https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ঈশ্বর কে যদি সাকার স্বীকার করা হয় তাহলে দোষ কি ?

Sunday, October 21, 2018

কমলঃ দাদা গতকাল যে প্রশ্ন করেছিলুম তার উত্তর দেন। 

বিমলঃ তোমার গতকতকালের প্রশ্ন ছিলো যে " ঈশ্বর কে যদি সাকার স্বীকার করা হয় তাহলে দোষ কি? দেখো কমল দোষ একটা নহে বহু। ভেবে দেখো ঈশ্বরের লক্ষন.. তিনি সচ্চিদানন্দ। সচ্চিদানন্দ শব্দটিতে তিনটি পদ আছে। সৎ চিৎ আনন্দ। সৎ অর্থাৎ ভূত ভবিষ্যত এবং বর্তমান।
তিনকাল ই যে একরস হয়ে বিদ্যমান থাকে। আর এক কথায় বলা যায় যে যাতে কেন প্রকার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নহে তাকে সৎ বলে।যে জ্ঞান যুক্ত সে চিৎ আর ত্রিকালে যাতে দুখেঃর অভাব হয় সে আনন্দ।ঈশ্বর এ কারনেই সচ্চিদানন্দ। যেহেতু ঈশ্বরের কখনো পরিবর্তন হয় না তার জ্ঞান ও কখনো বিনস্ট হয় না তাতে কোনো দুখঃ ও ব্যাপ্ত হয় না। জগতে যত রকমের সাকার পদার্থ আছে সবগুলোকে পরিবর্তন হতে দেখা যায় তাই তারা সৎ নহে। চিৎ কেবল নিরাকার আত্মা এবং পরমাত্মা উভয়কে পাওয়া যায়। কোনো প্রকার সাকার দেহদারী দুঃখের হাত হতে রক্ষা পেতে পারে না। ত্রিকালে তাতে আনন্দও থাকতে পারে না।

প্রথম দোষঃ শীত গ্রীষ্ম ক্ষুদা তৃষ্ণা ভয় রোগ শোক বৃদ্বাত্ত মৃত্যু প্রভৃতি সাকার দেহধারী কে গ্রাস করে দুঃখ দেয়। ঈশ্বর সর্বদা এই সমস্ত হতে পৃথক। অতএব ঈশ্বর সাকার স্বীকার করলে দোষ তাকে স্পর্শ করবে। সে অবস্থায় ঈশ্বর সচ্চিদানন্দ এবং নির্বিকার হতে পারে না। কেননা, প্রত্যেক সাকার পদার্থে জন্ম বৃদ্ধি ক্ষয় জরা মৃত্যু প্রভৃতি বিকার দোষ থাকে।

দ্বীতিয় দোষঃ ঈশ্বরকে সাকার স্বীকার করলে তিনি সর্বব্যাপী হতে পারবেন না কেননা, প্রত্যেক সাকার পদার্থ একদেশী অর্থাৎ একস্থানে স্থিতীশীল।

তৃতীয়দোষঃ ঈশ্বর অনাদি ও অনন্ত হতে পারবেন না কেননা প্রত্যেক সাকার বা অবয়বী দেহধারী উৎপন্ন হয়ে থাকে যে বস্তুর আরম্ভ আছে সে সাদি। এ অবস্থায় অনাদিতত্বব গুনের অভাব হবে। ঈশ্বর অনাদি গতে পারেবেন না। অনন্ত হতেও পারেবেন না। যহার উৎপত্তি আছে তাহার বিনাশ ও আছে। যে নদীর একপাড় থাকে তার অন্য পাড় ও থাকবে

