https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

উপনিষদে যক্ষাবতারঃ পৌরাণিক ভাবনার নিরাকরণ

Friday, May 11, 2018

প্রশ্নঃ কেনোপনিষদ তৃতীয় খন্ডের ২য় শ্লোকে পরমাত্মার যক্ষরূপে আবির্ভাব হওয়ার বর্ণনা রয়েছে।  অতএব উপনিষদে অবতার বাদের  সমর্থন রয়েছে।

উত্তরঃ

আচ্ছা মহাশয়! এই যক্ষাবতার আপনার পুরাণে প্রসিদ্ধ ২২ মন্তান্তরে ২৪ অবতারের মধ্যে কোনটি?
ভাগবতের ১ম স্কন্ধের ৩য় অধ্যায়ে অবতারের  তালিকা এই প্রকার দেওয়া হয়েছে -

১।কুমার ২। বরাহ ৩।নারদ ৪। নরনারায়ণ ৫।কপিল ৬।দত্তাত্রেয় ৭।যজ্ঞ ৮।ঋষভদেব ৯।পৃথুরুপ ১০।মৎস ১১।কূর্ম ১২।ধন্বন্তরি ১৩।মোহিনী ১৪।নৃসিংহ ১৫।বামন ১৬। পরশুরাম ১৭। ব্যসদেব ১৮।রাম ১৯।বলরাম ২০।কৃষ্ণ ২১।বুদ্ধ ২২।কল্কি।
[Source :https://www.vedabase.com/en/sb/1/3 ]

প্রথমত, এই  লিস্টে তো আপনার বিশেষ অবতার যক্ষের নামই  নেই।  তাহলে তো আপনারা ব্যাসজীর তালিকার পরে এক  অবতারের কল্পনা আপনার করছেন। আচ্ছা ব্যাসজীর কি আর একটা অবতারের তালিকা করতে খুব কষ্ট হয়েছিলো?  ২২ টি অবতারের লিস্ট যেহেতু তিনি করেছেন আর  একটা সংখ্যা তো বাড়াতে পারতেন?  তাহলে তো স্পষ্ট হচ্ছে যে ২৩ নং অবতারের চিন্তা আপনাদের চিন্তা প্রসুত।

দ্বিতীয়ত,  উক্ত শ্লোকের পাঠে না আছে অবতার শব্দ আর না তো পরমাত্মার জন্মগ্রহনের বর্ননা। আর আপনাদের কথা যদি মেনে নেওয়া হয় তবে উক্ত প্রসঙ্গে অসম্ভব দোষ এসে পড়ে। কেননা অগ্নি, বায়ু উভয়ই চেতনরহিত, জড় পদার্থ। তাদের একত্রে হয়ে বাক্যালাপ করা যে, আমাদের বিজয় হয়েছে এবং আমাদেরই মহত্ব   এগুলো অসম্ভব। জড় বস্তুরা বার্তালাপ করতে পারে না এটা তো সাধারন লোকও জানে। এখানে অগ্নি বায়ু আদির মধ্যে ব্রহ্মের শক্তিই যে অধিক প্রবল,  এই আখ্যায়িকা বোঝানোর জন্য অলংকারের রূপে বর্ননা করা হয়েছে। এই প্রকার অলংকারীক বর্ণনা সংস্কৃত সাহিত্যে,  উপনিষদ, ব্রাহ্মণ তথা বেদের মধ্যেও রয়েছে ।  নিরুক্তেও অলংকারীক বর্ননার প্রমাণ মেলে।  যথাঃ -

অপুরুষবিধাঃ স্যুরিত্যপরম্। অপি তু যদ্ দৃশ্যতেহপুরুষবিধং তদ্যথাহগ্নির্বায়ুরাদিত্যঃ পৃথিবী চন্দ্রমা ইতি। যথো এতচ্চেতনােদ্ধিদ্ধি স্ততয়ো ভবন্তীত্যচেতনান্যপ্যেবং স্নুয়ন্তে যথাক্ষপ্রভৃতীন্যোষধিপর্যন্তানি। যথো এতৎপৌরুষবিভিকৈরঙ্গৈঃ সংস্তুয়ন্ত ইত্যচেতনেষ্ব  প্েতদ্ধবত্যভিক্রন্দন্তি হরিতেভিরাসভিরিতি গ্রাবস্তুতিঃ।যথো এতৎপুরুষবিধিকৈর্দ্রব্যসংযোগৈরিত্যেতদপি তাদৃশমেব সুখং রথং যুযুজে সিন্ধুরশিবনম্ ইতি নদীস্তুতিঃ।।যথো এতৎপৌরুষবিদিকৈঃ কর্মভিরিত্যেতদপি তাদৃশমেব।"হোতুশ্চিৎপূর্বে হবিরদ্যমাশাত" ইতি গ্রাবস্ততিরেব।
(নিরুক্ত দৈ০ অ০ ৭ খন্ড ৭)

