মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কাশীর ধর্মসভায় পণ্ডিতগণের নিকট পরাজিত হয়েছেন, এমন শঙ্কা ইদানীং বাজারে দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে। আর্যগণের সর্বত্রব্যাপী বেদপ্রচারে দিশেহারা হয়ে পৈতৃক ধর্মব্যবসায় ঠেকাতে একদল পৌরাণিক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জীর নামে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও মিথ্যা কটূক্তি কে ই সম্বল করেছে। আমরা নিষ্কলঙ্ক দয়ানন্দ সরস্বতীর আগের দুই পর্বে মহর্ষি জী কে নিয়ে একাধিক শঙ্কার নিবারণ করেছি। এই স্থলে ও আমাদের অভিপ্রায় পাখণ্ডির শঙ্কা নিবারণ।
তাই আমরা কাশীধামে অনুষ্ঠিত পুরো বিতর্কের সারমর্ম প্রদান করছি নানা উৎস থেকে।
মহর্ষি দয়ানন্দ হিন্দুর পবিত্রভূমি কাশীধামে গিয়ে প্রকাশ্যে মূর্তিপূজার বিরোধিতা করে বৈদিক ধর্মের প্রচার শুরু করলে কাশীর ব্রাহ্মণগণ ও কাশীনরেশ নিজে তাঁদের আশু ক্ষয়মান ধর্মব্যবসায় ও কাশীধামের মাহাত্ম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে দয়ানন্দ সরস্বতীর সাথে শাস্ত্রীয় বিতর্কে আবির্ভূত হওয়াই সমীচীন মনে করলেন।
অবশেষে বিচারদিন নির্ধারিত হইলো। ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর দিবসে – কিংবা ১৯২৬ শতাব্দীর কার্তিক মাসে শুক্লা দ্বাদশীর মঙ্গলবার অপরাহ্ণ তিন ঘটিকার সময়ে, -- ইতিহাস-কীর্ত্তিত বারাণসী নগরে, -- ভাগী রথীর পুন্যসলিল-প্রক্ষালিত পবিত্রক্ষেত্রে, --হিন্দুর সর্বপ্রধান তীর্থস্থলে,- পুরাণ কল্পিত তেত্রিশকোটি দেবতার সম্মিলন- ভূমিতে , এবং মহাদেবের ত্রিশূল-সংরক্ষিত কাশীধামে মূর্তিপূজা সমর্থনের নিমিত্ত মহাসভার অধিবেশন হইলো।
মহাসভার মহারাজ কাশীনরেশ সভাপতির পদ পরিগ্রহ করিলেন। তিনি স্বীয় সভাপণ্ডিত তারাচরণ তর্করত্ন এবং পণ্ডিতবর বিশুদ্ধানন্দ স্বামী ও বালশাস্ত্রী প্রভৃতি অতিরথ মহারথ সমভিব্যাহারে মহাসমারোহ পুর্ব্বক নির্দ্দিষ্ট সময়ে আনন্দবাগ নামক উদ্দ্যানে উপস্থিত হইলেন। কাশীর নানা শ্রেণীস্থ শত শত লোক তাঁহাদিগের অনুগমন করিল, - আনন্দবাগের অভিমুখে জন্স্রোত প্রবাহিত হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে আনন্দবাগ লোক কল্লোলে কল্লোলিত হইয়া উঠিলো। সেই মহতী সভার ভিতর দয়ানন্দের পক্ষ-সমর্থক্রূপে দ্বিতীয় ব্যাক্তি কেহই ছিলেন না। সুতরাং তিনি সভা-মন্ডল মধ্যে করিযুথ-পরিবেষ্টিত কেশরীর ন্যায় একাকী অবস্থান করিতে লাগিলেন। বিচারকাল সমাগত হইলে দয়ানন্দ কাশীনরেশকে জিজ্ঞাসা করিলেন—“পণ্ডিতগণ বেদের গ্রন্থ আনিয়াছেন ?” কাশীনরেশ বলিলেন--
“বেদের গ্রন্থ আনিবার প্রয়োজন নেই, কারণ সমগ্র বেদ পন্ডিতদিগের কন্ঠস্থ।“ তাহা শুনিয়ে দয়ানন্দ বলিলেন—“গ্রন্থ না হইলে পূর্ব্বাপর মিল রাখিয়া বিচার করা যাইতে পারেনা। যাহা হউক এখন বিচার্য্য বিষয়টা কি ?” তদূত্তরে উপস্থিত পন্ডিতগণ বলিলেন,- “ আপনি মূর্তিপূজার খন্ডন করিবেন, আর আমরা উহার সমর্থন করিব। “ তাহা শুনিয়া দয়ানন্দ বলিলেন,- “পন্ডিতশ্রেষ্ঠ, তিনিই অগ্রবর্তী হউন।” তাহাতে রঘুনাথ প্রসাদ কোতয়াল নামক এক ব্যাক্তি বলিলেন,- “পন্ডিতশ্রেষ্ঠ যিনিই হউক না কেন, আপনার সহিত এক সময়ে একজন বই দুইজন পন্ডিত বিচার করিবেন না। ” তখন পূর্বোক্ত পন্ডীত তারাচরণ অগ্রবর্তী হইলে দয়ানন্দ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,- আপনি বেদের প্রমাণ মানেন কি না?”
তারাঃ বর্ণাশ্রমী ব্যাক্তিমাত্রেই বেদের প্রমাণ গ্রাহ্য করিয়া থাকেন।
দয়াঃ তবে পাষাণাদি মূর্তি-পূজার পক্ষে যদি কোন বৈদিক প্রমাণ থাকে ত বলুন।
বেদের বিচারই মুখ্য,- বেদোক্ত ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই কারণ বেদের আলোচনা প্রথমেই করা উচিত। মনুস্মৃতি প্রভৃতি বেদমূলক গ্রন্থও প্রামাণিক বলিয়া গ্রহঙ্করা যাইতে পারে। তাহা বলিয়া বেদ-বিরুদ্ধ বা বেদ-অপ্রসিদ্ধ কোন গ্রন্থই গন্য হইতে পারেনা।
তারাঃ মনুস্মৃতি কি প্রকারে বেদমূলক?
দয়াঃ সামবেদীয় গ্রন্থে কথিত হইয়াছে যে, মনু যাহা যাহা কহিয়াছেন, তাহা তাহা ঔষধের ওষধ।
ইহার কোন উত্তর প্রদান করিতে না পারিয়া পন্ডিত তারাচরণ নীরব হইয়া রহিলেন। তখন বিশুদ্ধানন্দ স্বামী একটি ব্যাসসূত্র আবৃত্তি পূর্ব্বক জিজ্ঞাসা করিলেন যে, বেদে তাহার কোন মূল আছে কিনা ?
