https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শতপথ ব্রাহ্মণের মৎস্য অবতারের রহস্য

Friday, July 6, 2018


ইদানীং পৌরাণিকগণ শতপথ ব্রাহ্মণ ১.৮.১.১-১০ এর এ মৎস্য অবতার পাচ্ছেন। সম্পূর্ণ কাহিনী নিম্নলিখিত রূপ।









অনুবাদ বিধু শেখর একে পৌরাণিক অবতার কাহিনীর প্রথম রূপ বলেছেন



রামকৃষ্ণ মিশন এর বিরোধীতা করে একে কেবল যজ্ঞ মহিমা বর্ণন বলেছেন কিন্তু কেউ সত্যি বলে দাবি করেননি


এতে মৎস্যের কোন দেবের অবতার তার কোন কথা নেই ।পুরাণে বলা নৌকায় তিনি প্রত্যেক প্রাণী জোড় প্রাণী নিয়ে গিয়েছেন । তাও শতপথে নেই।  [ব্যাক্টেরিয়া ,ভাইরাসও নিয়েছিলেন কি? ]

শ্রী যোগেশ চন্দ্র বিদ্যানিধি এর যে জ্যোতিষ তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করেছেন তা কেবল মাত্র জানার জন্য দেওয়া হলো । বিষয়টি নিম্নলিখিত রূপঃ


কেহ কেহ মনে করিইয়াছেন,একদা পাঞ্জাবে বহুব্যাপি ভীষণ জল-প্লাবন হইয়াছিল।তাহা দেখিয়া অথবা স্মরণ করিয়া এই উপাখ্যানের উৎপত্তি হইয়াছে ।কেহ কেহ বলিয়াছেন ,এই দেখ,হিমালইয়ের নৌ–বন্ধন শৃঙ্গ,এই দেখ মনুর স্থান।যাহা প্রত্যক্ষ হইতেছে তাহা নিশ্চয় অতীতের সাক্ষী।
একথা সত্য,সিন্ধু দেশ বারস্বার জলপ্লাবিত হইয়াছিল ।পুরাণে আছে, রাজধানী দ্বারকা জলমগ্ন হইয়াছে ।এই পুরাণিক কিংবদন্তি কাহিনি সত্য বলিয়া মনে হয়। মোহন-জো-ডেরোর প্রাচীন অধিবাসীরা গৃহ ও নগর নির্মাণে দক্ষ ছিলেন।কিন্তু জলপ্লাবন হইতে নগর রক্ষা করিতে পারেন নাই।তথাকার আবিষ্কৃত,পুরাকৃতি দেখিইয়া প্রাজ্ঞেরা বলিয়াছেন ,সে নগর লবনাক্ত জলে প্লাবিত হইয়াছিল।আমার মনে হয় ,নগরটি সিন্ধু নদের খাড়িতে অবস্থিত ছিল।দুই কারনে সমুদ্রজল বৃদ্ধি পাইয়া সে দেশ ডুবিয়া দিতে পারিত। (১)আরব সাগরে বাতাবর্ত সঞ্জাত হইয়া সমুদ্রের তরঙ্গ খাড়ির দুই কূল ডুবাইয়া দিতে পারিত।(২) সিন্ধু দেশের দক্ষিণে সমুদ্রে বাড়বানল আছে।পুরাণে ইহার উল্লেখ আছে।ইয়াও সত্য।অল্পদিন হইল নতুন দ্বীপ উত্থিত হইয়াছে।কিন্তু কোথায় সিন্ধু নদের মুখ আর কোথায় বা হিমালয়ের শৃঙ্গ! সমুদ্রতরঙ্গ কদাপি সিন্ধু দেশ অতিক্রম করিয়া পাঞ্জাবে উঠিতে পারিত না।পাঞ্জাবের উত্তরাংশ এখন যত উচ্চ ,পুর্বাকালে তদপেক্ষা বহু উচ্চ ছিল।অবিরল বারিবর্ষণ হইলেও জল দাঁড়াইতে পারিত না।এইরুপ ভূসংস্থান চিন্তা না করিয়া বিজ্ঞজনও উদভ্রান্ত হইয়াছেন।কোন উপাখ্যানের অংশমাত্র গ্রহণ করিয়া তাহার তত্ত্বানুসন্ধান সমীচীন নয়।ঋগ্বেদে এই মৎসের নাম শিংশুমার সংস্কৃতে শিশুমার।জ্যোতিষের ধ্রুবমতস্যই শিশুমার।শিশুক গঙ্গায়,ব্রহ্মপুত্রে ও সিন্ধুনদে দেখিতে পারা যায়।কিন্তু শিংশুমার এই সব নদীর শিশুমার নয়।
শিশুমার আকাশ-সমুদ্রের শিশুমার-রূপী নক্ষত্র, প্রতি রাত্রে উত্তরাকাশে দেখিতে পাওয়া যায়। শিশুমারের পুচ্ছে যে তারা আছে, বর্তমান কালে তাহার দৈনিক আবর্তন নাই। সে তার ধ্রুব (নিশ্চল), কিন্তু এই তারা চিরদিন ধ্রুব ছিল না। ভূ-গোল স্বীয় অক্ষে আবর্তিত হইতেছে। সেই হেতু দিবা-রাত্রি ঘটিতেছে। ভূ-পৃষ্ঠকে যেখানে ভূ-অক্ষ ভেদ করিয়াছে সে স্থানের নাম মেরু। উত্তর দিকের মেরুর নাম সুমেরু। অক্ষকে বর্ধিত করলে আকাশের যে স্থান স্পর্শ করে, তাহার নামও মেরু। পৃথিবীর অক্ষের এই আকাশস্পর্শী মেরু চিরদিন একই তারার নিকট থাকে না। ইহা মৃদু গতিতে আকাশে পূর্ব হইতে পশ্চিমের দিকে বৃত্ত পথে ভ্রমণ করিতেছে। 