ভাবঃ

দেবতা অপুুরুষবিধ, ইহা দ্বিতীয় মত। কারণ  দেবতার যে রূপ দেখা যায় তা অপুরুষ,তাহা অপুরুষবিধ, যেমন অগ্নি, বায়ু, সূর্য, পৃথিবী চন্দ্রমা ( ইহা প্রত্যক্ষতঃ অপুুরুষবিধ, এদের পুরুষবিধ মানাতে দৃষ্টিহানি হয়, এই জন্য এদের পুরুষবিধ মানা হয় না, যখন এরা পুরুষবিধ নয় তো এদের ন্যায় ইন্দ্রাদী দেবতাও অপুরুষবিধ) ।  যে বলে যে চেতনার সমান স্তুতি করা হয় (এইজন্য পুরুষবিধ,  ইহার উত্তর এই যে)  অচেতন জড়তেও এই প্রকার স্তুতি করা যায়,  যেমন অক্ষ থেকে ঔষধি পর্যন্ত। এবং যারা ইহা বলে যে পুরুষের অঙ্গ দ্বারা স্তুতি করা যায়। ইহাও অচেতনে হয় (ইহা সোমগ্রাব) নিজ মুখ দ্বারা আহ্বান করে (পাথরের মুখ হয় না,  যেমন ইহা ঔপচারিক বর্ণন, ওইরূপ ইন্দ্রাদি মধ্যে) আর যে বলে "পুরুষতের সদৃশ্য দ্রব্যের সম্বন্ধ দ্বারা, ইহাও ঔপচারিক "সিন্ধু (জগতের জন্য) সুখের হেতু ঘোড়া দ্বারা যুক্ত রথ জোড়ে (এই স্তুতি যথাবিহিত অর্থ অসম্ভব, কারণ বহমান নদীর রথে স্থিতি হয় না, যেমন অসম্ভব হওয়ার কারনে ইহা রুপকল্পনা, ওইরূপ অন্যত্র রূপক দ্বারা জানা উচিত) এবং যে ইহা বলে যে, পুরুষের সদৃশ কর্ম দ্বারা  ইহাও ঔইরূপ।  যেমন  হোতা (অগ্নি) দ্বারা প্রথমেই গ্রহন  যোগ্য হবি কে গ্রহন করে,  ইহা গ্রাবস্তুতি ই(পাথরে মুখ্য খানা হতে পারে না,  এইজন্য ইহা রূপক) ।

নিরুক্তে এই কথা পরিষ্কার হয়েছে যে, যদ্যপি অগ্নি বায়ু পৃথিবী জল সূর্য চন্দ্র আদি পদার্থ জড়,  তো ইহার বর্ণনা চেতনের সমান করা যায়।  ইহাতে তারা চেতন হয়ে যায় না বরং ইহা বর্ণনের শৈলী মাত্র। প্রশ্নোপনিষদেও এরূপ অলংকারীক বর্ননা দিয়ে প্রানের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করা হয়েছে। তা আপনাদের সামনে উপস্থিত করা হলো -

