ষা সখিভ্যো হবিষি স্বধাবঃ
স্বযং যজস্ব তন্বং বৃধানঃ।।
যজুঃ ১৭।২১
এর পরও কেহ যদি বলে আর্যরা
বিশ্বকর্মার উপাসনা করে না, তাকে
আর কিছু বলার নেই। ঈশ্বরের নিকট
তার জন্য এই প্রার্থনাই করি যেন
তার শুভ বুদ্ধির উদয় হয়।
নমষ্কার।
0 মন্তব্য(গুলি)