https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

" অর্চত প্রার্চত..." ঋগ্বেদ ৮।৬৯।৮ - এ প্রতিমাপূজা নিয়ে ভ্রান্তি নিবারণ

Friday, September 3, 2021



অতি সম্প্রতি বেদবিরোধী স্বার্থান্বেষীগণ প্রচার ও প্রসার করছেন একটি মন্ত্র যে বেদে কিংবা নিঘণ্টুতে অর্চনা বা অর্চ থাকলেই তা প্রতিমা পূজা বোঝাবে । কিন্তু এমন কোন প্রমাণই নেই সে অর্চ থাকলেই মূর্তির ব্যবহার হবেই হবে । তাদের এই বালখিল্য দাবির প্রকৃত সত্যতা আমরা আজকে তাদের প্রচারিত ও তথাকথিত মান্য ভাষ্য-অনুবাদ দ্বারা পরীক্ষণ করে প্রকৃত অর্থ দেখবো -


অর্চত প্রার্চত প্রিয়মেধাসো অর্চত ।
অর্চন্তু পুত্রকা উত পুরং ন ধৃষ্ণ্বর্চত ॥


ঋগ্বেদ ৮।৬৯।৮

সায়ণভাষ্যঃ 

হে অধ্বর্য্বাদয়ঃ যূয়মিন্দ্রম্ "অর্চত পূজয়ত স্তুত্যা। “প্রার্চত প্রকর্ষেণার্চতেন্দ্রমেব । হে "প্রিয়মেধাসঃ প্রিয়মেধসংবন্ধিনস্তদ্গোত্রা যূয়ম্ "অর্চত ইন্দ্রম্ । "পুত্রকাঃ পুত্রা অপি “অর্চন্তু ইন্দ্রম্ । “উত অপি চ "পুরং "ন “ধৃষ্ণু যথা পুরং ধর্ষণশীলমর্চন্তি তাদৃশমিন্দ্রম্ "অর্চত ॥



সায়ণভাষ্যে হিন্দি অনুবাদ -  পণ্ডিত রামগোবিন্দ ত্রিবেদীকৃতঃ


अर्ध्बयुओ, तुम लोग इन्द्र की पूजा करो। विशेष रूप से पूजा करो। प्रियमेध वंशीयो, जैसे पुर विदारक की पूजा पुत्र लोग करते हैं,  वैसे ही इन्द्र की पूजा करो ।

[ অর্ধ্বযুগণ , তোমরা ইন্দ্রের পূজা করো । বিশেষ রূপে পূজা করো ।  প্রিয়মেধ বংশীয়গণ , যেভাবে পুর বিদারকের পূজা পুত্রগণ করে সেভাবেই ইন্দ্রের পূজা করো ]




সায়ণভাষ্য অনুযায়ী ড. গঙ্গাসহায় শর্মার হিন্দি অনুবাদঃ


हे प्रियमेध ऋषि के वंश वाले लोगो इंद्र की विशेष रूप से पूजा करो तुम्हारे पुत्र और तुम इंद्र की इस प्रकार पूजा करो, जिस प्रकार शत्रु का नगर नष्ट करने वाले वीर की पूजा की जाती है ।
 
[ হে প্রিয়মেধ ঋষির বংশের ব্যক্তিগণ । ইন্দ্রের বিশেষ রূপে পূজা করো । তোমার পুত্র ও তুমি ইন্দ্রের এমনভাবে পূজা করো যেভাবে শত্রুর নগর নষ্টকারী বীরের পূজা করা হয় । ]




গায়ত্রী পরিবারের আচার্য শ্রীরাম শর্মার হিন্দি অনুবাদঃ


हे प्रियमेध के वंशज मनुष्यो ! यज्ञ-प्रिय, सन्तान एवं साधकों की कामना को पूर्ण करने वाले तथा शत्रुओं को पराजित करने वाले इन्द्रदेव का आप सभी श्रद्धापूरित होकर) सम्मान करें ॥८॥

[ হে প্রিয়মেধের বংশজ মানবগণ । যজ্ঞপ্রিয় , সন্তান এবং সাধকগণের কামনাপূর্ণকারী তথা শত্রুগণকে পরাজিতকারী ইন্দ্রদেবকে আপনারা সকলে ( শ্রদ্ধাপূর্ণ হয়ে) সম্মান করুন । ]



রমেশচন্দ্র দত্তঃ

হে প্রিয়মেধগণ! তোমরা ইন্দ্রকে অর্চনা কর। বিশেষরূপে অর্চনা কর, পুত্রগণ পুরবিদারীকে যেরূপ (অর্চনা করে), সেইরূপ ইন্দ্রের অর্চনা করুক ।