অথ হৈনং ভার্গবো বৈদভিঃ পপ্রচ্ছ---ভগবন্ কাতেব্য দেবাঃ প্রজাং বিধারয়ন্তে? কতর এতং প্রকাশয়ন্তে? কঃ পুনরেষাং বরিষ্ঠঃ?  ইতি।। ১।।
তস্মৈ স হোবাচ---আকাশো হ না এব দেবো বায়ুরগ্নিরাপঃ পৃথিবী বাঙ্ মনশ্চক্ষুঃ শ্রোত্রং চ। তে প্রকাশ্যাভিবদন্তি "বয়মেতদ্ বাণমবষ্টভ্য বিধারায়মঃ" ।। ২।।
তান্ বরিষ্ঠঃ প্রাণ উবাচ---মা মোহমাপদ্যথ, অহমেবৈতৎ পঞ্চধাত্মানাং প্রবিভজ্যৈতদ্ বাণমবষ্টভ্য বিধারয়ামীতি। তেহশ্রদ্দধানা বভূবুঃ।। ৩।।
সোহভিমানাদূর্ধ্বমূৎক্রামত ইব। তস্মিন্নুৎক্রামত্যথেতরে সর্ব এবোৎক্রামন্তে, তস্মিংশ্চ প্রতিষ্ঠমানে সর্ব এব প্রাতিষ্ঠন্তে। তদ্ যথা মক্ষিকা মধুকররাজানমুৎক্রামন্তং সর্বা এব উৎক্রামন্তে, তস্মিংশ্চ প্রতিষ্ঠমানে সর্বা এব প্রাতিষ্ঠন্ত এবং বাঙ্ মনশ্চক্ষুঃশ্রোত্রং চ। তে প্রীতাঃ প্রাণং স্তুন্বন্তি।। ৪।।
(প্রশ্নোপনিষদ ২য় প্রশ্ন ১-৪)

ভাবঃ
প্রথম প্রশ্ন শোনার পর  ভৃগুগোত্রীয় বৈদর্ভি ইহাকে জিজ্ঞাস করিলেন---হে ভগবন্ , কতগুলি দেবতা প্রজাশরীর বিধারণ করেন? কাঁহারা এই (বস্তু-প্রকাশনাদি-রূপ) স্বমাহাত্ম্য প্রকটিত করেন? ইহাদের মধ্য কেই বা প্রধান?।। ১।।

তাঁহাকে তিনি বলিলেন---আকাশই এই দেবতা; এবং বায়ু,অগ্নি,জল ও পৃথিবী এবং বাক্, মন, চক্ষু, কর্ণ ইত্যাদিও দেবতা। তাঁহারা নিজ শ্রেষ্ঠতা প্রকাশার্থ স্পর্ধাসহকারে বলিলেন,"আমরা এই বাণ অর্থাৎ দেহেন্দ্রিরসমষ্টিকে সুদৃঢ় করিয়া বিস্পষ্টরূপে ধারণ করি।।২।।

মূখ্যপ্রাণ তাঁহাদিগকে বলিলেন---"মোহ প্রাপ্ত হইও না, আমিই নিজেকে এইরূপে পঞ্চধা বিভক্ত করিয়া এই কার্যকরণ-সমষ্টিকে সুদৃঢ় করিয়া বিস্পষ্টরূপে ধারণ করি।" তাঁহারা উহাতে প্রত্যয়যুক্ত হইলেন না।।৩।।

তিনি অভিমানবশে শরীর ত্যাগ করিয়া যেন উর্ধ্বে উৎক্রমণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি উৎক্রমণে প্রবৃত্ত হইলে তৎক্ষণেই অপর অপর সকলেও উৎক্রান্ত হইলেন এবং তিনি সুস্থির হইলে সকলেই সুস্থির হইলেন। এই বিষয়ে দৃষ্টান্ত এই- যেমন মধুকররাজ উৎক্রমণ করিলে তদভিমুখে সকল মক্ষিকাই উৎক্রমণ করে এবং সে স্থির হইলে সকলেই স্থির হয়, বাক্ মন চক্ষু এবং কর্ণও সেইরূপ। তাঁহারা প্রীত হইয়া প্রাণকে স্তব করিতে লাগিলেন।।৪।।


দেখুন এই প্রকরনে বায়ু অগ্নি জল, পৃথিবী, বাণী, শ্রোত্র, চক্ষু এবং প্রাণের জড় হয়েও চেতনের সমান বাদবিবাদ করার বর্ণনা করা হয়েছে। ইহাতে কিন্তু সেসব পদার্থ চেতন হয়ে যায় নি।  বরং ইহা বর্ণনা করার শৈলী এবং এই প্রকার বর্ননা করার প্রয়োজন এই যে - শরীরের উপরিউক্ত শরীরের মধ্যে প্রাণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা। এই প্রকারের কেনোপনিষদের পাঠে অগ্নি, বায়ু আদি না তো চেতন কিছু আর না তো  শরীর ধারী ,কেননা ইহা বর্নন করার শৈলী মাত্র। এই প্রকার বর্ননা করার প্রয়োজন এই যে ব্রহ্মের শক্তির সামনে সব শক্তি তুচ্ছ। এই প্রকার -