দয়াঃ ইহা ভিন্ন প্রকরণের কথা, সুতরাং এখন ইহার বিচার অনাবশ্যক।
বিশুদ্ধানন্দঃ আপনি যদি ইহা জানেন তো অবশ্য বলুন।
দয়াঃ যদি কোন বিষয় কাহারও কন্ঠন্থ না থাকে, তাহা হইলে তাহা পুস্তক দেখিয়া লইলেই চলিতে পারে।
বিশুদ্ধানন্দঃ যদি কন্ঠন্থই না থাকে , তাহা হইলে কাশীধামে আপনার শাস্ত্রার্থ করিতে আসিবার প্রয়োজন কি ?
দয়ানন্দ ঃ সমস্ত বিষয় কি আপ্নারই কন্ঠস্থ আছে ?
বিশুঃ হ্যাঁ আছে।
দয়ানন্দঃ তবে ধর্মের স্বরূপ বলুন দেখি ?
বিশুঃ বেদ-প্রতিপাদ্য ফলের সহিত যে অর্থ, তাহারই নাম ধর্ম।
দয়াঃ এটি ত আপনার স্বরচিত সংস্কৃত । সুতরাং ইহা প্রমাণের যোগ্য নয়। এই বিষয়ে যদি শ্রুতি বা স্মৃতির কোন প্রমান জানেন ত বলুন?
বিশুঃ যাহা “চোদনা”- লক্ষণ যুক্ত তাহাই ধর্ম। ইহা জৈমিনির সূত্র।
দয়াঃ আপনাকে শ্রুতি-স্মৃতির প্রমাণ দেখাইতে বলিলাম। তাহা না দেখাইয়া সূত্রের প্রমাণ দেখাইতেছেন কেন? ইহাকেই কি কন্ঠস্থ বিদ্যা বলে? আর “চোদনা” শব্দের অর্থ প্রেরণা, - ইহারও শ্রুতি-স্মৃতির প্রমাণ দেখাইতে হবে।
ইহার উত্তরে বিশুদ্ধানন্দ কোনও কথা না বলায়, দয়ানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন,--“আচ্ছা, আপনি ত ধর্মের স্বরূপ বলিতে পারিলেন না, এখন ধর্মের লক্ষণ কি, তাহাই বলুন দেখি?”
বিশুঃ ধর্মের একটা মাত্র লক্ষন।
দয়া ঃ সেটা কি ?
তদুত্তরে বিশুদ্ধানন্দ কিছুই বলিলেন না। তখন দয়ানন্দ মনুস্মৃতি অনুসারে ধর্মের দশবিধ লক্ষণ উল্লেখ পূর্ব্বক বলিলেন যে, -- “ধর্মের এইতো দশটি লক্ষণ, তবে আপনি কিরূপে একটি মাত্র লক্ষণ বলিতেছেন?”
এমতসময়ে পন্ডীত বালশাস্ত্রী অগ্রসর হইয়া বলিলেন,--“সমস্ত ধর্ম শাস্ত্র আমার কন্ঠস্থ , - যাহা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করিতে পারেন? ”
দয়াঃ আপনি অধর্মের লক্ষণ কি তাহাই বলুন?
ইহার উত্তরে বালশাস্ত্রী কিছুই বলিতে পারিলেন না। তখন এক এক জন করিয়া প্রশ্ন করা সুবিধাজনক নয় দেখিয়া পন্ডিতগণ কোলাহল পূর্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, --“ বেদে প্রতিমা শব্দ আছে কিনা ?”
দয়াঃ আছে।
পন্ডিতগণঃ বেদের কোন স্থলে আছে?
দয়াঃ সাম্বেদীয় ব্রাহ্মণের এক স্থলে আছে।
পণ্ডিতগণঃ যদি বেদেই প্রতিমা শব্দ থাকে, তবে আপনি তাহার খন্ডন করিতেছেন কেন?
দয়াঃ সেই প্রতিমা অর্থ পাষাণাদি মুর্তিপূজা নহে।
এই বলিয়া তিনি সামবেদীয় ব্রাহ্মণান্তর্গত অদ্ভূত-শান্তি প্রকরণের যে অংশে প্রতিমা আছে, সেই অংশের অর্থ পরিষ্কৃতরুপে বুঝাইয়া দিয়া প্রতিপন্ন করিলেন যে, বেদোক্ত প্রতিমা শব্দ মূর্তিপূজা-প্রতিপাদক নহে। তখন পন্ডিতগণ নিরুত্তর হইয়া রহিলেন। তাহার পর বিশুদ্ধানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন,- “বেদ কি হইতে উতপন্ন হইয়াছে?”
দয়াঃ বেদ ইশ্বর হইতে উৎপন্ন হইয়াছে ।
বিশুঃ কোন ঈশ্বর হইতে? ন্যায়শাস্ত্র- প্রসিদ্ধ ঈশ্বর,-- কি যোগশাস্ত্র-প্রসিদ্ধ ইশ্বর,- অথবা কি বেদান্ত-প্রসিদ্ধ ইশ্বর হইতে বেদ উৎপন্ন হইয়াছে ?
দয়াঃ ঈশ্বর কি বহুসংখ্যক বলিতে চান ?
বিশুঃ না , ঈশ্বর ত একই। তবে কোন লক্ষণাক্রান্ত ইশ্বর হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, তাহাতেই জানিতে চাহি।
দয়াঃ সচ্চিনানন্দ লক্ষণাক্রান্ত ইশ্বর হইতে উৎপন্ন হইয়াছে।
বিশুঃ ইস্বরের সহিত বেদের সম্পর্ক কি প্রকার? তাহা কি প্রতিপাদ্য-প্রতিপাদক, জন্য-জনক, স্বস্বামি-ভাব, তাদাত্ম্য-ভাব কিংবা সমবায় সম্বন্ধের সহিত সমান?
দয়াঃ ইশ্বরের সহিত বেদের কার্য্যকারণ সম্বদ্ধ।
বিশুঃ যেমন সূর্য্যে বা মনে ব্রহ্মবুদ্ধি পূর্বক উপাসনার ব্যাবস্থা আছে, সেইরূপ শালগ্রামে ব্রহ্মবুদ্ধি করিয়া উপাদান করাও ত উচিত ?