দূর্গাদাস লাহিড়ী ও দিলীপ মুখোপাধ্যায়কৃত ও অক্ষয় লাইব্রেরী প্রকাশিত অনুবাদঃ


হে প্রিয়মেধগণ! তোমরা ইন্দ্রকে অর্চনা করো। বিশেষভাবে অর্চনা করো, পুত্রগণ পুরবিদারীকে যেমন অর্চনা করে, সেইরকম ইন্দ্রের অৰ্চনা করুক ॥৮॥




অনেকে এটির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাতে প্রতিমা পূজার বিধান আছে বলে কুযুক্তি প্রদান করতে পারেন । তাদের জন্য তাদের প্রিয় শ্রী দূর্গাদাস লাহিড়ী মহাশয় সামবেদের ৩৬২ নং মন্ত্রে এর যে রূপ অর্থ প্রদান করেছেন তা উল্লেখিত হলো -

 

হে তোমার চিত্তবৃত্তিসমূহ! তোমরা নেতা হয়ে অভীষ্টপূরক দেবতাকে সর্বতোভাবে আরাধনা কর; সৎকর্মপ্রিয় হয়ে তাঁকে প্রকৃষ্টরূপে (সৎকর্মসাধনের দ্বারা) পূজা কর; তোমরা রিপুবিমর্দক দেবতাকে আরাধনা কর; অপিচ, সর্বজীব সেই দেবতাকে যেন ভগবানের আরাধনা করে । (প্রার্থনাটির ভাব এই যে,—আমি যেন ভগবানের অনুসারী হই; সমস্ত লোকও যেন ভগবানের অনুসারী হয়) । [এখানে প্রার্থনার ব্যাকুলতা ও সার্বজনীনতা অতি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। শুধু আমিই নয়, সেই সঙ্গে বিশ্ববাসী সকলেই ভগবানের আরাধনা ক'রে মুক্তিলাভ করুক] । [এর গেয়গানের নাম— ‘প্রৈয়মেধম্’] ।




পরিতোষ ঠাকুরের অনুবাদে -

প্রিয়মেধা ঋষির প্রিয়জনগণ, তোমরা ইন্দ্রের অর্চনা কর, অন্তর দিয়ে অর্চনা কর, তাঁকেই অর্চনা কর । তোমাদের সন্তানেরাও জীবের আত্মা ইন্দ্রকে অর্চনা করুক, অতি অনুরাগে অৰ্চনা কর ॥




লক্ষ্যণীয় ,  উপরে উল্লেখিত কোন মন্ত্রেই প্রতিমার নামগন্ধ অব্দি উল্লেখ নেই । অতঃ অপপ্রচারকারীগণ কোথায় তার নির্দেশ পেলেন তা আমাদের অজ্ঞাত । লাহিড়ী মহাশয়ও সৎকর্মের দ্বারাই আরাধনা স্বীকার করেছেন । প্রসঙ্গতঃ এখানে পৌরাণিক ভাষ্যাদির উল্লেখ এই কারণে যে অপপ্রচারকারীগণ স্বার্থবশতঃ নিজেদেরই কথিত স্ব-পূর্বাচার্যদের ভাষ্য ও অনুবাদেরই কদর্থ করছে । তাই তাদের সততা অন্যান্য বৈদিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কি রূপ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয় ।

অন্যদিকে যারা বলেন বিনিয়োগ ব্যতীত মন্ত্রের অর্থই করা যাবে না ও যে মন্ত্র যেখানে বিনিয়োগকৃত অর্থ তাই হবে তারা দেখুন ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৪।১।৪ [ বঙ্গসংস্করণে ৪র্থ পঞ্চিকার ৪র্থ খণ্ড ]  এ এই মন্ত্রের বিনিয়োগে কোথাও প্রতিমা পূজার উল্লেখ পান কিনা -