চতুর্থ দোষঃ ঈশ্বরে সর্বজ্ঞত্ব গুনের অভাব হবে। কেননা ঈশ্বর যদি সর্বজ্ঞ স্বীকার করা যায় তাজলে ঈশ্বর সাকার হওয়া এক দেশে অবস্থিতির কারনে সর্বত্র তারপক্ষো বিদ্যমান থাকা সম্ভব নহে। যদি ঈশ্বর সর্বত্র না থাকে তাহলে তার ভিতর সকল স্থানের জ্ঞান থাকাও সম্ভ না তার জ্ঞান এক স্থানের হবে। ঈশ্বর যে দেশে বা স্থানে থাকবেন তার জ্ঞান সেই স্থানের জ্ঞানই হবে। পরিণাম- ঈশ্বর অন্তর্যামী হতে পারবেন না। কেননা তিনু প্রত্যেকের মনের কথা জানতে পারবেন না।

পঞ্চম দোষঃ ঈশ্বরে নিত্যত্ব গুনের অভাব হবে। ঈশ্বর অনিত্য হয়ে যাবেন। সেই নাত্য, যার অস্তিত্ব থাকবে,অথচ তার কোনো কারণ থাকবে না। সে কোনও পদার্থের সংযোগ দ্বারাও উৎপন্ন হবে না। কেননা, যে সাকার সে বস্তুু তত্ত্বের মিশ্রনযোগে উৎপন্ন হয়ে থাকে। ষষ্ঠদোষঃ পরমাত্মা সর্বাধার গুনরহিত হবেন। তিনি সর্বাধার না হয়ে অপরাধার হয়ে যাবেন। পরমাত্মা সর্বাধার কেন জানো? কেননা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তারই আশ্রয় থেকে গতিশীল ; বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে তিনি ধারন করে আছেন। যদি পরমাত্মাকে সাকার স্বীকার করা হয় তানি কারও আশ্রয়ে থাকবেন। একারনেই তো মত মতান্তর বাদীর দলেরা ঈশ্বরকে সাকার মনে করে, তার আশ্রয়স্থল তৈরী করে রেখেছে। কেহ সপ্তলোক, কেহ চতুর্থলোক কেহ ক্ষীরসাগর কেহ গোলক কেহ আবার বৈকুণ্ঠধাম স্থীর করে রেখেছে। যদি পরমেশ্বর নিজেই অপরের আশ্রয়ে থাকে তাহলে বলতো জগৎ কার আশ্রয়ে থাকবে? জগৎ তো নিরাশ্রয় হয়ে যাবে। ঈশ্বরকে সাকার ধরলে এমনি বহিতত দোষ ঈশ্বরকে যুক্ত করে। 

কমলঃ বিদ্বান ব্যাক্তিদের অভিমত ঈশ্বর নিরাকার তাতে কোন সন্দেহ নাই! কিন্তুু কথা কি জানো দাদা! ঈশ্বর সময় সময় সাকার রুপ ধারন করেন ধরাধামে অবতীর্ণ হন। যদি বল সে কি করে হয় আমি বলবো এমন করে হয়। যেমন : নাকি বাস্প নিরাকার। কিন্তুু সেই বাস্প কখনো কখনো জমাট বাধে মেঘাকারে কখনো বরফের আকারে মুর্তিমান হয়ে ওঠে। অগ্নি সর্বব্যপক নিরাকার কিন্তুু সময়ে স্থুল রুপ দেখা দেয়। এমনি আরও অনেক উদাহরন আছে।জগৎে ভৌতিক পদার্থ যদি নিরাকার থেকে সাকার হতে পারে তবে ঈশ্বর কেন সাকার হতে পারে না।    

