https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

অম্বিকাদত্তের বেদে অবতারবাদের ভ্রান্ত ধারণা

Thursday, July 30, 2020


ছবিতে যে ব্যক্তিটিকে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর নাম "পণ্ডিত অম্বিকা দত্ত ব্যাস", যিনি "ভারত ভূষণ,ভারত ভাস্কর, ভারত রত্ন ইত্যাদি শিষ্যদের দেয়া উপাধিতে (?) ভূষিত। জন্ম ১৮৫৮ ইং রাজস্থানের শেষ প্রান্ত জয়পুরে। তিনি সংস্কৃত তথা হিন্দিতে প্রায় ৮০ টি গ্রন্থ লিখেছেন। "মূর্তিপূজা" নামের একটি বই আছে যেখানে তার বিভিন্ন সময়ের বক্তৃতার সংগ্রহ রয়েছে। বইটির তথ্যানুযায়ী তিনি বক্তৃতাকালে আর্য সমাজকে নিয়ে বিদ্রুপ এবং দয়ানন্দ স্বামীজীর মতবাদ খণ্ডনের চেষ্টা করেছেন। তার বিভিন্ন উপাধি দেখে আপনাদেরও মনে হতে পারে হয়ত তিনি একজন বড় মাপের পণ্ডিত। সেজন্য তার পণ্ডিতি দেখার বড়ই ইচ্ছে হলো। বক্তৃতার উপর ভরসা না করে তার রচিত বইগুলো খোজার চেষ্টা করলাম। অনেক খোজার পর তাঁর রচিত একটি বই "অবতার মীমাংসা" পেয়ে গেলাম। বইটি পড়ে দেখলাম তিনি বেদ মন্ত্রের দ্বারা অবতারবাদকে সিদ্ধ করা চেষ্টা করেছেন। তিনি বেদে কৃষ্ণ, রাম, বরাহ, কপিল, নৃসিংহ আদি অনেক অবতারকে খুজে পেয়েছেন। তারমধ্যে একটির উপস্থাপন আপনাদের সামনে করছি -


=> কৃষ্ণাবতার

য়স্মিন্বিশ্বানি কাব্যা চক্রে নাভিরিব শ্রিতা।
ত্রিতং জুতী সপর্য়ত ব্রজে গাবো সংয়ুজে য়ুজে অশ্বাং অয়ক্ষত নভন্তামন্যকে সমে।।
(ঋগ্বেদ ৮।৪১।৬)

এই মন্ত্রের ভাষ্যে "অম্বিকা দত্ত ব্যাস" মহাশয় লিখেছেন -

(য়স্মিন্ বিশ্বানি কাব্যানি চক্রে নাভিরিব শ্রিতা) চক্রেরথাঙ্গে নাভিরিব তৎকেন্দ্ধবর্তি ঘর্ঘরিকেব য়স্মিন্ সর্বাণি কাব্যানি পর্য়্যবন্নানি (ব্রজে গাবঃ সংয়ুজে) য়ো ব্রজে গাঃ য়োজিতাবান্। (য়ৃজে অশ্বান্ অয়ুক্ষত) অর্জুনসারথ্যকালে য়ুজে ঘোটকানয়োজয়ন্ (অন্যকে সমে নভন্তাম্) শচবঃ সর্বে হন্যন্তাম্। "সমঃ সর্বপর্যায়ঃ" 'ণভতুভহিংসায়াম্ (চিতং জুতী সপর্য়ত) তং গুণচয়নিয়নবতারং মনসা পুজয়ত।

অর্থাৎ যিনি কেবল ব্রজে গাভীরই যোগ করেননি বরং অর্জুনের সারথী হয়ে ঘোড়াকে অর্জুনের রথে যুক্ত করেছেন, ইত্যাদি। 



মন্ত্রে "ব্রজ", "অশ্ব" আদি শব্দ দেখে তিনি মন্ত্রে কৃষ্ণের কল্পনা করে তাঁকে একেবারে অর্জুনের রথের সারথী বানিয়ে ছেড়েছেন। বেদে যদি কৃষ্ণ অর্জুনের এরূপ ভবিষ্যত বাণীই থাকতো তবে অর্জুন এবং কৃষ্ণের বিপক্ষ শত্রুদল আগেই সতর্ক হয়ে যেতেন। যাইহোক, পৌরাণিক শিরোমণি আচার্য সায়নের এ বিষয়ে কি মত একটু দেখে নেয়া যাক। সায়ন উক্ত মন্ত্রের ভাষ্যে লিখেছেন -