একবার পরিভ্রমণ করিতে ২৬/২৭ হাজার বৎসর সময় লাগে। মেরু যখন যে তারার নিকট উপস্থিত হয়, তখন সে তারা ধ্রুব হয়। মেরুর বৃত্তপথে কিম্বা সন্নিকটে অতি অল্প তারাই আছে। বর্তমান কালে একটি পাইতেছি। সে তারা শিশুমারের তূন্ডাগ্রে অবস্থিত।
মৎস্যাবতার বুঝিতে হইলে উত্তরাকাশের কয়েকটি নক্ষত্র চিনিতে হবে। সেখানে সাতটি তারায় সপ্তর্ষি নামে এক নক্ষত্র আছে। সর্ব পূর্ব দিকের তারার নাম মরীচি, তাহার পরের তারা বশিষ্ঠ। বশিষ্ঠের সন্নিকটে একটি ক্ষুদ্র তারা আছে, নাম অরুন্ধতী। সপ্তর্ষির সর্ব পশ্চিমে দুই তারার নাম ত্রুতু ও পুলহ। উত্তর দিকের তারার নাম ত্রুতু। দক্ষিণ দিকের পুলহ। ত্রুতু ও পুলহ এক রেখা দ্বারা যোগ করিয়া উত্তর দিকে বাড়াইলে বর্তমান ধ্রুব তারা (Polaris) স্পর্শ করে। পূর্ব দিকস্থ মরীচি তারা হইতে উত্তর দিকে বর্তমান ধ্রুব রেখা করিলে সে রেখা প্রাচীন ধ্রুব তারার নিকট দিয়া যাইবে। এই প্রাচীন ধ্রুবতারা বশিষ্ঠ তারার নিকটবর্তী। উভয়ের অন্তর মাত্র ১১ ডিগ্রী অংশ। প্রাচীন ধ্রুবের নিকটেও একটি ক্ষুদ্র তারা আছে। বড় তারাটি বৈবস্বত মনুর অধিষ্ঠান। এই তারাকে মনু বলিতে পারি। ক্ষুদ্রটি ইলা, মনুর দুহিতা। ইংরেজি তারাপটে মনুতারার নাম Alpha Draconis। মনুতারা ও বর্তমান ধ্রুতারার মধ্যে শিশুমার অবস্থিত। মনুতারার উত্তর দিকে প্রথমেই দুটি তারা দেখিতে পাওয়া যায়। সেই দুটি তারার বড়টির ঋগ্বেদোক্ত নাম যম, ছোটটির নাম যমী। (যমের অপর পার্শ্বেও একটি ছোট তারা আছে। সেটি এখানে গ্রাহ্য নয়।) পুরানে নানা নাম আছে। যেমন নারায়ণ ও নর, নারায়ণ ও লক্ষী। একই তারা কিংবা নক্ষত্র সকল উপাখ্যানে একই নাম পায় নাই। শিশুমারে দশটি তারা সহজে গণিতে পারা যায়। ইহারা শিশুমাররূপী ধর্মের পত্নী।
৮ই ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার সময় মনু তারা ও মরীচি তারা যাম্যোত্তর বৃত্তে (Meridian) দেখা যাইবে। তদন্তর প্রতি মাসে দুই ঘন্টা পিছাইতে পিছাইতে ৮ই জুলাই রাত্রি ৭টায় দেখা যাইবে। সেদিন ৬ঘন্টা পর রাত্রি ১টায় পশ্চিম দিকে দেখা যাইবে। এই সংকেত ধরিয়া অন্যান্য মাসে কখন কোন্ দিকে দেখা যাইবে তাহা অক্লেশে নিরূপণ করিতে পারা যাইবে। বঙ্গদেশ হইতে সপ্তর্ষিকে বার মাস দেখিতে পাওয়া যাইবে না। ২৫ অক্ষাংশের (Latitude) উনস্থান হইতে মনুতারাকেও দেখিতে পাওয়া যাইবে না।
জল-প্লাবনে উপাখ্যান বুঝিতে হইলে স্মরণ হইলে স্মরণ রাখিতে হইবে, ঋগ্বেদের মুনিগণ সপ্তর্ষি নক্ষত্রে নৌকার সাদৃশ্য দেখিতেন | ইহা অশ্বিদ্বয়ের নৌ, অন্যত্র শকট
পুরা‌নে সপ্ত‌র্ষি শটক,‌শি‌বিকা ( দোলা, ডু‌লি), তাম্রচুড় (কুক্কুট) ও শিখণ্ডী ( ময়ুর) । ঋগ‌বে‌দের কাল হই‌তে প্রাচী‌নেরা ম‌নে করি‌তেন,‌মেরু বা সু‌মেরু স‌র্বোচ্চ।