বিমলঃ বাস্প ও অগ্নির উদাহরণ দিলে বটে তবে সেগুলো ঠিক বলে মনে হয় না। একটু গভীরে চিন্তা করে দেখো। বাস্প এবং অগ্নি এরা একক পদার্থ নয়। এরা অসংখ্য পরমানুর সৃস্টি। জলের অসংখ্য ক্ষুদ্র পরমানু বাষ্পের আকার ধারণ করে সেই পরমানুর সমষ্টিই আবার স্থুল হয়ে মেঘরুপে আত্ম প্রকাশ করে তখন তাকে আমরা জল বা বরফ বলি। বাষ্প যদি একটি পরমানু বা একক রস হতো তাহলে সে কোনো কালে স্থুল হতে পারত না। অগ্নীর পরমানু সমন্ধে ঐ একই কথা। অগ্নির পরমানু অসংখ্য হওয়ায় পরষ্পর সংযোগস্থান রুপে প্রচন্ড অগ্নির আকার ধারন করে। অগ্নি সর্বব্যাপক ও নিরাকার একথা বলা ভুল। অগ্নি" পৃথিবী এবং জল অপেক্ষা সুক্ষ্ম তাই তাকে পৃথিবীতে বা জলের ব্যাপক স্বঅকার করা যেতে পারে কিন্তুু আকাশ ও বায়ুতে স্বীকার করা যায় না। তবে হ্যা আকাশ ও বায়ু দুটোই অগ্নিতে ব্যাপক। কেননা এ দুটো অগ্নি অপেক্ষা সুক্ষ্ম। সুক্ষ্ম পদার্থই স্থুল পদার্থে ব্যাপক হয়ে থাকে। যে সব পদার্থে অগ্নি ব্যাপক রুপে আছে সেই পদার্থে সমুহ সাকার বা রূপ যুক্ত। জগতে যাহা রুপবান দৃস্ট হয় সে সমস্ত অগ্নির ব্যাপকতার কারনে কেননা রুপ অগ্নির একটি গুন। অতএব ভৌতিক পদার্থের সমস্টি সুক্ষ্ম অপেক্ষা স্থুল এবং সে সুক্ষ্ম অপেক্ষা এজন্য স্থুল যেহেতু সে বহু পরমানুর সমস্টি দ্বারা গঠিত। পরমাত্মা সর্বব্যাপক এক এবং একর সংযুক্ত অতএব তিনি সাকার হতে পারেন না। প্রশ্ন রইল যে ঈশ্বর সবসময় অবতার গ্রহন করে থাকেন। এরুপ ধারনা করা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নামা। উপরে উঠা বা নামার ব্যাবহার একদেশিতার লক্ষণ অর্থাৎ উঠানামা ক্রিয়া এক স্থানে অবস্থান কারী বস্তুুর পক্ষে সম্ভব। যে সর্বব্যাপক তার পক্ষে অসম্ভব। যে সর্বব্যাপক তার পক্ষে আসা যাওয়া উঠানামা করা সম্ভব হতে পারে না। যিনি সবস্থানে থাকেন তিনি কোথায় আসবেন বা কোথাই বা যাবেন। 

কমলঃ তাহলে তুমি বলতে চাও যে, রাবণ, কংস, হিরণ্যকশ্যপ প্রভৃতি | দুষ্টদের বিনাশ করার জন্য ঈশ্বর অবতার রূপে আসেননি ? শুধু তাই নয়, তােমার মতে ভবিষ্যতে দুষ্টের বিনাশ সাধনের জন্য ঈরের অবতার হবেও না। আমি তাে শুনেছি, যখন যখন ধর্মের হানি ও নি হয়, তখন তখন ঈশ্বর অবতার রূপে ধরায় অবতীর্ণ হন। |