তদ্ধৈষাং বিজজ্ঞো তেভ্যো প্রাদুর্বভূব।
তন্ন ব্যজান্ত কিমিদং যক্ষমিতি।।৩।২।।

পদার্থঃ (তত) সেই ব্রহ্ম (হ) নিশ্চয় করে (এষাম্) অগ্নি আদির দেবের চেষ্টা কে (বিজজ্ঞৌ) সর্বজ্ঞ ভাব দ্বারা জেনে নেন। (তেভ্যঃ) এবং তাদের [অহংকার যা মিথ্যা জ্ঞানের সমাপ্ত করার জন্য] (হ) নিশ্চয়রূপে (প্রাদুর্বভূব) ব্রহ্ম প্রকট হলেন। ওইসব দেব (তত্) সেই ব্রহ্ম কে (ন ব্যজানন্ত) জানতে পারলো না যে (ইদম্ যক্ষ) এই অপ্রতিম তেজযুক্ত যক্ষ (কিম্ ইতি) কে?


 এখানে ব্রহ্মের যক্ষরূপে প্রকট হওয়া এবং অগ্নি আদি দেবের তাহাকে না জানা, এক অলংকারীক বর্ণনা বাস্তব নয়।

 ব্রহ্ম এক সর্বব্যাপক চেতন সত্বা,  তাহাকে অগ্নি আদি জড় দেবতা কদাপি জানতে পারে না। এই আখ্যায়িকার এক ভাব এই যে, শরীরের মধ্যেও পঞ্চভূত কার্য করে থাকে। যখন জীব পরব্রহ্মের উপাসনা করে থাকে। যখন জীব পরব্রহ্মের উপাসনা দ্বারা অদ্ভূত তেজ বা সামর্থ প্রাপ্ত করে নেয়, তখন অগ্নি আদির কার্য নেত্রাদি ইন্দ্রীয়ের মধ্যে ওইরূপ গর্বের সৃষ্টি করে যে এই তেজ আমাদেরই।  সেই অহংকার কে দূর করার জন্য এই আখ্যায়িকা কে তৈরী করা হয়েছে।

আখ্যায়িকায় আগত "যক্ষ" শব্দের ভাব পরব্রহ্ম পরমেশ্বরই । এর জন্য কিছু প্রমাণ প্রদান করছি-

অষ্টচক্র নবদ্বারা দেবনাং পুরযোধ্যা।
তস্যাং হিরণ্ময় কোশঃ স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতা।।৩১।।
তস্মিন্জিরণ্যে কোষে ত্র্যরে ত্রিপ্রতিষ্ঠিতে।
 তস্মিন্ যদ্ যক্ষমাত্মন্বত্ তদ্বৈ ব্রহ্মবিদো বিদুঃ।। ৩২।।
(অথর্ব০ ১০/২/৩১-৩২)

- এই শরীররূপ নগরী  সমস্ত সূর্য্যাদি দেবের অধিষ্ঠানভূত।  আট চক্র এবংনয় ইন্দ্রীয় দ্বার বিশিষ্ট এইনগরী  অজেয়। এই নগরীতে এক  প্রকাশময়   কোশ আছে [মনোময় কোষ ] আনন্দময় জ্যোতি দ্বারা আবৃত। তাহাতে সত্ব, রজঃ তমঃ তিন অর বিশিষ্ঠ জ্ঞান কর্ম  উপাসনায় প্রতিষ্ঠিত জ্যোতির্ময় কোষে সেই মনোময় কোষে যে সদা জীবিত  পুজনীয় সত্বা (যক্ষ) সেই সত্বা কে নিশ্চয় দ্বারা জ্ঞানী পুরুষ জানে। 



 ♦ মহদ্যক্ষ ভুবনস্য মধ্যে তস্মৈ বলি রাষ্ট্রভৃতো ভরন্তি। (অথর্ববেদ ১০/৮/১৫)