দয়াঃ সূর্য্যে বা মনে ব্রহ্মবুদ্ধি পূর্বক উপাসনার বিষয়ে বেদে প্রমাণ দেখাযায়। যথা,- “মনো ব্রহ্মেতুপাসীত আদিত্যং ব্রহ্মেতুপাসীত ” কিন্তু পাষাণাদি বিষয়ে বেদে কোনও প্রমাণ নাই। সুতরাং তাহা করণীয় হইতে পারেনা।
এমত সময়ে মাধবাচার্য্য নামক জনৈক পণ্ডিত সহসা একটা মন্ত্র আবৃত্তি করিয়া তন্মধ্যস্থ পূর্ত্ত শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করিলেন।
দয়াঃ পূর্তশব্দের অর্থ বাপী, কূপ, তড়াগ, ও আরাম-গ্রহণ বুঝায়।
মাধঃ পূর্ত্ত শব্দে পাষানাদি মূর্তিপূজা বুঝাইবেনা কেনো ?
দয়াঃ পুর্ত্ত শব্দ পূর্ত্তিবাচক, সুতরাং এতদ্দ্বারা পাষাণাদি মূর্ত্তিপূজা বুঝাইবেনা। যদি সংশয় হয়, তাহা হইলে ওই মন্ত্রের নিরুক্ত ও ব্রাহ্মণ দেখিয়া লউন।
মাধঃ বেদে পুরাণে শব্দ আছে কিনা ?
দয়াঃ বেদের বহুস্থলে পুরাণ শব্দ আছে। কিন্তু তাহা ব্রহ্মবৈবর্ত্তাধি পূরাণ বাচক নহে।
*** দয়ানন্দ বেদের ব্রাহ্মণভাগকে প্রকৃত পক্ষে বেদ বলিয়া বিশ্বাস করিতেন না। তাঁহার মতে সঙ্ঘিতা ভাগই যথার্থ বেদ। সুতরাং সুতরাং সূর্য্য বা মনে ব্রহ্মবুদ্ধির কথা বেদের কথা নহে,- ব্রাহ্মণের কথামাত্র।
কেননা তাহা ভূতকাল-বাচী, সুতরাং বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হইয়াছে।
তখন বিশুদ্ধানন্দ মাধবাচার্য্যের পক্ষাবলম্বন পূর্ব্বক বৃহদারণ্যক উপনিষদ হইতে “এতস্য মহতো ভূতস্য নিঃস্বসিতমেতদৃগ্ধেদো যজুর্ব্বেদঃ সাম্বেদাহথর্বাঙ্গি-রস ইতিহাসঃ পুরাণং স্লোকা ব্যাখ্যানান্যনুব্যাখ্যানানীতি ।” এই মন্ত্র উদ্ধৃত করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন যে, ইহার অন্তর্গত পুরান শব্দ কাহার বিশেষণ?
দয়াঃ এই বিষয়ের গ্রন্থ আনিলে বিচার করিয়া বলিতে পারি।
তখন পূর্ব্বোল্লিখিত মাধবাচার্য্য বেদের দুইটি পত্র বাহির করিয়া বলিলেন,--“এই স্থলে পুরাণ শব্দ কাহার বিশেষন ?”
দয়াঃ ঐ স্থলের বচনটি কি পড়ূন?
মাধঃ বচনটি এই,--“ব্রাহ্মণানীতিহাসান্ পুরাননীতি।”
দয়াঃ ওই স্থলের পুরাণ শব্দ ব্রাহ্মণের বিশেষণ , --অর্থাৎ পুরাণ নামক ব্রাহ্মণ।
তদুত্তরে বালশাস্ত্রী অগ্রসর হইয়া বলিলেন,- “তবে কি কোন নবীন ব্রাহ্মণ আছে ?”
দয়াঃ কোন নবীন ব্রাহ্মণ নেই। তবে কোন ব্রাহ্মণ নবীন বলিয়া কাহারও কখনো সন্দেহ হয়, তন্নিমত্ত ওই স্থলে পুরাণ শব্দ বিশেষনরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে।
এই কথার উত্তরে বিশুদ্ধানন্দ স্বামী বলিলেন,--“যদি তাহাই হয়, তাহা হইলে ইতিহাস শব্দের পরবর্তী হইয়াও পুরাণ শব্দ কি প্রকারে বিশেষণ হইল ?”
দয়াঃ এরূপও হইতে পারে। যথা, -- “অজো নিত্যঃ শাশ্বতোয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমনে শরীরে।” এই স্থলে পুরাণ শব্দ দূর হইলেও দেহীর বিশেষণ হইয়াছে। আর দূরস্থ হইলেই যে কোন শব্দ বিশেষণ হইতে পারেনা, এ প্রকার কোন নিয়ম ব্যাকরণে দৃষ্ট হয়না।
বিশুঃ এই স্থলে পুরাণ শব্দ যখন ইতিহাসের বিশেষণ না হইয়া ব্রাহ্মণেরই বিশেষণ হইলো, তখন ইতিহাসকে নবীন বলিয়াই গ্রহন করিতে হইবে?
দয়াঃ না,তাহা নহে। কারণ স্থলান্তরে পুরাণ শব্দ ইতিহাসেরও
বিশেষণরূপে দৃষ্ট হয় । যথা,--“ইতিহাস পুরানঃ পঞ্চমো বেদানাংবেদ” ইত্যাদি ।
অতঃপর মাধবাচার্য্য পুনর্ব্বার বেদের দুইখানি পত্রঃসর্ব্বসমক্ষে রাখিয়া দিয়া বলিলেন,- “ইহাতে লিখিত হইতাছে যে, যজমান যজ্ঞ-সমাপ্তির পর দশম দিবসে পুরাণ পাঠ শ্রবন করিবেন। এখন জিজ্ঞাসা করিযে, এই স্থলের পুরাণ শব্দ কাহার বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে? ”
দয়াঃ আপনি পত্রের ওই অংশটি পাঠ করুন, তাহার পর দেখা যাইবে উহা বিশেষ্য কি বিশেষণ?