ঋগ‌বে‌দে সে স্থান তৃতীয় স্ব‌র্গে। তৃতীয়রস্ব‌র্গের বি‌শেষ বিবরণ পরে দেওয়া যাই‌তে‌ছে।

এক্ষ‌ণে ' শতপথ ব্রাহ্মণ' অনুসা‌রে জল-প্লাবন লি‌খি‌তে‌ছি।মৎস্য যে বৎসর নি‌র্দেশ ক‌রিয়া দিয়া‌ছি‌লেন, মনু সেই বৎসর নৌকা নির্মাণ ক‌রিয়া‌ছি‌লেন, এবং প্রবা‌হ উত্থিত হই‌লে তাহা অাশ্রয় ক‌রিয়া‌ছি‌লেন।
মৎস্য তাঁহার নিকটে ভাসিতে লাগিলেন। তিনি তাঁহার শৃঙ্গে নৌকার রজ্জু বন্ধন' করিলেন এবং তাহার দ্বারা উত্তরগিরির উপরে গমন করিলেন। মৎস্য বলিলেন, আপনি বৃক্ষে নৌকা করুন।জল যত নিচে নামিয়া যাইবে, আপনিও তত নিচে নামিবেন। তিনি তত নামিয়াছিলেন, সেইজন্য উত্তরগিরির নাম মনুর অবতরণ। প্রবাহ সমস্ত প্রজাকেই বহিয়া লইয়া গিয়েছিলো কেবল এক মনু অবশিষ্ট ছিলেন।
এখানে সপ্তর্ষি নৌকা, উত্তরগিরি আকাশে সর্বোচ্চ স্থান ।যে বৃ‌ক্ষে নৌকা-বন্ধন হইয়াছিল, শিশুমার সেই বৃক্ষ (পরে পশ্য) । শিশুমারের বুকের পাখনা তাহার শৃঙ্গ। মৎস্যপুরাণ লিখিয়াছেন, নৌকার নিকটে এক ভুজঙ্গম ভাসিতেছিল। মনু তাহাকে নৌ-বন্ধন এর রজ্জু করিয়াছিলেন। ইহাও ঠিক । মনু তারা অজগর রূপ নহু‌যের পু‌চ্ছে অবস্থিত। মহাভারতে (বন, ১৭৮ অধ্যায় ) রাজা যযাতির পিতা নহুয। অগস্ত্য ঋর্ষির শা‌পে অজগর হইয়া অাকা‌শে দীপ্যমান অা‌ছেন।
শিশুমার বিষ্ণুর অবতার। ঋকবেদে আছে (১০/৮২/২) বিশ্বকর্মা যিনি, তাঁহার মন বৃহৎ, তিনি নিজে বৃহৎ, তিনি নির্মাণ করেন, ধারণ করেন, সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং সকল অবলোকন করেন, সপ্ত-ঋষির পরবর্তী যে স্থান তথায় তিনি একাকী আছেন, বিদ্বানগণ এইরূপ কহেন। যিনি আমাদিগের জন্ম দাতা পিতা, যিনি বিধাতা, যিনি বিশ্ব-ভুবনের সকল ধাম অবগত আছেন, যিনি একমাত্র অথচ সকল দেবের নাম ধারণ করেন, অন্য তাবৎ ভুবনের লোকে তাঁহার বিষয়ে জিজ্ঞাসা-যুক্ত হয়। যিনি ইহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহাকে তোমরা বুঝিতে পার না, তোমাদিগের অন্তঃকরণ তাহা বুঝিবার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় নাই।