"য়স্মিন বরুণে বিশ্বানি সর্বাণি কাব্য কাব্যানি কবিকর্মাণি চক্রে নাভিরিব য়থা রথস্য চক্রে নাভিস্তথাশ্রিত শ্রিতানি তংত্রিতং ত্রিস্থানং বরুণং জুতী জূত্যা ক্ষিপ্রং সপর্য়ত হে মদিয়াজনাঃ পরিচরত। কিমর্থমিত্যত আহ ব্রজে গোষ্ঠে গাবো ন য়থা গাঃ সংয়ুজে সংয়োগার্থ সহস্থাপয়িতুং য়ুজে য়ুঞ্জান্তি তথাস্মাকভিয়োগায়াশ্বানয়ুক্ষত সপত্নায়ুঞ্জন্তি অতস্তদুপদ্রবপরিহারায় বরুণং পরিচরেতেত্যর্থঃ।।"


অর্থঃ সমস্ত কবি কর্মচক্রের নাভীর ন্যায় যে বরুণকে আশ্রয় করিয়াছে, সেই স্থানত্রয়বিশিষ্ট বরুণের শীঘ্র পরিচর্যা কর। গোষ্ঠে যেমন গাভী গমণ করে সেরূপ আমাদের পরিভবার্থ যুদ্ধের জন্য শত্রুগণ অশ্ব যোজনা করিতেছে। তিনি সমস্ত শত্রু হিংসা করুন।

(রমেশচন্দ্র দত্ত, সায়নভাষ্যের অনুবাদক)




দেখা যাচ্ছে যে, সায়ন ইতিহাসপ্রিয় হওয়ার পরও এই মন্ত্রে কৃষ্ণার্জুনের সংবাদ খুজে পান নি। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, আচার্য সায়ন কোন কারণবশত মন্তের উক্ত অর্থ করেন নি। এজন্য অন্য ভাষ্যও দেখে নেয়া যাক -

গায়ত্রি পরিবারের রামশর্মা উক্ত মন্ত্রের ভাষ্যে লিখেছেন -

"চক্রের নাভির সমান যেই বরুণদেবে সমস্ত সদজ্ঞান আশ্রিত, ত্রিভূবনে ব্যপ্ত সেই দেবকে সবাই প্রার্থনা করে থাকে। যেরূপ গাভী গোষ্ঠে প্রবেশ করে, সেরূপ রিপুসমূহকে পরাজিত করার জন্য রথে অশ্বকে নিয়োজিত করে রণক্ষেত্রে যাও। তিনি সমস্ত রিপুর বিনাশ করেন"

এভাবে অনেক বেদ ভাষ্যকারের ভাষ্য উল্লেখ করা যাবে তারা বেদমন্ত্রে কৃষ্ণ অর্জুনের কোন সংবাদ খুজে পান নি। এখন উক্ত মন্ত্রের আর্য সমাজের ভাষ্য দেখা যাক -

পদার্থঃ (য়স্মিন্) যেই পরমাত্মাতে (বিশ্বানি কাব্যা) সকল কাব্য [বেদজ্ঞান] এই প্রকার (শ্রিতা) আশ্রিত, (ইব) যেমন (চক্রে) চক্রে (নাভিঃ) নাভি আশ্রিত। সেই (ত্রিতং) 'ঋক, সাম, সাম' রূপ তিনের বর্ধক পরমাত্মাকে (জুতী) শীঘ্র কর্মের দ্বারা (সপর্য়ত) পুজা করো। (ন) যেমন (গাবঃ) গাভীসমূহ (ব্রজে) গোশালাতে (সংয়ুতে) যুক্ত হয়, সেই প্রকার (য়ুজে) সেই পরমাত্মার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য (অশ্বান্) এই ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বকে (অয়ুক্ষত) সমাহিত কর। ইন্দ্রিয়কে এখানে সেখানে বিচরণ করাকে রোধ করো যাতে (সমে) সকল (অন্যকে) শত্রু (নভন্তাম্) নষ্ট হয়ে যায়।

ভাবার্থঃ পরমাত্মাতেই সকল বেদজ্ঞান নিহিত। এই প্রভুকে কর্মের দ্বারা উপাসনা করো। ইন্দ্রিয়সমূহকে বিষয় থেকে রোধ করো। এটিই শত্রুনাশের মার্গ।

(পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)


উল্লেখ্য যে, মন্ত্রে "ব্রজ" শব্দের অর্থ হচ্ছে গোষ্ঠ অর্থাৎ যেখানে গাভীগুলোকে বেধে রাখা হয়। কিন্তু পণ্ডিত অম্বিকাদত্তের কল্পনামাত্রা অতীব প্রবল। তিনি "ব্রজ" কে কৃষ্ণের ব্রজধাম বানিয়ে ফেলেছেন। তাহলে তিনি কোন পর্যায়ের সংস্কৃত জ্ঞান নিয়ে দয়ানন্দজীর খণ্ডন করেন তা আপনারাই বিচার করুন।