বিমলঃ ঈশ্বরের অবতার কখনও হয়নি, কখনও হবেও না। সময় সময় যে সব মহাপুরুষ(?) জন্ম নিয়েছিলেন, যারা দুষ্টের দমন করেছিলেন অথবা জনসাধারণকে সঠিক পথ দেখিয়েছিলেন, জনসাধারণ তাঁদের নানাপ্রকার উপাধি দিয়েছে। সেই মহানদের নাম কেউ নবী’ রেখেছে—কেউ তাকেঈশ্বরের পুত্র বলেছে। কেউ তাঁকে ঈশ্বরের অবতার বলে স্বীকার করেছে। | কেউ তাকে ঈশ্বরে বলেছে । মনে রাখতে হবে, তাঁরা কিন্তু সকলেই মানুষ ছিলেন। একটু বিচার বিবেচনা করেই দ্যাখাে । যিনি অশরীরী হয়ে শরীর-ধারী প্রাণীকুলকে সৃষ্টি করতেপারেন, সেই ঈর্থর কি অশরীরী হয়ে শরীর ধারী প্রাণীদের সংহার করতে পারেন না? জগতে আজও অসংখ্য প্রাণী জন্ম নিচ্ছে, এবং মরছে।ঈর কি শরীর ধারণ করে তাদের সৃষ্টি ও সংহার করছেন? সামান্য মাত্র ভূকম্পনে  প্রাণীকে মরতে দেখেছ । এক ঘূর্ণি ঝড়ের | আঘাতে কত নগর বিধ্বস্ত হয়ে যায়, গে মহামারীতে, কলেরায়, শত শতমানুষ মরে যায়, আর সামান্য মাত্র একজন তুচ্ছ প্রাণীকে মারার জন্য কিনা ঈশ্বরকে অবতার হতে হবে? তার সামনে রাবণ, কংস তাে কোন ছার ! যে ঈশ্বর নীরবে সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করতে সক্ষম , তাকে শরীর ধারণ করে অথাৎ অবতার হয়ে দুষ্টকে সংহার করতে হয়েছিল, একথা বলা হাস্যকর এবং ঘােরতর অপমানকর নয় কি? “যখন যখন ধর্মে শনি উপস্থিত হয় তখন তখন ঈর্থর অবতার হন” একথা বলাও ভ্রান্তি উৎপাদক নয় কি? এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, যারা অবতারবাদে বিশ্বাসী তারা প্রায় এই কথাটিকে বারংবার বলে থাকে। কিন্তু একথা তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারেই টেকে না। দ্যাখাে ! যারা ঈশ্বরের অবতার বিবাস করে থাকে, তারা মুখ্যরূপে দশ অবতার এবং চার যুগ স্বীকার করে । সত্যযুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ আর কলিযুগ । কেমন ? সত্যযুগে’ ধর্মের চার চরণ, ত্রেতা যুগে ধর্মের তিন চরণ আর অধর্মের এক চরণ স্বীকৃত দ্বাপর যুগে’ ধর্মের দুই চরণ এবং অধর্মের দুই চরণ। অর্থাৎ অর্ধেক পুণ্য আর অর্ধেক পাপ। কলিযুগে’ ধর্মের এক চরণ আর অধর্মের তিন চরণ । এবার একটু অবতার (মে বিবেচনা করা যাক। লােকে জানে, সত্যযুগে চার অবতার, ত্রেতা যুগে তিন, দ্বাপরে দুই আর কলিযুগে এক অবতার । এখন, বিচার্য বিষয় এই, যদি সত্যযুগে ধর্মের চার  চরণ ছিল, অধর্ম মােটেই ছিল না সে যুগে চার অবতারের প্রয়ােজন কীসের?

 ত্রেতা যুগের যখন ধর্মের তিন চরণ মেনে নেওয়া হলাে এ অবস্থায় তিনটি মাত্র অবতার হলাে কেন? দ্বাপর যুগে যখন অর্ধেক পাপ আর অর্ধেক পুণ্য, | সে অবস্থায় অবতার দু’জন কেন রয়ে গেল? আর কলিযুগে যখন ধর্মের একটি চরণ রয়ে গেল, আর অধর্মের রয়ে গেল তিন চরণ, সে অবস্থায় একজন অবতার কেন? আর তাও আবার কলিযুগের শেষে নাকি আবির্ভাব ঘটবে, এখনও ঘটেনি, তা কেন? হওয়া উচিত ছিল, অধর্মের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবতারেরও বৃদ্ধি। তা না হয়ে যতই অধর্মের বৃদ্ধি হতে লাগল  ততই অবতারের সংখ্যা হ্রাস পেতে লাগল। এবার বলতাে, ধর্মের হানি হওয়ার সঙ্গে অবতারদের সম্বন্ধ কোথায় রইল?