ঋগবেদের ঋষিগণ স্বর্গের তিন ভাগ কল্পনা করিতেন। অধঃ, মধ্য, উর্ধ্ব (৪/৫৩/৫) । উর্ধ্ব স্বর্গ তৃতীয় স্বর্গ, ইহা বিশেষণ 'উত্তম' 'পরম' (৩/৩০) ।সে স্থানই উৎ-তম, ঊর্দ্ধতম । সে স্থান ঊর্দ্ধতম, বিষ্ণুর 'পরম’ পদ, পরম
স্থান । এই কথাই পুরাণ লিখিয়াছেন ৷ সেইখানেই বিষ্ণুর পরম পদ, সুরিগণ ধ্যান যোগে দেখিতে পান ৷ সপ্তর্ষির অপর
পারে কি আছে ? আমরা দেখিতেছি, শিশুমার । সেখানে শিশুমার-রূপী ভগবান আছেন ৷ শিশুমার বটপত্ৰ সদৃশ ৷
মহার্ণবের সলিলে নারায়ণ বটপত্রে শয়ন করিয়া থাকেন ৷ পুরাণে আছে
নার-জল, নার আয়ন আশ্রয় যাহার, তিনি নারায়ন ৷ অন্য ব্যুৎপত্তি নরের অয়ন গতি যিনি ৷ শিশুমার নাগের ফণা সদৃশও বটে, সে নাগ অনন্ত ৷ নারায়ণ অনন্ত-শয়নে থাকেন ।

বিষ্ণুপুরাণ লিখিয়াছেন, ঋষিদিগের উর্দ্ধে উত্তর দিকে যেখানে ধ্রুব অবস্থিত, তাহাই বিষ্ণুর ভাশ্বর তৃতীয় পদ (১/৮/৯৩ ) ৷ পুনশ্চ, দিবালোকে ভগবান হরির শিশুমারাকৃতি তারাময় রূপ আাছে । উত্তানপাদ রাজার পুত্র ধ্রুব প্রজাপতি নারায়ণের আরাধনা করিয়া শিশুমারের পুচ্ছে অবস্থিত আছে (২/৯/১,৪) সেই শিশুমারের উত্তর হনু উত্তানপাদ, অধঃ হনু যজ্ঞ, মস্তক ধর্ম, হৃদয় নারায়ণ (২/২/১৩১) ।•