তখন বিশুদ্ধানন্দ উহা পাঠ করিবার জন্য স্বামীজিকেই অনুরোধ করিলেন । তদুত্তরে স্বামীজি বিশুদ্ধানন্দকে পড়িতে বলিলেন। তখন বিশুদ্ধানন্দ “আমি চশমা ভিন্ন পড়িতে পারিনা, ” এই কথা বলিয়া বেদপত্র দুইখানি দয়ানন্দের হস্তে সমর্পণ পূর্ব্বক পাঠার্থ অনুরোধ করিতে লাগিলেন। এই রূপে বারংবার অনুরদ্ধ হইয়া উহা পাঠ করিবার অভিপ্রায়ে হস্তস্থিত বেদপত্র-দ্বয়ের প্রতি দয়ানন্দ দৃষ্টিপাত করিতেছেন, এমত সময় ,-- অর্থাৎ পাঁচ পল সময়ও অতিবাহিত না হইতেই বিশুদ্ধানন্দ দন্ডায়মান হইয়া বলিলেন, “আমার আর অপেক্ষা করার সময় নাই, আমি চলিলাম ।” এই কথা বলিবামাত্র অপরাপর পন্ডিতবর্গ বিশুদ্ধানন্দের দৃষ্টান্তানুসরণ করিয়া দন্ডায়মান হইয়া উঠিলেন, এবং কোলাহল পূর্বক বলিতে লাগিলেন,-- “দয়ানন্দ পরাজিত হইয়াছেন, দয়ানন্দ পরাজিত হইয়াছেন ।”
( সেই বিচার্য্য পুরাণ শব্দ বিষয়ে দয়ানন্দ পরে উত্তর প্রদান করিয়াছিলেন। উপরি উক্ত পত্রোল্লিখিত অংশ এই- "দশমে দিবসে যজ্ঞান্তে পুরাণবিদ্যাবেদঃ ইত্যস্য শ্রবণং যজমানঃ কুর্ষ্যাদিতি" দয়ানন্দ ইহার এইরূপ অর্থ করেছেন- "পুরাণবিদ্যা কি নাম পুরাতন বিদ্যা"। অর্থাৎ ব্রহ্মবিদ্যা। বেদ পুরাণবিদ্যা কেননা বেদ ব্রহ্মবিদ্যা অর্থাৎ উপনিষদ সম্বলিত। আর এই মন্ত্রের পূর্ব্ব প্রকরণে ঋগ্বেদাদি বেদচতুষ্টয় শ্রবণের কথা আছে। কিন্তু উপনিষদ্ শ্রবণের কথা নাই। এই কারণে এই স্থলে "পুরাণবিদ্যাবেদ" দ্বারা উপনিষদ্ ই প্রতিপাদ্য হইতেছে। সুতরাং এই শব্দ ব্রহ্মবৈবর্ত্তাদি নবীন গ্রন্থবোধক না হইয়া বিশেষণ রূপে ই ব্যবহৃত হইয়াছে।)
এই সম্বন্ধে বিচার-ক্ষেত্রে উপস্থিত এবং দয়ানন্দের সহিত সুপরিচিত এক ব্যাক্তি খ্রীষ্টীয়ান ইন্টেলিজেন্সার নামক সংবাদ পত্রে যাহা লিখিয়া গিয়াছেন, আমরা এই স্থলে তাহা উদ্ধৃত করিলাম । তিনি লিখিয়াছেনঃ—
"The date of his arrival in Benares I do not know. It must have been in the beginning of October. I was then absent. I first saw him after my return in November. I went to see him in company with the Prince of Bharatpore and one or two pandits. The excitement was then at its height. The whole of the Brahmanic and educated population of Benares seemed to flock to him. In the verandah of a small house at the end of a large garden near the monkeytank, he was holding daily levees, from early in the morning till late in the evening, for a continuous stream of people who came, eager to see and listen to, or dispute with the novel reformer. It does not appear, however, that the heads of the orthodox party or the pandits of the greatest repute ever visited him, unless they did it secretly. The intensity of the excitement at last induced the Raja of Benares in concert with his court pandits and other men of influence, to take some notice of the reformer, and to arrange a public disputation between him and the orthodox party, in order to allay the excitement by a defeat of the reformer. But I fear there was a determination from the beginning that they would win the day by any means whether foul or fair. The disputation took place on the 17th of November, in the place where the reformer had taken up his abode; it lasted from about 3 to 7 o'clock P. M. The Raja himself was present and presided... The discussion commenced by Dayananda asking Pandit Taracharana, the Raja's court pandit, who had been appointed to defend the cause of orthodoxy, whether he admitted the Vedas as the authority. When this had been agreed to, he requested Taracharana to produce passages from the Vedas sanctioning idolatry, pashanacipujana (worship of stones, &c.). Instead of doing this Tadacharana for some time tried to substitute proofs from the Puranas. At last Dayananda happening to say that he only admitted the Manusmriti, Shariraksutras, &c., as authoritative, because founded on the Vedas, Vishudhananda the great Vedantist interfered, and quoting a Vedant-Sutra from the Shariraka-Sutras asked Dayananda to show that it was founded on the Vedas. After some hesitation Dayananda replied that he could do this only after referring to the Vedas, as he did not remember the whole of them. Vishudhananda then tauntingly said if he could not do that, he should not set himself up as a teacher in Benares. Dayananda replied, that none of the pandits had the whole of the Vedas in his memory. Thereupon. Vishudhananda and
several others asserted that they knew the whole of the Vedas by heart. Then followed several questions...put by Dayananda to show that his opponents had asserted more than they could justify. They could answer none of his questions. At last some pandits took up the thread of the discussion again by asking Dayananda whether the term pratima (likeness) and purti (fulness) occuring in the Vedas did not sanction idolatry. He answered that, rightly interpreted, they did not do so. As none of his opponents objected to his interpretation, it is plain, that they either perceived the correctness of it, or were too little acquainted with the Vedas to venture to contradict it. Then Madhavacharya, a pandit of no repute, produced two leaves of a Vedic MS, and. reading a passage containing the word "Puranas," asked to what this term referred. Dayananda replied: it was there simply an adjective, meaning "ancient," and not the proper name. Vishudhananda, challenging this interpretation, some discussion followed as to its grainmatical correctness; but, at last, all seemed to acquiesce in it. Then Madhavacharya again produced two other leaves of a Vedic MS. and read a passage with this purport, that upon the completion of a yajna (sacrifice) the reading of the Purans should be heard on the 10th day, and asked how the term "Puranas" could be there an adjective. Dayananda took the MS. in his hands and began to meditate what answer he should give. His opponents waited but two minutes, and as still no answer was forthcoming. they rose, jeering and calling out that he was unable to answer and was defeated, and went away. The answer, he afterwards published in his pamphlet." .