কমলঃ  কী বলছাে দাদা ! তাঁরা যে রকম বিস্ময়কর কর্ম দেখিয়েছেন। তা মানুষ দেখাতে পারে না। যেমন নাকি, গােবর্ধন পর্বত কড়ে-আঙ্গুলে ধারণ। একি সাধারণ কোনও মানুষ করতে পারে? এই সব দেখে শুনে স্বীকার করতেই হবে যে, ঈর বার-বার রূপ ধারণ করে ধরায় আসেন। |

বিমলঃ প্রথমতঃ—কেউ আঙুলের উপর পাহাড় তুলেছিল একথা ভুল। | যদি দুর্জনতােষ ন্যায়ানুসারে একথা স্বীকার করে নেওয়া যায়, তবু এ দ্বারা। ঈশ্বর অথবা ঈশ্বরের অবতারের কোনও মহিমা প্রকাশ পায় না । তুমি হয়ত বলবে কেন? কেন, তাই বলছি শােনাে। যে ঈশ্বর সূর্য প্রভৃতি গ্রহ উপগ্রহ সমূহকে আপন শত্তি(তে ধারণ করে আছেন, তাঁর পথে গােবর্ধন প্রভৃতি পর্বত এক সরষে পরিমাণও নয়। যে ধরার উপর তােমরা বাস করছ, আমরা বাস করছি, সেই ধরার বুকে এক আধটা নয়, ছােটবড় পাহাড়পর্বত আছে, সেই ধরাকে ধারণ করে আছেন ঈশ্বর, সে কথা মনে করলে, বেচারা গােবর্ধন পর্বত নগণ্য নয় কি? যদি ঈশ্বর বা কোনও ঈশ্বরের অবতার, গােবর্ধন পর্বত আঙুলে তুলে ধরে, সে এমন কোন্ বাহাদুরীর কথা হলাে? যদি কোনও এম, এ, অধ্যয়নরত বিদ্যার্থী, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর কোনও প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে দেয়, তাহলে সে এমন কোন্ লক্ষভেদ করল ? হ্যা, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র হয়ে যদি কেউ এম, এ,প্রাপত্রের উত্তর দেয় বাস্তবিকপথে সেই প্রশংসনীয়। ঠিক তেমনি, মানুষ হয়ে যদি কেউ | আঙুলে পর্বত তুলে ধরে তাহলে বলা যায়-হ্যা, এক অদ্ভুত কাজ করেছে বটে। কেননা, মানুষের পথে আঙুলে পর্বত তুলে ধরা কল্পনাতীত । আর যদি সে কাজ কোনও ঈশ্বরের অবতার করে থাকে, তাতে বিস্ময়ের কী থাকতে পারে বলাে। শুধু তাই নয় এতে তার কোনও মহিমাও প্রকাশ পায় না।

কমলঃতােমার বিবেচনায় যদি ঈশ্বরের অবতার অসম্ভব একথা মানতেই হয়, তাহলে ঈর যে সর্বশক্তিমান একথা স্বীকার করি কী করে? যদি ঈশ্বরেহয়ে তিনি অবতীর্ণ না হতে পারেন, তাহলে তাঁর মধ্যে সর্বশক্তিমানত্ব থাকল কোথায়? তিনিই সর্বশত্তিমান হওয়ার যােগ্য, যার মধ্যে সম্ভব-অসম্ভব, সমস্ত কিছু করার ক্ষমতা থাকে।