• বিষ্ণুপুরাণ ধ্রুবকে শিশুমারের পুচ্ছে বসাইয়াছেন । একবার নর, দুই স্থানে দুই বার । পুছস্থিত তারা বর্তমান কালের ধ্রুব বটে, পূর্বকালের নয় ৷ খ্রীষ্টাব্দের আরম্ভে এই তারা মেরু হইতে ১১॰ অংশ, পঞ্চম শতাব্দে ৮॰ অংশ দূরে ছিল । অতএব ইহা ভ্রমণ করিত । পুরাণ কারও লিখিয়াছেন, ধ্রুব নিজে ভ্রমণ করে । চন্দ্র সূর্য নক্ষত্র বাতরজ্জুর দ্বারা ধ্রুবে আবদ্ধ হইয়া গমন করে । গ্রহগণের আশ্রয় স্থানকে নারায়ণ স্বয়ং হৃদয়ে ধারণ করিয়াছেন । সূর্যই



(স্বর্গের তিন ভাগ)
'ক’ লাহোর, ‘খ’- স্বস্তিক (শিরোবিন্দু), 'উ' - উত্তর, 'দ'- দক্ষিণ, 'মে'-মেরু, উ মে খ দ — মাম্যোত্তরবৃত্ত, উ মে গ–গো- লোক, ১,১—রবির দক্ষিণ পথ, ৩,৩—রবির উত্তর পথ, দ১,১- অধ:স্বর্গ, পুরাণে নাম 'পাতাল' ৷

শ্লোকের বহুবিধ অর্থ করিয়াছেন। কিন্তু অশ্বথটি যে বেদোক্ত অশ্বথ,তাহাতে সন্দেহ হইতে পারেনা। কারণ যিনি সেই অব্যয় অশ্বথকে জানেন, তিনিই বেদবিৎ। অশ্বথের মূল মনুতারার উর্দ্বদিকে, শাখা অধোদিকে। শাখা প্রতিদিন মূলকে প্রদক্ষিণ করে। এই অদ্ভুত অশ্বথের কল্পনা মর্ত্যের অশ্বথ হইতে আসিতে পারে না।

পুরাণেও সুমেরু অতিশয় উচ্চ। সুমেরুর শিখরের চতুষ্পার্শ্বে দেবগণের আলয়। সেখানে সর্বদা আলোক। বেদোক্ত তৃতীয় স্বর্গই গো-লোক, সর্বদা আলোকময় স্থান। তৃতীয় স্বর্গে নক্ষত্রের উদয়ান্ত নাই।

পুরাণে এই শিশুমারের নাম শ্বেতদ্বীপ। একদা দেবর্ষি নারদ শ্বেতদ্বীপে নারায়ণের আদি মূর্তি সন্দর্শন করিতে গিয়াছিলেন। মহাভারতের শান্তি পর্বে (অঃ ৩৩৬) এই পুরাতন ইতিহাস বর্ণিত আছে।
যথা, পূর্বে সুমেরু পর্বতে সপ্ত মহর্ষি অবস্থান করিতেন। তাঁহারা লোকের হিতকর বিষয় সমুদয় পর্যালোচনা করিয়া, বেদ-সম্মত এক উৎকৃষ্ট ধর্মশাস্ত্র প্রস্তুত করেন। পূর্বকালে উপরিচর নামে হরিভক্তিপরায়ণ এক নরপতি ছিলেন। তিনি সূর্যমুখনিঃসৃত পঞ্চরাত্র শাস্ত্র অবলম্বন পূর্বক বিষ্ণুর অর্চনা ও রাজ্যপালন করিতেন। ব্রহ্মার পুত্র হরিভক্তিপরায়ণ নারদ, সেই শাস্ত্র জানিতেন। একদিন তিনি গন্ধমাদন পর্বতে ধর্মের পুত্র নরনারায়ণকে তপস্যা করিতে দেখিলেন। তিনি আশ্চর্যান্বিত হইলেন, নরনারায়ণ ঈশ্বরের দুই রূপ, তাঁহারা কাহার উপাসনা করিতেছেন? শুনিলেন তাঁহারা তাঁহাদের পিতার উপাসনা করিতেছেন। শ্বেতদ্বীপে তাঁহাদের উপাস্য আদিনারায়ণের আলয় আছে। নারদ সুমেরু পর্বতের শিখর হইতে বায়ুকোণে দেখিলেন, ক্ষীরসমূদ্রের উত্তর দিকে শ্বেতদ্বীপ রহিয়াছে। দ্বীপবাসিরা অদ্ভূত। তাঁহাদের প্রাকৃতিক স্থূল দেহ নাই। শব্দাদি গ্রহণের ইন্দ্রিয় নাই। তাঁহারা নিচেষ্ট, সুগন্ধযুক্ত, চন্দ্রের ন্যায় দীপ্তিমান। তাঁহাদের দেহ বজ্রাস্থির ন্যায় সুদৃঢ়। মস্তক ছত্রাকার। তাঁহাদিগের মুখ চারিটি, ক্ষুদ্র দন্ত বাটটি,দীর্ঘ দন্ত আটটি। তাঁহারা সেখানে ভগবান নারায়ণের অর্চনা করিতেছেন। দেবর্ষি নারদ একাগ্রচিত্তে সেই নির্গুণ বিশ্বময় নারায়ণের স্তব পাঠে প্রবৃত্ত হইলেন তাঁহার দিব্য চক্ষু হইল।