...প্রপ্র বস্ত্রিষ্টুভমিষমর্চত প্রার্চত যো ব্যতীঁরফাণয়দিতি প্রজ্ঞাতা অনুষ্টুভঃ শংসতি তদ্যথেহ চেহ চাপথেন চরিত্বা পন্থানম্পর্যবেয়াত্তাদৃক্তদ্যৎপ্রজ্ঞাতা অনুষ্টুভঃ শংসতি স যো ব্যাপ্তো গতশ্রীরিব মন্যেতাবিহৃতং ষোল়শিনং শংসয়েন্নেচ্ছন্দসাং কৃছ্রাদবপদ্যা ইত্যথ যঃ পাপ্মানমপজিঘাংসুঃ স্যাদ্বিহৃতং ষোল়শিনং শংসয়েদ্ব্যতিষক্ত ইব বৈ পুরুষঃ পাপ্মনা ব্যতিষক্তমেবাস্মৈ তৎপাপ্মানং শমলং হন্ত্যপ পাপ্মানং হতে...
অনুবাদঃ উক্তরূপে উপসর্গযোগ দ্বারা অতিচ্ছন্দ মন্ত্রগুলিকে কৃত্রিম অনুষ্টুভে পরিণত করিয়া তাহা পাঠের পর কতিপয় অকৃত্রিম অনুষ্টুপ, পাঠের বিধান যথা— “প্র প্র......শংসতি”
“প্রপ্র বস্ত্ৰিষ্টু ভমিষম্” ইত্যাদি, “অৰ্চত প্ৰাৰ্চত” ইত্যাদি’ এবং “যো ব্যতীরঁফাণয়ৎ” ইত্যাদি ' [ তিন তিনটি ]  অকৃত্রিম অনুষ্টুপ, পাঠ করা হয়। [ মার্গানভিজ্ঞ পথিক ] যেমন এখানে ওখানে অপথে বিচরণ করিয়া শেষে [ প্রকৃত ] পথ জানিতে পারে, [ কৃত্রিম অনুষ্টপ পাঠের পর ] এই যে অকৃত্রিম অনুষ্টুপ, পাঠ করা হয়, ইহাও সেইরূপ।
বিহৃত ও অবিহৃত উভয়বিধ শস্ত্র পাঠের ফল যথা—“স যো……….….বেদ”
যে যজমান [ আপনাকে ] সম্পন্ন ও প্রাপ্তশ্রী বলিয়া মনে করে, সে [ বিহৃতি-সম্পাদন দ্বারা ] ছন্দোগণের ক্লেশ ঘটিয়া বিপৎ হইতে পারে এই আশঙ্কায় অবিহৃত ষোড়শী শস্ত্র পাঠ করাইবে ৷ আর যে [ আপনার ] অমঙ্গল নাশের ইচ্ছা করে, সে বিহৃত ষোড়শী পাঠ করাইবে ; কেননা ঐ ব্যক্তি অমঙ্গলের সহিত মিলিত রহিয়াছে ; ঐরূপ করিলে উহাতে বিদ্যমান মালিন্য ( অমঙ্গল ) নাশ করা হইবে। যে ইহা জানে, সে অমঙ্গল নাশ করে।




কল্পসূত্রের মধ্যে আশ্বলায়ন শ্রৌতসূত্র ৬।২।৯ এ ষোড়শী যাগে এই মন্ত্রের বিনিয়োগ পাওয়া যায় । কোন প্রতিমা পূজাতে নয় । 




উক্ত মন্ত্রটির এই অর্থ ব্রাহ্মণ-বেদাঙ্গ আদি প্রমাণরহিত । ড. রামনাথ বেদালঙ্কারকৃত ও বাংলাদেশ অগ্নিবীর কর্তৃক অনূদিত ও প্রকাশিত সামবেদ ভাষ্যে এর অনুবাদ নিম্নরূপ -

সংস্কৃত ভাষ্যঃ

হে (নরঃ) নেতৃত্বশক্তিয়ুক্তাঃ স্ত্রীপুরুষাঃ ! “নরো হবৈ দেববিশঃ” [জৈ০ ১।৮৯] যূয়ম্ (অর্চত) সপর্যত, (প্র অর্চত) প্রকর্ষেণ সপর্যত, হে (প্রিয়মেধাসঃ) প্রিয়মনীষাঃ জনাঃ ! প্রিয়মেধঃ প্রিয়া অস্য মেধা। নিরু০ ৩।১৭। (অর্চত) সপর্যত। (পুত্রকাঃ উত) যুষ্মাকং পুত্রপুত্র্যোঽপি। পুত্রকাশ্চ পুত্রিকাশ্চেত্যেকশেষে পুত্রকাঃ ইতি। (অর্চন্তু) সপর্যন্তু। (পুরম্ ইৎ) পূরকম্ এব, ন তু রেচকম্। পৃণাতীতি পূঃ তম্, পৄ পালনপূরণয়োরিতি ধাতোঃ ক্বিপি রূপম্। [  পুরমিৎ পুরমেব, স্তোতৄণামভিমতস্য পূরকম্—ইতি সা০। পুরম্ ইৎ ধৃষ্ণু, ইচ্ছব্দ ইবশব্দস্যার্থে, পুরমিব ধৃষ্ণু। যথা কশ্চিৎ পুমান্ ধৃষ্ণুং দৃঢম্ অভিভবনং পরকীয়ানাং সেনানাম্ অর্চতি তদ্বদর্চত ইত্যর্থঃ—ইতি বি০। পুরমিৎ পুরমিব ধৃষ্ণু ধর্ষকং শত্রূণাম্ ইন্দ্রম্ অর্চত—ইতি ভ০।] (ধৃষ্ণু) অন্তঃশত্রূণাং বিঘ্নানাং বা ধর্ষণশীলম্ ইন্দ্রং জগদীশ্বরম্। ধৃষ্ণুম্ ইতি প্রাপ্তে, ‘সুপাং সুলুক্০। অ০ ৭।১।৩৯’ ইতি বিভক্তের্লুক্। (অর্চত) সপর্যত। অত্র ‘অর্চত’ ইতি পুনরুক্তিরতিশয়স্য, সাতত্যস্য, অবশ্যকর্তব্যত্বস্য চ দ্যোতনার্থা ॥৩॥