বিমলঃভাই শােনাে। তুমি একটু তলিয়ে বিচার বিবেচনা করে দেখলে। না যে, ঈশ্বরে যদি অবতাররূপে আসেন তাহলে তার মধ্যে সর্বশক্তিমানত্ব গুণ থাকবে না। এই অবস্থায় তাঁকে শক্তিহীন হতে হবে। যদি বলাে কেমন করে হবে? তাে শােনাে। যে ঈশ্বর শরীর ধারণ করার পূর্বে হস্তপদাদি অবয়ব | রহিত হয়ে বিজগৎ রচনা করেছিলেন এখন তাঁকে হস্তপদাদি অবয়বের সাহায্যে কাজ করতে হবে। পূর্বে তিনি চ( রহিত হয়েও দেখতেন, এবার তাঁকে চোখ দিয়ে দেখতে হবে। পূর্বে কর্ণ রহিত হয়ে শুনতেন, এবার কান | দিয়ে শুনতে হবে। বলার উদ্দেশ্য এই যে, অবতার হয়ে আসবার আগে   
তাঁকে অবয়ব রহিত হয়ে কাজ করতে হতাে, এবার শরীরের অধীনে থেকে, তাঁকে কাজ করতে হবে। ঈশ্বরকে যদি অপরের ভরসায় কাজ করতে হয়, | তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান হবেন কেমন করে? অল্পজ্ঞ জীব যেমন শরীরের | ভরসায় কাজ করে, তেমনি ঈশ্বরেকেও শরীরের ভরসায় কাজ করতে হবে।
তাহলে তুমিই বল, জীব আর ঈধরে পার্থক্য কী রইল? মানুষকে যেমন শীত, গ্রীষ্ম, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ব্যাকুল করে তােলে, মানুষের যেমন রাগ-দ্বেষ, জ্বর-জ্বালা হয়, তেমনি শরীরধারী ঈৰ্থরেরও হবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় দোষ ঈরে আরােপিত হবে—ঈশ্বর অবতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পরাধীন হতে হবে,—তিনি স্বাধীন থাকতে পারবেন না । কখনও তাঁর খাওয়ার প্রয়ােজন বা কখনও জলের, কখনও বা বস্ত্রাদির আবার কখনও নিবাস স্থানের অর্থাৎ মাথা গোঁজার মত ঠাঁইও প্রয়ােজন হবে। যিনি জগতের যাবতীয় কর্ম আপন শক্তি বলে করেন, তাঁকে শরীরের সাহায্যে করতে হবে। এ অবস্থায় তাঁকে সর্বশক্তিমান কোন্ বিচারে বলবাে বল? যদি কোনও ব্যক্তি অন্যকে আপন দৃষ্টি শক্তির প্রভাবে আকৃষ্ট করে জ্ঞানহারা করতে সক্ষম হয়, আর এক ব্যক্তি কাহাকেও ঔষধ প্রয়ােগে জ্ঞানহারা করে । বলতাে, এ দুজনের মধ্যে কোন
জন অধিক শক্তিশালী। এস্থলে সেই শক্তিশালী ব্যক্তি, যেজন দৃষ্টিশত্তি(বলে | অন্যকে ওয়ানহারা করতে স(ম। যদি বলাে কেন ? কারণ এই যে, সে অপরকে সংজ্ঞাহীন করতে ঔষধের সাহায্য নেয়নি।
এবার তুমি বেশ ভাল করে বুঝেছ যে, ঈশ্বর সেই অবস্থায় সর্বশক্তিমান হতে পারবেন, যখন তিনি অবতার গ্রহণ করবেন না। তুমি যে মনে করেছ সর্বশক্তিমান সম্ভব-অসম্ভব সব কিছুই করতে পারে, এ মনে করা মস্ত বড় ভুল | ছাড়া আর কিছুই না। যার মধ্যে সর্বপ্রকার শক্তি আছে তিনি সর্বশক্তিমান, এই হলাে সর্বশক্তিমানের বাস্তবিক অর্থ। যিনি সর্বশক্তিমান হবেন তিনি। জগতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পদার্থকে অপরের সাহায্য ব্যতীত যেমন যুক্ত করতে পারবেন, তেমনি তাদের বিযুক্তও করতেপারবেন ।তিনি সমস্ত জীবকে তাদের কর্মানুয়াযী ফল দিতে এবং সৃষ্টি, স্থিতিও প্রলয় করতে পারবেন । তাৎপর্য এই যে, ঈশ্বর তাঁর নিজের কর্ম সম্পাদনে অপর কোনও কিছুর সাহায্য গ্রহণ করবেন না । এই হল ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্ত্বা। সর্বশক্তিমানের অর্থ এ নয় যে, তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন। |

কমলঃ ঈশ্বর অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন না? তা যদি না পারেন, তিনি ঈশ্বর হবেন কেমন করে?