কোন কোন পণ্ডিত স্বর্গলোকের শ্বেতদ্বীপকে মর্ত্যে আনিয়াছেন । সত্য বটে, সুমেরু দুইটি, ক্ষীরোদ সাগরও দুইটি, একটি স্বর্গে, একটি মর্ত্যে। মর্ত্যের সুমেরু পশ্চিম হিমালয়ের উত্তরে, মর্ত্যের ক্ষীরোদ সাগর আরল হ্রদ, তাহাতে অকুসাস নদী পড়িয়াছে। এই নদীর অপর নাম "ষীর দরিয়া" অর্থাৎ ক্ষীর সাগর। হিমালয়ের পশ্চিমভাগ হইতে এই ক্ষীরোদ সাগর বায়ু কোণেই বটে। আকাশের ছায়া-পথ ক্ষীরোদ সাগর। এই ক্ষীরোদ সাগর কূর্ম অবতারে মথিত হইয়াছিল। জ্যোতিষে ব্রহ্মহৃদয় নামে নামে এক উজ্জ্বল তারা আছে। ইহার পূর্বতন নাম ব্রহ্মা। দেবর্ষি নারদ ব্রহ্মার মানস পূত্র। ব্রহ্মা তারা হইতে অদূরে নারদ তারা থাকা সম্ভব। সেখান হইতে শিশুমার বায়ুকোণে অবস্থিত বটে । 



নরনারায়ণ, ধর্মের পুত্র। শিশুমারই ধর্ম। মর্ত্যের শিশুমারের দেহ দেখিয়া শ্বেতদ্বীপবাসীর দেহ কল্পিত হইয়াছে। শিশুমারের দেহ মসৃণ, রোমহীন উজ্জ্বল, স্পন্দনহীন। আশ্চর্যের বিষয় শিশুকের মুখের নীচের পাটিতে ৬০ টি ছোট ছোট দাঁত আছে।

ঋগ বেদে জলপ্লাবন ও তদনন্তর সৃষ্টি অন্য আকারে উক্ত হইয়াছে । সেখানে
শিওমার উত্তানপদ্ নাম পাইয়াছে ৷ যথা—(৯০/৭২/৩) “দেবোৎপত্তির পূর্বতন কালে, অবিদ্যমান হইতে বিদ্যমান বস্তু উৎপন্ন হইল । পরে উত্তানপদ্ হইতে দিক সকল জন্ম গ্রহণ করিল ।

উত্তানপদ্ হইতে পৃথিবী জন্মিল, পৃথিবী হইতে দিকসকল জন্মিল, অদিতি
হইতে দক্ষ জন্মিলেন, দক্ষ হইতে আবার অদিতি জন্মিলেন ।

হে দক্ষ ! অদিতি যে জন্মিলেন তিনি তোমার কন্যা ৷ তাহার পশ্চাৎ দেবতারা জন্মিলেন । ইহারা কল্যাণ-মূর্তি ও অবিনাশী, দেবতার এই বিশ্বব্যাপী জলমধ্যে অবস্থিত থাকিয়া মহোৎসাহ প্রকাশ করিতে লাগিলেন । তাহারা
হেন নৃত্য করিতে লাগিলেন । সেই হেতু প্রচুর ধূলি উদয় হইল ৷"