ইহার ভাবার্থ এই,---"দয়ানন্দ কোন্ সময় কাশীতে আসিয়াছিলেন বলিতে পারি না। তবে অক্টোবর মাসের আরম্ভেই আসিয়াছিলেন বলিয়া বোধ হয়। আমি কাশীতে প্রত্যাগত হইয়া নবেম্বর মাসে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করি। ভরতপুরের মহারাজ সমভিব্যাহারে আমি তাঁহার সাক্ষাৎ করিতে যাই। আমাদিগের সঙ্গে দুই এক জন পন্ডিত ও গিয়াছিলেন। তখন দয়ানন্দকে লইয়া কাশীধামে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত হইতেছিল। কাশীস্থ ব্রাহ্মণ ও শিক্ষিত ব্যক্তিগণ দলে দলে তাঁহার নিকট গমন করিতেছিলেন। দয়ানন্দ একটি অনতি-বিস্তৃত গৃহের বারান্দাতে বসিয়া সমাগত লোকদিগের সহিত আলাপ করিতেন।সেই গৃহটি হনুমান-কুন্ডের নিকটস্থ একটি বিস্তৃত উদ্যানের প্রান্তভাগে অবস্থিত। প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যাকাল পর্যন্ত নানা শ্রেনীর লোক স্রোতের ন্যায় অবিশ্রান্ত ভাবে সেই গৃহ-বারান্দায় উপস্থিত হইত। তাহাদিগের ভিতর কেহ দয়ানন্দকে কেবল দেখিবার জন্য,এবং কেহ কেহ তাহার সহিত আলাপ বা শাস্ত্রালোচনা করিবার নিমিত্ত তথায় গমন করিত। কাশীর কোন সমাজপতি কিংবা কোন প্রসিদ্ধি-সম্পন্ন পন্ডিতকে দয়ানন্দের নিকট গমন করিতে দেখা যাইত না। তবে হইতে পারে যে,তাঁহারা গুপ্তভাবে গতায়াত করিতেন। ক্রমশঃ দয়ানন্দকে লইয়া আন্দোলন এতদূর প্রবল হইয়া উঠিল যে,কাশীরাজ সভাস্থ পন্ডিত ও অপরাপর সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদিগের পরামর্শ অনুসারে তাঁহার সহিত প্রকাশ্যভাবে বিচার করাই যুক্তিসঙ্গত বিবেচনা করিলেন। কারণ তাঁহারা বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে,বিচার-ক্ষেত্রে দয়ানন্দ কে পরাভূত করিতে না পারিলে সেই উচ্ছ্বসিত আন্দোলন -স্রোত কিছুতেই নিবারিত হইবে না। এতদ্দ্বারা বোধ হয় যে, কোন না কোন প্রকারে দয়ানন্দকে পরাজিত করাই তাঁহাদিগের প্রথমাবধি সংকল্প ছিল। যাহা হউক ১৭ ই নবেম্বর তাঁহার সহিত বিচারের দিন নিরূপিত হইল। সেই দিন অপরাহ্ন সময়ে পূর্বোল্লিখিত উদ্যানে কাশীরাজ উপস্থিত হইয়া বিচার-সভার সভাপতির আসন গ্রহণ করিলেন। বেলা তিন ঘটিকার সময় বিচারাম্ভ করিয়া সন্ধ্যা সাত ঘটিকার সময় সমাপ্ত করা হইল। প্রথমতঃ দয়ানন্দ রাজপন্ডিত তারাচরণকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে,বেদের প্রামাণিকতা তিনি স্বীকার করেন কিনা? তদুত্তরে তারাচরণ উহা স্বীকার করায় বেদের কোন স্থলে পাষাণাদি মূর্তিপূজার বিধি আছে কি না,এই বিষয়ে দয়ানন্দ তাঁহাকে প্রশ্ন করিলেন। তাহার উত্তরে তারাচরণ পুরাণের প্রমাণ উপস্থিত করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তাহা দেখিয়া দয়ানন্দ বলিলেন যে,তিনি মনুস্মৃতি ও শারীরিক-সূত্র প্রভৃতি বেদমূলক গ্রন্থ ভিন্ন অপর কোনো গ্রন্থের প্রামাণিকতা স্বীকার করেন না। এই কথার উত্তরে প্রসিদ্ধ বৈদান্তিক বিশুদ্ধানন্দ স্বামী একটি বেদান্ত সূত্র আবৃত্তি পূর্ব্বক দয়ানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে,বেদে তাহার কোনো মূল আছে কিনা? তাহাতে দয়ানন্দ কিছুক্ষণ ইতস্ততঃঃ করিয়া বলিলেন যে,বেদের গ্রন্থ না দেখিয়া তিনি এই কথার উত্তর দিতে পারেন না। তদুত্তরে বিশুদ্ধানন্দ কিঞ্চিৎ অবজ্ঞা সহকারে বলিলেন যে, যদি গ্রন্থ না দেখিয়া বলিতে না পারেন,তাহা হইলে কাশীতে বিচার করিতে আসা তাঁহার পক্ষে উচিত হয় নাই। তাহাতে দয়ানন্দ বলিলেন,---সমগ্র বেদ স্মৃতি-পটে অঙ্কিত করিয়া রাখা কোন পন্ডিতের পক্ষেই সম্ভব নহে। তাহা শুনিয়া বিশুদ্ধানন্দ প্রভৃতি পন্ডিতগণ বলিলেন যে,সমগ্র বেদ তাঁহাদের সকলেরই কন্ঠস্থ রহিয়াছে। তখন দয়ানন্দ তাঁহাদিগকে কতকগুলি প্রশ্ন উপর্য্যুপরি জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাঁহারা দয়ানন্দের একটি প্রশ্নের ও উত্তর দিতে পারিলেন না। তদ্দ্বারা সমগ্র বেদ যে,তাঁহাদিগের কাহারও কন্ঠস্থ নহে,তাহাই প্রতিপন্ন হইল। তাহার পরে বেদে প্রতিমা ও পূর্ত্তি শব্দ আছে কি না,এই কথা পন্ডিতগণ দয়ানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন। তদুত্তরে তিনি বলিলেন যে,বেদে এই দুই শব্দ আছে বটে,কিন্তু এই দুই শব্দ মূর্ত্তি-পূজা অর্থে ব্যবহৃত হয় নাই। তৎপরে যে যে অর্থে এই দুই শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে,দয়ানন্দ তাহার ব্যাখ্যা করিয়া বুঝাইয়া দিলেন। তাঁহার ব্যাখ্যা বিষয়ে পন্ডিতদিগের কেহই কোন আপত্তি করিলেন না। এতদ্দ্বারা বুঝা গেল যে,হয় পন্ডিতগণ এই দুই শব্দের যথার্থ অর্থ জানিতেন না,না হয় তাঁহারা বেদের সহিত উত্তমরূপে পরিচিত ছিলেন না। যাহা হউক কিছুক্ষণ পরে মাধবাচার্য্য নামক একজন অখ্যাতনামা পন্ডিত বেদের দুইখানি পত্র বাহির করিলেন,এবং তন্মধ্যস্থ পুরাণ শব্দের অর্থ কি জিজ্ঞাসা করায় দয়ানন্দ তাহা বিশেষণ বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া দিলেন। কিন্তু বিশুদ্ধানন্দ সেই ব্যাখ্যা ভ্রান্ত বলিয়া স্পর্ধা সহকারে প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তখন সেই পুরাণ শব্দের ব্যাকরণানুমোদিত অর্থ লইয়া কিছুক্ষণ বিচার চলিতে লাগিল। কিন্তু অবশেষে আপত্তিকারীদিগকে নীরব হইয়া থাকিতে হইল। তদনস্তর পূর্ব্বোক্ত মাধবাচার্য্য পুনর্ব্বার দুইখানি বেদপত্র বাহির করিয়া পাঠ করিলেন। তাহাতে লিখিত ছিল যে,যজমান যজ্ঞের পর দশম দিবসে পুরাণ শ্রবণ করিবেন। সেই পুরাণ শব্দ কাহার বিশেষণ,মাধবাচার্য্য এই কথা দয়ানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন। দয়ানন্দ সেই উল্লিখিত অংশ মনোযোগ পূর্ব্বক দেখিবার অভিপ্রায়ে বেদপত্র দুইখানি হস্তে লইলেন। তিনি হস্তস্থিত বেদপত্রের প্রতি দুই মিনিট কাল ও দৃষ্টিপাত করেন নাই,এমত সময়ে পন্ডিতগণ
দন্ডায়মান হইয়া, দয়ানন্দ উত্তর দিতে পারিলেন না - - দয়ানন্দ পরাজিত হইলেন, এই কথা উপহাস সহকারে ও উচ্চৈ:স্বরে বলিতে বলিতে চলিয়া গেলেন। বলা বাহুল্য যে, দয়ানন্দ তাহার উওর কাশীর বিচার-পুস্তকে পরে প্রকাশিত করিয়াছেন।"