বিমলঃঅসম্ভবকে সম্ভব না করা, নিয়মকে অনিয়মের মধ্যে না আনতে পারাই তাে ঈশ্বরেঈশ্বরত্ব। যদি তুমি বল যে, ঈশ্বর অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন, তাহলে আমি তােমায় প্রশ্ন করি, আচ্ছা বলতাে—“ঈশ্বর কি নিজে নিজেকে মেরে ফেলতে পারেন, না পারেন না?”

কমলঃঈশ্বরেনিজেকে মেরে ফেলতে পারেন না সত্য, কিন্তু অন্য ঈশ্বরকে অবশ্যই সৃষ্টি করতে পারেন। কেননা, তিনি সর্বশক্তিমান।

বিমলঃভাই শােনাে,—ঈশ্বর নিজের মতাে অন্য ঈশ্বর সৃষ্টি করতে। পারেন না, কোনও মতেই পারবেন না। তুমি বলবে কেন পারবেন না। আচ্ছা, তা বলছি শােনাে—মনে কর, পূর্বের ঈশ্বর পুরাতন, তিনি আর একজন নূতনঈশ্বরকে সৃষ্টি করলেন তাহলে এদের একজন হলেন পুরাতন, আর একজন হলেন নূতন । কেন? যে ঈশ্বরে প্রথমে ছিলেন তিনি অনাদি, আর দ্বিতীয় নূতন যে ঈরটি হলেন তিনি সাদি অর্থাৎ তাঁর আদি আছে । এক কথায় বলা যায় যে, একজনকে কেউ সৃষ্টি করেনি, আর অপরজনকে সৃষ্টি। করা হয়েছে। একজনের বয়সের সঙ্গে সম্বন্ধে নেই, আর অপর জনের বয়স আজ হতে শুরু হল । কেননা, শেষােত্ত(টি সৃষ্ট। ঈর্থর যিনি অনাদি, এঁদের উভয়ের মধ্যে তিনি ব্যাপক, আর যে ঈরটি সৃষ্টি তিনি ব্যাপ্য। কেননা, | এঁদের উভয়ে ব্যাপক হতে পারেন না। যদি বলাে অর্ধেক অর্ধেক ব্যাপক থাকবেন, তাহলে দুই ঈশ্বর সর্বব্যাপক হতে পারবেন না। তাঁদের উভয়ের পক্ষে সর্বব্যাপক হওয়া সম্ভব হবে না। অতএব সর্বশক্তিমান শব্দের অর্থ এ নয় যে, ঈধর সব কিছু করতে সক্ষম । ঈশ্বর তাই করতে সক্ষম , যা ঈশ্বরের করা উচিত।
কমলঃযদি ঈশ্বরের অবতার হওয়া স্বীকার করা যায়, তাতে ক্ষতিই বা কী? যত মত তত পথ - একভাবে না একভাবে ঈশ্বরকে পাবেই?

বিমলঃ প্রথমতঃ ঈশ্বরের যখন অবতার হয়ই না, সে অবস্থায় তাঁর অবতার স্বীকার করা মানে, সত্যকে গলা টিপে মেরে ফেলা। এটা একটা মস্ত ক্ষতি নয় কি? |

দ্বিতীয়তঃ—সমস্ত জগতের যিনি উন্নতি কর্তা সেই ঈধরের অবনতি ঘটবে। কেন জানাে? কেননা, তিনি নারায়ণ হতে নর হয়ে যাবেন । নর থেকে নারায়ণ হওয়া উন্নতির লক্ষণ বলা যেতে পারে, কিন্তু নারায়ণ থেকে নর হওয়া একেবারে নীচে নেমে যাওয়া। কোনও ভিখারী যদি রাজা হয়ে যায়, বাস্তবিক পথে তার উন্নতি হয়েছে জানতে হবে। কিন্তু রাজা যদি ভিখারী হয়, তাকে উন্নতির চিহ্ন কে বলবে? যদি কেহ একথা স্বীকার করে তাকে পাগল ছাড়া কী বলা হবে।