- সেই মহান পুজনীয় ব্রহ্ম (যক্ষ) কে রাজ্যধারণ কারী লোক সম্মান দ্বারা ধারণ করেন।


 এছাড়াও আরো অনেক প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে , লেখার পরিসর বাড়বে বলে তাহার উল্লেখ করা হলো না।অতুল চন্দ্র সম্পাদিত উপনিষদ গ্রন্থে কেনোপনিষদের এই আখ্যান সম্পর্কে বলা হয়েছে -

এই আখ্যায়িকাটি একটি রূপক কল্পনামাত্র । এই রূপকের তাৎপর্য কি তাহা অনুধাবন করা দরকারঃ

(১)এই জগতে দেবতাগণই সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী । তাঁহারাই সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তির প্রভু ও পরিচালক । কিন্তু দেবতাদের নিজস্ব কোন শক্তি নাই । ব্রহ্মের শক্তিতেই তাঁহারা শক্তিমান । ব্রহ্মই সকল শক্তির উৎস ।

(২)এই জগতে দুইটি বিরোধী শক্তি ক্রিয়া করিতেছে । একটি জগৎকে রক্ষা করে ,জগৎকে কল্যাণের পথে,উন্নতির পথে লইয়া যায়-ইহাই দৈবী শক্তি । অপরটি জগৎকে অকল্যাণের পথে, ধ্বংসের পথে লইয়া যাইতে চেষ্টা করে-ইহাই আসুরী শক্তি ।এই দুই বিরোধী শক্তির সংঘর্ষ ও বিরোধ সর্বত্রই চলিতেছে ।ইহাই দেবাসুরেরসংগ্রাম নামে কথিত হয় । এই সংগ্রামে যে দেবগণের জয় হয় তাহা ব্রহ্মেরই জয় , দেবগণ নিমিত্তমাত্র । ব্রহ্মের শক্তিতে শক্তিমান হইয়া জয়লাভ করেন । 

জগতের ন্যায় জীবের মধ্যেও দেবী ও আসুরী-এই দুই শক্তি ক্রিয়া করিয়া থাকে ।জীবের সুপ্রবৃত্তিসমূহ দৈবী শক্তি,ইহারা জীবকে কল্যাণের পথে,উন্নতির পথে লইয়া যায় ।জীবের কুপ্রবৃত্তিসমূহ আসুরী শক্তি,ইহারা তাহাকে অকল্যাণের পথে,ধ্বংসের পথে আগাইয়া দিতে চেষ্টা করে । ইহাই জীবের মধ্যে দেবাসুর সংগ্রাম । 

এই সংগ্রামে ব্রহ্মের শক্তিতে শক্তিমান হইয়াই জীব আসুরী বৃত্তি গুলিকে পরাজিত করিতে সমর্থ হয় । অজ্ঞানী,অহংকারপরায়ণ জীব কিন্তু মনে করে যে নিজের শক্তিবলেই সে আসুরী শক্তিগুলির উপর জয়লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছে । যতক্ষণ তাহার চিত্তে এই অহংকার বর্তমান থাকে ততক্ষণ সে ব্রহ্মকে জানিতে পারে না । কিন্তু ব্রহ্ম জীবের করিতে সমর্থ হইয়াছে । যতক্ষণ তাহার চিত্তে এই অহংকার বর্তমান থাকে ততক্ষণ সে ব্রহ্মকে জানিতে পারে না । 

কিন্তু ব্রহ্ম জীবের হৃদয়ে আবির্ভূত হইয়া তাহার অহংকার চূর্ণ করিয়া দেন । এই প্রকারে অহংকারের ভাব অপগত হইলে জীব যখন জিজ্ঞাসু হইয়া ব্রহ্মকে জানিতে উৎসুক হয় তখন তাহার হৃদয়ে বিদ্যা অর্থাৎ নির্মল বিবেকবুদ্ধি উদিত হইয়া তাহাকে ব্রহ্মজ্ঞান দান করে । জীব তখন বুঝিতে পারে যে তাহার নিজস্ব কোন শক্তি নাই , ব্রহ্মের শক্তিতেই সে শক্তিমান । এই প্রকারে যাঁহারা ব্রহ্মকে জানিতে সমর্থ হন তাহারাইজ্ঞানে,কার্যে,বিবিধ সদগুণে অজ্ঞানীদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন ।




।।ইত্যোম শম্।।











Author

Unknown