আমি এই উক্তির অর্থ এইরূপ বুঝিয়াছি।
দেবতারা উৎপন্ন হইবার পূর্বতন কালে এই
বিশ্ব সলিলময় ছিল । প্রথমে উত্তানপদ্ জন্মগ্রহণ করিল । উত্তানপদ্ (বা উত্তানপাদ) যাহার পদদ্বয় উত্তান, বিস্তৃত । 



ইহার মস্তকে মনুতারা, পদে বর্তমান ধ্রুবতারা । ধ্রুব উপাখ্যানের ধ্রুব এই উত্তানপাদের পুত্র । উত্তানপদ্ হইতে দিকসকল জন্মিল । শিশুমার উত্তর দিকে অবস্থিত ৷ এই হেতু উত্তানপদ্ দেখিলে সকল দিক জানিতে পারা যায় । কতকাল পূর্বের কথা । যে কালে অদিতি হইতে দক্ষ
জন্মিয়াছিলেন । দক্ষ কাল-পুরুষ নক্ষত্র বা মৃগ নক্ষত্র । অদিতি মৃগ নক্ষত্রের পূর্ব দিকের ষট্ তারা সমন্বিত পূনর্বসু নক্ষত্র  ।



প্রথমে পশ্চিমস্থ দক্ষের
উদয় হয় । পরে পূর্বস্থিত অদিতির । এই পূর্বাপর জন্মহেতু দক্ষ পিতা, অদিতি কন্যা । কিন্তু দক্ষ সপ্ত আাদিত্যের মধ্যে এক আদিত্য । অদিতি সকল আদিত্যের
মাতা ৷ এই হেতু অদিতি হইতে দক্ষ জন্মিলেন । এককালে অদিতি হইতে
আরম্ভ করিয়া পর পর ছয় ঋতু ও ঋতুর কর্তা মাদিত্য কল্পিত হইয়াছিল ।
প্রথমে আদিত্যগণ, পরে জর দেবতা জন্মিয়াছিলেন । অাদিত্যগণই প্রধান
দেবতা । সূৰ্য আদিত্যের আধার ৷ দেখা যাইতেছে, অতি প্রাচীন কালের কথা স্মৃত হইয়াছে । সেকাল ৮০০০ বৎসরের কম হইবে না । সে সময় কিন্তু
মনুতারা ধ্রুব হয় নাই । খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ হইতে ২৫০০ অব্দ পৰ্যন্ত মনুতারা ধ্রুব হইয়াছিল । বাস্তবিক খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ অব্দে মনুতারার নিকটে মেরু আসিয়াছিল । ইহার পূর্বে ও পরে পাছ ছয় শত বৎসর নিকটে ছিল, ভ্রমণ বুঝিতে পারা যাইত না। ইনি বৈবশ্বত মনু । ইহার নামে বৈবশ্বত মন্বন্তর নামে কাল গণনা প্রচলিত ছিল । এই কালের মধ্যে বৈবস্বত মনুর অধিকার
আরম্ভ হইয়াছিল । এই মন্বন্তরের অষ্টাবিংশ দ্বাপরে ভারতযুদ্ধ হইয়াছিল ৷
আমি যতদূর বুঝিয়াছি, খ্রিঃপূঃ ৩২৫৬ অব্দে মন্বন্তর আরম্ভ হইয়াছিল ।

আর্য পিতামহগণ নক্ষত্র দেখিতেন কি ? যদি দেখিতেন, কি দেখিতেন, কি ভাবিতেন ৷ বরাহ মৎস্য কূর্ম বামন, বিষ্ণুর এই চারি দিব্য অবতার আলোচনায় তাহার কিঞ্চিৎ উত্তর পাইয়াছি । দেখা গিয়াছে, বৈদিক গ্রন্থে এই চারি অবতার কল্পনার মূল আছে । পুরাণে দেব, ঋষি মহন্ত, এই তিন অবলম্বন করিয়া উপাখ্যান রচিত হইয়াছে । দেব সম্বন্ধে উপাখ্যান বেদ-সম্মত ।
 
পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা প্রকাশিত হবে ।