এই সম্পর্কে নিয়লিখিত বৃত্তান্তটি সুপ্রসিদ্ধ পায়োনিয়র পত্রিকা হইতে উদ্ধৃত হইল। যদিও বৃত্তান্তটি বহুদিন পরে লিখিত, তথাপি পাঠকদিগের নিকট উপস্থিত বিষয়ে একটি উজ্জ্বল ও যথাযথ চিত্র অঙ্কিত করিবার অতিপ্রায়েই আমরা ইহা প্রকাশিত করিলাম। বৃত্তান্তটি এইরূপ;-
It was about ten years ago that Dayanand Swami made his first dubut at Benaras. He threw down a challenge to the Pundits of Benaras to meet him to discuss the question whether idolatry was sanctioned by the sacred writings of the Hindoos. The challenge was taken up by the Pundits who, under the patronage and protection Of the Maharajah of Benaras, assembled at a garden - house near the temple of Durga. The maharajah himself presided in the meeting. Hundreds of learned priests and thousands of the unlearned laity thronged there to witness the great controversy. The spokesman were Pundit Bala Shastri, late a professor in the Sanskrit College, Benaras, and Pundit Tara Charan Tarkaratna, the Maharajah's Court Pandit. Several other Pundits subsequently joined in the discussion. The proceedings of the meeting were taken down by a reporter, in the person of the learned editior of the Sama Veda (published in the Bibliotheca Indica), and which were published in his monthly Sanskrit Journal, the defunct Pralna Kamra Nandini. As I have said before , the question at issue was whether idolatry was sanctioned by the sacred writings of Hindoos. The Pundits urged that the Vedas did not, like one of the ten commandments of the Jews, distinctly prohibit idol worship, while the Purans evidently enjoyed it. The Swami denied the authoritative character of the Purans, asserting , among many other things, that the word Purans was invariably used as an adjective, and stood as qualifying word before any work that had any pretension to antiquity. The Pundits, on the other hand, maintained that the word Purans was a proper name, and designated only certain sacred writings, forming the ground - work of modern Hindooism. The Swami challenged the Pundits to show him in any portion of the Vedic writings, the used of the word as a noun. Unfortunately for his cause, one of the pundits happened to be present with some leaves of a very sacred work, whose authority the Swami could not deny, containing the very word used as a substantive. No effort on the part of the learned Swami, in changing the construction of the sentence, could make it otherwise. The Swami hung down his head and the Pandits clapped their hands in triumph. An attempt was made by some turbulent spirits to hoot the Swami, and to inflict a personal chastisement on him for his audacity in questioning the propriety of the national mode of workshop ; but the presence of the Maharajah quenched the ebullition of their spirit. The Swami remained at Benaras for some days, but he had lost his prestige, and the report of the Victory of the Pundits went abroad to golden the hearts of the pious Hindus. This is an unvarnished account of his first combat with the Brahmins of Benaras in the arena of theological controversy. "
ইহার মর্ষ্ম এই ; ---"প্রায় দশ বৎসর পূর্ব্বে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সহিত কাশীস্থ পন্ডিতদিগের প্রথম শাস্ত্র-বিচার হয়। সেই বিচারক্ষেত্রে মুর্ওিপূজা বেদাদি শাস্ত্র - সম্মত কি না, তাহাই প্রমাণিত করিবার জন্য দয়ানন্দ কাশীর পন্ডিতবর্গকে স্পর্দ্ধার সহিত আহ্বান করেন। পন্ডিতগনণ দয়ানন্দ কর্ওৃক আহূত এবং কাশীরাজের পরিচালনায় পরিচালিত হইয়া বিচারার্থ উপস্থিত হয়েন। দূর্গা - মন্দিরের নিকটস্থ একটি উদ্যান - বাটিকাতে মহাবিচারের আয়োজন হয়। স্বয়ং কাশীরাজ বিচার সভার সভাপতি ছিলেন। শত শত সুশিক্ষিত পন্ডিত - পুরোহিত এবং সহস্র সহস্র অশিক্ষিত ব্যক্তি মহাবিচার দেখিবার অভিপ্রায়ে উপস্থিত হইয়াছিলেন। কাশী রাজপন্ডিত তারাচরণ তর্করন্ত ও সংস্কৃত কলেজের ভূতপূর্ব্ব অধ্যাপক পন্ডিত বাল শাস্ত্রী সমাগত পন্ডিতমন্ডলীর প্রতিনিধিরূপে দয়ানন্দের সহিত শাস্ত্র বিচারে প্রবৃত্ত হয়েন। পরে অপরাপর পন্ডিতগণও তাঁহাদিগের সঙ্গে যোগদান করেন। প্রত্নকম্র-নন্দিনী নামক সংস্কৃত মাসিক পত্রিকার সম্পাদক বিচার - বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। প্রত্নকম্র - নন্দিনীতে সেই বিচার বিবরণ পরে প্রকাশিতও হইয়াছিল। যাহা হউক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সম্বন্ধে পন্ডিতগণ দৃঢ়তার সহিত বলেন যে, য়িহুদিদিগের নিষিদ্ধ - সূচক দশাদেশের মত মুর্ওিপূজা বেদে বিশিষ্ট ভাবে নিষিদ্ধ হয় নাই। তদ্তিন্ন পুরাণে ত স্পষ্টাক্ষরেই উহার বিধি রহিয়াছে। কিন্তু দয়ানন্দ পুরাণের প্রমাণিকতা স্বীকার করেন নাই ; বিশেষত :
পুরাণ শব্দটি প্রাচীনতর গ্রন্থে বিশেষণরূপেই ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা তিনি সপ্রমাণ করিবার চেষ্টা করেন। পক্ষান্তরে পন্ডিতগণ উহা বিশেষ্য বলিয়া প্রতিপাদনার্থ তর্ক করিয়াছিলেন। তাহার পর দয়ানন্দ বেদের কোন স্থলে পুরাণ শব্দ বিশেষ্য রূপে ব্যবহৃত হইয়াছে কি না, তাহা প্রদর্শনার্থ পন্ডিতগণকে অনুরোধ করেন। এমত সময়ে জনৈক পন্ডিত একখানি প্রামাণ্য গ্রন্থের কএকটি পত্র উপস্থিত করিয়া তাহা হইতে পুরাণ শব্দ বিশেষ্য - বাচক বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার প্রয়াস করিলেন। দু:খের বিষয়, দয়ানন্দ তদুত্তরে কিছুই