পদার্থ অনুবাদঃ  হে  (নরঃ) নেতৃত্বশক্তিযুক্ত স্ত্রী- পুরুষ!  তোমরা (অর্চত) উপাসনা করো। হে (প্রিয়মেধাসঃ) বুদ্ধিপ্রেমি জন!  তোমরা (অর্চত) উপসনা করো। (পুত্রকাঃ উত) তোমাদের সন্তানও (অর্চন্তু) উপসনা করুক। (পুরম্ ইৎ) উপাসককে ঐশ্বর্য দ্বারা পরিপূর্ণকারী, (ধৃষ্ণু) অন্তঃশত্রু তথা বিঘ্নের বিনাশকারী জগদীশ্বরের (অর্চত) উপাসনা করো ।। ৩।।

সরলার্থঃ হে নেতৃত্বশক্তি যুক্ত স্ত্রী-পুরুষ! তোমরা উপাসনা করো। হে বুদ্ধিপ্রেমি জন! তোমরা উপাসনা করো। তোমাদের সন্তানও উপাসনা করুক। উপাসককে ঐশ্বর্য দ্বারা পরিপূর্ণকারী, অন্তঃশত্রু তথা বিঘ্নকে বিনাশকারী জগদীশ্বরের উপাসনা করো ।। ৩।।




ঋগ্বেদে এর প্রকৃত ভাষ্যানুবাদ -

মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্যমুনিঃ

সংস্কৃতভাষ্যঃ
 

হে প্রিয়মেধাসঃ=যজ্ঞপ্রিয়া মনুষ্যাঃ ![ যজমানো মেধপতি - ঐ০ ব্রা০ ২।৬ , মেধ যজ্ঞনাম - নিঘ০ ৩।১৭ ]  যূয়ম্। পরমাত্মানম্। অর্চত। প্রার্চত। পুনঃ পুনঃ। তমেবার্চত। তমেব গায়ত, স্তুত, প্রশংসত, প্রার্থয়ত। ন কেবলং যূয়মেব। উত=অপি চ।  যুষ্মাকং পুত্রকা অপি তমর্চন্তু। ধৃষ্ণু=ধর্ষণশীলম্। মহৎ। পুরং+ন=পুরমিব। অর্চত=ভূষয়ত। তস্য কীর্তিং গায়ত ॥৮॥


অনুবাদঃ
 

(প্রিয়মেধাসঃ) হে যজ্ঞপ্রিয় মানবগণ !  তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে (অর্চত) পূজা করো (প্রার্চত) উত্তভাবে গীত করো , অবশ্যই (অর্চত) তার স্তুতি প্রার্থনা উপাসনা আদি সুকর্ম করো । কেবল তোমরাই নও , (উত) বরং (পুত্রকাঃ) তোমাদের বিদ্যমান সন্তানাদি ও ভবিষ্যৎ আগত সন্তানও (অর্চন্তু) তার কীর্তি গীত করবে । (ন) যেভাবে (ধৃষ্ণু+পুরম্) বিজয়ী পরাক্রমী ও মহান নগরের প্রশংসা মানবগণ গীত করে , ঠিক সেভাবে পরমেশ্বরেরও প্রশংসা গীত করো  ॥৮॥





অতঃ উক্ত মন্ত্রে যে মূর্তি বা প্রতিমাতে পূজার কোন বিধান নেই তা প্রমাণিত । 

নমস্কার ।