তৃতীয়তঃ—বিড়াল তপস্বীর দল নিজেদেকে ঈশ্বরের অবতার বলা আরম্ভ করবে, আর সকল স্ত্রী পুরুষদেরকে জালে জড়িয়ে তাদের ধর্ম নষ্ট করবে। তাদের চেলা বানিয়ে তাদের কাছ থেকে ধন নিয়ে মজা উড়াবে। ভারতবর্ষে এমন বহু বিড়ালতপস্বীর উদাহরণ রয়েছে, যারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘােষণা করে, নর-নারীর মধ্যে ঈশ্বরের ভাবনাকে মনের সাথে নষ্ট করেছে।
চতুর্থতঃ—ঈশ্বরের অবতার মেনে নিলে মানুষ অপরের অত্যাচার সহ্য করা আরম্ভ করবে। যখন দুষ্ট এবং পাপী অত্যাচার করে, মা বােনদের মান-সম্মান নষ্ট করে সম্পত্তি লুঠতে থাকে, ঘর বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়, তখন অবতারবাদীর দল হাতের উপর হাত দিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকে তারা অন্যায় ও অত্যাচারের প্রতিকার করতে অগ্রসর হয় না। তারা। মনে মনে ভাবে অন্যায় ও অধর্মকে বাধা দেওয়া তাদের ক্ষমতার বাইবে। ভগবান অবতার হয়ে আসলেই দুষ্টের দমন হবে, তবেই ধর্মের স্থাপন হতে পারবে। এইভাবে পৃথিবীর ভার হাল্কা হবে । প্রকৃত পথে এ এক মহান ভীরুতা। এই ভীরুতা এসেছে ঈশ্বরের অবতার স্বীকার করার মধ্য দিয়ে। দ্যাখাে, যে সমস্ত জাতি ঈম্বরের অবতার হওয়া স্বীকার করে না, সেই সমস্ত জাতি আপন শত্রুদের বিরুদ্ধে মুখােমুখি হয়ে তাদের শক্ত হাতে প্রতিরােধ করে। যারা অবতার বিশ্বাসী নয়, তারা কোনও দিনও স্বীকার করে না যে,অন্যায়কারী এবং অত্যাচারীদের মারধর করার জন্য অবতার কোমর বেঁধে উঠে পড়ে লাগবে। তারা কোনও দিনও ভাবতে পারে না যে, অন্যায়ী এবং অত্যাচারীদের বিনাশ করার জন্য ঈশ্বর অবতার হবেন। তারা মনে করে ঈশ্বর যেমন অত্যাচারীদের হাত, পা প্রভৃতি দিয়েছেন, তেমনি আমাদেরও দিয়েছেন। এই কারণেই সেই সমস্ত জাতি শত্রর সঙ্গে মুখােমুখি হয়ে শত্ত( হাতে প্রতিকার করার জন্য সামনা সামনি দাঁড়ায়। তাঁরা নিজের কর্মকে ঈরের ভরসায় ছেড়ে দেয় না। শােনাে কমল ! আমি তােমায় সত্য করে বলছি, এই অবতারের সিদ্ধান্তই আর্য জাতিকে বহুভাবে পতিত এবং পদদলিত করেছে। এই অবতারবাদই আত্মবিশ্বসী আর্যজাতির অন্তর হতে আত্মবিশ্বাসকে (Self | Confidence) নির্বাসন দিয়েছে।



  1. ঋগবেদের ১০/৯০ পুরুষ সুক্ত তে পরমাত্না কে সহস্র মস্তক, সহস্র পদ,সহস্র মুখ, সহস্র নেত্র বিশিষ্ট বলা হয়েছে। এখানে তো আকার প্রকাশ পেল। এটা একটু ব্যাখ্যা জানা দরকার।

    ReplyDelete
  2. লেখায় এত ভুল থাকলে পড়ার মনযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
    আশা করবো বিষয়টি বিবেচনায় আনবেন।

    ReplyDelete