বলিতে না পারিয়া নতশির হইয়া রহিলেন। এইরূপে কাশীর পণ্ডিতগণ বিচারে জয়লাভ করিয়া করতালি প্রদান করিতে থাকেন। কতকগুলি উগ্র-প্রকৃতি অশিক্ষিত ব্যক্তি দয়ানন্দের দেহস্পর্শ করিতে উদ্যত হইলেও কাশীরাজের সমক্ষে তাহা করিয়া উঠিতে পারে নাই। বিচারের পর দয়ানন্দ যে কএক দিন কাশীতে ছিলেন, সে কএক দিন তাহাকে হতমান বা হৃতগৌরব হইয়া থাকিতে হইয়াছিল। এদিকে পণ্ডিতগণের বিজয়-সংবাদ চারিদিকে বিঘােষিত হওয়ায় হিন্দুদিগের হৃদয় আনন্দে উৎফুল্ল হইতে লাগিল। ফলতঃ বারাণসীর পণ্ডিতদিগের সহিত দয়ানন্দের প্রথমবারের শাস্ত্ৰবিচার সম্বন্ধে এই বৃত্তান্তটি যে অনতিরঞ্জিত ও যথাযথ, তদ্বিষয়ে অণুমাত্রও সন্দেহ হইতে পারে না।”
কিন্তু উল্লিখিত বৃত্তান্তটি অযথা বলিয়া এক ব্যক্তি এইরূপে উহার প্রতিবাদ করিয়াছেন ;
"I refrain from giving the details of the discussion, for they would hardly be intelligible to the majority of your readers. Those who take a special interest in the controversy may refer to a small pamphlet, entitled the Shastrarth, which can be had of Messrs. Brij Bhooshan Dass, of Benares. Suffice it to say that the question at issue was whether idolatry is sanctioned by the Vedas which, according to the orthodox Hindu, are Divine Revelation. The Swami maintained that the Vedas do not inculcate idolatry, and the Pundits did not produce at the time, nor have they produced since, a single passage from the Vedas that could dislodge the Swami from his position. The answer of the pundits were extremely evasive. The whole controversy was no better than a regular tamasha for the Brahmins did not confine their arguments to the point at issue, but carried on altercations on various points of Hindu jurisprudence, logic, and Sanskrit grammar, which had not the least bearing on the main question. How can. * in the face of the above facts, boldly assert that the Swami "got the worst of the fight," ! leave for your impartial readers to judge."
ইহার মর্ম এই :—“কাশীর বিচার-বৃত্তান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রকাশিত করা এই স্থলের পক্ষে উপযােগী নহে। তবে যাহারা এই বিষয়ের তথ্য জানিতে ইচ্ছা করেন, তাহারা তথাকার ব্রিজভূষণ দাসের নিকট হইতে কাশী-শাস্ত্ৰাৰ্থ নামক পুস্তিকা ক্রয় করিয়া পাঠ করিতে পারেন। মূৰ্ত্তিপুজা বেদানুমােদিত কি না, এই প্রশ্নই কাশীর বিচারের মূল প্রশ্ন ছিল। কিন্তু পণ্ডিতগণ মূল প্রশ্নের কোন প্রকার উত্তর প্রদান করিতে না পারিয়া নানা অপ্রাসঙ্গিক কথার আলোচনা করিয়াছিলেন।
বলিতে কি,মূল বিষয়টি ছাড়িয়া দিয়া এবং অপরাপর নানা বিষয়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক কথা উত্থাপিত করিয়া কাশীর পন্ডিতগণ সেই বিচার- ব্যাপারকে প্রকৃতপক্ষেই একটা তামাসা করিয়া তুলিয়াছিলেন। এইরূপ স্থলে * * কি প্রকারে বলেন যে,স্বামিজী কাশীর পন্ডিতদিগের নিকট পরাজিত হইয়াছেন!"
That stronghold of Hindu idolatry and bigotry,which according to Hindu mythology stands on the trident of Siva,and is therefore not liable to the influence of earthquakes,has lately been shaken to its foundations by the appearance of a sage from Guzerat. The name of this great personage is Dayananda Sarasvati. He has come with the avowed object of giving a death-blow to the present system of Hindu worship. He considers the Vedas to be the only religious books worthy of regard and styles the Puranas as cunningly -devised fables---the invention of some shrewd Brahmans of a later period for the subservance of their selfish motives. The Vedas,says he, entirely ignore idol-worship,and he challenges the Pandits and great men of Benares. A furious and protracted 'logomachi' took place between Dayananda Sarasvati and the Pandits,but the latter notwithstanding their boasted learning and deep insight into the Sastras,met with a signal discomfiture. Finding it impossible to overcome the great man by a regular discussion, the Pandits resorted to the adoption of a sinister end to subserve their purpose. They made over to the sage an extract from the Puranas that savored the idolatry and handled it over to the Sarasvati saying that it is a text from the Vedas. The latter was pondering over it,when the host of Pandits headed by the Maharajah himself clapped their hands signifying the defeat of the great Pandit in the religious warfare. Though mortified greatly at the unmanly conduct and hard treatment of the Maharajah,Dayananda Swami has not lost courage. He is still waging the religious contest with more earnestness than ever. Though alone,he stands undaunted in the midst of a host of opponents. He has the shield of truth to protect him and his banner of victory is wafting in the air. The Pandit has lately published a pamphelt styled "Tatta Dharma Bichar", containing particulars of the religious contest above alluded to,and has issued a circular calling on the Pandits of Benares,of show which part of the Vedas sanctions idol-worship. No one has ventured his appearance.
" Hearing the great fame of the sage,we made up our minds to pay him a visit,and accordingly went to Anand Bag,near Durga Bati,in Benares,in which romantic garden he has taken up his temporary residence. The Rishi-like appearance of the venerable Pandit,his cheerful countenance and child-like simplicity, made on our minds an impression never to be effaced. When he began to speak,"manna" dropped from his lips,and the wise instructions he gave us forced us to the conviction that the golden age of India has not altogether disappeared. The great Pandit after 18 years of research into the Vedas has come to the conclusion that they do not savor idolatry at all and with the view of resuscitating the Vedic religion of the ancient sages of India,he has come out on his mission of religious reformation. He has bid adieu to all worldly enjoyment, he has assumed the austerities of an anchorite, and is buoyant with the hope of regenerating Hinduism and securing a lasting boon for his countrymen. With the view of promulgating correct theistic doctrines and dispelling the misunderstanding of the present 'Sannyasis' and Pandits who hold pantheism to be the main doctrine of the Vedas,he is now appealing to his educated and enlightened brethren to establish a Vedic School, the teachership of which he will most gladly accept. "
উপরি-উদ্ধৃত ইংরাজি অংশের তাৎপর্য্য এই---"কাশীক্ষেত্র মূর্ত্তিপূজার দুর্গস্বরূপ,---অধিকন্তু মহাদেবের ত্রিশূলোপরি প্রতিষ্ঠিত বলিয়া কাশীধাম ভূমিকম্পনেও কখন কম্পিত হয় না। কিন্তু সম্প্রতি,গুজরাটদেশীয় এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব বা প্রভাবে কাশীধাম কম্পিত হইয়া উঠিয়াছে। সন্ন্যাসীর নাম দয়ানন্দ সরস্বতী। হিন্দুদিগের মূর্ত্তিপূজা উচ্ছেদ করিবার মানসেই সরস্বতী মহাশয় কাশীতে উপস্থিত হইয়াছেন। তিনি বেদকে হিন্দুর একমাত্র ধর্ম্মশাস্ত্র বলিয়া সম্মান করেন,এবং পুরাণাদি গ্রন্থকে কল্পনা-কল্পিত,---বিশেষতঃ স্বার্থপরায়ণ আধুনিক পন্ডিতদিগের বুদ্ধি-প্রসূত বলিয়াই অগ্রাহ্য করিয়া থাকেন। দয়ানন্দ বলেন যে,বেদে আদৌ মূর্ত্তিপূজার প্রসঙ্গ নাই। এমন কি যদি বেদের কোন স্থলে মূর্ত্তিপূজার কোন প্রসঙ্গ থাকে,তবে তাহা দেখাইবার নিমিত্ত তিনি কাশীস্থ পন্ডিতমন্ডলীকে বিচারক্ষেত্রে আহবান করিয়াছেন। তদনুসারে রামনগরের+মহারাজা কাশীস্থ পন্ডিত ও অপরাপর শিক্ষিত ব্যক্তিদিগকে লইয়া কিছুদিন পূর্ব্বে এক মহাসভার অধিবেশন করিয়াছিলেন। সভাতে দয়ানন্দের সহিত পণ্ডিতগণের বহুক্ষণব্যাপী বাক্-যুদ্ধ হইয়াছিল। শাস্ত্র সম্বন্ধে পন্ডিতদিগের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকিলেও তাঁহারা নিঃসংশয়িতরূপে দয়ানন্দের নিকট পরাজিত হইয়াছিলেন। বলিতে কি,তাঁহাকে ন্যায়ানুমোদিত বিচারে পরাজিত করা অসম্ভব বুঝিতে পারিয়া পন্ডিতগণ অন্যায়নুমোদিত বিচারের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহারা মূর্ত্তি পূজা বেদ-প্রতিপাদিত বলিয়া প্রমাণিত করিবার অভিপ্রায়ে ক একটি পৌরাণিক মন্ত্র * বৈদিক মন্ত্ররূপে উল্লেখ পূর্ব্বক দয়ানন্দের হস্তে অর্পণ করিয়াছিলেন।
দয়ানন্দ অর্পিত ও পত্রলিখিত মন্ত্র কএকটি দেখিতেছেন মাত্র,এমত সময়ে পন্ডিতগণ করতালি প্রদান করিয়া বলিয়া উঠিলেন যে,দয়ানন্দ পরাজিত হইয়াছেন। দয়ানন্দ পন্ডিতদিগের এইরূপ অন্যায় ব্যবহারে দুঃখিত হইলেও নিরুৎসাহিত হইয়া পড়েন নাই। অধিক কি,তিনি এখন ও অধিকতর উৎসাহের সহিত তথাকার পন্ডিতদিগকে শাস্ত্র-সংগ্রামে আহবান করিতেছেন। তিনি একাকী হইলেও বিপক্ষদলের ভিতর বীরের ন্যায় অবিচলিত হইয়া রহিয়াছেন। কারণ দয়ানন্দ সত্যরূপ দুর্ভেদ্য বর্ম্ম দ্বারা আপনাকে আবৃত করিয়াছেন। সুতরাং তাঁহার বিজয়-পতাকাও বায়ুভরে মন্দ মন্দ আন্দোলিত হইতেছে। তিনি সত্য-ধর্ম্ম বিচার নামক একখানি পুস্তকে উল্লিখিত বিচার-বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করিয়াছেন,এবং বেদের কোন স্থলে মূর্ত্তি-পূজার পরিপোষক কোন কথা আছে কি না,তাহা প্রদর্শন করিবার নিমিত্ত বারাণসীর পন্ডিতবর্গকে আহবান করিতেছেন। কিন্তু বারাণসীর কোন পন্ডিতই তদীয় আহবানের উত্তর প্রদানার্থ উপস্থিত হইতে পারেন নাই। আমরা একদিন তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ এর নিমিত্ত দুর্গা-বাড়ির সন্নিকট আনন্দ বাগে গমন করিয়াছিলাম। আমরা গিয়া দেখিলাম যে,দয়ানন্দের মূর্ত্তি ঋষির ন্যায়,তাঁহার মুখ সর্বদাই প্রফুল্ল ও প্রকৃতি যারপরনাই সরল। আমাদিগের সহিত কথা বলিবার সময় বোধ হইল যে,তাঁহার মুখ হইতে যেন সুধা-বরিষণ হইতেছে। অষ্টাদশ বৎসর কাল বেদালোচনার পর দয়ানন্দ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন যে,মূর্ত্তি-পূজা কোন অংশেই বেদানুকূল নহে। তিনি সাংসারিক সুখ সর্ব্ব প্রকারেই পরিহার করিয়া কঠোর ভাবে কালাতিপাত করিতেছেন,এবং হিন্দুধর্মের সংস্কার পূর্ব্বক স্বদেশের যথার্থ কল্যাণ সাধন করিবার অভিপ্রায়েই আশান্বিত হইয়া রহিয়াছেন
0 মন্তব্য(গুলি)